৩ কার্তিক ১৪১৮ শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০১১





বল্ মা তারা দাঁড়াই কোথা



খনো মহালয়া আসেনি, তখনো পূজার বোনাস কেউ পাননি, তখনো আকাশে-বাতাসে শরতের ‘আহা মরি’ ভাব আসেনি। না এলেও কিন্তু যথানিয়মে পূজার প্রোগ্রাম ছকে’ ফেলা হয়েছিলক্যালেণ্ডারের পাতা উল্টে যেতে যেটুকু দেরী!! দূর্গাপূজার পর লক্ষ্মীপুজোও গেল। এবার এসেছে কালীপূজা, আলোর আর বোমবাজির কেরামতির চূরান্ত রূপ দেয়া হবে যে পূজায়।

তাই ছুটোছুটির অন্ত নেই। পাশের তিন-তিনটে বাড়ি থেকে লাইন নেয়া হয়েছে, আপত্তির জন্য এক ভদ্রলোকের দশ টাকা চাঁদা ফাইন করা হয়েছে। টাকাটা গচ্চা দিয়ে ভদ্রলোক গতকাল থেকে পার্কে রাত কাটাচ্ছেন কি জানি, ওদের মতিগতি কখন কি হয়, বোঝা দায়।

দূর্গাপূজার সময়, রেশন-কার্ডের বিনিময়ে বহু-প্রতিশ্রুত ও বহু-প্রতীক্ষিত চাল, আটা-সুজি ডিউ স্লিপ পাওয়া গিয়েছিল, এবারে যেহেতু এটা বিত্তবান্ ও ক্ষমতাবান উত্তর ভারতীয় ভাইদের “দেওয়ালী”, তাই সকলের আশা, এ হপ্তায় রেশন দোকানের ব্যাগ টইটম্বুর হয়ে বাড়ি ফিরবে। রেশন দোকানে ন্যাপলা-ক্যাবলা-ন্যাড়ারা কিউ দিয়েছে, ফলে ভলান্টিয়ার পাওয়া দুর্ঘট হচ্ছে। ব্যর্থ অর্থনীতির চাপ ও ছাপ লেগেছে প্রতি গৃহে, তাই চাঁদা তেমন উঠছে না। পূজা কমিটির উদ্যোক্তারা এ জন্য উদ্বিগ্ন। তবু ট্র্যাডিশন বলে একটা কথা আছে, আজ সঙ্ঘের প্রেস্টিজের প্রশ্ন।

কিন্তু এবারে ঘুঁটে ও গোবর দুই-ই একসঙ্গে পুড়ছে। কেউ হাসবার ফুসরৎ পাচ্ছে না। ধনী, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সকলেরই এক হাল। যে চাঁদা চাইতে যাচ্ছে, সে নিজেই জানে এ বছর চাঁদা দেওয়াটা কতখানি শক্ত। তবু চাইতে হয়। উপায় নেই। পাড়ার পুজো। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এমন কি মুখের হাসি-টুকুরও। তবু দেঁতো হাসি হেসে চাঁদাদাতা যথাসম্ভব দান করতে কলুর কয়েন না। করুক এরা পুজো, দেখলে তো অন্য সকলের সেঙ্গে নিজের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা। এ আনন্দের মূল্য একটাকার রসিদের বিনিময়ে ঢের বেশী পাওনা।

সুতরাং শেষ পর্যন্ত কিছুই বাদ পড়েনি। যথারীতি প্যাণ্ডেল বাঁধা হয়েছে, দেবীর মাথায় চক্র ঘূর্ণনের কৌশল সংযোজিত হয়েছে। শিশির-ভেজা রাত মাথায় নিয়ে ছেলে-মেয়েরা ছোটাছুটি করছে, বেআইনী চীনে-পটকা দম্ভভরে ফাটতে শুরু করেছে। পাজীগোছের বাজীর শব্দে পাড়ার দেয়াল-রাস্তা এর মধ্যেই সচকিত। এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার-ব্রিগেডের ছোটাছুটিও শুরু হয়েছে। ষোলোকলা পূর্ণ হবে অমাবস্যার নিশিতে।

আলোঝলমল বড়বাজার আরো বেশী হাস্যময়। বাইরে যার যতখানি আলো ভেতরে ততখানি গাঢ অন্ধকার। মশলা-পাতি, ডাল-তেল দেশবাসীর ঘাড় মট্কে রক্ত শুষে নিচ্ছে সেই কবে থেকে। সদাচার সমিতি ভোলানাথের মতই, সাদামাটা তাই কালের ফেরে কালোর চাপ সহ্য করছেন।

ফলে আমরা অসুরেরা খাবি খাচ্ছি। এক-একটা জিনিস কন্ট্রোল হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দাম, উধাও হচ্ছে বাজার থেকে। মাথায় কন্ট্রোলের খড়্গ ঝুলছে আমাদের, যাদের মাথা কচু-কাটা হবার কথা তাঁরা ভুঁড়ি দুলিয়ে দিব্যি বহাল তবিয়তে গদীয়ান, প্রাণভরে জিভ বেরুচ্ছে ছাপোষা গেরস্থদের। মাসের প্রথম দিকে কালীপুজো, তাই চক্ষু-লজ্জায় চাঁদা দেবার ক্ষমতা নেই বলা অসম্ভব হয়েছে। এদিকে ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়ার তত্ত্বের তালিকা টেবিলে পেশ করে ফেলেছেন কর্ত্রীপক্ষ। আয় সেই একই রয়েছে। জমা-খরচের ব্যবধানটা রেললাইনের মত সমান্তরাল না হলে অবশ্যি ল্যাঠা চুকে যেতো, কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? এখন, বল্ মা তারা দাঁড়াই কোথা?




ফিরে দেখা...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.