৫ পৌষ ১৪১৮ বুধবার ২১ ডিসেম্বর ২০১১





মহাকাশচারী বাকসিদ্ধও বটে: সাংবাদিক সম্মেলনে গাগারিন





প্রায় আট মাস পূর্বে যে মানুষটির মহাকাশ পরিক্রমা সমগ্র বিশ্বকে চমকিত করিয়াছিল সোমবার দেখা গেল তিনি বাকসিদ্ধ পুরুষও বটে। কলিকাতার সাংবাদিকেরা তাঁহার নৈপুণ্যে রীতিমত বিস্মিত।

য়ুরি গ্যাগারিনের কথা বলিতেছি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে যে কোন ঝানু রাজনীতিবিদকেও ইনি টেক্কা দিতে পারেন।

দমদম বিমান বন্দরে পৌঁছিবার এক ঘন্টার মধ্যেই সস্ত্রীক মেজর গ্যাগারিন রুশদূতাবাসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মলনে উপস্থিত হন। সাজগোছে ছিমছাম সাধারণ মানুষ। মাঝারি গড়ন। সপ্রতিভ। বুদ্ধিমান। প্রশ্নোত্তরের সময় কখনও কখনও হাত নাড়িয়া সহজ সরলবাবে মহাশূন্যের অভিজ্ঞতা বুঝাইবার চেষ্টা করিলেন।

রাজনীতির ধারেকাছেও গেলেন না মেজর গ্যাগারিন। প্রশ্ন করা হইল, “মহাকাশ-ভ্রমণের সাফল্য অর্জনের আজ আপনি ব্যক্তিগতভাবে যতটা প্রশংসা অর্জন করিয়াছেন, স্তালিনের আমলে এই ধরণের কৃতিত্বের জন্য আপনি ততটা প্রশংসা পাইতেন কি? ” রুশ মহাকাশচারী পাশ কাটাইয়া উত্তর দিলেন, “প্রশংসা পাওয়া না পাওয়া রাজত্বের উপর নির্ভর কর না, করে বিশ্বের মানুষের উপর।”

অসাধারণ তৎপরতার সঙ্গে নিজ স্ত্রীকেও তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের ঝকমারি হইতে রক্ষা করেন। একজন সাংবাদিক শ্রীমতী গ্যাগারিনকে প্রশ্ন করিবার অনুমতি চাহিলেন। মেজর গ্যাগারিন সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিলেন, “না, এ সাংবাদিক সম্মেলন আমার, এখানে ওঁর কোন ভূমিকা নাই।”

পাকাপাকিভাবে বসবাসের জন্য পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যে একটিকে বাছিয়া লইতে হইলে আপনি কি করিবেন?এই প্রশ্নের উত্তর দিতেও বিশ্বের প্রথম মহাকাশচারীকে সমান্য চিন্তিত দেখা গেল না। সহজ সরলভাবে বলিলেন, “আগে চাঁদ তো দেখি। চাঁদ না দেখিয়া কি করিয়া বলিব পৃথিবীর তুলনায় তাহা আকর্ষনীয় কিনা।

তবে মেজর গ্যাগারিন আসা প্রকাশ করেন, “আগামী পাঁচ বৎসরের মধ্যেই আমরা চাঁদে পৌঁছাইতে পারিব। সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা সেজন্য প্রস্তুত হইতেছেন।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মহাকাশযানগুলো এত বড় যে কেহ মহাশূন্যে সূঁচের বেড়াজাল সৃষ্টি করিলেও আমাদের যাত্রা বন্ধ হইবে না। ইহার ফলে আমাদের তেমন কোন অসুবিধার আশঙ্কা নাই।”

এই সাংবাদিক সম্মেলনেই দৃঢ় বিশ্বাসী কমিউনিস্টের মত মেজর গ্যাগারিন ঘোষণা করেন যে, তিনি অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাসী নহেন। “আমি মহাশূন্যে তেমন কোন শক্তির অস্তিত্বও অনুভব করি নাই। মাধ্যাকর্ষণের নাগালের বাইরেও আমি বৈজ্ঞানিকদের বিস্ময়কর সৃষ্টির মধ্যে স্বাভাবিকভাবে সময় কাটাইয়াছি।”

সাদর অভ্যর্থনার জন্য রুশ মহাকাশচারী কলিকাতাবাসীদের ধন্যবাদ জানান। সমগ্র ভারতবাসী, ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকটেও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ, ইহাদের সকলের আতিথেয়তা তাঁহাকে মূগ্ধ করিয়াছে।




Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.