৩ কার্তিক ১৪১৮ শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০১১


 
ফিরে দেখা এক-দশক
একটি দশকের কালীপুজোর খবর-কাহিনি, স্থিরচিত্র-তুলির টান— পুজো ইতিহাসের নির্বাচিত
কিছু ঝলক দেখে নিন আনন্দবাজারের হাত ধরে। ফিরে চলুন ছয়ের দশকে। এই পুজোয়।

১৯৬০
বাজি-পটকা বিক্রয়ের ধূম...

— কলিকাতা পুলিশ কর্তৃক কতিপয় বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ

— লাউডস্পীকার ও মাইক্রোফোনোর ব্যবহারের উপর বাধানিষেধ

১৯৬১
• কলিকাতায় কালীপূজার রাত্রে পঁচিশটি স্থানে অগ্নিকাণ্ড
• বাজির আগুনে ৫০জন আহত
দেওয়ালী...
শ্রীশ্রীশ্যামাপূজার উদ্বোধন অনুষ্ঠান

১৯৬২
শ্রী শ্রী দীপাবলী
দেওয়ালী

১৯৬৩
• শ্রীশ্রীশ্যামা পূজা ও দীপান্বিতা উৎসব: দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা মতে বুধবার কোথাও কোথাও শ্রীশ্রীশ্যামাপূজা ও দ্বীপান্বিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রাচীন পঞ্জিকা মতে শ্রীশ্রীশ্যামাপূজার এখনও ঢের দেরী। দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা মতে পূজার সংখ্যা খুবই কম। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের কয়েকটি কেন্দ্র এবং কয়েকটি পারিবারিক পূজা ছাড়া আরও প্রায় সবই প্রাচীন মতে পূজানুষ্ঠানের পক্ষে। বাগবাজারে রামকৃষ্ণ সারদা মঠে এবং বেলুড় মঠে দৃকসিদ্ধ মতে বুধবার শ্রীশ্রীশ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাগবাজারে রামকৃষ্ণ সারদা মঠ ও অন্যত্র এই উপলক্ষে সন্ধ্যায় দীপসজ্জায় শোভিত করা হয়। সন্ধ্যার পর হইতে প্রতিমা দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতড়ন শুরু হয়। সমস্ত রাত্রি ধরিয়া পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার প্রতি নিরঞ্জন অনুষ্ঠিত হইবে। প্রাচীন মতে বৃহস্পতিবার মহালয়া।

১৯৬৪
আলো, আওয়াজে পূজা, বাজী শহর মাৎ...
— তেরশশতাধিক বারোয়ারী পূজা
— দেওয়ালীর উৎসব
ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়া...
—ভাইফোঁটার ছিটেফোঁটা
বল্ মা তারা দাঁড়াই কোথা... দেওয়ালীর আলো...
কলিকাতার একটি ঐতিহাসিক কালীপূজা...
শ্রীশ্রীকালী— পণ্ডিত শশিশেখর ভট্টাচার্য...


১৯৬৫
শ্যামাতত্ত্ব...
দেওয়ালি মানে ‘বাজিমাৎ’ নয়
• বাজী দুর্ঘটনা: রবিবার বাজীর আগুনে আহত ২০ জনকে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতি করা হয়। শনিবার আনন্দ পালিত রোড থেকে তপনকুমার দে (১১) নামে এক বালককে গুরুতর আহত অবস্থায় নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল, রবিবার সকাল সাতটায় তার মৃত্যু হয়। এদিনও এই হাসপাতালে স্বরূপনগর থেকে গৌরাঙ্গ তালুকদার (১৩) নামে এক বালককে গুরুতর আহত অবস্থায় ভরতি করা হয়। রবিবার শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৭টি বাজী পোড়ানোর জন্য। তিনটি পূজা মন্ডপেওগোয়ালটুলি লেন, যাদবপুরের বাঘা যতীন কলোনী ও গোরাচাঁদ বসু স্ট্রীটআগুন লাগে। বাকী চারটির মধ্যে একটি খড়ের গাদা, বাড়িতে ও দু’টি তালগাছে আগুন ধরে গিয়েছিল। অন্যান্যের মধ্যে এদিন দুপুরে সুবোধ মল্লিক রোডে একটি স্টেট বাসে আগুন লেগেছিল।

• কালী প্রতিমা নিরঞ্জন: শ্যামাপূজা অনুষ্ঠান মোটামুটি সংযতই হয়েছিল। কিন্তু রবিবার প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে কিছুই বাদ পড়েনি। রাস্তার শোভাযাত্রায় ধুনুচি নাচের সঙ্গে ব্যান্ড পারটি, আলোক সজ্জাও ছিল। তার সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত বাজী ফাটানোর শব্দে কানে তালা লাগার উপক্রম। প্রতিমা শোভাযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দু’ধারে তেমনই ভিড়। এবারও মা কালী কোথাও লরিতে চেপেছেন কোথাও বা টেমপো, ঠেলা গাড়ি, রিকসা, আবার উদ্যোক্তাদের কাঁধেও। সন্ধ্যা থেকেই বিসর্জন শুরু হয়েছিল, শেষ হতে রাত ১টা বেজে গিয়েছে। তাতেও সব প্রতিমা বিসর্জন হয়নি।

• এবারের শ্যামাপূজা সংযত: এ বছরের শ্যামাপূজা ও বাজী পোড়ানো উৎসব গত বছরের তুলনায় অনেক সংযত। পূজা প্যানডেলে মাইকের গর্জন অনেক কম। রাস্তার উপর বাজী পোড়ানো খুব কম চোখে পড়েছে। বাড়ি বাড়ি আলোকসজ্জা প্রায় হয়নি বললেই চলে। অথচ, শহরে-শহর তলিতে শ্যামাপূজা উৎসব নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। কালিঘাটে ও দক্ষিনেশ্বরের কালীমন্দিরে সকাল থেকে যেমন স্নানের ঘাটে ভিড়, তেমনই ভিড় হয়েছিল পূজা দেবার জন্য। এ বছর কিন্তু বারোয়ারী পূজার সংখ্যা কমেনি। জরুরী অবস্থার কথা বিবেচনা করে উদ্যোক্তারা পূজার খরচ কমিয়ে প্রতিরক্ষা তহবিলে সাহায্য করার দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন। গত বছর কলেজ স্কোয়ারের প্রতিমার জন্য ব্যয়

বিসর্জনের জন্য একটি প্রতিমা
নদীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ফটো-আনন্দবাজার


হয়েছিল ১২০০ টাকা, এবার মাত্র ৫০০ টাকা। রজনী গুপ্ত রো’তে গিয়ে দেখলাম মন্ডপে প্রতিরক্ষামূলক চিত্র প্রদর্শনীই বড় আকর্ষণ। মাইকের নামগন্ধ নেই।

১৯৬৬
শ্যামাতত্ত্ব...
• দুটি মণ্ডপ ভস্মীভূত: বৃহস্পতিবার কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে বাজির আগুনে দুটি কালীপূজা মণ্ডপ পুড়ে যায়। একটি পূজা মণ্ডপের গেটও ভস্মীভূত হয়েছে। এছাড়া বাজির বিপত্তি হিসাবে আরও দশটি ছোটখাট ক্ষেত্রে আগুন নেবানোর জন্য দমকল কর্মীদের ছুটতে হয়। দুটি পূজা মণ্ডপের মধ্যে একটি দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা শ্মশান ঘাটের পাশে বাস্তুহারা বাজার কালীপূজা কমিটির। এখানে আগুন লাগে দুপুর একটা নাগাদ। আগুনে মণ্ডপের খুবই ক্ষতি হয়েছে, প্রতিমার কোন ক্ষতি হয়নি। রাত্রি সাড়ে আটটার মধ্যে কলকাতার লিনটন স্ট্রীট ও সি আই টি রোডের উপর একটি পূজা মণ্ডপের গেটটিও বাজির আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

• বাজির আগুনে আহত: আমাদের হাওড়া অফিস জানান, বৃহস্পতিবার বাঁটরা এবং গোলাবাড়ি থানা এলাকা থেকে অল্প বয়স্ক পাঁচটি ছেলেকে বাজীর আগুনে দগ্ধ অবস্থায় হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্রকাশ। গত সোমবারও বাঁটরা থানা এলাকা থেকে বাজীর আগুনে গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করা হয়েছে। যুবকটির একটি হাত নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানা যায়।
কলকাতা ও শহরতলির শ্যামাপূজায় বৈশিষ্ট্যও বৈচিত্র্যঅনন্য।উল্লেখযোগ্যকয়েকটির মধ্যেআছে উত্তর,
দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার যথাক্রমে পাথুরেঘাটা, কেওড়াতলা মহাশ্মসান ও বিজয়ী সঙ্ঘের প্রতিমা।

১৯৬৭
• কালীপূজার আগের রাত্রি
— শহরের বিভিন্ন স্থানে বাজি পোড়াতে গিয়ে প্রায় ৫০টি বালক অল্পবিস্তর আহত হয়েছে। এদের বয়স ৬ থেকে ১২।
— শহরে এবার বাজী পোড়ানো বেশি হচ্ছে। কোথাও কোথাও মারাত্মক ধরণের বাজী পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
— শহর ও শহরতলীর প্রায় ত্রিশটি পূজামণ্ডপ থেকে আগুন লাগার খবর আসে।
— শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মঙ্গলবার অতিরিক্ত আলো দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলি নানা রঙের আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে। অধিক রাত্রি পর্যন্ত পূজামণ্ডপ সাজানোর কাজ চলে।
বাংলার কালী-আরাধনার দুই রূপ...
• কালীপূজা নিয়ে পুলিশের উভয়সঙ্কট
— মেটিয়াবুরুজের ভাঙাখালিতে কালীপূজা অনুষ্ঠান নিয়ে আদালত ও রাজ্য সেচমন্ত্রী পরস্পর বিরোধী আদেশকে কেন্দ্র করে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় পুলিশ ওই অঞ্চলে সকালে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
• কালীপূজা উপলক্ষে জগদ্দল থানা এলাকাকে পাঁচটি সেটারে বিভক্ত করেছে। এই সেকটারগুলির পুলিশ নামকরণ করেছে যথাক্রমে এ বি সি ডি ই।


১৯৬৮
দীপাবলী ক্রোড়পত্র: শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলা প্রসঙ্গে... দীপালোকের লোককথা...
• দীপাবলী উৎসব
— মহানগরীতে এবার সার্বজনীন কালীপূজার সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর কলকাতায় সার্বজনীন কালীপূজার সংখ্যা ছিল ১৫৮০, এবার ১৬৩০। এর মধ্যে শুধু উত্তর কলকাতার ৮২৩।
— বাজি পোড়ানোর ধূম অনেক কম। অন্যান্য বছর কালীপূজার আগের দিনই বাজির শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম হয়। এবার সেই উৎসবে বেশী ভাঁটা।
পুরনো কথা: বিমল করের লেখা...

১৯৬৯
• সারি সারি দীপ
— কার্ত্তিকী অমাবস্যার কালীপূজা ও দেওয়ালী পর্ব। দেওয়ালী শব্দটি দীপাবলীর অপভ্রংশ। দীপগুলিকে সারি সারি সুবিন্যস্ত করে প্রজ্বলিত করার নাম দেওয়ালী। তবে আজ এই দেওয়ালী পর্বে শুধু দীপ নয়, মোমবাতি ও বিজলীবাতিও জ্বলবে। দেওয়ালী পর্বটি হলো ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন লোক উৎসব।
— পয়লা বৈশাখে যেমন বাঙালী ব্যবসায়ীরা হালখাতা করে থাকেন, তেমনি মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থানের মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীরা দেওয়ালীর দিনে হালখাতা করেন। বাংলা দেশে শারদীয়া দূর্গাপূজার নূতন বস্ত্রাদি পরিধান করা হয়। আর এরা দেওয়ালীর দিনে নূতন বস্ত্রাদি পরেন ও নূতন বস্ত্র আত্মীয়স্বজনদেরও দেন।
— উত্তর ভারতের বৃন্দাবনের ব্রজবাসীরা আজকে গিরিরাজ গোবর্ধনের পূজা ও তথায় দীপ দান করবেন। আজ গিরিরাজ গোবর্ধন ও কুণ্ডগুলি দীপমালায় শোভিত হবে।
— আয়ুর্বেদাচার্য ধন্বন্তরির আজ আবির্ভাব। আজ বৈদ্যগণ তাঁর বিশেষ পূজার্চনা করবেন।
— জৈন ধর্মের প্রবর্তক ও আর্য সমাজের প্রবর্তক মহাবীর। মহাবীর স্বামী ও দয়ানন্দ স্বরসতীর আজ তিরোভাব। জৈনরা মহাবীর স্বামীর আজ নির্বান লাভ স্মরণ করে বিশেষ উৎসব করবেন।

শাক্তবাদ ও মহাকালী...
ব্যোমকালী কলকাত্তাওয়ালী...
১৯৬০-৬৯ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।



Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.