‘ক্লাবের লোগো’ লাগিয়ে খেলল নেইমাররা
মেক্সিকো- ২(পেরাল্টা-২)
ব্রাজিল- ১(হাল্ক)
শুধু ব্রাজিলের খেলা দেখব বলেই অফিস যাইনি। কেননা আমি জানতাম, কাজের যা চাপ তাতে রাত ন’টার আগে বাড়ি ফিরতে পারতাম না। এখন মনে হচ্ছে ছুটিটা বেকার নষ্ট করলাম।
সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে আসছে তাকেই বলছি, যা কাজ-টাজ আমার সঙ্গে, এখনই মিটিয়ে নাও। সন্ধেবেলায় ব্যস্ত থাকব। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি, নব্বই মিনিটের খেলা মাত্র ছত্রিশ সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যাবে। রান্নাঘর থেকে পপকর্ন নিয়ে এসে যে টিভি-র সামনে বসব, সেই সুযোগটাও পেলাম না। মেক্সিকো তাঁর আগেই গোল করে দিয়েছে। আমার ভাগ্যে বোধহয় আর ব্রাজিলের অলিম্পিক ফুটবল সোনা জয়ের ছবি দেখার সুযোগ জুটবে না!
লন্ডন অলিম্পিকে ব্রাজিল যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে সোনা না জেতার কোনও চিহ্ন ছিল না। মনে হচ্ছিল, এ বারই খিদেটা মিটে যাবে। কিন্তু ফাইনালে পেরাল্টার ছত্রিশ সেকেন্ডের গোল সব অঙ্ক ওলটপালট করে দিল। ব্রাজিলের মধ্যে সেই আগুন দেখতে পেলাম না। স্টপার রাফায়েলের ভুলেই প্রথম গোলটা খেতে হল ব্রাজিলকে। আর সেখান থেকেই পতনের শুরু। ছন্দ কেটে গেল। ফুটবলাররা এত গা ছাড়া দিয়ে খেলল যে গোটা ম্যাচে এক বারও মনে হল না, ব্রাজিল সমতা ফেরাতে পারবে। নেইমার, দামিয়াও, কারও মধ্যে বাড়তি চেষ্টা নেই। আমার তো মনে হল দেশের চেয়ে ক্লাবকে বেশি ভালবাসে ওরা। না হলে ও রকম শরীর বাঁচানো ফুটবল খেলবে কেন? রোমারিও, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহোদের অলিম্পিক-অভিযান থেকে যে দুঃস্বপ্ন ব্রাজিলকে এখনও তাড়া করে চলেছে!
হারের পর নেইমারকে সান্ত্বনা। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলের হারের পিছনে আরও একটা বড় কারণ হল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। ওরা পাত্তা দিতে চায়নি মেক্সিকোকে। ওদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন ক্লাবের অদৃশ্য লোগো জার্সিতে লাগিয়ে মাঠে নেমেছে। রাফায়েল বলছে, আমি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবলার। অস্কার বলছে আমি চেলসির, মার্সেলো বলছে রিয়ালের। সবাই যে যার মতো পা বাঁচিয়ে খেলছে। দেশের অলিম্পিক সোনা এল কি এল না, তা নিয়ে কোনও হেলদোলই নেই। নিজেদের দেশে ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রায় এই দলটাই খেলবে। তার আগে ফুটবলারদের মানসিকতা না বদলালে কিন্তু মারাত্মক ভুগতে হবে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
ফাইনালে মানো মেনেজেসের স্ট্র্যাটেজি নিয়েও প্রশ্ন তুলব। কেন হাল্ককে বসিয়ে রেখে সান্দ্রোর মতো ফুটবলারকে কোচ প্রথম দলে রাখল বুঝতে পারলাম না। ব্রাজিলের এই দলে একমাত্র হাল্ককেই সবচেয়ে শক্তপোক্ত লাগল। ও নামতে কিছুটা গতি এবং ছন্দ ফেরে দলে। কিন্তু বাকিদের গয়ংগচ্ছ খেলায় রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল ব্রাজিলকে। হাল্কের শেষ মুহূর্তের গোলটা সান্ত্বনা গোলের বেশি নয়।
মেক্সিকোর বরং চার গোলে জেতার কথা। একটা শট ক্রসবারে লাগল। অফসাইডের কারণে একটা গোল বাতিল হল। পেরাল্টার দু’টো গোল দেখে ব্রাজিলের জন্য কষ্ট হচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু ওর ফুটবল দেখে মন ভরে গেল। ব্রাজিলও সুযোগ পেয়েছিল। কাজে লাগাতে পারেনি। অলিম্পিকের আগে নেইমারদের নিয়ে এত মাতামাতি হয়েছে যে, ফাইনালে শুরুতেই গোল খাওয়ার পরে আরও বেশি করে মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। নেইমার-অস্কারকে মাঠে খুঁজেই পেলাম না। ফুটবলারদের আত্মতুষ্টি কোন মাত্রায় পৌছলে এত সুযোগ নষ্ট হয়, সেটা শনিবার দেখাল ব্রাজিল। শেষ তিন মিনিটে ওরা চারটে সুযোগ নষ্ট করল। পেলেকে দেওয়া কথা রাখতে পারল না নেইমার।
এটাও ঠিক যে, একটা ম্যাচ দিয়ে সম্পূর্ণ বিচার হয় না। বিশ্বকাপ এখনও দু’বছর বাকি। আমার ধারণা, তার আগে দলটাকে আরও ভাল করে গুছিয়ে নেবে ব্রাজিল। অলিম্পিকের পরে মেনেজেসকে রাখা হবে কি না, জানি না। তবে দলটায় প্রতিভার অভাব নেই। একটু ঘষেমেজে নিলে ভবিষ্যতে সোনা দিতে পাবে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.