৩ কার্তিক ১৪১৮ শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০১১





ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়া



বাংলা দেশে বারো মাসে তের পার্বণ লাগিয়াই আছে। বিশেষ ভাবে অনুধাবন করিয়া দেখিলে দেখিলে ইহাই প্রতিতী হয় যে, বাঙ্গালী হিন্দুর ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রকৃতি বা আবহাওয়ার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই ভাদ্রের অরন্ধন, পৌষের পার্বণ, বসন্তের হোলী, বৈশাখের বৃক্ষ ও জলাশয় প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি যেন প্রকৃতিদেবীর অঙ্গ। কোন আবহমান কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে তাহার ছেদ নাই, তাহার তাল ভঙ্গ নাই।

কার্ত্তিকী শুক্লা দ্বিতীয়ায় ‘ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়া’ অনুষ্ঠান অন্যতম আমৃত্যু ভ্রাতা-ভগিনীদের মধ্যে এইরূপ একটি নিবিড় স্নেহের বন্ধন বৎসরান্তে যে একবার অনুষ্ঠিত হয়, আর কোন দেশে আর কোন জাতির মধ্যে, মনে হয় এমন শুচিশুদ্ধ-প্রীতির অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় না। এই পবিত্র অনুষ্ঠানটি বাঙ্গালী হিন্দু গৃহস্থের মধ্যে এমন মজ্জাগত হইয়া গিয়াছে যে, বহির্বিশ্বের আধুনিক রূপান্তর, জীবজগৎ ও ব্রহ্মাণ্ডের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ মনে প্রাণে স্বীকৃতির ন্যায় প্রতীয়মান হইলেও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সময় লোকে সকল জানাশোনা জ্ঞান বিজ্ঞানকে জলাঞ্জলি দিয়া থাকে। তাই ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়বার ভাই-গৃহে অথবা ভগিনী-গৃহে আসনের উপর ঠাকুরটি হইয়া বসিয়া পড়ে আর ভগিনীও স্মিত আননে দক্ষিন হস্তে চন্দনের পাত্র ধরিয়া বাম হস্তের কণিষ্ঠাগুলির দ্বারা চন্দন লইয়া ভ্রাতার ললাটে তিলক রচনা করিতে করিতে আবৃত্তি করে
“ভ্রাত স্তব ললাটে হি দমামি
তিলকং শুভম।
অতঃপরং যমদ্বারে যয়া দত্তং
হি কন্টকম॥


ভাইফোঁটার ছিটেফোঁটা

যাঁরা মিষ্টি তৈরি করনে, তাঁরা জানিয়েছেন দাম কমানো তাঁদের সাধ্যের বাইরে। তাঁরা অতএব এই বাজারে দাম জনসাধারণের সাধ্যের বাইরেই রেখেছেন। সন্দেশ, রসগোল্লা, ইত্যাদির আকার গত কয়েক দিন থেকেই কঋ
শতর হচ্ছিল। আজ তা ‘অলটাইম লো’ অবস্থায়। অবশ্যা সাধ্যের বাইরে হলেও ভাইদের জন্য বোনেরা তা কিনছেন। সকলেই যতখানি ইচ্ছে তা না কিনতে পারলেও কিছু কিছু কিনছেন। কারণ আজ ভাই ফোঁটা। এবং আজ ভাই ফোঁটার বাজার। আজ ভাইদের পাতে মিষ্টি দেওয়া অপরিহার্য।

কিন্তু কেবল মিষ্টি নয়। তার আগেও অনেক কিছু আছে। চাল যদিও র্যাশন ছাড়া পাওয়া যায় আর একটু চেষ্টা করলে দেড় টাকা থেকে তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে তা পাওয়া যায়, ময়দাও তাই বেশি দাম দিলেও তাও মেলে। এর পর আলু বেগুন পটল কপি এ গুলোও গত তিন চার দিন যাবত বাজারে কম আসছে। কম কেন আসছে তাও সকলেই অবশ্য জানে। কারণ সেগুলো চারদিন জমিয়ে রাখার জন্যই না আজ ডবল বা তিনগুণ দামে বিক্রী করা যাচ্ছে। এক টুকরো ফুলকপি, যার দাম গত সপ্তাহেও চল্লিশ পয়সায় পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলোই হঠাৎ নিজেদের দাম বাড়িয়ে ফেলেছে আশী থেকে নব্বুই পয়সায়। কিন্তু ভাই ফোঁটার সব চাইতে সেরা খাদ্য নিশ্চয়ই মাছ এবং তা পোনা মাছ। কিন্তু যাঁরা গত তিন চার দিন বাজারে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন যে মাছওলারা সব বেপাত্তা। তারা বেপাত্তা হলেও তাদের চরেরা সমস্ত পাড়ায় ঘুরে ঘুরে ছ টাকা সাত টাকা কিলোগ্রাম এই দরে অর্ডার সংগ্রহ করে বেড়াচ্ছে। আজ তাই পোনা মাছ খোলা বাজারে আদৌ পাওয়া যাবে, তা আমরা জানি ইলিশ। সে ইলিশের বিশাল আকার দেখলে লোভ হয়, কিন্তু সেগুলোর নাম একজন বিদগ্ধ সমালোচক দিয়েছেন বিলিশ। বিস্বাদ এবং ইলিশের সংমিশ্রণ। যাঁরা ইলিশের স্বাদ পেতে চান, তঁরা কেউ এ মাছ কিনবেন না, কিন্তু কিছুই না পাওয়া গেলে অগত্যা বহু ভাইয়ের ভাগ্যে ঐ মাছই জুটবে। এবং ভাইয়েরা তা নিয়ে একটুও মন খারাপ করবে না, কারণ যে সব ভাই বড় হয়েছে, তারা বাজারের অবস্থা জানে, আর ছোটরাও বাড়িতে আলোচনা শুনতে শুনতে এটা অনুমান করতে পেরেছে এতদিনে যে, বাজারটা একটা অদ্ভুত জায়গা যেখানে কিছুই প্রায় ঠিক দামে পাওয়া যায় না, কোন কোন জিনিস দাম দিলেও পাওয়া যায় না তবু লোকে সেখানে যায়, নিতান্ত অভ্যাসবশতই সম্ভবত!

বাজারের এই হাল সত্ত্বেও ভাই ফোঁটা হবে। বোনেরা ‘যথাসম্ভব’ সমাদরে ৎমকে বলবে, ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, এবং যমদুয়ারে পড়বে কাঁটা। ভাইয়েরাও খুসি মনে খাবে। যা পাবে তাই খাবে। ফোঁটা তারা ঠিকই পাবে, কিন্তু যমদুয়ারে কাঁটা পড়া সম্পর্কে একটু সন্দেহ থেকে গেল, কারণ এই বাজারে যমের দুয়ারে ফেলবার মত ভাল কাঁটাও নিশ্চয় ঠিক দামে পাওয়া যাবে না।




ফিরে দেখা...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.