অলিম্পিকের বক্সিংয়ে নতুন বিতর্ক যোগ হল রবিবার। ব্রিটিশ বক্সার টমাস স্টকারের কাছে হেরে ভারতীয় বক্সার মনোজ কুমার জানিয়ে দিলেন, তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
শনিবার গভীর রাতে এক্সেল এরিনায় স্টকারের কাছে ১৬-২০ হেরে যান ভারতীয় বক্সার মনোজ। স্টকার কোয়ার্টার ফাইনালেও চলে যান। এবং হারের পর-পরই মনোজের বিস্ফোরণ। “সঠিক বিচার মোটেই হয়নি। ও একটা দিকেই ঘুঁষি মারছিল। তার পরেও ওর দিকে স্কোরটা গেল ৭-৪, ৯-৪। যা একেবারেই সঠিক বিচার নয় এবং আমার যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়নি,” বলেছেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী বক্সার।
হালফিলে বিতর্কের একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে অলিম্পিক বক্সিংয়ে। আর সব ক্ষেত্রেই জড়িয়ে পড়ছেন ভারতীয় বক্সাররা। বিকাশ কৃষ্ণণের বিরুদ্ধে মার্কিন বক্সারকে জিতিয়ে দেওয়া নিয়ে তীব্র ঝামেলা বেঁধেছে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই। আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থার কাছে বিকাশকে নিয়ে দাবি খারিজ হয়ে যাওয়ার পর, সুইজারল্যান্ডের লুসানে খেলাধুলোর সর্বোচ্চ আদালতে ফের আবেদন করেছে ভারত। অলিম্পিকে ভারতের শেফ দ্য মিশন এবং ভারতীয় বক্সিং সংস্থার সচিব পি কে মুরলীধরণ রাজা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, “আমরা সর্বোচ্চ আদালতে একটা অভিযোগপত্র দায়ের করেছি। আমরা লিখেছি বিকাশের বদলে যে ভাবে মার্কিন বক্সার এরল স্পেনসকে জেতানো হয়েছে, তা ঠিক হয়নি।” |
বিতর্কিত সেই ম্যাচে মনোজ। ছবি: গেটি ইমেজেস |
এ সবের মধ্যে নতুন সংযোজন মনোজ। যিনি সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন পক্ষপাতিত্বের। উত্তেজিত মনোজের মন্তব্য, “অলিম্পিক বক্সিং আর এটা হচ্ছে কোথায়? এ তো জেলার কোনও প্রতিযোগিতা মনে হচ্ছে। ব্রিটিশ কোনও বক্সার রিং-এ থাকলে উল্টো দিকে কে আছে না আছে, তাতে কিছু এসে-যায় না। জেলা প্রতিযোগিতায় যা হয় আর কী। প্রতারণা এবং শুধুই প্রতারণা।”
স্টকার প্রথম রাউন্ড ৭-৪ জেতার পর পরের রাউন্ডটাও জিতে নেন ৯-৫ করে। তৃতীয় রাউন্ডে ভারতীয় বক্সার তীব্র লড়াই শুরু করেন। তাঁর দাবি, ওই রাউন্ড তিনি ৭-৪ জিতেছেন। কিন্তু রাউন্ড শেষে বিচারকদের সিদ্ধান্তের পর দেখা যায় তাঁকে হতাশ ভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে আসতে। ভারতীয় শিবিরও প্রবল ক্ষুব্ধ পুরো ঘটনা নিয়ে। বলা হচ্ছে, মনোজের সঙ্গে যা হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। এ ভাবে পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। ভারতের কোচ কিউবার ব্লাস ইগ্লেয়াস ফার্নান্ডেজ বলেছেন, “শেষ রাউন্ড মনোজ জিতেছিল ৭-৪। আর শুধু ওই রাউন্ড কেন, সব ক’টাতেই একই জিনিস হয়েছে। খুব, খুব খারাপ সিদ্ধান্ত।” ইগ্লেয়াসের মতে, বিচারকরা যা করেছেন, তা এক কথায় দিনে ডাকাতি।
আর স্টকার? যাঁকে কি না অন্যায় ভাবে মনোজের বিরুদ্ধে জেতানো হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি কী বলছেন? “আমি শুধু লড়তে চেয়েছিলাম। সেটা করেছি। আমি মনে করি, বেশ বড় ব্যবধানে জিতেছি আমি। কে জিতেছে, কে হেরেছে সেটা আমি বিচারকদের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি।”
যা দাঁড়াচ্ছে, বিকাশের মতো মনোজকে নিয়েও ভারত ফের আদালতের রাস্তায় যাবে কি না সময় বলবে। কিন্তু পরের পর ভারতীয় বক্সারদের উষ্মা-প্রতিবাদে লন্ডনের রিং যে লন্ডভন্ড, সেট লিখে ফেলাই যায়! |