পদকের লড়াই থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন ভরত ছেত্রীরা। এ দিন সম্মান রক্ষার লড়াইয়েও পিছিয়ে পড়লেন তাঁরা। কোরিয়ার কাছে ১-৪ পর্যুদস্ত হয়ে।
এক সময়ে অলিম্পিক হকিতে আটটি সোনা জয়ী দেশ আট বছর পরে আবার অলিম্পিকে ফিরে আপাতত নিজেদের গ্রুপে একেবারে শেষতম স্থানে। অলিম্পিকে নামা বারোটি দলের মধ্যে একমাত্র ভারতই এখনও পর্যন্ত কোনও পয়েন্ট পায়নি। ফলে এখন তারা এগারো এবং বারো নম্বরের লড়াইয়ে। যা অলিম্পিক হকির ইতিহাসে ভারতের সবথেকে জঘন্য পারফরম্যান্স।
এর পরেও লন্ডন থেকে নিদেনপক্ষে একটা জয় নিয়ে ফেরার জন্য নিশ্চয়ই মরিয়া হয়ে থাকবেন মাইকেল নবসের ছেলেরা। নবস নিজে অবশ্য যথেষ্ট হতাশ। এ দিন হারার পরে বিরক্ত ভারতীয় কোচ বলেছেন, “অলিম্পিকের মতো বড় মঞ্চের চাপই বলুন বা অন্য কিছু, ছেলেরা নিজেদের খেলাটাই খেলতে পারছে না। ওরা দলকে, নিজেদের এবং দেশকে ডোবাল।” |
|
|
বিপর্যয়ের দুই ছবি।
কোরিয়ানদের সামনে ভূপতিত সন্দীপ। |
ভারতের আবার
গোল হজম। |
ছবি: এএফপি |
|
লন্ডনের নীল টাফের্র্র উপর ভারতীয় হকির ব্যর্থতার করুণ রেখাচিত্রটা এই রকম-- গ্রুপে চার ম্যাচ খেলে চারটিতেই হার। দল যত গোল খেয়েছে, তার অর্ধেকও দিতে পারেনি। হিসাব বলছে, এখনও পর্যন্ত ভারত গোল খেয়েছে পনেরোটা, দিয়েছে ছ’টা। হাতে বাকি আর বেলজিয়াম ম্যাচ। তবে যে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারত ১-৩ হেরেছিল, আজ তাদেরই বেলজিয়াম বেঁধে রেখে দিল ১-১ ড্র-এ। ফলে শেষ ম্যাচে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধেও ভরতদের কাজটা সহজ হবে না।
আজ সন্দীপ সিংহদের মাঠে তুলনামূলক ভাবে বেশি দায়বদ্ধ দেখালেও ভারতীয় রক্ষণ কোরীয়দের ঠেকাতে পারেনি। ম্যাচের ছ’মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে প্রথম গোল খায় ভারত। এর চার মিনিট পরে গুরবিন্দর সিংহ চাড্ডা সমতা ফেরালেও ক্রমশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে থাকে কোরিয়ার হাতে। তুষার খন্দকরের একটা শট কোরিয়ার গোলকিপারের প্যাডে না লাগলে স্কোর লাইন একটু অন্য রকম হত। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কোরিয়ার সামনে ভারত সে ভাবে দাঁড়াতে পারেনি। ৫৯, ৬৭ এবং ৭০ মিনিটে তারা খেয়ে বসে আরও তিন গোল। কোরিয়ার চার গোলের মধ্যে তিনটিই পেনাল্টি কর্নার থেকে। অন্য দিকে, নিজেদের গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫-৪ হারাল পাকিস্তান। |
ভাল পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি। লন্ডন শারদোৎসব কমিটি ও কালীবাড়ির উদ্যোগে
দুই বাঙালি অলিম্পিয়ান জয়দীপ ও রাহুল সংবর্ধিত। পাশে দোলা। ছবি: উৎপল সরকার |
কৃষ্ণার চিন্তায় ঢুকে পড়েছে রিও |
হকিতে হারের লজ্জা অব্যাহত থাকলেও, অ্যাথলেটিক্সের মাঠ থেকে মাথা উঁচু করেই বেরোলেন ভারতের কৃষ্ণা পুনিয়া। শনিবার রাতে তাঁর কাছে একটা পদকের প্রত্যাশা ছিল। সেটা হল না। কিন্তু কৃষ্ণা যে ভাবে নিজের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সপ্তম হলেন, সেটাতে লজ্জার কিছু ছিল না। বেজিং গেমসের সেরা মার্কিন স্টেফানি ব্রাউন ট্র্যাফটন এবং প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলীয় দানি স্যামুয়েলস লন্ডনে শেষ করলেন কৃষ্ণার পরে। দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের পর কৃষ্ণার সোনা জয়কে কটাক্ষ করে ভারতীয়কে ডিসকাসের ডুয়েলে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন স্যামুয়েলস। গতকাল সেই আচরণের জন্য কৃষ্ণার কাছে এসে তিনি ক্ষমা চেয়ে যান বলে জানিয়েছেন ভারতীয় মেয়ের কোচ ও স্বামী বীরেন্দ্র।
কৃষ্ণা এ দিন ছোড়েন ৬৩.৬২ মিটার, যা তাঁর সেরা থ্রো ৬৪.৭৬ মিটারের থেকে কম। ডিসকাসে সোনা জয়ী ক্রোয়েশীয় সান্ড্রা পেরকোভিচ ছোড়েন ৬৯.১১ মিটার। ৬৭.৫৬ মিটার ছুড়ে রুপো পান রুশ দারয়া পিশ্চালনিকোভা এবং ৬৭.২২ ছুড়ে ব্রোঞ্জ চিনের লি ইয়াফেং। কৃষ্ণা অবশ্য বলেছেন, “প্রত্যেক অ্যাথলিটের একটাই লক্ষ্য থাকেঅলিম্পিক পদক। এ বার বেজিংয়ের থেকে অনেক ভাল করেছি। আপাতত ক’টা দিন বিশ্রাম নিয়েই নেমে পড়ব নতুন করে। আমি গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমস আর ব্রাজিলে পরের অলিম্পিক নিয়ে ভাবনা শুরু করে দিয়েছি।” হাল ছাড়ার পাত্রী নন বুঝিয়ে যোগ করেছেন, “বড় ইভেন্টে এমন হয়ে থাকে। পিশ্চালনিকোভা গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এগারো নম্বরে ছিল। আর আজ রুপো জিতল। এখানে সপ্তম হওয়া আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।”
অলিম্পিকের কোনও থ্রো ইভেন্টে কৃষ্ণাই প্রথম ভারতীয় যিনি ফাইনালে গেলেন। এবং সর্বকালের তালিকায় মিলখা সিংহ, পি টি ঊষা, এস শ্রীরাম, গুরবচন সিংহ রণধাওয়া এবং অঞ্জু ববি জর্জের পরে ষষ্ঠ ভারতীয় হিসাবে উঠলেন অলিম্পিকের কোনও অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টের ফাইনালে। |
রবিবার অবশ্য মেরি কমের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পাশে শ্যুটিংয়েও লড়াইয়ে টিকে থাকলেন ভারতের মানবজিৎ সিংহ সাঁধু। রবিবার পুরুষদের ট্র্যাপ ইভেন্টে যোগ্যতা পর্বে ৭০ পয়েন্ট তুলে পঁচিশ নম্বরে আছেন। ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থানে আছেন রুশ আলেক্সি আলিপভ। বিকানেরের মহারাজ ও ভারতীয় শু্যটিংয়ের পথপ্রদর্শক করনি সিংহের নাতি মানবজিৎ সোমবার আবার নামবেন এই ইভেন্টের পরের রাউন্ডে।
|