অমাবস্যা। অন্ধকার ঘিরে ফেলবে রাত। সে ঘেরাও ভাঙতে ছুটবে আলোকদল। হাজারো প্রদীপ জ্বলবে যেহেতু, কি শহরে কি গাঁয়ে। এ তিথি তাই দীপান্বিতা। অনেক কিংবদন্তী আছে এর নামে। কোনটা পৌরাণিক। কোনটা ঐতিহাসিক।
১) বিষ্ণু চারটি উৎসবের দিন ধার্য করেন। সমাজের চার বর্ণের জন্য। ব্রাহ্মণের রাখীপূর্ণিমা। দশেরা ক্ষত্রিয়ের। শূদ্র মাতবে হোলিতে। দেয়ালি বৈশ্যের আনন্দ। নতুন ফসল আসে ঘরে। বিকিকিনি চলে বেশ। দুটো পয়সার মুখ দেখা যায়। তাই এত আহ্লাদ। অনেকের বিশ্বাস: অমাবস্যার অন্ধকারে লক্ষ্মী পৃথিবী পরিক্রমায় বার হন। যে গৃহ দেখেন আলোকোজ্জ্বল সেখানে আসন গ্রহণ করেন। সেজন্যই নাকি আলোকসজ্জা। মাঠাকুরণ পা ফেলে আসবেন।
২) আজ কেন লক্ষ্মীপূজাও হয়, তার আরেকটি আখ্যান: দান ও ভক্তির গুণে রাজা বলী ত্রিভুবনের অধিকারী স্বর্গচ্যুত দেবতাদের প্রমাদ। তাঁরা বিষ্ণুর শরণ নিলেন। বিষ্ণু সৃষ্টি করেন বামনাবতার। সে বলীর কাছে ভিক্ষাপ্রার্থী হল। কী ভিক্ষা? তিনটি মাত্র পদক্ষেপে যতটা ভূমি অতিক্রম করা যায়। ভিক্ষা মঞ্জুর করলেন বলী। কিন্তু আশ্চর্য হলেন দেখে: দুটি মাত্র পদক্ষেপেই সে স্বর্গ ও মর্ত অতিক্রম করল। তৃতীয় পদক্ষেপ কোথায় পড়বে? পাতালে? তাহলে তো বলী হৃত-সর্বস্ব। কিন্তু বিষ্ণু জায়া লক্ষ্মীর অনুরোধে পাতাল বলীরই রইল। এজন্যই আজ লক্ষ্মীপূজা। মহারাষ্ট্রে বলীর কুশপুত্তলিকা পূজা হয়। ভক্তেরা প্রার্থনা জানায়: তিন ভুবন তাঁর করতলগত হোক।
এই দিনেই নাকি নরকাসুর বধ ঘটে। সেই বিজয়োৎসবই প্রকাশ পায় দীপমালায়। নরকাসুর বধের দুটি উপাখ্যান চালু আছে:
ক) প্রাগ-জ্যোতিষে ছিল এই দানবের বাস। সে একদা দেবমাতা অদিতির কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। দেবতারা তাকে পরাস্ত করতে পারেন না। অতঃপর কৃষ্ণ তাকে বধ করেন। ফিরিয়ে আনেন দুল।
খ) নরকাসুর বিশ্বকর্মার মেয়েকে চুরি করে। মেয়ে চুরিতে সে ছিল ওস্তাদ। নারী জাতির ইজ্জৎ বিপন্ন: বিষ্ণু অবহিত হলেন। অথচ তিনি নিরুপায়। নরকাসুরের ক্ষমতা যে অপরিমেয়! অবশ্য সান্ত্বনা এই: ক্রমাগত পাপের ফলে সে ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে। এমনি সময়ে বিষ্ণু কৃষ্ণকে পাঠালেন। নিহত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে নরকাসুর বর চাইলেন: ‘এই দিনটি যেন উৎসবের দিন হয়’। বর মঞ্জুর করলেন কৃষ্ণ। তাই কি এত আলোর রোশনাই!
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.