|
তিন শ’ পনের বছর আগে কলকাতায় চোরবাগানের মিত্রবাড়িতে কালীপূজার শুরু। কলকাতার প্রাচীনতম কালীপূজার মধ্যে এটি অন্যতম। সে সময়ে দক্ষিণেশ্বরেও কালী প্রতিষ্ঠা হয়নি।
কনৌজ থেকে যে পাঁচজন কায়স্থ সর্বপ্রথম বাংলা দেশে এসেছিলেন, তাঁদের একজনকালিদাস মিত্র। আজকের চোরাবাগানের মিত্ররা তাঁরই উত্তরপুরুষ। কালিদাসের অষ্টাদশ অধস্তন বংশধর রামরাম মিত্র ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান। তখন তাঁদের নিবাস ছিল হুগলী জেলার কোন্নগর-মন্দিরবাটি। রামরাম কোন্নগর থেকে বাস তুলে আনলেন গোবিন্দপুরে মেছুয়াবাজারে। তারপর আরও তিন-পুরুষ পর রামসুন্দর মিত্র। ইনি বসতি স্থাপন করলেন সখের বাজার।
সেদিনের সখের বাজারই আজকের চোরাবাগান। এখানে মিত্রবাড়িতে কালীপূজা শুরু ১৬৫০ সনে। তারপর এক শ’ বছর কেটেছে, ১৭৫০ সনে রাজা রামসুন্দর মিত্র স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে “মুক্তকেশী” কালীপূজা শুরু করেন। নীলবর্ণের দৈর্ঘ্যে ১৮ ফুট এ প্রতিমার মধ্যে মা কালীর সেই ভয়ঙ্করী রূপের কোন প্রকাশ নেই। সে-যুগে এ প্রতিমা “মিঠাইকালী” নামে পরিচিত ছিল।
ইতিহাস আছে মিত্রবাড়ির পূজা দেখতে ক্লাইভ, ওয়ারেন হেস্টিংস থেকে শুরু করে তারপরের অনেক ইংরেজ রাজপুরুষ এসেছেন।
গত তিন শ’ পনের বছরে দেশে অনেক পরিবর্তন, অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। সেই আবর্ত থেকে মিত্র পরিবারও বাদ যায়নি। তবু এ-বাড়ির পূজা ঠিক-ঠিকই চলে আসছেকোনো অঘটনে পূজা বন্ধ থাকেনি। এখন দু’শরিকে ভাগাভাগি করে পূজা চালান। এবারও হচ্ছে। এখন অবশ্য কালীমূর্তি আর আঠার ফুটে নেই। দশ ফুটে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু “মুক্তকেশী” আদল ঠিকই আছে।
এককালে বিস্তর ধূমধাম ছিল। নেই নেই করে আজও তার কিছুটা রয়েছে। একদিন এ-পূজা দেখতে শুধু কলকাতা নয়, বাংলাদেশের বাইরে থেকেও লোক আসতো। আজ সার্বজনীন পূজার যুগে নিশ্চয় সে আশা বাতুলতা। তবু আসে, অজানা অপিরিচিত তারা নয়, তারা সব মিত্রবাড়ির জ্ঞাতি-কুটুম্বপরিজন।
মিত্র বাড়ির আঙিনায় পূজার দিনে দরিদ্রনারায়ণের সেবা, বিসর্জনের দিনে যাত্রা-আসর আজও বসে।
|
|