৫ পৌষ ১৪১৮ বুধবার ২১ ডিসেম্বর ২০১১


 
দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে সেই সময়কার কিছু বিশেষ বিশেষ খবর।

মঙ্গলবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (৩০শে কার্ত্তিক, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, NOVEMBER 21, 1961

• সরকারী শিল্প দপ্তরের উদ্যোগে হস্তশিল্পের প্রদর্শণীর আয়োজন...
দক্ষিণ কলিকাতার সরকারী উদ্যোগে নার্সিং হোম... • কলিকাতায় ময়দা সংকট, বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষণ নাই...

পূর্ব ভারত ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ...
জাতীয় স্কুল গেমসভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি: আজ বেশ কিছুদিন যাবৎ কলিকাতায় ভিক্ষুকের সংখ্যা অসাধারণভাবে বাড়িয়া গিয়াছে। ইহারা কলিকাতার নাগরিকদের জীবন বিড়ম্বনাময় করিয়া তুলিয়াছে। বাসস্টপে, পার্কে, শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশনে, সিনেমার লাইনে ইহাদের বিশেষভাবে দেখা যায়। ইহাদের মধ্যে কেবল নারী এবং নাবালক শিশুই নয়, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরও সন্ধান মিলে। শিয়ালদহ স্টেশন হইতে যে সকল লোকাল ট্রেন ছাড়ে, তাহাতে প্রত্যহ প্রচুর ভিক্ষুক ওঠে। তাহারা ঐ প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে প্রত্যেক যাত্রীর কাছে যাইয়া ভিক্ষা চায়। অনেকে আবার কিছু না দিলে একটু মন্তব্য করিতেও ছাড়ে না। বলা বাহুল্য সে মন্তব্য মোটেই শ্রতিমধুর নয়। বিশেষ করিয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন এই যে, তাঁহারা যেন যত শীঘ্র সম্ভব ইহার একটি প্রতিকারের ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। তাঁহারা অন্যপ্রকারে না পারেন অন্ত বিনা টিকিটের যাত্রী হিসাবে তাহাদের গতিরোধ নিশ্চয়ই করিতে পারেন।
কলিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেট ২৯শে নভেম্বরের মধ্যে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নূতন সিণ্ডিকেট গঠনের কাজ ২৯শে নভেম্বর শেষ হইবে বলিয়া আশা করা যায়। এই দিন সেনেট হইতে আটজন এবং একাডেমিক কাউন্সিল হইতে পাঁচজন সদস্য সিণ্ডিকেটে নির্বাচন করা হইবে। সম্ভবত নূতন সিণ্ডিকেট গঠিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নূতন উপাচার্য নিয়োগের প্রশ্ন বিবেচনা করা হইবে। উপাচার্য নিয়োগের জন্য সিণ্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের নিকট তিনটি নাম সুপারিশ করিয়ে থাকেন। আচার্য সেই তিনজনের মধ্যে একজনকে উপাচার্য পদে নিযুক্ত করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব এবং ফলিত মনস্তত্ত্ব বিভাগকে ভাঙ্গিয়া দুইটি পৃথক বিভাগে ফিরবার প্রস্তাব হইয়াছে। এই বিষয়ে ২৩শে নভেম্বর সিণ্ডিকেটের সভায় আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
রেল লাইনের উপর আগুন: সোমবার সকালে বালীগঞ্জ স্টেশনের নিকট রেল লাইনের উপর আগুন জ্বলিয়া উঠার ফলে ঐ শাখায় ট্রেন চলাচল কিছুক্ষণ ব্যাহত হয়। অফিসযাত্রী ভর্তি শিয়ালদহ অভিমুখী ৮টি লোকাল ট্রেনের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাইতে বিলম্ব হয়। এইরূপ সন্দেহ করা হইতেছে যে, কোন কারণে লাইনের উপর কিছু ‘কালো রঙের তৈল’ পড়ে এবং সেই তৈলে সহসা আগুন ধরিয়া যায়। সকাল ৮-৫০ মিনিটের ঐ আগুন দেখা যায় এবং ৯-২০ মিনিটের মধ্যে দমকল বাহিনী এবং শিয়ালদহের অগ্নিনির্বাপক দল উহা আয়ত্তে আনে। ঐ আগুনের কারণ সম্পর্কে তদন্ত শুরু হইয়াছে।
ট্রাম চলাচল ব্যাহত: সোমবার বিকালে চৌরঙ্গী রোড ও পার্ক স্ট্রীটের মোড়ের নিকট ট্রাম লাইনের উপরের মূল তার কাটিয়া যাওয়ার ফলে ঐখান দিয়া ট্রাম চলাচল প্রায় আধঘন্টা বন্ধ ছিল। এসপ্লানেড হইতে কালীঘাট, বালীগঞ্জ এবং টালীগঞ্জের মধ্যে আপ ও ডাউন ট্রাম চলাচল উপরোক্ত কারণে ব্যাহত হয়।

বুধবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (১লা অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ সকাব্দ) WEDNESDAY, NOVEMBER 22, 1961

• নগরদর্শন
• আইন ও আদালত
• পৌরসভার আংশিক ক্ষমতা• শীত এলো

টাটা স্টীলের ডেপুটি এজেন্ট শ্রীরুসি মোদী কলিকাতায় টাটার এজেন্ট নিযুক্ত হইয়াছেন। তিনি ম্যাকনিল এন্ড বারি লিমিটেড, বেঞ্চার ল্যাবরেটারীজ ইগেল রোলিং মিলস লিমিটেড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্ট। তিনি পশ্চিমবঙ্গ গ্যাসবোর্ডের চেয়ারম্যান।

বৃহস্পতিবার, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৩৬৮ (২রা অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) THURSDAY, NOVEMBER 23, 1961
কলিকাতার রাজপথ দিয়া
বার্ষিক জৈন শোভাযাত্রা।
ফটো: আনন্দবাজার

• কলিকাতা অঞ্চল উন্নয়নের জন্য ডাঃ রায়ের পরিকল্পনা
শুক্রবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (৩রা অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) FRIDAY, NOVEMBER 24, 1961
• কলিকাতা মহানগরীর জঞ্জাল অপসারণে অচলাবস্থা
• আবার গভীর জলের মাছ: দুই-একদিনের মধ্যেই কলিকাতায় আত্মপ্রকাশ করিবে

শনিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৩৮৮ (৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SATURDAY, NOVEMBER 25, 1961

কলিকাতার দুইটি বাসরুট রাষ্ট্রী করণে নানা অন্তরায় দেশপ্রাণ শাসমল মৃত্যুবার্ষিকী: শুক্রবার কলিকাতার স্বর্গত দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। এই উপলক্ষে সকালে কেওড়াতলায় এবং বিকালে কলেজ স্কোয়ারে স্টুডেন্টস্ হলে সভা হয়। এইদিন সকালে কলিকাতা পৌরসভার পক্ষ হইতে কেওড়াতলায় যে স্মৃতিসভার আয়োজন করা হয়, তাহাতে সভাপতিত্ব করেন কলিকাতার মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার। দেশপ্রাণের স্মৃতিমন্দিরে মালা দিয়া শ্রীমজুমদার বলেন যে, বীরেন্দ্রনাথ সংগ্রামের মধ্যেই জীবন শেষ করিয়াছিলেন। তাঁহার গুণগুলি যদি দেশবাসী আপনার জীবনে গ্রহণ করিতে পারে তবেই দেশপ্রাণের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানান হইবে। শ্রীপুলিনবিহারী নন্দি, শ্রীজ্যোতিষ মৈত্র এবং দেশপ্রাণে স্মৃতিরক্ষা সমিতির সম্পাদক শ্রীবনবিহারী দাস ও শ্রীহরনাথ চক্রবর্তী বক্তৃতা করেন। বিকালে অনুষ্ঠিত স্টুডেন্টস্ হলের সভায় পৌরহিত্য করেন প্রাক্তন বিচারপতি ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশ শতবার্ষিকী উৎসব: আগামী ২৬শে নভেম্বর রবীন্দ্রসরোবরে যে পুলিস শতবার্ষিকী উৎসবের আযোজন করা হইয়াছে, উহা কলিকাতা পুলিসের শতবার্ষিকী নয়। কলিকাতা পুলিস আইন ১৮৬৬ সালে অনুমোদিত হয় এবং আগামী ১৯৬৬ সালে উহার শতবর্ষ পূর্ণ হইবে। তবে কেন পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে এই উৎসবের আয়োজন করা হইয়াছে, সে সম্পর্কে সরকারী মহলে প্রশ্ন উঠিয়াছে। সরকারী সূত্রে জানা যায় যে, ১৮৬১ সালে ভারতীয় পুলিস আইন পাস হয় এবং ঐ আইনের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এই উৎসবের আয়োজন করা হইয়াছে। অবশ্য কলিকাতার পুলিসী ব্যবস্থা ঐ আইনের বর্হিভূত । কলিকাতা পুলিস আইন বলেই কলিকাতার পুলিসবাহিনী পরিচালিত হইয়া থাকে। কলিকাতা পুলিস আইন পাস হইবার পর বাংলাদেশের প্রধান ইনস্পেকটর জেনারেল অব্ পুলিসের পদগ্রহণ করেন, মিঃ সি-এফ কারনাক। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম ভারতীয় হিসাবে ঐ পদ অধিকার করেন স্বর্গত সুকুমার গুপ্ত।
বৃহত্তর কলিকাতায় অধিকতর দুগ্ধ সরবরাহে বিঘ্ন: বৃহত্তর কলিকাতায় দুধ সরবরাহের পরিমান বৃদ্ধির জন্য বেলগাছিয়ার যে নূতন দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানটি ডিসেম্বর মাসে চালু হইবে বলিয়া স্থির ছিল সেইটিতে আগামী বছরের মে মাসের পূর্বে কাজ শুরু হইবে না বলিয়া জানা গেছে। প্রকাশ, বিদেশ হইতে যথাসময় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না আসার ফলেই ঐ প্রতিষ্ঠান চালু করার সময় পিছাইয়া দিতে হইয়াছে। ঐ প্রতিষ্ঠান ভবিয্যতে সম্প্রসারণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বেলগাছিয়ার আরও কয়েক বিঘা জমি সংগ্রহ করিবে।
বালিতে তৃতীয় দুগ্ধ প্রতিষ্ঠান: তৃতীয় যোজনাকালে বালিতে এই র্যজ্যের তৃতীয় দুগ্ধ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি ইত্যাদি দেখা হইতেছে বলিয়া প্রকাশ। ইউনিসেফ, টি-সি-এম প্রভৃতি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের অর্থ সাহায্যে নির্মিত বেলগাছিয়ার দুগ্ধ প্রতিষ্ঠান হইতে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার মণ দুধ পাওয়া যাইবে। হরিণঘাটা হইতে প্রাপ্ত দুধের পরিমান দৈনিক প্রায় দেড় হাজার মণ। ঐ দুইটি প্রতিষ্ঠান হইতে দৈনিক সাড়ে ছয় হাজার মণ দুধ পাওয়া গেলেও অবশ্য বৃহত্তর কলিকাতার চাহিদার অর্ধেকের বেশী মিটিবে না।

সোমবার, ১১ই অগ্রহায়ণ (৬ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, NOVEMBER 27, 1961

আট বছর পরে ময়দানের হকার্স কর্ণারপুলিশ শতবার্ষিকী, কলিকাতা “রবীন্দ্র সরোবর” স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান
দন্ত চিকিৎসার হাসপাতাল: শনিবার কলিকাতায় অনুষ্ঠিত রাজ্য দন্ত চিকিৎসক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ অনাথবন্ধু রায় দন্ত এবং সাধারণ শল্য চিকিৎসায় সমান গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলার সরকারী হাসপাতালের পাশে দন্তচিকিৎসার হাসপাতাল নির্মান করা সম্পর্কে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। প্রতিটি রাজ্যে একই ধরণের দন্তচিকিৎসার শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিৎ বলিয়া তিনি মনে করেন। যথোপযুক্ত সংখ্যক বাঙালী ছাত্র ডেন্টাল কলেজে বি-ডি-এস কোর্সে ভর্তি না হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ডাঃ বি সি বসাক বলেন যে, ভোর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আজ পর্যন্ত ভারতে অতিরিক্ত তেরটি নূতন ডেন্টাল হাসপাতাল নির্মান করা হয় নাই।


বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (৭ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) WEDNESDAY, NOVEMBER 29, 1961
• পরলোকে কীর্তিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় শ্রীহাবুল সরকার• আবর্জনা অপসারণে নাগরিক উদ্যোগ
• ডাইনে গাড়ি বাঁয়ে গাড়ি, ট্রাফিক গোলোকধাঁধার কলকাতা
• নগর দর্শন...
রেলের যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী: রেলের যন্ত্রপাতি লইয়া এক চলন্ত ‘শো-রুম’ মঙ্গলবার হইতে চার দিন শিয়ালদা স্টেশনে দেখা যাইবে। প্রয়োজনীয় যেসব যন্ত্রপাতির ঘাটতি রহিয়াছে এবং এখনও যেগুলি প্রধানত বিদেশ হইতে আমদানী করিতে হয়। সেই জাতীয় যন্ত্রপাতি উৎপাদনে এদেশের শিল্পমালিকদের উৎসাহ দিবার উদ্দেশ্যে ঐ শো-রুমটিকে ভারতের চারিদিকে ঘোরান হইতেছে। তিনটি কোচে প্রায় ৩৫০ টি যন্ত্রপাতির নমুনা লইয়া ঐ চলন্ত ‘শো-রুম’। শিয়ালদা’র পর হাওড়া স্টেশনে যাইবে এবং সেখানে থাকিবে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শীতের কলিকাতায় ফলের সমারোহ: শীতের মরশুম সুরু হইতে না হইতেই কলিকাতার বাজারে ফলের সমারোহ সুরু হইয়া গিয়াছে। ফলের মধ্যে অবশ্য এক কমলা লেবুরই ছড়া-ছড়ি। কিন্তু প্রাচুর্য থাকিলেও কমলা লেবুর বাজারেও বৈচিত্র্য বিশেষ নাই। বাজারে দার্জিলিংয়ের কমলালেবুরই একাধিপত্য, বিস্তর অনুসন্ধানে অসমীয়া লেবুর সন্ধান মিলিতে পারে, কিন্তু নাগপুরের লেবু এবছর একেবারেই বাজার ছাড়া। মঙ্গলবার বাজারে যে তিন হাজার ঝুড়ি লেবু আসিয়াছে তাহার প্রত্যেকটি দার্জিলিং এবং সিকিম হইতে। আসাম হইতে একটি ঝুড়িও নয়। এই অবস্থার কারণ বিশ্লেষণ করিতে গিয়া জনৈক পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন যে, প্রথমত ওয়াগনের অভাবে মাল চলাচলের অসুবিধা হইতেছে,দ্বিতীয়ত ভারত সরকার এই বৎসর ৯ লক্ষ টাকা মূল্যের লেবু পাকিস্তানে চালান দিবার অনুমতি দিয়াছেন। এছাড়া আরও কত লেবু যে বেআইনী ভাবে পাকিস্তানে যাইবে তাহা ত হিসাবের মধ্যে ধর্তব্যই নয়। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক অনুমান করেন যে, নিকট ভবিষ্যতে দার্জিলিংয়ের কমলা লেবুর দামও বাড়িবার সম্ভাবনা আছে।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২০০০ ঝুড়ি লেবু দার্জিলিং ও সিকিম হইতে এবং প্রায় ৮০০ ঝুড়ি লেবু আসাম হইতে কলিকাতার বাজারে আসিতেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি ঝুড়ি কিনিতেছে ২২ টাকা হইতে ২৪ টাকা দাম দিয়া। দুষ্প্রাপ্য নাগপুর লেবুর দাম ৮/১০ টাকায় একশত। বাজারে আঙুর এবং বেদানাও যথেষ্ট পাওয়া যাইতেছে কিন্তু অত্যন্ত চড়া দামে। পাকিস্তান সরকার স্থলপথ বন্ধ করিয়া দেওয়ায় আফগানিস্তান হইতে আঙুর ও বেদানা এখন উড়োজাহাজ যোগে কলিকাতায় আসিতেছে। স্বভাবিক চড়া দামের উপরে তাই এবার বাড়তি মাশুল ‘শাঁকের আঁটি।’

শুক্রবার, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (১০ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) FRIDAY, DECEMBER 1, 1961

পুলিশ শতবার্ষিকীর সমাপ্তি উৎসবে বিচিত্রানুষ্ঠান
নকল লড়াই, অশ্ব চালানোর কলা-কৌশল ও কুকুরের কেরামতি প্রদর্শন: পাঁচ দিন ধরিয়া বিচিত্র অনুষ্ঠান ও খেলাধূলার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিস বাহিনীর ‘ভারতীয় পুলিস শতবার্ষিকী উৎসব’ সমাপ্ত হয়। রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে ‘ট্যাটু’ এবং মুখাভিনয়ের সাহায্যে পুলিস কার্যকলাপ ও কসরতের এক বহুমুখী পরিচয় দর্শকদের সামনে উপস্থিত করা হয়।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঐ সমাপ্তি উৎসবে সভাপতিত্ব করেন। ডাঃ রায় বলেন, পুলিসকে তিনি ‘শান্তিবাহিনী’ এই নাম দিতে চেয়েছেন, কারণ শান্তি রক্ষাই তাঁহাদের প্রধান কাজ। ঐ শান্তিবাহিনীর সদস্যদের কর্তব্য নিজ দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার না করা। দেশকে অগ্রসর, উন্নত করা এবং দেশবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা।
কর্তব্যের প্রয়োজনে কখনও কখনও রূঢ় ব্যবহার করিলেও পুলিস কর্মচারীরা যে এই দেশের ও সমাজের লোক, জনসাধারণের মনেও এই বোধ জাগাইতে হইবে বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
শেষ দিনের উৎসবে শুধু পুলিস কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন নাই, দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য পুলিস কুকুর লাকি ও মিতা এবং পুলিস ট্রেনিং কলেজের ঘোড়াদেরও মাঠে নামান হয়। লাকি মিতা অপরাধীকে গ্রেফতার এবং হারানো জিনিস খুঁজিয়া বাহির করার ব্যাপারে তাহাদের চমৎকার কৌশল দেখায়। চৌদ্দটি ঘোড়া লইয়া পুলিস ক্যাডেটরা নানারকম অনুশীলন করেন।
‘লাল ও সবুজ’ বাহিনীর মধ্যে নকল লড়াইয়ের দৃশ্য এবং শেষে নানা দৃশ্যের মধ্য দিয়া ১০০ বছর ধরিয়া পুলিস বাহিনীর ক্রমিক পরিণতির রূপায়ণ যে অধিকাংশ দর্শকেরই মনোরঞ্জন করে তাহার প্রমাণ স্টেডিয়ামের চারিদিক হইতে বারবার হর্ষধ্বনি।
ঐ উৎসবের প্রথম দিনে যাঁহারা উপস্থিত ছিলেন তাঁহাদের নিকট শেষ দিনের ভীড়ও অনেক বেশী মনে হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরিয়া সমবেত কসরৎ জ্বলন্ত মশাল লইয়া খেলা এবং তাহার সঙ্গে পুলিসের ব্যাণ্ডে দেশীবিদেশী সুর বাজিয়া চলে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, কাজী নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের নানা পরিচিত গানের সুর চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে।

শনিবার, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (১১ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SATURDAY, DECEMBER 2, 1961

• শ্রীমতী সরলাবালা সরকার পরলোকে...
• গাগারিন সংবর্ধনার ব্যয় বরাদ্দ লইয়া মতভেদ...
কলিকাতায় শ্রীমতী খ্রীস্টেল স্টেফ্লার: কয়েকদিন পূর্বে শ্রীমতী খ্রীস্টেল স্টেফ্লার কলিকাতায় আসিয়াছেন। ভাইস কন্সাল হিসাবে কলিকাতাস্থ জার্মান কন্সাল জেনারেলের অফিসে শ্রীমতী স্টেফলার যোগদান করিয়াছেন। তিনি সংস্কৃতি দপ্তরের ভার গ্রহণ করিবেন। কলিকাতাস্থ অফিসের তিনি একমাত্র মহিলা সদস্য।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবগঠিত সিন্ডিকেটের প্রথম বৈঠক: শুক্রবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত সিন্ডিকেটের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনের বৈঠকে যথারীতি সিন্ডিকেটের কয়েকটি উপসমিতি পুনর্গঠিত করা হয়। প্রকাশ যে, কনস্টিট্যুয়েট কলেজগুলির যে নিয়মাবলী প্রণয়ন করা হইয়াছে, তাহা সিন্ডিকেট এই দিন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত করে। তবে এই নিয়মাবলী সম্পর্কে এই দিন সিন্ডিকেটে কোন আলোচনা হয় নাই বলিয়া জানা যায়।
বুলগেরিয়ার লোকনৃত্য ও সঙ্গীত দল: ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সাংস্কৃতিক দপ্তরের আমন্ত্রণে বুলগেরিয়ার ১৫ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি লোকনৃত্য ও সঙ্গীত দল আগামী ১৯শে ডিসেম্বর (১৯৬১) হইতে ২৩শে ডিসেম্বর পর্যন্ত কলিকাতায় থাকিবেন। ঐ সময় তাঁহারা কলিকাতার ক্যাথিডাল রোডস্থিত একাডেমি অব ফাইন আর্টসের প্রেক্ষাগৃহে প্রত্যহ সন্ধ্যা ৬টায় আগামী ২০শে, ২১শে ও ২২শে ডিসেম্বর এই তিনদিন তাঁহাদের অনুষ্ঠানাদি প্রদর্শন করিবেন।

রবিবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (১২ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SUNDAY, DECEMBER 3, 1961

নেতাজী ভবনে নেহেরু: শনিবার সন্ধ্যায় এলগিন রোডের নেতাজী ভবনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নেহেরুর চোখের সামনে অতীতের বহু স্মৃতি ভাসিয়া উঠিয়াছিল। পাশাপাশি দাঁড়াইয়া তরুণ নেতা সুভাষচন্দ্র ও জওহরলাল সুভাষচন্দ্রের গলায় মালা পরাইয়া জওহরলাল, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভার চিন্তামগ্ন নেহরুধীর শান্ত পদক্ষেপে ঘুরিতে ঘুরিতে আলোকচিত্রে ধরিয়া রাখা জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত প্রধানমন্ত্রী আবার যেন নূতন করিয়া দেখিলেন।
তিনি “নেতাজী সংগ্রহশালা” দেখিতে গিয়াছিলেন। নেতাজীর কর্মবহুল জীবনের অসংখ্য আলোক চিত্র সংশ্লিষ্ট বহু দলিল এবং সুভাষচন্দ্র ব্যবহৃত অনেক জিনিস সেখানে সযত্নে-সংরক্ষিতপ্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪০ মিনিটকাল ঘুরিয়া ঘুরিয়া সবকিছুই দেখিলেন। পাশে সস্নেহে টানিয়া লইয়াছিলেন বসু পরিবারের একটি ছোট্ট মেয়েকে।
দৃষ্টিতে আগ্রহ ছিল, কিন্তু তাঁহার মুখে খুব বেশী কথা ছিল না। মাত্র দু’একটি প্রশ্ন করিয়াছিলেন সেই রৌপ্যনির্মিত চরখাটির খোঁজ করিলেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সেটি নেতাজীকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। অন্তর্ধানের পূর্বে নেতাজী দাড়ি ছাঁটিবার জন্য যে ছোট্ট কাঁচিখানি ব্যবহার করিতেন তাহা দেখিয়া বেশ কিছুটা হাসিলেন, আজাদ হিন্দ সরকারে সাংগঠনিক কাঠামোর যে চার্টটি আছে এই সংগ্রহশালায় অশেষ আগ্রহের সঙ্গে সেটি দেখিলেন। যে মোটর গাড়িখানি সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধানের প্রথম পর্বে ব্যবহৃত হইয়াছিল একদা শ্রী নেহেরুও সেইখানি ব্যবহার করিয়াছিলেন। সংগ্রহশালায় সযত্নে সেই গাড়িখানিও রক্ষিত।

সোমবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, DECEMBER 4. 1961

• বিমান ভ্রমণে তিনজন বিদেশী যুবক কলিকাতায় উপস্থিত...
যে সিঁড়ি দিয়া নেতাজী গৃহ ত্যাগ করেন, ভাঙ্গিয়া ফেলিতে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি: ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের এক বর্ষণসিক্ত দিনে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর এলগিন রোডের বাড়ী থেকে উধাও হন। দোতলার ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পিছনের যে সিঁড়ি দিয়ে সেদিন তিনি নেমে এসেছিলেন সে সিঁড়ি দিয়েই দোতলায় উঠতে উঠতে গত শনিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় মন্তব্য করেন, “আমার তো মনে হয় সিঁড়িটা রাখাই ভাল।” বাড়ীটির (বর্তমানে নেতাজী ভবন) পিছনে একটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সিঁড়িটি ভেঙ্গে ফেললে প্রেক্ষাগৃহের জন্য আরও তিন কাঠা পরিমান জায়গা পাওয়া যায়। ডাঃ রায় বলেন, “আমার তো মন ওঠে না (অর্থাৎ ভেঙ্গে ফেলতে মন ওঠে না), ওটা রাখাই তো উচিৎ। অবশ্য দেশত্যাগের পূর্ব মূহুর্তে সুভাষচন্দ্র যে ঘরটিতে ছিলেন এবং বাড়ীর পিছনের যে সিঁড়ি দিয়ে তিনি একতলায় নেমে আসেন এ দুটি যথাযথ রেখে সমস্ত বাড়ীটি ভেঙ্গে যদি নতুন ভাবে পরিকল্পনা করা যায় তবে ভাল হয় বলে ডাঃ রায় অভিমত দেন। তাঁর বক্তব্য সুস্পষ্ট করার জন্য নক্সা এঁকে তিনি বাড়ীর প্লানটি স্থপতিকে বুঝান। প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহেরুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় শনিবার সন্ধ্যায় নেতাজী ভবন ও নেতাজী রিসার্চ ব্যুরো পরিদর্শনে আসেন।
সোমবার সোভিয়েট মহাকাশচারী মেজর য়ুরি গাগারিনের কলিকাতা আগমন: সোভিয়েট মহাকাশচারী মেজর য়ুরি গাগারিন এবং তাঁহার পত্নী মিসেস ভ্যালেস্তিনা গাগারিন সোমবার কলিকাতায় আসিয়া পৌঁছিতেছেন। বেলা ১১-২০তে তাঁহার বিমানখানি দমদমে অবতরণ করিবে বলিয়া আশা করা যায়। তারপর তিনি সস্ত্রীক রাজভবনে যাইবেন। বেলা ১২টা ১৫মিঃ কলিকাতাস্থ সোভিয়েট দুতাবাসে মেজর গাগারিন সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দিবেন। বেলা তিনটায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে কলিকাতার মেয়র তাঁহাকে নাগরিক সম্বর্ধনা জানাইবেন। বেলা ৪টা হইতে ৫টা ৩০মিঃ রাজভবনে রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু মেজর ও মিসেস গাগারিনকে এক সম্বর্ধনায় আপ্যায়িত করিবেন। সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিঃ কলিকাতা প্রেস ক্লাবের শিবিরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহিত তিনি মিলিত হইবেন। মেজর গাগারিন ৬ই ডিসেম্বর সকালে কলিকাতা হইতে হায়দরাবাদে রওনা হইবেন। ৫ তারিখেও তাঁহার কর্মসূচী ব্যস্ততায় ভরা আছে।

কলিকাতায় চায়ের প্রকাশ্য বিক্রয়ের শতবর্ষপূর্তিতে স্মারক হিসাবে গত ২রা ডিসেম্বর শনিবার
প্রধানমন্ত্রী বহুসংখ্যক বিদেশী ক্রেতার উপস্থিতিতে চা শতবার্ষিকী নীলাম উদ্বোধন করেন।
ছবিতে বাম হইতে দক্ষিণে: শ্রী জি এ হুইটেকার (চেয়ারম্যান, ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন),
শ্রীজীবন মুখার্জী (ডিরেক্টর অব টি প্রোমোশন, টি বোর্ড), শ্রী এ এস রাম (চেয়ারম্যান, টি বোর্ড),
শ্রী ভি পারেখ (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জে টমাস এ্যান্ড কোং লিমিটেড ও টি বোর্ডের সদস্য), প্রধানমন্ত্রী এবং
শ্রী কে ঘোষকে (ভাইস-চেয়ারম্যান, ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স এ্যাসোসিয়েশন ও টি বোর্ডের সদস্য) দেখা যাইতেছে।

রাষ্ট্রপতির ৭৮ তম জন্মোৎসব কলিকাতায় উদযাপন: রবিবার সারা ভারতের সঙ্গে একযোগে কলিকাতায় রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের ৭৮ তম জন্মোৎসব উদযাপিত হয়। বিভিন্ন জনসভায় তাঁহার দীর্ঘ জীবন কামনা করা হয়। ঐ উপলক্ষে সন্ধ্যায় কলিকাতার রত্ন সরকার লেনে ‘রাজেন্দ্র ছাত্র ভবনে’ এক জনসভার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। বিভিন্ন বক্তা তাঁহাদের ভাষণে জাতীয় সংহতির প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় বলেন যে, সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী ও জাতির মধ্যে ঐক্য বিধানের জন্য ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের আদর্শ অনুসরণ করা উচিৎ। দেশের স্বাধীনতা ও উন্নতির জন্য ডাঃ প্রসাদের অতুলনীয় আত্মত্যাগের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। সভাপতি পশ্চিমবঙ্গের স্বায়ত্তসাসন মন্ত্রী শ্রীঈশ্বরদাস জালান বলেন, কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ছাত্রদের সর্বভাবে প্রস্তুত হইতে হইবে। শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ বলেন, ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ গান্ধীজীর অনুগত শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম। শ্রীসীতারাম সাকসেরিয়া, শ্রীবাচু প্রসাদ সিংহ, শ্রীলাথমল হিমতসিংকা ও শ্রীঅনন্ত মিশ্র ভাষণ দেন।

মঙ্গলবার, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৮ (১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, DECEMBER 5, 1961

• মহাকাশচারী বাকসিদ্ধও বটে: সাংবাদিক সম্মেলনে গাগারিন...
নাগরিক সম্বর্ধনার উত্তরে ভারতের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা: সোভিয়েট মহাকাশচারী মেজর য়ুরি গাগারিনকে সোমবার কলিকাতায় নাগরিক সম্বর্ধনা জানান হয়। মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার কলিকাতার নাগরিকদের পক্ষ হইতে তাঁহাকে বাংলা ভাষায় রচিত মানপত্র অশোকস্তম্ভের একটি ধাতব প্রতিকৃতির মধ্যে করিয়া উপহার দেন।
“মহাকাশ অপূর্ব ক্রীড়াঙ্গন”, প্রেস ক্লাবে গাগারিন: সম্মিলিত আবিস্কারের এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার এক “অপূর্ব ক্রীড়াঙ্গণে” মহাকাশ পরিণত হইতে পারে। প্রথম সোভিয়েট মহাকাশচারী মেজর য়ুরি গাগারিন সোমবার সন্ধ্যায় কলিকাতার সাংবাদিকদের নিকট এই মহান সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। মেজর গাগারিন আবার বলেন, “মহাকাশ অনন্ত অসীম। সেইখানে প্রত্যেকেরই ঠাঁই হইতে পারে।” সন্ধ্যাবেলা ময়দানে প্রেস-ক্লাবের প্রাঙ্গণে ঐ প্রীতি সম্মেলনে তিনি কলিকাতার সাংবাদিকদের সহিত মিলিত হন। কলিকাতা প্রেস ক্লাব এবং ভারতীয় সংবাদপত্রসেবী সঙ্ঘের উদ্যোগে ঐ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মঙ্গলবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) TUESDAY, DECEMBER 6, 1960

• কলিকাতায় পশ্চিমবঙ্গ হস্তশিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন...

বৃহস্পতিবার, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) THURSDAY, DECEMBER 8, 1960

কলিকাতায় সোভিয়েট যুব প্রতিনিধিদল: বুধবার মেয়র শ্রীকেশবচন্দ্র বসু কলিকাতা কর্পোরেশন ভবনে রাশিয়া হইতে আগত এক যুব প্রতিনিধিদলকে সম্বর্ধনা জানান। প্রতিনিধিদলের নেতা, মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শ্রী এ আর ভেজিরোভ শুভেচ্ছা সহ, একটি ফাউন্টেন পেন মেয়রকে উপহার দেন। কলিকাতার নাগরিকদের পক্ষে মেয়র শ্রী বসুও প্রতিনিধিদলের নেতাকে গজদন্তনির্মিত একটি ‘অশোকস্তম্ভ’ উপহার দেন। প্রতিনিধিদলকে সম্বর্ধনা জানাইয়া মেয়র শ্রী বসু বলেন যে, যুবশক্তিই জাতির মেরুদণ্ড এবং এই শক্তিই জাতির ভবিষ্যৎ গড়িয়া তুলিবে। তিনি বলেন যে, বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান দেশের যুব-প্রতিনিধিদল ভারতের বৃহত্তম শহর পরিদর্শনে আসিয়াছেন। এই দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবহিত হইবার জন্য তিনি প্রতিনিধিদলকে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করিবার জন্য অনুরোধ জানান। ঐ প্রতিনিধিদল কলিকাতায় দুইদিন অবস্থান করিবেন। প্রতিনিধিদলের মোট ১৫জন সদস্য আছেন। ইহার মধ্যে ৪জন মহিলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবৃন্দের পক্ষ হইতে সম্বর্ধনা: বুধবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ হইতে সোভিয়েট যুব-প্রতিনিধিদলকে সম্বর্ধনা জানান হয়। এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সুবোধ মিত্র সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাইতে উঠিয়া ডঃ মিত্র বলেন, তাঁহারা এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিয়াছেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা সকল দিক দিয়াই পৃথিবীর যে কোন দেশের ছাত্রছাত্রীদের সমকক্ষ। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্য এবং সদস্যাগণ সোভিয়েট দেশের লোকসঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

শনিবার, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) SATURDAY, DECEMBER 10, 1960

• কলিকাতায় এডমণ্ড হিলারি... • কলিকাতার দক্ষিণ উপকণ্ঠে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নয়া শহরের পত্তন...
রবিবার, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (২০শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) SUNDAY, DECEMBER 11, 1960

• প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পৌরসভার নির্বাচন...
• পর্যটনের বিস্তার সাধন...
• নিত্য দিন যাপনের গ্লানি: দশটা-পাঁচটা...
• স্বর্গত চারুচন্দ্র বিশ্বাস, শেষ ক্রিয়া সম্পন্ন...
• বাষট্টি বছরেও বাহাদুর: জিন বোরোট্রার উপভোগ্য টেনিস...
কলিকাতায় নেতাজীর কন্যা অনীতা: ভারতের জন-গণ-মন অধিনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা শ্রীমতী অনীতা বসু ভিয়েনা বইতে আজ, রবিবার পূর্বাহ্ন ১১টা নাগাদ কলিকাতা পৌঁছিতেছেন। শ্রীমতী অনীতা এই প্রথম ভারতে পদার্পণ করিতেছেন। কোয়ান্টাস এম্পায়ার এয়ার লাইনস-এর একখানি বিমানে তিনি দমদম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছিয়াই সরাসরি নেতাজী ভবনে যাইবেন। ৩৮।২ এলগিন রোডের ঐ ঐতিহাসিক ভবন হইতেই অনীতার পিতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র ১৯৪৯ সালের জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি এক রাত্রিতে পুলিস প্রহরীর সতর্ক দৃষ্টি এড়াইয়া অন্তর্ধান হন। অনীতা ভারত পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহেরুর সহিত সাক্ষাতের জন্য নয়াদিল্লি যাইবেন। কলিকাতা পৌঁছাবার পর তাঁহার কার্যসূচী চূড়ান্ত ভাবে ঠিক হইবে।
পুলিসের ও বেলঘরিয়া অঞ্চলে নিস্তার নাই বেপরোয়া গুণ্ডামি: গত শুক্রবার রাত্রি প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ বেলঘরিয়া অঞ্চলে একদল গুণ্ডার হাতে বরাহনগর থানার জনৈক পুলিস কর্মচারী গুরুতররূপে আহত হইয়াছেন বলিয়া এক সংবাদ পাওয়া গিয়াছে। সংবাদে প্রকাশ, উক্ত পুলিস কর্মচারী সিনেমা দেখিয়া ফিরিবার সময় গুণ্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হইবার পর হাসপাতালে প্রেরিত হয়। তাঁহার একটি চক্ষু নাকি নষ্ট হইয়া গিয়াছে। পুলিস এই ঘটনাটি সম্পর্কে জোর তদন্ত চালাইতেছে।

সোমবার, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (২১শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) MONDAY, DECEMBER 12, 1960

• নেতাজীর স্বপ্নের ভারতবর্ষকে জানিবার আগ্রহ... • হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদ, স্টুডেন্টস্ হলে সভা... কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকী...
বুধবার, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) WEDNESDAY, DECEMBER 14, 1960

• ফেরিওয়ালাদের বিধানসভা অভিমুখে অভিযান...
বিজয়গড়ে যুবক ছুরিকাহত: মঙ্গলবার রাত্রে যাদবপুর বিজয়গড় কলোনীতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত কর্তৃক জনৈক যুবক গুরুতররূপে ছুরিকাহত হয়। আহতাবস্থায় তাঁহাকে বাঙ্গুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় বলিয়া প্রকাশ। যুবকটির নাম শ্রীবিভূতি চক্রবর্তী। অবশ্য তাহার বাবা তাহাকে বিনয় বলিয়াই ডাকে। বয়স বাইশ।

বৃহস্পতিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৩৬৭ (২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) THURSDAY, DECEMBER 15, 1960

• কলিকাতা পৌরসভা: ১৯৬১-৬২ সালের ঘাটতি বাজেট...
বিচিত্র মিছিল: মিছিলের কাহারও মাথায় ফলের ঝাঁকা, কাহারও হাতে ফুলুরি ভাজার উনুন, কেহ বা রঙীন গ্যাস-বেলুনের ঝঁক উড়াইতেছে। বুধবার বিকালের মধ্যে কলিকাতার পথে ফল-ফুলুরি সাজ সরঞ্জাম হাতে ফেরিওয়ালাদের ঐ বিচিত্র মিছিল দেখা যায়। শহরের পথপার্শ্ব হইতে ফেরিওয়ালা উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঐ দিন বিকালে বেঙ্গল হকার্স এসোশিয়েশনের পক্ষ হইতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা অভিমুখে ঐ মিছিল পরিচালিত হয়। মিছিলটি পথ পরিক্রমার সময় নানাস্থানে যানবাহনের চলাচল ব্যাহত হয়। অবশেষে মিছিলটি রাজভবনের সম্মুখে উপস্থিত হইলে পুলিশ উহার গতিরোধ করে। তখন কয়েকজন নেতা বিধানসভা ভবনে যান এবং ফিরিয়া আসিয়া জানান যে, মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তাঁহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে সম্মত হইয়াছেন। ইহা শুনার পর ঐ মিছিলে অংশ গ্রহণকারীরা ফিরিয়া যান। তাহার পূর্বে ঐখানে ফেরিওয়ালাদের দাবির সমর্থনে শ্রীচিত্ত বসু এম এল এ, শ্রীনলিনী গুহ প্রভৃতি ভাষণ দেন।
যাদবপুরে শিল্প এস্টেট: শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররা যাহাতে কিছু কিছু আয় করিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অভ্যন্তরেই একটি ‘শিল্প এস্টেট’ নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হইবে বলিয়া আশা করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় অর্থমঞ্জুরী কমিশনের উদ্যোগে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এরূপ এস্টেট নির্মানের সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলে ছাত্রদের অর্থোপার্জনের উপায় করিয়া দেওয়ার জন্য এই ধরণের উদ্যোগ সর্বপ্রথম করা হইতেছে। শিল্প এস্টেটটি নির্মানের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই প্রায় এক একর জমির বন্দোবস্ত করিয়াছেন। ইহার নির্মাণকার্য শেষ হইলে ঘন্টা পিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ছাত্রদের কারখানায় কাজ করিবার সুযোগ দেওয়া হইবে। এস্টেটির অন্তর্ভুক্ত ছোটখাট যন্ত্রপাতি নির্মাণের কারখানায় কয়েকটি বড় শিল্পসংস্থা প্রধানত কাজ সরবরাহ করিবে বলিয়া কথা হইয়াছে। ইহা ছাড়াও ইচ্ছা করিলে এস্টেট কর্তৃপক্ষ বাহিরের কাজও গ্রহণ করিতে পারিবেন।
শিক্ষা ও আনন্দদানের মধ্যে সমতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা: বুধবার কলিকাতায় এক বক্তৃতা প্রসঙ্গে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ এবং ‘দেশ’-এর সম্পাদক শ্রীঅশোককুমার সরকার শিক্ষাদান ও আনন্দদান,এই দুইটি প্রধান উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি স্থির সমতা রক্ষা করিয়া এ দেশের সংবাদপত্রগুলির সংবাদ পরিবেশনে অগ্রণী হইবার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্রগুলি যদি ঐভাবে চলিতে পারে, তবে তাহারা নিশ্চিতরূপে যুবাবৃদ্ধনির্বিশেষে পাঠকসাধারণের উপর তাহাদের প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে সক্ষম হইবে।

শনিবার, ২রা পৌষ, ১৩৬৭ (২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) SATURDAY, DECEMBER 17, 1960

• এন্টালী সংস্কৃতি ও শিল্প মেলা...
• বাঙ্গলার বিনা উইকেটে ১৪৪ রান...
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি: জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে চারিদিকে রবীন্দ্রনাথের জীবনের বিশেষত বাল্য ও যৌবনের নানা স্মৃতির ছবি তাঁহার ‘জীবনস্মৃতি’ এবং ‘ছেলেবেলা’ গ্রন্থে স্থান পাইয়াছে। ঐ বাড়িটিতে যখন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগ্রহশালা স্থাপিত হইবে তখন যতদূর সম্ভব কবিগুরুর বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ঐতিহাসিক বাড়ির নানা অংশ সংরক্ষণের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার লক্ষ রাখিবেন বলিয়া আশা করা যায়। প্রকাশ, ঐ উদ্দেশ্যে উক্ত দুইটি পুস্তক হইতে জোড়াসাঁকোর বাড়ির নানা বর্ণনায় উদ্ধৃতি তাঁহারা ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করিয়াছেন। শতবার্ষিকী বৎসরেই জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সূত্রপাত হইবে বলিয়া সরকারী মহল মনে করেন।
শিশুকন্যার দাবি লইয়া মামলা: উত্তর কলিকাতার এক নার্সিং হোমে গত জানুয়ারী মাসে একই সপ্তাহে দুইটি শিশুকন্যা জন্মলাভ করে। তাহাদের মধ্যে একটির দাবি লইয়া শ্রীমতী মায়া নিয়োগী এবং শ্রীমতী বীণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে যে বিরোধ বাধে, সেই সম্পর্কে কলিকাতার প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এম রায়ের নিকট শেষোক্ত স্ত্রীলোক মামলা দায়ের করেন। শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, শ্রীমতী নিয়োগী তাঁহার শিশুকন্যাকে নার্সিং হোং হইতে অপহরণ করিয়া তৎস্থানে তাঁহার শিশুকন্যাকে রাখিয়া যান। নার্সিং হোমের মালিক এবং তিনজন নার্স এই কার্যে সহায়তা করিয়াছেন বলিয়াও অভিযোগ করা হয়। এই ধরণের মামলা এই দেশে প্রথম। ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত রায় দান স্থগিত রাখিয়াছেন।

রবিবার, ৩রা পৌষ, ১৩৬৭ (২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) SUNDAY, DECEMBER 18, 1960

শিশুমেলা: শিশুপ্রতিভাকে পরিণত মানুষের প্রতিভারই নকলনবীশ মনে করা ভুল হবে। কারণ ‘শিশুর মনই সবচেয়ে বেশী আন্তরিক এবং মৌলিক’। তার অদীক্ষিত মন শিল্পের ক্ষেত্রে এমন অনেক কিছুই সৃষ্টি করতে পারে যা পরিণত মানুষকেও বিস্মিত করে। এর প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে চিত্রকলার ক্ষেত্রে। শিশুদের আঁকা ছবির মতই নৃত্যে-গীতে-অভিনয়েও তারা এক নতুন দিগন্তের দিকদর্শক। শীতের মরশুমে বাংলার শিশু রংমহল এমন এক কল্পরাজ্য গড়ে তোলে যার মধ্যে জীবন আরও জীবন্ত।
প্রথম জাতীয় কৃষিমেলা: বেহালার নিকট তারাতলা রোডে ভারতের প্রথম জাতীয় কৃষিমেলার উদ্বোধন হইতেছে আগামী ৮ই জানুয়ারী। মেলা চলিবে ২৮শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। উপরাষ্ট্রপতি ডাঃ রাধাকৃষ্ণন মেলার উদ্বোধন করিবেন এবং ইংলণ্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৮ই ফেব্রুয়ারী সকালে মেলা পরিদর্শনে আসিবেন। ঐ সকল তথ্য জানান কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী ডঃ পাঞ্জাব রাও দেশমুখ। শুক্রবার তারাতলায় এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি প্রসঙ্গক্রমে আরও জানান, সরকার আশা করেন, এই বছর ধানের উৎপাদন রেকর্ড সৃষ্টি করিবে। ১৯৫৮-৫৯
সালে সর্বাধিক ৩ কোটি টন ধান হইয়াছিল, এই বছর উহা অপেক্ষা অন্তত ১০ লক্ষ টন বেশী ধান হইবে বলিয়া অনুমিত হইতেছে। পঙ্গপাল এবারে তেমন ক্ষতি করিতে পারে নাই বলিয়াও তিনি উল্লেখ করেন।

সোমবার, ৪ঠা পৌষ, ১৩৬৭ (২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) December 19, 1960

• শিল্পকলার উৎকর্ষ সাধনে বলিষ্ঠ ও দৃঢ় পদক্ষেপ...
• কলিকাতায় পরিবার পরিকল্পনা দিবস...
মঙ্গলবার, ৫ই পৌষ, ১৩৬৭ (২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) December 20, 1960
মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-ভবনে
নিখিল-ভারত উৎপাদক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় ত্রৈ মাসিক
সভা উদ্বোধন করিতেছেন। চিত্রে অন্যান্য যাঁহাদিগকে দেখা
যাইতেছে, তাঁহারা হইতেছেন (বাম হইতে দক্ষিণে) অভ্যর্থনা
সমিতির সভাপতি শ্রী জি বসু, উৎপাদক সমিতির সভাপতি শ্রী জি ভি
পুরাণিক, সহ-সভাপতি শ্রী এস রায় ও শ্রী বি মৈত্র। ফটো: আনন্দবাজার
জাতীয় অধ্যাপক ডঃ সত্যেন বসু সোমবার অপরাহ্নে
আর জি কর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান
ছাত্রগণের পুনর্মিলন উৎসবের উদ্বোধন করিতেছেন।
উৎসবটি ২১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলিবে। অধ্যাপক
বসুর পাশেই উৎসবের সভাপতি ডঃ নিহার মুন্সীকে
উপবিষ্ট দেখা যাইতেছে। ফটো: আনন্দবাজার

• শ্রীশ্রীমায়ের শুভ তিথি পূজা...দুই দল ফলবিক্রেতার মধ্যে হাঙ্গামা: সোমবার বিকালে নিউমার্কেটে বিবাদমান দুই দল ফলবিক্রেতার মধ্যে এক হাঙ্গামার ফলে কয়েকজন সামান্য আহত হয় বলিয়া জানা যায়। ঘটনার প্রতিবাদে এইদিন নিউমার্কেটের ‘কে ব্লকের’ লাইসেন্সপ্রাপ্ত সকল ফলবিক্রেতা নিজ নিজ স্টল বন্ধ রাখিয়া তিনটা হইতে রাত্রি আটটা পর্যন্ত প্রতীক ধর্মঘট পালন করে। পুলিস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া অবস্থা আয়ত্তে আনে। এ সম্পর্কে কাহাকেও গ্রেপ্তার করা হয় নাই।

বুধবার, ৬ই পৌষ,১৩৬৭ (৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৮৮২ শকাব্দ) December 21, 1960

পল্লীসংগঠন সমিতির হস্তশিল্প প্রদর্শনী: রবিবার সকালে কলিকাতার আশুতোষ কলেজ হলে বঙ্গীয় পল্লীসংগঠন সমিতি কর্তৃক আয়োজিত এক হস্তশিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জয়পুরের মহারাণী শ্রীমতি গায়ত্রী দেবী। ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন গ্রহন করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ডঃ শ্রীমালি। এই প্রদর্শনীতে কল্যাণ সমিতি শিল্প বিদ্যালয়, চিত্তরঞ্জন শিক্ষক-শিক্ষণ পরিষদ, দেশবন্ধু বালিকা ভবন এবং শিশু বিদ্যামন্দিরের (বিভিন্ন শ্রেণীর) ছাত্রীদের তৈয়ারী নানাবিধ হস্তশিল্প সামগ্রী প্রদর্শিত হয়। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বঙ্গীয় পল্লীসংগঠন সমিতিই পরিচালনা করেন। নানা প্রকার হাতের কাজ, বিভিন্ন ধরনের পুতুল, সূচিশিল্প, নক্সা প্রভৃতি এই প্রদর্শনীর সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করে। শ্রীমতি গায়ত্রী দেবী এই সকল শিল্প কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁহার মতে প্রদর্শিত শিল্প বস্তুগুলি “খুবই উচ্চ শ্রেণীর কাজ” হইয়াছে। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদিকা শ্রীমতি গীতা মুখার্জীতাঁহার ভাষণে এই সংগঠনের বিভিন্ন কল্যাণকর কার্যের এক পরিচয় দেন। তিনি বলেন, বঙ্গীয় পল্লীসংগঠন সমিতির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৩ সালে। ইহার উদ্দেশ্য হইতেছে পল্লী অঞ্চলের দুর্গতদের সেবা করা। গত দুর্ভিক্ষের সময় এই সংগঠন পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে সাহায্যকেন্দ্র স্থাপন করিয়া দুধ, কাপড় , ঔষধ ইত্যাদি বিতরণ করেন। কলিকাতায় সস্তাদরে খাদ্য সরবরাহ করিবার জন্য একটি ক্যান্টিন এবং শিশু ও প্রসূতিদিগকে বিনা মূল্যে দুধ বিতরণের জন্য একটি কেন্দ্রও খোলা হয়। ১৯৪৬ সালে ডায়মন্ডহারবারে পল্লী পুনর্গঠনের জন্য “আদর্শ গ্রাম পরিকল্পনা” রূপায়িত হয়। ১৯৪৮ সালে বেলতলায় ৩৫টি নোয়াখালির উৎপীড়িতা বালিকাকে লইয়া দেশবন্ধু বালিকা ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই ভবন এইরূপ ১৫০টি বালিকাকে আশ্রয় দিয়াছে।
মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব স্পোর্টস: মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বার্ষিক স্পোর্টস বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হইয়াছে। কলিকাতার মেয়র শ্রীকেশবচন্দ্র বসু সভাপতির আসন গ্রহন করেন ও শ্রীযুক্তা ঊষা বসু পুরস্কার বিতরণ করেন। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব মোট ৪৪ পয়েন্ট পাইয়া দলগত চ্যাম্পিয়ান হইয়াছে। ঐ ক্লাবের সভ্য ডি বীর মোট ১৩ পয়েন্ট পাইয়া ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ান হয়। মহিলা বিভাগের দলগত চ্যাম্পিয়ান হইয়াছে ক্যালকাটা রেঞ্জার্স ক্লাব মোট ৩৯ পয়েন্ট পাইয়া। ঐ ক্লাবের সভ্যা মিস এম হকিন্স মোট ১৮ পয়েন্ট পাইয়া ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ান হয়।


আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।



Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অতীতের তাঁরাতারাদের চোখেআমার শহরশিরোনামে শেষ তিরিশ • আনাচে-কানাচে

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.