৩ কার্তিক ১৪১৮ শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০১১





আলো, আওয়াজে পূজা, বাজী শহর মাৎ



প্রদীপ-শিখার আলোকে বিজলীবাতির চমকে আতসবাজির স্ফুরিত দীপ্তিতে মঙ্গলবার শ্যামাপূজার অমানিশা উজ্জ্বল হয়।

মন্দিরে ভক্তের মাতৃবন্দনার সুরে মণ্ডপে মণ্ডপে কলকণ্ঠের আনন্দধ্বনিতে, মাটিতে আকাশে বাজিফাটার ভীষণ আওয়াজে গভীর রাত্রির নিস্তব্ধতা মুখর হইয়া উঠে। নানাস্থানে ছোটখাটো আগুন ধরার খবরও আসে। দমকলকর্মীদের ফুরসত ছিল না।

বছর শেষে আবার আসে কালী পূজার রাত। দেওয়ালীর আলো ও মিলনের উৎসব। প্রদোষে ঘরে ঘরে দীপান্বিতা লক্ষ্মীপূজা হয়, অলক্ষ্মী বিদায়ের পালা চলে। মধ্যরাত্রে ‘করালবদনাং মুক্তকেশী; মুণ্ডমালা বিভূষিতাম’ শ্যামা পূজার মন্ত্র ধ্বনিত হয়।

সারা কলিকাতা শহর শহরতলী উৎসবে মাতিয়া উঠে। দক্ষিণে কালীঘাট, মধ্যে ঠনঠনে কালীতলায় এবং উত্তরে দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির দর্শনার্থীদের আকর্ষণের তিনটি কেন্দ্রবিন্দু হয়। ইহা ছাড়া বহু পরিবারের ঘরোয়া পূজা প্রাচীনত্বে ও গাম্ভীর্যে এবং বারোয়ারী পূজা সাজসজ্জার নূতনত্বে আকর্ষণীয় হয়।

তেরশশতাধিক বারোয়ারী পূজা

এবার শহরে শুধু বারোয়ারী কালীপূজার সংখ্যা ছিল তেরোশত আট। এছাড়া ছিল বাড়ীর পূজা। তবে প্রথম রাত্রে পথে পথে ঘুরিয়া মনে হয় প্রধানত বড়বড় বারোয়ারী পূজামণ্ডপগুলির দিকেই জনতার গতি। মণ্ডপে ও রাস্তায় নানারঙের আলোর মালা। রঙীন জাপানী লণ্ঠনের সারি। বহু ক্ষেত্রেই মাইকে ‘ফিল্মী গানা’। তবে ঐ হৈ-চৈয়ের মধ্যেও কালীতলার সানাইয়ের মধুর তাল কানে এল। চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ের এক মণ্ডপে মাইকে স্ত্রোত্র আবৃত্তি শোনা গেল।

কালীপূজার প্রসার মাতৃভক্ত বাঙালী সমাজে। দীপাবলির উৎসব শহরের সমস্ত হিন্দু পাড়ায়। অবাঙ্গালী সমাজে ইহা চাড়া ছিল সিদ্ধিদাতা শ্রীগণেশের পূজা। বড়বাজার এবং অন্যান্য বাজারের গদীতে-দোকানে শুভ হালখাতার মহরৎ। দোকানের দরজার পাশেপাশে প্রদীপ বা মোমবাতির সঙ্গে কলাগাছের মঙ্গলাচিহ্ন।

দেওয়ালীর উৎসব

কোন কোন পাড়ার সারারাত দ্যুতক্রীড়া হয়। একদিকে দেবীর ভোগের ব্যবস্থা, অন্যদিকে খানাপিনার আয়োজন। মিষ্টান্নের দোকান, ফুলের দোকানের কর্মীরা ‘খদ্দেরের ভীড়’ সামলাইতে হিমসিম খায়।

অতন্দ্র পুলিস কর্মীরা পথে যানবাহনের ও মণ্ডপে জনতার স্রোত পরিচালিত করেন। দমকলবাহিনী ও অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীরা সদা সতর্ক থাকেন। কারণ, মুহূর্তের অসতর্কতার ফলে উৎসব রাত্রি দুর্ঘটনা ও দুঃখের রাত্রিতে পরিণত হইবার আশঙ্কা।

কেওড়াতলা শ্মশানে ‘শ্মশান কালী মাতার’ পূজা, কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে সার্বজনীন কালীপূজার মণ্ডপগুলির নিকট রাত বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে ভীড় বাড়ে। গোলদীঘির শান্ত জলে আলোর মালার ছায়া রূপলোকের মায়া জাগায়।

বাজির গন্ধে ও ধোঁয়ায় চারিদিক আচ্ছ্বন্ন হয়, তুবড়ির মুখে মুখে আলোর ফোয়ারা উঠে, ফুলঝুরি ঝরিয়া পড়ে। মাটি ছাড়িয়ে ‘সোঁ’ করিয়া উড়িয়া গিয়া হাউই বুঝি অন্ধকার আকাশকেও ক্ষণিকের জন্য আলোকিত করিতে চায়।




ফিরে দেখা...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.