আজকের খবর
• ম্যারাথনে জয়ের দৌড়ে এক বিশ্ব-নাগরিক: দৌড় আবার কোনও খেলা হতে পারে নাকি! বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না সতেরো বছরের ছেলেটার। “আমার কাছে তো দৌড় মানে জীবন। যত বার দেখেছি মরে যেতে পারি, তত বার শুধু দৌড়ে গিয়েছি। প্রাণ হাতে করে। সেই কাজটা খেলাচ্ছলে করব কী করে!”
• যোগেশ্বরের প্যাঁচে শেষবেলায় পদক: প্রথম রাউন্ড কোরিয়ানের। দ্বিতীয় রাউন্ড একই ভাবে এক চুলের ব্যবধানে জিতে সমতা আনলেন ভারতীয় পালোয়ান। ১-১ অবস্থায় এর পর তৃতীয় রাউন্ড যাঁর, অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক তাঁরই। এবং সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ঊনত্রিশ বছরের হরিয়ানভি একের পর এক পাক দিয়ে ম্যাট-এর ওপর আছড়ে ফেললেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে।
• ‘ক্লাবের লোগো’ লাগিয়ে খেলল নেইমাররা
• অতিরিক্ত প্র্যাক্টিসের ধকলই ডোবাল
• ভালবাসার পদক নিয়ে ফিরছেন পিস্টোরিয়াস
• বোল্টকে এ বার চারশো মিটারে দেখতে চাই
• বিশ্বরেকর্ড করে শেষ হল বোল্টের মিশন লন্ডন
 
সোনার সফর
অ্যাথলেটিক্স মহিলাদের ৪*৪০০ মিটার রিলেতে জয়লাভের পর জাতীয় পতাকা জড়িয়ে চার মার্কিন কন্যা। ছবি: এএফপি

খবরের ঝুলি থেকে
• পা না থেকেও স্বপ্নের দৌড়ে ‘ব্লেড রানার’: জন্মের সময় দুই হাঁটুরই ফিবুলা হাড় ছিল না। শিশুটিকে বাঁচাতে তাই হাঁটুর নীচ থেকে দুই পা-ই বাদ দিতে হয়। এর পরেও কি দৌড়নো সম্ভব? বিশেষ করে অলিম্পিকে? দক্ষিণ আফ্রিকার অস্কার পিস্টোরিয়াস দেখালেন, সম্ভব। তিনি দৌড়চ্ছেন, কারণ তিনি দৌড়তে চেয়েছিলেন। একটাও পা না থাকা সত্ত্বেও।
• আমিই সর্বকালের সেরা, বলে দিচ্ছেন বোল্ট: ‘বোল্ট বিদ্যুৎ আবার ঝলসাল..দু’বার।’ ‘দ্য গ্রেটেস্ট’। ‘কিং অব দ্য ট্র্যাক।’ জনসংখ্যা কত হবে দেশটার? মেরেকেটে পঞ্চাশ লক্ষ। কে-ই বা ভেবেছিল, ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ জামাইকার হাত ধরে পাল্টে যাবে স্প্রিন্টের ইতিহাস? মাইকেল ফেল্পসের সঙ্গে অলিম্পিকের সর্বকালের সেরার লড়াইয়ে তুলে আনতে হবে জামাইকার এক অধিবাসীকে?
• সেয়ানে-সেয়ানে
জীবনের যুদ্ধে হার না মেনেই হৃদয় জয়: অলিম্পিক ব্রোঞ্জকে ঘষেমেজে সোনা-রুপোয় বদলাতে পারেননি তিনি। পারেননি ঘরের মাঠের প্রবল সমর্থনপুষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বীর চ্যালেঞ্জ টপকাতে। কিন্তু তাতে কি সত্যিই কিছু এল-গেল? তিনিই তো আসমুদ্রহিমাচলকে বুধবারের ভরসন্ধেতেও যেন সূর্যালোক দেখালেন! গোটা দেশ কুর্নিশ জানাল তিরিশ ছুঁইছুঁই এক কুকি মহিলাকে।

লন্ডনে ভারত
‘ভাবিনি অলিম্পিকের মশাল হাতে দৌড়ব’: সাবলীল নন। ‘তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন।’ কখনও তাই ধীর গতিতে দৌড়লেন, কখনও হাঁটলেন। তাতে কী? বিলেতের মাটি। তাতেও বা কী এসে যায়? ক্যামেরা, মোবাইল, হাতের কাছে যে যা পেলেন, ছবি তুলে রাখলেন তাতেই। অলিম্পিকের মশাল হাতে ছুটছেন অমিতাভ বচ্চন! বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫২। পিছনে অলিম্পিক রিলে বাস। পাশে মোটরবাইকে পুলিশ। পেকহ্যামের বেলেনডেন রোড দিয়ে ছুটছেন সুপারস্টার। গায়ে সাদা ট্র্যাক স্যুট। বুকের উপর লেখা রিলে নম্বর ০৬৩। কখনও ধীর গতিতে ছুটলেন, গতি আরও কমিয়ে খানিক হাঁটলেনও, তার পর ফের দৌড়তে শুরু করলেন। ভক্তদের দেখে হাত নাড়লেন।

বচ্চনের হাতে আজ অলিম্পিক মশাল: লন্ডন অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত হলেন অমিতাভ বচ্চন! উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আগের দিন লন্ডনের রাস্তায় অলিম্পিক মশাল হাতে দৌড়োবেন তিনি। এতদিন গোপনীয়তায় ঢাকা এই মেগা-চমক থেকে বুধবার পর্দা তুলেছেন অমিতাভ নিজেই। নাটকীয় টুইট করে জানান, “ওকে!! হিয়ার ইট ইজ: লন্ডন অলিম্পিক কমিটি আমাকে কাল মশাল রিলেতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে..।” মানে আজ বৃহস্পতিবার। অমিতাভের পরের টুইট অনুযায়ী, সাউথওয়ার্কের রাস্তায় লন্ডনের সময় সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ অলিম্পিক মশাল উঠে আসবে তাঁর হাতে। টুইটে অমিতাভ বলেছেন, “অলিম্পিক টর্চ বাহক হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমার জন্য আর দেশের জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত!”

ভিলেজে উড়ল ভারতের পতাকা: ২০১২ অলিম্পিকে ভারতের তেরঙা পতাকা উড়ল! বাজল জাতীয় সঙ্গীত। লন্ডন গেমস শুরুর পাঁচ দিন আগে, ২২ জুলাই ২০১২, গেমস ভিলেজে ভারতের পতাকা তোলা হল সামান্য সংখ্যক ভারতীয় অ্যাথলিট এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে। অলিম্পিকের ইতিহাসে এ বারই ভারতের সবচেয়ে বড় দল। ১৩টা বিভিন্ন খেলায় মোট ৮১ জন প্লেয়ার। কিন্তু এ দিন ভিলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় পর্যন্ত এত অল্প সংখ্যক ক্রীড়াবিদ লন্ডন পৌঁছতে পেরেছেন যে, ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে তাদের পতাকা উত্তোলন এক দিন পিছনোর অনুরোধ করা হয়েছিল সংগঠকদের কাছে। কিন্তু তাদের সেই অনুরোধ রাখা হয়নি। লন্ডন অলিম্পিক কমিটির পক্ষ থেকে ভারতের ডেপুটি শেফ দ্য মিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, পূর্ব নির্ধারিত সূচি পালটানো সম্ভব নয়। ফলে হকি দল, গুটিকয়েক বক্সার, শ্যুটার এবং তিরন্দাজের উপস্থিতিতে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। শ্যুটার এবং তিরন্দাজদের মধ্যে অবশ্য এ বারের অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী অন্যতম দুই বঙ্গসন্তান জয়দীপ কর্মকার এবং রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন।

ইংল্যান্ডে থেকেও অলিম্পিক ভিলেজে নেই মেরি কম: অলিম্পিকে তাঁকে ঘিরে পদকের প্রত্যাশা থাকলেও বক্সার মেরি কম এখনও গেমস ভিলেজে পা রাখেননি। এবং এর জন্য পুরোপুরি দায়ী করা হচ্ছে ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশনকে। মেয়েদের বক্সিংয়ে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি গত এক বছর ধরে ট্রেনিং নিচ্ছেন চার্লস অ্যাটকিনসনের কাছে। কিন্তু ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশন এই বিদেশি কোচকে ভিলেজে থাকার সরকারি কার্ড দেয়নি। বাধ্য হয়ে মেরি ট্রেনিং করছেন অ্যাটকিনসনের নিজের শহর লিভারপুলে। এ বার ভারতীয় বক্সিং দলে আছেন পাঁচ জন। ২৯ বছরের মেরি এই দলে একমাত্র মহিলা সদস্য। পুরো দলের একজনই কোচ, অনুপ কুমার। মেরিকে বলা হয় অনুপের কাছে ট্রেনিং নিতে। বোঝা যাচ্ছে মেরি ব্যাপারটায় বিরক্ত। তাই এখনও ভিলেজে না গিয়ে তিনি লিভারপুলে ব্রিটিশ কোচের কাছে আছেন। ঘটনা হচ্ছে, লন্ডন অলিম্পিকের জন্য মেরির প্রস্তুতিতে অনুপের কোনও ভূমিকাই নেই। তবু মেরির পছন্দের কোচকে ফেডারেশন ভিলেজে থাকার অনুমতি না দেওয়ায় অনেকেই বিস্মিত। অর্থাৎ অলিম্পিক-যুদ্ধের সময় মেরি তাঁর পছন্দের কোচকে রিংয়ের পাশে পাচ্ছেন না। তিনি ভিলেজে থাকতে শুরু করবেন বৃহস্পতিবার, তাঁর প্রথম ম্যাচের তিন দিন আগে থেকে।

উল্লেখ্য উক্তি
এ বারের অলিম্পিকে সব থেকে বিতর্কিত ‘টেনিস’ নিয়ে...

লিয়েন্ডার পেজ, টেনিস তারকা

“আমি জানি অলিম্পিক পদক জিততে কী করতে হয়। কতটা কঠিন পরিশ্রম দরকার হয়। আমি অনেক দিন
আগেই অলিম্পিক পদক জিতেছি। সে জন্য খুব কম কথায় বলছি, সমালোচকদের বিশ্লেষণ, যাবতীয় নেতিবাচক ব্যাপার
আর রাজনীতি কোনও কিছু নিয়েই আমার মাথাব্যথা নেই। আমার র‌্যাকেটই সর্বদা কথা বলে এসেছে। লন্ডনেও বলবে।”
আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে...

ডাক্তার ভেস পেজ, বাবা, লিয়েন্ডার পেজ
‘মহেশরা সেই জানুয়ারি থেকেই
ছক বেঁধে ষড়যন্ত্রটা শুরু করে’

সহারাশ্রী সুব্রত রায়
‘দেশের ন্যায্য পদক কেড়ে
নেওয়ার নোংরা রাজনীতি হচ্ছে’

সাইনা নেহওয়াল, ব্যাডমিন্টন
“অলিম্পিক পদক নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। তবে অলিম্পিকে ভাল কিছু করতে ঠিক পথেই এগোচ্ছি।”
জয়দীপ কর্মকার, শ্যুটার
“পদকের কথা ভাবছি না। তবে ইদানীং কালে পারফরম্যান্স ভাল হয়েছে। জীবনের সবচেয়ে ভাল প্রস্তুতি নিয়েই লন্ডনে যাচ্ছি।”


রঞ্জন সোধী, শ্যুটার
আমি অনেক দিন ধরেই শ্যুটিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, বিশ্বকাপ জিতেছি। আমি জানি কী ভাবে কী হয়।
আপনি বিশ্বের সেরা শ্যুটার হতে পারেন, কিন্তু ওই বিশেষ দিনটায় আপনার কিছুটা ভাগ্যের সাহায্য দরকার হয়।”

মাইকেল নবস, কোচ, ভারতীয় হকি দল
“লন্ডনে প্রথম ছয়ের মধ্যে থাকলে দারুণ হয়। তবে আমরা তার থেকেও ভাল করার চেষ্টা করব। ভাগ্যের একটু সাহায্য পেলে আমরা চমক দিতে পারি।”
সুশীল কুমার, কুস্তিগীর
“আমায় গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বের পাশাপাশি গোটা দেশ পদকের জন্য আমার দিকে তাকিয়ে। আমার গুরু সতপালকে কথা দিয়েছি যে, লন্ডন অলিম্পিক থেকে খালি হাতে ফিরব না।”


বীজেন্দ্র সিংহ, বক্সার
বর্তমান ভারতীয় বক্সাররা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। বিশ্বের যে কোনও বক্সারকে হারাতে সক্ষম তাঁরা। পর্যটক হিসাবে নয়, জিততেই এসেছি।
 
অনুপ্রেরণা
• বালালি গ্রামের মেয়েদের স্বপ্নই বদলে দিয়েছেন গীতা: গ্রামে ছোটবেলায় ডাকা হত ‘গীতা পহেলওয়ান’ বলে। হাফ প্যান্ট পরে কুস্তির আখড়ায় কিশোরী মেয়ের দাপাদাপি সহ্য হত না গ্রামের লোকের। হরিয়ানার গ্রামের পঞ্চায়েত বাবা মহাবীর সিংহকে ডেকে বলে দিয়েছিল, “হাফ প্যান্ট পরা মেয়েকে আখড়ায় পাঠাবেন না।” এই নিয়ে পঞ্চায়েতের সভাও বসেছিল। কিন্তু গ্রামের মোড়লদের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেননি বাবা মহাবীর সিংহ। ভাগ্যিস করেননি।

• অলিম্পিকে মশাল বইবে অবহেলিত চা বাগানের পিঙ্কি: পিঙ্কি কর্মকার নামে বরবরুয়া গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির এই ছাত্রীকে ঘিরে ‘আসাম টি কোম্পানি’র অধীনস্থ চা বাগানগুলিতে এখন উৎসবের আবহ। খোদ বিলিতি সাহেবদের হাতে গড়া অসমের এই সব চা বাগান। সেই সাহেবি ধারা বহন করে মেয়েটির বাবা-মা এখনও বাগানের নিম্নতর শ্রেণির প্রতিনিধি। কিন্তু সেই ঘরের মেয়েই বিলেতে ভারতের নাম উজ্জ্বল করতে উড়োজাহাজে উড়ে গিয়েছে, এটুকুই জানেন বাগানের কর্মীরা। অলিম্পিক না কিসের যেন মশাল নিয়ে দৌড়বে মেয়েটা! আর তাতেই বুকের ছাতি ফুলছে তাঁদের। পাশাপাশি, জানার চেষ্টা করছেন অলিম্পিকের মশাল ব্যাপারটা ঠিক কী!

• দু’পা নেই, তবু অলিম্পিকে দৌড়বেন অস্কার: কেউ তাঁকে ডাকে ‘ব্লেড রানার’ বলে। কেউ তাঁকে বলে ‘পা ছাড়া বিশ্বের দ্রুততম মানুষ’। সেই ২৫ বছরের যুবকটিই এই মুহূর্তে ক্রীড়া দুনিয়ার এক জীবন্ত প্রহেলিকা। চূড়ান্ত ফিট, শারীরিক ভাবে একশো ভাগ সক্ষম অনেক অ্যাথলিটেরই অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত অপূর্ণ থেকে যায়। আর দু’ পা ছাড়া এক জন ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ দৌড়চ্ছেন, এ যেন স্রেফ রূপকথাতেই সম্ভব। বা সেখানেও সম্ভব নয়। সেই সম্ভব-অসম্ভবের সীমারেখা যিনি মুছে দিয়েছেন তাঁর নামই অস্কার লিওনার্দ কার্ল পিস্তোরিয়াস।

• হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন দৃষ্টিহীন তিরন্দাজের: অসাধারণ অনুপ্রেরণার আরও এক কাহিনি— সোনার হ্যাটট্রিকের স্বপ্নকে সফল করার লক্ষ্যে লন্ডন অলিম্পিকে নামছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইম ডং-হিউন। ২৬ বছরের এই তিরন্দাজ প্রায় অন্ধ। তা সত্ত্বেও এর আগে দু’বার অলিম্পিক টিম ইভেন্ট থেকে সোনা জিতেছেন। ইমের এ বারের লক্ষ্য, ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জেতার প্রায় অসম্ভব স্বপ্নকে সফল করা। গুরুতর মায়োপিয়ায় আক্রান্ত ইমের দৃষ্টিশক্তি সাধারণ মানুষের চেয়ে দশগুণ কম। টেকনিক্যাল ভাষায় তিনি অন্ধ।

স্মৃতির আড়ালে
চুরি যাওয়া চার অলিম্পিক পদকের জন্য ক্লডিয়াসের চিঠি
লন্ডন অলিম্পিকের মুখে, তাঁর চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়া চারটে অলিম্পিক পদকের প্রতিরূপ ফেরত চাইছেন ভারতের সফলতম অলিম্পিয়ান। যার প্রথম সোনাটা পাওয়া ৬৪ বছর আগে লন্ডন গেমসেই। ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছে তাঁর এটাই আর্জি। লন্ডনের ৩৬১ টিউব স্টেশনের নাম এখন ৩৬১ জন বিশ্বখ্যাত অলিম্পিয়ানের নামে। প্রান্তিক একটা স্টেশনের নাম ‘ধ্যানচাঁদ’। তার আগেরটার নাম রূপ সিংহ। শেষ দিক থেকে তৃতীয় স্টেশনের নাম লেসলি ক্লডিয়াস। আরও তিনটি স্টেশন পরে ‘লেভ ইয়াসিন’, ছ’টা বাদে ‘বব বিমন’।

‘ঝলকে’ গেমস
কুস্তি
• বিদেশে প্র্যাক্টিসের সুযোগ হারালেন সুশীল কুমার: বেলারুশের মিনস্ক-এর বদলে স্বদেশের সোনপত! মার্কিন কুস্তিগীরদের সঙ্গে প্র্যাক্টিসের বদলে দেশজ গুরু সতপালের কাছে ট্রেনিং! আগামী চার-পাঁচ দিন এ ভাবেই বিদেশে অত্যাধুনিক প্র্যাক্টিসের সুযোগ হারাতে চলেছেন লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের অন্যতম পদক-ভরসা সুশীল কুমার। সৌজন্যে, অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় দলের পতাকাবাহী হওয়া এবং সেই সম্মানীয় দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা ও কুস্তি ফেডারেশনের যৌথ অপেশাদারিত্ব! লিয়েন্ডার পেজ সুশীলের পতাকাবাহক হওয়াকে ‘যোগ্যের যোগ্য সম্মান’ বললেও সেই দায়িত্বই এখন যেন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের সেরা কুস্তিগীরের!

• সোনার হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন দেখছেন সুশীলদের গুরু: লন্ডন অলিম্পিকে কুস্তির ‘ম্যাট’ থেকে স্বর্ণমৃগয়ার স্বপ্ন দেখছেন সতপাল সিংহ। ১৯৮২ দিল্লি এশিয়াডে ফ্রিস্টাইলের সোনাজয়ী, ‘মহাবলী’ সতপালের আখড়াতেই তৈরি ভারতীয় কুস্তিতে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে সফল নাম—সুশীল কুমার সোলাঙ্কি। ৬৬ কিলোগ্রাম বিভাগে প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও গত অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ জয়ীকে লন্ডনে সেরা বাজি ধরলেও, তাঁর পাশে যোগেশ্বর দত্ত এবং উনিশ বছরের তরুণ প্রতিভা অমিত কুমারকে রেখে সোনার হ্যাটট্রিক যেন দেখতে পাচ্ছেন সতপাল।

বক্সিং
• মেরি ফোন করলে টিভি খুলবে পরিবার: পাহাড়ের ধাপে চাষবাস সেরে ঘেমো গায়ে ঘরে ফিরলেন টংপা। মেদহীন, পেটানো শরীরটা দেখলেই বোঝা যায়, মেয়ের গায়ের জোরের উৎসটা কোথায়। মেজো মেয়ে অ্যান ঝটপট বাবার গায়ে জামা পরিয়ে দিলেন। হেসে বললেন, “কত বার বলেছি, বাইরের লোক ক্যামেরা নিয়ে আসছে আজকাল! একটু ভদ্র পোশাকে থেকো। কে শোনে কার কথা?” স্থানীয় কুকি ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা বোঝেন না টংপা, অলিম্পিক পদক জয়ী বক্সার মেরি কমের বাবা। অ্যানই দোভাষীর ভূমিকা নিলেন।

• সোনা দেখছে মেরির চোখ:
মণিপুরের এক অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে লন্ডন অলিম্পিকে ভারতকে চতুর্থ পদক এনে দিলেন! ১১৬ বছরের আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাসে ভারতের সর্বাধিক পদক লাভের রেকর্ড ২০১২-তেই হল। এবং সেটা বছর পাঁচেকের যমজ পুত্রের মায়ের বজ্রমুষ্ঠিতে! বাকি ভারতবর্ষের থেকে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা কাঙ্গাথেই গ্রামের স্কুল-ছুট দামাল কিশোরী রাস্তায় কোনও ছেলের টিটিকিরি শুনলে তার মুখে সপাটে ঘুসি চালাতে দ্বিতীয় বার চিন্তা করত না।

• অলিম্পিককে ‘জেলার মিট’ বলছেন ক্ষুব্ধ মনোজ কুমার:
অলিম্পিকের বক্সিংয়ে নতুন বিতর্ক যোগ হল রবিবার। ব্রিটিশ বক্সার টমাস স্টকারের কাছে হেরে ভারতীয় বক্সার মনোজ কুমার জানিয়ে দিলেন, তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে এক্সেল এরিনায় স্টকারের কাছে ১৬-২০ হেরে যান ভারতীয় বক্সার মনোজ। স্টকার কোয়ার্টার ফাইনালেও চলে যান। এবং হারের পর-পরই মনোজের বিস্ফোরণ। “সঠিক বিচার মোটেই হয়নি। ও একটা দিকেই ঘুঁষি মারছিল। তার পরেও ওর দিকে স্কোরটা গেল ৭-৪, ৯-৪। যা একেবারেই সঠিক বিচার নয় এবং আমার যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়নি,” বলেছেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী বক্সার।

• যমজ সন্তানকে জন্মদিনের উপহার দিয়ে কান্না:
‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’-র জয়যাত্রা শুরু হয়ে গেল অলিম্পিকে! লন্ডন গেমসেই মেয়েদের বক্সিং প্রথম বার দিনের আলো দেখল। উদ্বোধনী দিনে যে মণিপুরী কন্যা জিতে উঠে রিংয়েই কেঁদে ফেললেন, তাঁকে আন্তর্জাতিক মহলে ‘মেয়েদের বক্সিংয়ের মুখ’ মনে করা হয়ে থাকে। পরের রাউন্ড জিতলেই মেরি কমের অলিম্পিক পদক প্রাপ্তি নিশ্চিত। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় বক্সার ৫১ কেজি বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর বলেন, “দুটো কারণে আজকের দিনটা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথমত, আমি বারো বছর ধরে যে খেলাটা খেলছি, সেটা আজই প্রথম অলিম্পিক ইভেন্টের স্বীকৃতি পেল। আমার চিরদিনের স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক খেলা। আর একটা কারণেও এ দিনটা আমার কাছে ভীষণ আবেগের। রবিবারই আমার দুই যমজ সন্তানের জন্মদিন। এই প্রথম আমি ওদের জন্মদিন পালন করতে পারলাম না। সেই সময়টা রিংয়ে লড়াই করলাম। জিতলাম। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে, আমার সন্তানদের এর থেকে ভাল জন্মদিনের উপহার দেওয়া বোধহয় সম্ভব ছিল না।”

শ্যুটিং
• মিলখা, উষার দুর্ভাগ্যই তাড়া করল জয়দীপকেও: ১৯৬০-এর রোম। ১৯৮৪-র লস অ্যাঞ্জেলেস। ২০১২-র লন্ডন যেন টাইম মেশিনে ফিরিয়ে আনল এই দুই অলিম্পিকের চেনা এক ছবিকে। মিলখা সিংহ, পিটি উষার অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হওয়ার মুহূর্ত ফের মনে পড়িয়ে দিলেন নাগেরবাজারের অমরপল্লীর বাসিন্দা জয়দীপ কর্মকার। ’৬০-এর রোম অলিম্পিকে চারশো মিটার দৌড়ে পদক ফস্কেছিলেন ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিংহ। হিটে সব চেয়ে ভাল করেও। ’৮৪-র লস অ্যাঞ্জেলেস একই দুর্ভাগ্য ডেকে আনে পিটি উষার জন্য। চারশো মিটার হার্ডলে ০.০১ সেকেন্ডের জন্য পদক হাতছাড়া। ’৮৪-এর পর ২০১২। মাঝে আঠাশটা বছর। আর আঠাশ বছর পরেও কাপ আর ঠোঁটের দূরত্বটা রয়েই গেল। মিলখা-পিটি উষাদের দুর্ভাগ্যের ‘ঐতিহ্য’ তাড়া করল জয়দীপকেও।

• প্রথম অলিম্পিকেই স্নায়ুর লড়াইয়ে জয়:
নামীদামি শ্যুটারদের ভিড়ে তিনি ছিলেন পিছনের সারিতে। মাত্র ছ’দিন আগে এই অলিম্পিকেই দশ মিটার এয়ার পিস্তল ফাইনালে ৩১ নম্বর হয়ে যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বেই ছিটকে যেতে হয়েছিল তাঁকে। স্বভাবতই আজ লন্ডনের রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকে ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তলে কেউই তাঁর কাছ থেকে পদকের আশা করেননি। কিন্তু অলিম্পিকে রুপোর ‘বিজয়’মুকুট তাঁর জন্যই অপেক্ষা করছিল।

• শ্যুটিংয়ে স্বপ্নভঙ্গ, শ্যুটিংই স্বপ্ন দেখাচ্ছে: সাইনা নেহওয়ালকে যদি বাদ রাখা যায়, তা হলে লন্ডন অলিম্পিকের ষষ্ঠ দিনটা ভারতীয়দের পক্ষে মোটেই ভাল গেল না। শ্যুটিংয়ে পুরুষদের ডাবল ট্র্যাপে যিনি পদক আনতে পারেন বলে ভাবা হচ্ছিল, সেই রঞ্জন সোধী ছিটকে গেলেন যোগত্যঅর্জন পর্ব থেকেই। তা-ও বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর কি না শেষ করলেন একাদশ স্থানে! চব্বিশ জন শ্যুটারের মধ্যে।

• চাপ নেই তবে কঠিন লড়াই, বলছেন রঞ্জন:
অলিম্পিকে ভারতীয় শ্যুটিং দলকে চাগিয়ে গিয়েছে গগন নারঙ্গের ব্রোঞ্জ। ভারতের আর এক পদক প্রত্যাশী শ্যুটার রঞ্জন সোধির কথাতে সেটা পরিষ্কার। রঞ্জনের নিজের ইভেন্ট বৃহস্পতিবার। ডাবল ট্র্যাপ ইভেন্ট। বুধবার এখানে রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকে প্র্যাক্টিসের পরে রঞ্জন বলেছেন, “গগনের সাফল্যে আমরা এই মুহূর্তে দারুণ অনুপ্রাণিত। উত্তেজিতও। টিমের সবাই নিজের নিজের ইভেন্টে খুব ভাল কিছু করার কথাই ভাবছে।”

টেবল টেনিস
• অলিম্পিককে স্মরণীয় করে রাখতে চান সৌম্যজিৎ-অঙ্কিতা: লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের টেবল টেনিস দলে বড়-বড় নামের বদলে ভরসা বাংলার দুই টিনএজার। শিলিগুড়ির দুই ১৯ বছরের তরুণ-তরুণী। সৌম্যজিৎ ঘোষ ও অঙ্কিতা দাস। দু’জনের কাছ থেকেই পদকের আশা না করলেও ভারতীয় টেবল টেনিস মহল মনে করছে, অন্তত কয়েকটা চমক ওঁদের দু’জনেরই দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সৌম্যজিৎ আর অঙ্কিতা নিজেরাও মনে করছেন, সুযোগের সেরা সদ্বব্যবহার করে আসন্ন অলিম্পিককে স্মরণীয় করে রাখবেন তাঁরা। আমার কাছে এটা প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট,” বলে অঙ্কিতা সংবাদ সংস্থার কাছে আরও যোগ করেছেন, “লন্ডন অলিম্পিকই আমার খেলোয়াড় জীবনের প্রথম কোনও গেমস। আমি এমন একটা পারফরম্যান্স করতে চাই যা অতীতে ভারতের কোনও টেবল টেনিস প্লেয়ার অলিম্পিকে করে দেখাতে পারেনি।”

• সৌম্য-অঙ্কিতার সেরা ফলের আশায় কোচ: তিনি নিজে তিন বার চেষ্টা করেও যেতে পারেননি অলিম্পিকে। টেবল টেনিসে নানা ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মান্তু ঘোষকে। জাতীয় কোচ থেকে শুরু করে জাতীয় সংস্থার সচিব। কিন্তু অলিম্পিয়ান হতে পারেননি। লন্ডন অলিম্পিকের আগে মান্তু ঘোষের তবু মনে হচ্ছে, তাঁর কোনও দুঃখ নেই— তাঁর দুই ছাত্রছাত্রী সৌম্যজিৎ ঘোষ ও অঙ্কিতা দাসের জন্য।

• চিনে সৌম্যজিৎ, অঙ্কিতা: লন্ডন অলিম্পিকের প্রস্তুতি হিসেবে ১৬ দিনের ট্রেনিং নিতে চিন গেলেন বাংলার দুই টেবল টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যজিৎ ঘোষ এবং অঙ্কিতা দাস।

তিরন্দাজি
• রাহুলরা সবার শেষে, দীপিকারা সামান্য ভাল: ২০১২ অলিম্পিকে শুরুটা তেমন ভাল হল না ভারতের। ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে তির-ধনুক হাতে হতাশ করলেন বঙ্গসন্তান রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে খানিকটা মুখরক্ষা করলেন দীপিকা কুমারী। কিন্তু তাতেও শনিবার পদকের আশা যথেষ্ট কঠিন দেখাচ্ছে। শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ঘণ্টা কয়েক আগেই ভারতীয়দের ইভেন্ট শুরু হয়ে যায়। এবং সেই তিরন্দাজির দলগত ইভেন্টের যোগ্যতা অর্জন রাউন্ডে রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় তরুণদীপ রাই, জয়ন্ত তালুকদার ত্রয়ীর ভারত ১২ দেশের মধ্যে ১২তম স্থান পেল।

• টি আওয়ের নজির ছুঁলেন সুওরো:
১৯৪৮ ভারতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে লন্ডন অলিম্পিকে গিয়েছিলেন ড. তালিমেরেন আও। তার পর কেটে গিয়েছে সাড়ে ছ’দশক। এ বার আবার অলিম্পিক। আবার লন্ডন। এবং নাগাল্যান্ডের মেয়ে চেকরোভলু সুওরোকে ঘিরে তিরন্দাজিতে পদকের স্বপ্ন দেখছে গোটা দেশ। ঘরের মেয়ে অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ায় চাকেসাং ব্যাপটিস্ট গির্জা গতকাল প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও বলেছেন, “একই বছরে, রাজ্যের এক মহিলা এভারেস্ট জয় করলেন, অন্য জন পাড়ি দিচ্ছেন অলিম্পিকে। দারুণ আনন্দের সময়। লন্ডনে গিয়ে সুওরোর তিরন্দাজি দেখব ভাবছি।” সুওরো বলছিলেন, “রাজ্যবাসী যে ভাবে আমার জন্য প্রার্থনা চালাচ্ছেন, আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি এর মর্যাদা রাখতে পারব।” সুওরো ছাড়াও, উত্তর-পূর্ব থেকে অসমের তিরন্দাজ জয়ন্ত তালুকদারও অলিম্পিকে যাচ্ছেন। ফেক জেলার দ্জুলহা গ্রামের মেয়ে সুওরো। তিরন্দাজির সৌজন্যে নাগাল্যান্ড পুলিশের এএসআই। দিদি ভেসুজলুকে দেখেই এক দিন তির-ধনুক হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৬ বছরে তিরন্দাজিকে প্রধান পেশা হিসাবে বেছে নেন। ১৯৯৬ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো, ১৯৯৯-এ সোনা। জাতীয় পর্যায়ে আরও তিনটি সোনা আছে। এশীয় পর্যায়ে ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে রুপো। প্রতিভা দেখে মিত্তল চ্যাম্পিয়ন ট্রাস্ট তাঁর প্রশিক্ষণের ভার নেয়। ২০০৬ কমনওয়েলথে সোনা পান তিনি। ডোভার বিশ্বকাপে দলগত ব্রোঞ্জ। ২০০৭ বিশ্বকাপে তিনটি ব্রোঞ্জ-সহ সুওরো বিশ্বে ক্রমপর্যায়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠে আসেন। এ বার অলিম্পিক। সুওরোর আশা, লন্ডনে তাঁর সংগ্রহে সব থেকে কাঙ্ক্ষিত পদকটা যোগ হবে।

• ধার করা তির-ধনুকেই অলিম্পিকের টিকিট রাহুলের: ধার করা ‘অস্ত্র’ নিয়ে তা হলে ‘যুদ্ধে’ জেতা যায়! তীব্র প্রতিকুলতা জয় করে পাওয়া যায় অলিম্পিকে যাওয়ার টিকিট! “বিশ্বাস করুন, নিজেরই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আমি লণ্ডন অলিম্পিকে নামব। গতকাল রাত পর্যন্তও মনে হয়েছিল, আর হল না। সব বৃথাই গেল। জীবনে কখনও কোনও টুর্নামেন্টে নামার আগে এমন সমস্যায় পড়িনি। বিশ্বকাপ, কমনওয়েলথ জেতার চেয়েও এই জয়কে তাই আমি এগিয়ে রাখছি।” শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাস্ট্রের ওভডানের হোটেলে ফোনে ধরা হলে আনন্দবাজারকে বললেন তিরন্দাজ রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা শুনে মনে হচ্ছিল অলিম্পিকে যোগ্যতামান পাওয়ার বারো ঘণ্টা পরও বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি বরাহনগর বসাকবাগানের বাসিন্দার। লন্ডনে টিম ইভেন্ট ছাড়া রিকার্ভের ব্যক্তিগত বিভাগেও নামবেন দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই।

ব্যাডমিন্টন
• সাইনা ফিরতেই উন্মাদনা শুরু হয়ে গেল: লন্ডন থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে দিল্লি এসে পৌছলেন অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী সাইনা নেহওয়াল। ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্যই যে উন্মাদনা এক রকম বরাদ্দ, সে রকমই উৎসাহ দেখা গেল সাইনাকে ঘিরে। বিমানবন্দরে একজন ব্যাডমিন্টন তারকাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে হাজার পাঁচেক মানুষ। ফুলের মালায় সাইনাকে ঢেকে ফেলা ও মিষ্টি মুখ করানোর পাশাপাশি উৎসাহী জনতা সাইনাকে কাঁধে পর্যন্ত তুলে নেয়।

• ব্যর্থতার মেঘের ফাঁকে পদকের স্বপ্ন সাইনার: ছোটবেলায় একটা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে খুব উঠত। মেয়েটা নাকি বড়দের একদম মানে-টানে না। কোর্টের বাইরে এমনিতে শান্ত। কিন্তু র‌্যাকেটটা হাতে তুলে নিলেই কেমন একটা খুনে মেজাজের হয়ে যায়। তখন তার একটাই মন্ত্র: ‘মার দুঙ্গি’। উল্টো দিকে কে, পাত্তাই দেয় না। কোর্টের ভিতরের এই মেজাজই আজ অলিম্পিক সেমিফাইনালে তুলে দিল সাইনা নেহওয়ালকে। প্রথম বারের জন্য। এক দিকে হাঁটু মুড়ে বসে কোর্ট চাপড়াচ্ছেন সাইনা। কোর্টের বাইরে দু’হাত তুলে দাঁড়িয়ে পুলেল্লা গোপীচন্দ। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অলিম্পিকটা ভাল কাটেনি ভারতের। কিন্তু ওই একটা ছবি যেন সব কিছু বদলে দিল। হারের কালো মেঘ চিরে আবার পদকের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেল ভারতের।

• লন্ডনে ইতিহাস কাশ্যপের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সাইনা:
তিরন্দাজির লজ্জা ঢেকে দিল ব্যাডমিন্টন। বুধবারের অলিম্পক ভারতের জন্য বর্ণময় হয়ে রইল দুই ব্যাডমিন্টন তারকার জন্য। পারুপল্লি কাশ্যপ এবং সাইনা নেহওয়াল। দু’জনেই আজ উঠে গেলেন সিঙ্গলস কোয়ার্টার ফাইনালে। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে অলিম্পিক কোয়ার্টার ফাইনালে এই প্রথম কোনও পুরুষ খেলবেন। আজ প্রাক কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বিশ্বর‌্যাঙ্কিংয়ে একুশ নম্বর কাশ্যপের লড়াইটা ছিল তাঁর চেয়ে সাতাশ ধাপ নীচে থাকা শ্রীলঙ্কান নিলুকা করুণারত্নের বিরুদ্ধে। কাগজেকলমে সাইনার শহরের ছেলে কাশ্যপ এগিয়ে থাকলেও কোর্টে তাঁকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিয়েছিলেন নিলুকা।

• চিনাদের আর ভয় পাই না, বললেন সাইনা:
প্রশ্ন একটাই। সাইনা নেহওয়াল ছাড়া আর কারও ব্যাডমিন্টনে পদক আনার সম্ভাবনা রয়েছে? পুল্লেলা গোপীচন্দের মতো অনেকেই কিন্তু আশার কথা শোনাচ্ছেন। এই মুহূর্তে হায়দরাবাদে দুটি জায়গায় জোর প্রস্তুতি চলছে। গোপীচন্দের ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত সাইনা। লালবাহাদুর শাস্ত্রী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রবীণ কোচ মহম্মদ আরিফের কাছে ট্রেনিং নিচ্ছেন জ্বালা গাট্টা, অশ্বিনী পুনাপ্পা, ডিজুরা। জাতীয় ব্যাডমিন্টন সংস্থার প্রেসিডেন্ট অখিলেশ দাস জোর দিয়ে বললেন, “কে কী বলছে আমি জানতে চাই না। আমি জানি এ বার শুধু সাইনা একা পদক জিতবে না। মেয়েদের ডাবলস জুটি জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পুনাপ্পা অথবা ভারতের মিক্সড-ডাবলস জুটি জ্বালা গাট্টা-ডিজু জুটি, বা পুরুষ সিঙ্গলসে বর্তমানে দারুণ ফর্মে থাকা পারুপল্লি কাশ্যপের কাছ থেকে আর একটি পদক আসছে।”

টেনিস
• ঊনচল্লিশেও শেষ আটে লিয়েন্ডার: বয়স ৩৯। এই বয়সেও অবিশ্বাস্য ভাবে অলিম্পিক মাতাচ্ছেন লিয়েন্ডার পেজ। বুধবার রাতে হাঁটুর বয়সী বিষ্ণু বর্ধনকে নিয়ে ডাবলসে হেরে গিয়েছেন তো কী! তিন সেটে সেই অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের আঠারো ঘণ্টার মধ্যে সানিয়া মির্জার সঙ্গে জুটি বেঁধে ফের ফিরে এলেন লিয়েন্ডার। অলিম্পিক টেনিসের মিক্সড ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেলেন শক্তিশালী জুটিকে হেলায় উড়িয়ে। নেনাদ জিমোনজিচ এবং আনা ইভানোভিচ জুটিকে ৬-২, ৬-৪ হারাল ভারতীয় জুটি।

• বীরের হার লিয়েন্ডার-বিষ্ণুর:
মহেশ ভূপতি আজই বলেছেন, চার বছর পর রিও-তে তিনি অবশ্যই খেলবেন না। তবে বোপান্না-সহ ভারতীয় টেনিস দলের জন্য গলা ফাটাতে অলিম্পিকে যাবেন। বোপান্না এ বারে অলিম্পিক অভিযান শেষ হতে জানিয়েছেন, লন্ডনে এর পরে অন্য ভারতীয়দের উৎসাহ দিতে চেঁচাবেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে লিয়েন্ডার পেজ-বিষ্ণু বর্ধনের অভাবনীয় লড়াইয়ের সময় কিন্তু উইম্বলডনের গ্যালারিতে দু’জনের কাউকেই দেখা গেল না!

• বোপান্নারা পদক জিততে পারে, মত ফেডেরারের:
কোর্টে তিনি খুব কমই লিয়েন্ডার পেজ, মহেশ ভূপতির মুখোমুখি হয়েছেন। শেষ বার চার বছর আগে বেজিং অলিম্পিকে ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে। এবং সেই ম্যাচ জিতেই রজার ফেডেরারের (ওয়ারিঙ্কাকে পার্টনার নিয়ে) অলিম্পিক সোনা জয়ের সরণিতে পা রাখা। চার বছর পর লন্ডন গেমসে লিয়েন্ডার-মহেশকে জুটি হিসেবে দেখতে না পেয়ে অবাক বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা। “আমার কোনও ধারণা নেই কেন ওরা একসঙ্গে খেলছে না। এখানে কেন ওদের জুটি নেই তাও আমি জানি না,” বলেছেন ফেডেরার।

• লন্ডন থেকে খালি হাতে ফিরব না, বলছেন মহেশ:
সব বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে এ বারের লন্ডন অলিম্পিক থেকে একটা পদক জিতে ফিরতে চান মহেশ ভূপতি। তাঁর সংগ্রহে গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফির অভাব নেই। ডাবলসে টেনিসের প্রায় সব সম্মানই জেতা হয়ে গিয়েছে। নেই বলতে একটা অলিম্পিক পদক। আর মহেশ ভূপতি যেন সঙ্কল্প নিয়েছেন, এ বার লন্ডনে নিজের পঞ্চম অলিম্পিকে তাঁকে সেই অভাবটা পূরণ করতেই হবে।

ফিল্ড হকি
• অলিম্পিক মঞ্চে কলঙ্কিত ভারতীয় হকি: পদকের লড়াই থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন ভরত ছেত্রীরা। এ দিন সম্মান রক্ষার লড়াইয়েও পিছিয়ে পড়লেন তাঁরা। কোরিয়ার কাছে ১-৪ পর্যুদস্ত হয়ে। এক সময়ে অলিম্পিক হকিতে আটটি সোনা জয়ী দেশ আট বছর পরে আবার অলিম্পিকে ফিরে আপাতত নিজেদের গ্রুপে একেবারে শেষতম স্থানে। অলিম্পিকে নামা বারোটি দলের মধ্যে একমাত্র ভারতই এখনও পর্যন্ত কোনও পয়েন্ট পায়নি। ফলে এখন তারা এগারো এবং বারো নম্বরের লড়াইয়ে। যা অলিম্পিক হকির ইতিহাসে ভারতের সবথেকে জঘন্য পারফরম্যান্স। এর পরেও লন্ডন থেকে নিদেনপক্ষে একটা জয় নিয়ে ফেরার জন্য নিশ্চয়ই মরিয়া হয়ে থাকবেন মাইকেল নবসের ছেলেরা। নবস নিজে অবশ্য যথেষ্ট হতাশ। এ দিন হারার পরে বিরক্ত ভারতীয় কোচ বলেছেন, “অলিম্পিকের মতো বড় মঞ্চের চাপই বলুন বা অন্য কিছু, ছেলেরা নিজেদের খেলাটাই খেলতে পারছে না। ওরা দলকে, নিজেদের এবং দেশকে ডোবাল।”

• অলিম্পিকের নীল টার্ফ নিয়ে ক্ষুব্ধ নবস:
নীল টার্ফ! খেলোয়াড়মাত্রেই কি অপছন্দের রং? ফরাসি ওপেনের আগেই মাদ্রিদে নীল রঙের ক্লে কোর্ট ক্ষুব্ধ করেছিল নাদাল-জকোভিচকে। এ বার ভারতীয় হকি দলের অস্ট্রেলীয় কোচ মাইকেল নবস পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছেন যে, অলিম্পিকে হকি হঠাৎ নীল অ্যাস্ট্রোটার্ফে কেন? অভিযোগ, নতুন সারফেস তুলনায় মন্থর। বাউন্সও অসমান। “স্পেনে এই টার্ফে খেললাম। কোনও দলই স্বচ্ছন্দ নয়। পেনাল্টি কর্নার নিতেও অসুবিধে হচ্ছে। ওখানে ৩৩টা পেনাল্টি কর্নার থেকে মাত্র তিনটে গোল করেছি।” একই সংস্থার তৈরি হলেও এই টার্ফের প্রকৃতি নাকি বিভিন্ন। স্পেনে এর বাউন্স যে রকম, লন্ডনে নীল টার্ফেও ঠিক সে রকম হবে তার নিশ্চয়তা নেই। বিরক্ত নবস বলছেন, “আমার ধারণা নেই কেন এই টার্ফে খেলা। মনে হয়, নীল রংটা অলিম্পিক বলয়ের একটা রং বলেই। এ ছাড়া তো কারণ দেখছি না।” নবসের সঙ্গে একমত অস্ট্রেলিয়া দলের বিখ্যাত কোচ রিক চার্লসওয়ার্থ। অ্যাস্ট্রোটার্ফের রং পালটানোর বিরোধী তিনিও। ভারতীয় কোচ আবার টার্ফের রঙের পাশাপাশি তাঁর দলের গোলের সুযোগ নষ্ট নিয়েও দুশ্চিন্তায়। নবস বলেছেন, “পরপর দুটো সিরিজে সব প্লেয়ারকে খেলিয়েছি। সবাইকে দেখে নিতে। ছেলেরা ফিটনেসের দিক থেকে অনেক ভাল জায়গায়। কিন্তু গোলের সুযোগ বেশি কাজে লাগাতে পারছে না। সেটা পারলে ম্যাচের ফল পালটে যেত। আক্রমণ করছি বেশি। কিন্তু ফিনিশিং ঠিকঠাক হচ্ছে না।”

• সর্দার-তিরকের চোট নিয়ে আতঙ্কে ভারত:
প্রস্তুতি টুর্নামেন্টে বিশ্রী ফল। গোল করায় চূড়ান্ত ব্যর্থতা। সঙ্গে নতুন নীল টার্ফে খেলা নিয়ে মারাত্মক সমস্যা। এত কিছুর পর অলিম্পিক শুরুর ঠিক মুখে ভারতীয় হকির জন্য আরও খারাপ খবর। দলের দুই নির্ভরযোগ্য প্লেয়ারের গুরুতর চোট সারেনি। দলের এক নম্বর ডিফেন্ডার ইগনেস তিরকের চোট গোড়ালিতে। এক নম্বর মিডফিল্ডার সর্দার সিংহের হাঁটুর নীচে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ভারতের স্পেনীয় কোচ মাইকেল নবস বলে ফেললেন, “টিমের আসল দু’জনই চোট নিয়ে ভুগছে। খুব খারাপ সময় যাচ্ছে আমাদের।”

কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হকি দল, ধ্যান ও যোগই অস্ত্র ভরতদের: আট বছর পর অলিম্পিক মঞ্চে নামার আগে একটা ব্যাপারের উপর সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছে ভারতীয় হকি দল। মানসিক কাঠিন্য। সেই মানসিক কাঠিন্য বাড়ানোর উদ্দেশে ভারতীয় হকি খেলোয়াড়দের অস্ত্র এখন যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান।

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.