বর্ধমান |
শহরের সেরা তিন দুর্গাপুজো |
গ্রামীণ শহর বর্ধমানে পুজো মানেই সমস্ত কিছু ছাপিয়ে ওঠা উৎসব। পাড়ায় পাড়ায় সেজে ওঠা মণ্ডপ, প্রতিমা আর মণ্ডপের গায়ের নানা কারুকাজ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে লড়াই প্রথম স্থান দখলের— কে রাজস্থানের জ্যান্ত উট মণ্ডপের পাশে বেঁধে রাখছে অথবা কে সাগরের মতো জলাশয়ে সত্যিকারের তিমি মাছ ছেড়ে রাখবে, সমস্ত পরিকল্পনা ‘টপ সিক্রেট’!
দেখা যাক গত বারের স্কোর শিট। পুলিশের বিচারে ২০১১ সালের পুজোয় প্রথম হয়েছিল শ্যামলাল সর্বজনীন পুজো কমিটি। দ্বিতীয় স্থানে লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘ। তৃতীয় স্থানে ফ্রেন্ডস ক্লাব। তবে এ কথা ওই পুজো বিচারকেরা (যাদের মধ্যে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গায়িকা, চিকিৎসক, আমলা সকলেই ছিলেন) চুপিচুপি জানিয়েছেন, অনেক মণ্ডপের কপালে একটুর জন্য শিকে ছেঁড়েনি পুরস্কারের। বিচারকদের মধ্যে এই স্থান নির্বাচন নিয়ে কার্যত হাতাহাতিই বেধে যাচ্ছিল। অনেক কষ্টে তাঁরা সহমত হয়েছিলেন!
|
শ্যামলাল সর্বজনীন পুজো কমিটি |
|
শ্যামলালের প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত ছিল। গত বারের ‘মহাশূন্যে নভঃশ্চর দুর্গা’ দেখে দর্শকদের চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। তবে একটা কথা বলা যেতেই পারে, মণ্ডপে ঢোকা এবং বের হওয়ার পাহাড়ি, আঁকাবাঁকা, আলো আঁধারি রাস্তাটি ছিল অত্যন্ত সংকীর্ণ। অল্প সংখ্যক দর্শকই প্রতি বার ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন। এ জন্য ভিড়ের মধ্যে দর্শকদের অপেক্ষা করার কষ্টও সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু মণ্ডপের ভেতরে ঢুকে সকলেরই সমস্ত কষ্ট মুছে গিয়েছিল নিমেষে। এমনই মহাকাশচারী, সপরিবার দুর্গার মাহাত্ম!
|
|
লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘ |
গত বার লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘের দ্বিতীয় স্থান পাওয়াটা অনেকেই ভাল মনে নিতে পারেননি। কারণ এই মণ্ডপে বাড়তি পাওনা ছিল পুরুলিয়ার ছৌ নাচ। মণ্ডপের গায়ে বারো মাসে তেরো পার্বন— নববর্ষ থেকে চড়কের নানা চিত্র উপস্থিত করা হয়েছিল। ভাইফোঁটা, ঝুলন, জামাইষষ্ঠীর এই একান্ত ঘরোয়া চিত্র দেখতেই কিন্তু মানুষের ঢল নেমেছিল। কুমোরটুলির মিন্টু পালের তৈরি দুর্গাতেও ছিল সাবেকি অথচ দারুণ চমক। |
|
|
ফ্রেন্ডস ক্লাব |
তৃতীয় হওয়া ফ্রেন্ডস ক্লাব গত বার পাটের দুর্গা তৈরি করে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল। প্রথমে ওই ক্লাবের সদস্যরা তুলে ধরেছিলেন অধুনা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সমবায় ব্যাঙ্ক উদ্বোধনের দৃশ্য। তারই পাশাপাশি ছিল সমবায়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান,স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থান। মণ্ডপে নানা ধরনের কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর প্রদর্শনীও ছিল। ব্যাঙ্ক ঋণের মাধ্যমে কী ভাবে মহিলারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন, তাও তুলে ধরেন সদস্যরা। কিন্তু বামপন্থী ঘরানার এই প্রদর্শনী নিয়ে পাড়ায় বিতর্ক ওঠে। শেষে অবশ্য বিতর্ক যতই হোক না কেন, মণ্ডপে ভিড় টেনে তৃতীয় পুরস্কার জিতে নিতে অসুবিধা হয়নি ফ্রেন্ডস-এর।
এরই পাশাপাশি অবশ্য মণ্ডপ সজ্জা, প্রতিমার দিক থেকে যথেষ্ট এগিয়ে ছিল কয়েকটি পুজো কমিটি। দশাবতার চেহারা গড়ে মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল আলমগঞ্জ সর্বজনীন। কেশবগঞ্জ চটিতে মিশরের মমিও সাড়া তুলেছিল। পাশাপাশি ছিল বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজোয় মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যক্তিগত পুজোর মধ্যে শতবর্ষে পা রাখা দেবেন্দ্রভবনের পটেশ্বরীও ছিলেন উজ্বল। |
তথ্য: রানা সেনগুপ্ত
ছবি: উদিত সিংহ |
|
|
|