৩ কার্তিক ১৪১৮ শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০১১





শ্রী শ্রী দীপাবলী




শ্রী শ্রী দীপাবলী ভারতের জাতীয় মহোৎসব। ভারতের যে কোনও পূজা দেবতার পূজা ব্যতীত সম্পন্ন হয় না, দীপাবলী উৎসবেও এ নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। এই উৎসবের একটা বিশেষ মাহাত্ম্য এই যে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই মহোৎসব বিভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু “দীপাবলী” আখ্যার ক্ষুন্নতা কোথাও দৃষ্ট হয় না।

এই মহোৎসবের প্রধান অঙ্গ সবর্ত্রই দীপমান। বিভিন্ন দেবতার মধ্যে দেখা যায় বাংলা দেশে শ্যামা বা কালীপূজারই রয়েছে প্রবর্তন। বাংলা তন্ত্রপ্রধান দেশ “গৌড়ে তন্ত্রাঃ প্রকীর্তিতাঃ”: “গৌড়েবু বালিকা স্মৃতা”ইত্যাদি বাক্যের প্রতিপূরক হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জাতীয় মহোৎসব দিবসে বঙ্গদেশে শ্যামা-পূজার বিধান। বাংলা দেশের ন্যায় আসামের সমতল অঞ্চলেও কালীপূজা প্রচলিত। মিথিলার কিয়দংশে কালীপূজা এবং অপর অংশে লক্ষ্মীপূজা ঐ দিনে হয়ে থাকে। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে লক্ষ্মী এবং এবং ঋ দ্ধি-সিদ্ধ সহিত শ্রীগণেশ পূজা বিহিত। গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও সৌরাষ্ট্রেও শক্তিপূজাই বিহিত। সেখানে কালভৈরবী ও কালী পূজাই প্রচলিত। মধ্যভারতে দেখা যায় লক্ষ্মী ও গণেশ পূজার রয়েছে প্রাধান্য।

দক্ষিণ ভারতের প্রথা ভিন্নরূপ। মহীশূর, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্র প্রভৃতি রাজ্যে শ্রীকৃষ্ণের পূজা ও সঙ্গে হোলিকা-দাহ প্রভৃতি। দাক্ষিণাত্যের হায়দরাবাদ অঞ্চলেও দেখা যায়শ্রীকৃষ্ণের পূজা এবং ঐ সঙ্গে বলিরাজের স্তুতি কীর্তিত হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের এই বিভিন্ন আচার, নিয়ম ও প্রথার মূলে সর্বক্ষেত্রেই আমাদের শাস্ত্রীয় পুরাণ কাহিনী এবং নানাবিধ কিংবদন্তীর প্রভাব দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন কিংবদন্তীর গুরুত্ব ও পৌরাণিক সংবাদের সমাদরের জন্যই একই স্থানে ভিন্ন ভিন্ন দেবতার পূজা ও নিয়মাদির প্রবর্তন এসে পড়েছে। কালীকূল সম্ভব তন্ত্রে বলা হয়েছে
“দীপোৎসর্গ চতুর্দশ্যং সং মিত্রা
সা ক্হ্ঃ স্মৃতা।
তস্যাং পূজা প্রকর্তব্যা কালীতারা
মহাম্বিকা” ইত্যাদি।

এতে রয়েছে কালীপূজার নির্দেশ। পুনরায় দেখা যায়দীপান্বিতা হল গৌনচন্দ্র কার্ত্তিকী অমাবস্যা। কার্ত্তিক মাসটা সব মাসের শ্রেষ্ঠ মাস ‘‘ন কার্ত্তিকসমো মাসো ন কৃতেন সমং সুগম্”। আর এই কার্ত্তিক মাসে দীপদানের রয়েছে বিধান এবং অকুণ্ঠ প্রশংসা তা আবার লক্ষ্মী ও নারায়ণের উদ্দেশ্যে
বিষ্ণুবেশ্মনি যো দদ্যাৎ কার্ত্তিকে মাসি
দীপকম্।
অগ্নিস্টোম সহস্রস্য ফলং প্রাপ্নোতি
নারদ॥

দীপাবলী সজ্জার এবং তাতে লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজার প্রাধান্য এসে পড়েছে। এভাবেই নানা প্রমান ও বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানের পার্থক্য।

এই যে একই তিথিতে বিভিন্ন দেবতার বিধানতাতে বিস্ময়ের খুব বেশী অবকাশ থাকে না যখন আমরা ভাবি যে, কালীপূজা বা কৃষ্ণপূজা যে পূজাই বিহিত হোক না কেনতাতে পরম প্রিয়েরই পূজা। শাস্ত্রকার বলেছেন ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’। উপনিষৎ বলেছেন“স একাকী ন রেমে। স আত্মানং দ্বেধাহপাতায়ং।” অর্থাৎ যিনিই কালী, তিনিই কৃষ্ণ। যিনিই হর তিনিই গৌরী। সাঙ্গালী সাধক সে কথা মনে প্রাণে উপলব্ধি করে বলেছিলেন“কালী ব্রহ্ম জেনে মর্ম ধর্মাধর্ম সব ছেড়েছি।”

ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণেও সহজভাবে এ কথা বলে দিয়েছেন ‘যোগেশাত্মা স্মৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ’।
আর সেই পরমা প্রকৃতি মহামায়ার পরিচয়েও বলেছেন সা চ ব্রহ্মস্বরূপা চ মায়া নিত্যা সনাতনী। অর্থাৎ তিনি হলেন ব্রহ্মরূপিণী সনাতনী। উপরের লেখা থেকে এই প্রতিপন্ন দীপাবলী উৎসবে আমরা পরমাত্মাকে যেভাবেই উপাসনা করি, সে একই পরম দেবতার উপাসনা করা হয়। এবং এই উপাসনার মুখ্য উদ্দেশ্য তাঁর চরণে আত্মসমর্পণ। তাই আমরা দেবী পূজার শেষে বলি
আবাহনাং না জানামি ন জানামি বিসর্জনম্।
পূজাঞ্চৈব ন জানামি ত্বং গতিঃ পরমেস্বরী॥




ফিরে দেখা...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.