কুস্তির হাত ধরে এল চতুর্থ ব্রোঞ্জ
যোগেশ্বরের প্যাঁচে শেষবেলায় পদক
প্রথম রাউন্ড কোরিয়ানের। দ্বিতীয় রাউন্ড একই ভাবে এক চুলের ব্যবধানে জিতে সমতা আনলেন ভারতীয় পালোয়ান। ১-১ অবস্থায় এর পর তৃতীয় রাউন্ড যাঁর, অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক তাঁরই। এবং সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ঊনত্রিশ বছরের হরিয়ানভি একের পর এক পাক দিয়ে ম্যাট-এর ওপর আছড়ে ফেললেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে। বারবার, তিন বার। এক লাফে ৬ পয়েন্ট ভারতীয় কুস্তিগীরের ঝুলিতে। সব মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার জং মিয়ং রি-কে ৭-১ পয়েন্টে হারিয়ে যোগেশ্বর দত্ত ২০১২ অলিম্পিকের শেষ লগ্নে ভারতের ঘরে চতুর্থ ব্রোঞ্জ আনলেন। লন্ডন গেমসে ভারতের পঞ্চম পদক। কুস্তিতে প্রথম।
সোনপতের যোগেশ্বর শনিবার ফ্রিস্টাইল কুস্তির ৬০ কেজি বিভাগে দ্বিতীয় রাউন্ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন রাশিয়ার বেসিক কুদুকভের কাছে ০-৩ হেরে মূল লড়াই থেকে ছিটকেও শেষ পর্যন্ত গলায় ব্রোঞ্জ পদক তুললেন অলিম্পিকের নিয়মে।
সেই মোক্ষম প্যাঁচ। পালোয়ানের কব্জায় পরের পর ঘুরপাক খাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী।
রেপেশাজ। পরাজিত পালোয়ান যাঁর কাছে হারলেন সেই বিজয়ীই যদি শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠেন, তা হলে বিজিত প্লে-অফ লড়াইয়ের সুযোগ পাবেন। আর সেখানে তিনটে রাউন্ড জিতলেই রেপেশাজ থেকে ব্রোঞ্জ পদক পাবেন।
যে ভাবে শনিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ লন্ডনের এক্সেল এরিনায় ব্রোঞ্জ পেলেন যোগেশ্বর। দিল্লি পুলিশের এই অফিসার বলছেন, “বেজিং অলিম্পিকে কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের ইউমতোর কাছে হারার পর দিন থেকেই লন্ডনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। আজ লম্বা একটা সফরের সফল সমাপ্তি ঘটিয়ে ভীষণ ভাল লাগছে। বেজিংয়ে পদক পেলে আর লন্ডনে আসতাম না।” স্পষ্ট ইঙ্গিত, এটাই তাঁর শেষ অলিম্পিক। ২০০৯-এ দু’বার হাঁটুতে অস্ত্রোপচারে কুস্তিজীবনই প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়ে। অসম্ভব কঠিন ছিল প্রত্যাবর্তন। কিন্তু টেকনিক এবং অ্যাটিটিউড-এ পরিবর্তন ঘটিয়ে দারুণ ভাবে ম্যাট-এ ফেরত আসেন। শেষমেশ আমেরিকার কলোরাডো স্প্রিংস-এ তিন সপ্তাহের ট্রেনিং আর বেলারুশে মার্কিন দলের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করে সিধে লন্ডন।
মাত্র আট বছর বয়সে হরিয়ানার ভানসর কালান আখড়ায় যাওয়া শুরু যোগেশ্বরের। দু’বছর আগে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতেন। লন্ডন অলিম্পিকের টিকিট পান কয়েক মাস আগে কাজাখস্তানে যোগ্যতা অর্জনকারী টুর্নামেন্টে রুপো জিতে। ২০০৬ দোহা এশিয়াডে ব্রোঞ্জ। ২০০৩ কমনওয়েলথ কুস্তিতে সোনা। ২০১২ এশীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা। সাফল্যের পরিধি যথেষ্ট দীর্ঘ, অলিম্পিকে সুশীল কুমারের যোগ্য উত্তরসূরির।
ব্রোঞ্জের ডিগবাজি।
এ দিন সেই অভিজ্ঞতার ঝুলিই উপুড় করে দিলেন রেপেশাজ-এ। মূল লড়াইয়ে প্রথম রাউন্ডে বেলজিয়ামের গুয়েডা-র বিরুদ্ধে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত জয়ের মধ্যেই যেন যোগেশ্বরের দিনের শেষে পদক-জয়ের বীজ বপন হয়েছিল। রেপেশাজের প্রথম লড়াইয়ে পুয়ের্তো রিকো-র ফ্র্যাঙ্কলিন গোমেজকে দু’রাউন্ডেই হারান। দ্বিতীয় লড়াইটাই সবচেয়ে রুদ্ধশ্বাস। ইরানের মাহমুদ মাসুদের কাছেই কাজাখস্তানে কয়েক মাস আগে হেরেছিলেন। লন্ডনে প্রতিশোধ নিলেন। তা-ও দ্বিতীয় রাউন্ডে ভারতীয়কে প্রথমে ৩ পয়েন্ট দিয়েও ইরানের চ্যালেঞ্জে বিচারকরা ভিডিও রিভিউ করে তা বাতিল করেন। ক্ষুব্ধ ভারতীয় কোচ রিংয়ে ঢুকে হলুদ কার্ড দেখেন। জংয়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়ইয়ে প্রথম দু’রাউন্ড সমানে-সমানে টক্কর হল দু’জনের। কিন্তু শেষ রাউন্ডে আস্তিনে লুকনো টেক্কা বার করেন ভারতীয় পালোয়ান। যোগেশ্বরের দুর্ধর্ষ প্যাঁচ তাঁর তৃতীয় অলিম্পিকে স্বপ্নের পদক আনল।

যোগেশ্বর-নামা
• হরিয়ানার সোনপত জেলায় জন্ম। পেশায় পুলিশ অফিসার। ডাক নাম যোগী। ২৯ বছরের এই কুস্তিগীরের উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট।
• সেরা সাফল্য লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ। এ ছাড়া কমনওয়েলথ, কমনওয়েলথ কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা। দোহা এশিয়াডে ব্রোঞ্জ।
• পদকের স্বীকৃতি হিসাবে হরিয়ানা সরকারের থেকে দেওয়া হচ্ছে ১ কোটি টাকা।
আমি যদি বেজিংয়ে পদক জিততাম, তা হলে এই অলিম্পিকে নামতামই না।
চোট আঘাত প্রচুর ভুগিয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক পদকের স্বপ্ন সব সময়
তাতিয়ে দিত। জানতাম এ বারই শেষ সুযোগ।

অমিতাভ বচ্চন
আরও একটা পদক! যোগেশ্বরের লড়াই দেখলাম। অসাধারণ! ওকে অভিনন্দন!

যুবরাজ সিংহ
৬০ কেজি ফ্রিস্টাইলে যোগেশ্বর ব্রোঞ্জ জিতল...অভিনন্দন...
পাঁচ নম্বর অলিম্পিক পদক পেয়ে গেলাম আমরা।
দেশ মোট
যুক্তরাষ্ট্র ৪১ ২৬ ২৯ ৯৬
চিন ৩৭ ২৬ ২১ ৮৪
ব্রিটেন ২৭ ১৫ ১৮ ৬০
রাশিয়া ১৯ ২৪ ২৮ ৭১
দক্ষিণ কোরিয়া ১৩ ২৭
ভারত ( ৫২ তম)
১১ অগস্ট রাত দু’টো পর্যন্ত

ছবি: এএফপি




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.