‘বোল্ট বিদ্যুৎ আবার ঝলসাল..দু’বার।’ ‘দ্য গ্রেটেস্ট’। ‘কিং অব দ্য ট্র্যাক।’
জনসংখ্যা কত হবে দেশটার? মেরেকেটে পঞ্চাশ লক্ষ। কে-ই বা ভেবেছিল, ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ জামাইকার হাত ধরে পাল্টে যাবে স্প্রিন্টের ইতিহাস? মাইকেল ফেল্পসের সঙ্গে অলিম্পিকের সর্বকালের সেরার লড়াইয়ে তুলে আনতে হবে জামাইকার এক অধিবাসীকে?
সাড়ে ছ’ফুটের উসেইন বোল্ট সব পাল্টে দিলেন। ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ থেকে শুরু করে ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ সহ দুনিয়ার প্রচারমাধ্যম এখন বোল্টের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। উপরের শিরোনাম-গুচ্ছ তারই নির্দশন। |
কার্ল লুইস, মরিস গ্রিন, জেসি ওয়েন্সরা এত দিন গর্ব করতেন অলিম্পিক ‘ডাবল’ নিয়ে। মরিস গ্রিন হাতের উল্কিতে লিখে রাখতেন, ‘আই অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট।’ অলরাউন্ড অ্যাথলিট হিসেবে লুইস এখনও এগিয়ে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকে স্প্রিন্টের দুনিায় লুইস-সহ বাকিরা শুরু করবেন দ্বিতীয় স্থান থেকে। এক নম্বর জায়গাটা উসেইন বোল্টকে ছেড়ে দিতেই হবে। একই অলিম্পিকে ‘ডাবল’-এর কৃতিত্ব অলিম্পিক ইতিহাসে আজ পর্যন্ত আছে ন’জনের। কিন্তু পরপর দুই অলিম্পিকে ‘ডাবল’? ওটা শুধু বোল্টের সম্পত্তি! তার সঙ্গে বেজিংয়ের মতো এখানেও তিনটে সোনা জয়ের সুযোগ এখন তাঁর সামনে। শুক্রবার টিম জামাইকা ৪x১০০ রিলের ফাইনালে পৌঁছে গেল খুব সহজেই। ইয়োহান ব্লেক দৌড়লেও এ দিন দৌড়ননি বোল্ট। তবে শনিবারের ফাইনালে তিনি থাকবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।
গত রাতে ১৯.৩২ সেকেন্ডে দু’শো মিটার শেষ করার পর-পরই একের পর এক অদ্ভুত কাজকর্ম শুরু করে দেন বোল্ট। ফিনিশিং লাইন ছোঁয়ার মুহূর্তে ইয়োহান ব্লেকের দিকে তাকিয়ে তাঁর ঠোঁটে আঙুল রাখার ছবি, এখনও লোকের চোখের ভাসছে। কিন্তু রাজকীয় উৎসবের ওইখানেই শেষ নয়। তখনও বাকি ছিল চমকের পর চমক। কখনও কিংবদন্তি কার্ল লুইসকে একহাত নিয়ে বোল্ট বলে ফেলেছেন, “ওকে আমি সম্মানই করি না।” কখনও ক্যামেরাম্যানের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন ক্যামেরা। শাটার টিপে অক্লান্ত ভাবে তুলে গিয়েছেন নিজের ছবি। ব্লেকের ছবি। মাঝরাত থেকে টুইটার ভেসে গিয়েছে বোল্ট-বন্দনায়। ওয়েন রুনি টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রিও ফার্দিনান্দও বাদ যাননি। “আমি এখন কিংবদন্তি। সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট। মাইকেল জনসন যে জায়গায়, আজ থেকে আমিও সেখানে,” গত রাতে জনসনের প্রাক্তন বিশ্বরেকর্ড ছুঁয়ে হুঙ্কার দিয়েছেন বোল্ট। দু’শো মিটারের চাপটা বেশি ছিল স্বীকার করছেন। কিন্তু একই সঙ্গে চূড়ান্ত সার্টিফিকেট দিচ্ছেন ব্লেককে । উচ্ছ্বাসে ভাসছেন স্প্রিন্টে জামাইকার সাফল্য নিয়ে। “ইয়োহানই আমার ঘুমটা ভাঙিয়েছে,” বলেছেন স্প্রিন্টের নতুন কিংবদন্তি। ‘দ্য বিস্ট’-কে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসেছিলেন অলিম্পিকের আগে। দেখেছেন, দু’শো মিটার শেষ করতে ব্লেকের লাগছে ১৯.৪ সেকেন্ড। একশো মিটারে লাগছে ৯.৭ সেকেন্ড। “তখনই বুঝে যাই পরের অলিম্পিকে ওকে আটকানো যাবে না। যা করার আমাকে এ বারই করতে হবে। আমি আজ যে এত ভাল অ্যথলিট হয়েছি, সেটা ব্লেকের মতো কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বলেই।”
আর জামাইকা? রাত থেকে দেশ জুড়ে শুধু তিনটে শব্দ। ‘এক..দুই..তিন।’ দু’শো মিটারে সোনা-রুপো-ব্রোঞ্জ সবই তো জামাইকার। বোল্ট যদি সোনা পেয়ে থাকেন, তা হলে রুপো ও ব্রোঞ্জ যথাক্রমে ব্লেক এবং ওয়ারেন ওয়ারের। বোল্ট-ব্লেকের বাড়ির সামনে গত রাতে বসেছে জায়ান্ট স্ক্রিন। থিকথিক করেছে লোক। হর্ন, সসপ্যানের ঢাকনা--যা পাওয়া গিয়েছে হাতের সামনে, সব বাজিয়েই শব্দব্রহ্ম সৃষ্টি হয়েছে জামাইকায়। বোল্ট নিজেও বলে ফেলেছেন, “আমরা দেখিয়ে দিলাম স্প্রিন্টে জামাইকাই এক নম্বর দেশ।”
তাঁর দেশের উৎসবের মেজাজের সঙ্গে কোথাও যেন মিশে যাচ্ছে উসেইন বোল্টের নিজস্ব লক্ষ্যও। একশো মিটারে সোনা। দু’শো মিটারেও তাই। এ বার সামনে রিলে।
রিংটোন তো একটাই। ‘ওয়ান..টু..।’ |