নদিয়া |
বাদকুল্লার অনামী ক্লাবের পুজো |
মহানবমীর দিন রাত সাড়ে দশটা। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। অনামী ক্লাবের মাঠে ৫৭ বছর বয়সী স্ত্রী ভগবতী মণ্ডলের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন ৬৩ বছর বয়সের গণেশ মণ্ডল। গণেশবাবু প্রতিমা দর্শন করে ফিরলেও দীর্ঘ লাইন শেষে সবে মন্দিরে প্রবেশ করেছেন ভগবতীদেবী। কিছু ক্ষণ পর ফিরে এসে তিনি বলেন, ‘‘এই ক্লাবের পুজো না দেখলে মনে হয় কি যেন একটা বাদ রয়ে গেল!’’
ওই দম্পতির কথাতেই নয়, সকলের বিচারে সর্বদিক দিয়ে বাদকুল্লায় সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্গাপুজোর আয়োজক অনামী ক্লাব। ১০০ ফুট চওড়া এবং ৭৫ ফুট উঁচু বাঁশ, কাঠ, কাপড়, পাট দিয়ে তৈরি হয়েছিল গুজরাতের ‘অক্ষরধাম’ মন্দিরের অনুকরণে পুজোমণ্ডপ। মণ্ডপের ভিতরে পাটের সুন্দর কাজ সকলের নজর কেড়েছিল। সঙ্গে দুর্দান্ত সঙ্গত করেছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। আলোয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল বিভিন্ন ঘটনা— সমাজ সচেতনতার বিভিন্ন বিষয়। কৃষ্ণনগরের
মৃৎশিল্পী সুবল পালের তৈরি প্রতিমাও দর্শকদের মনে ধরেছিল বেশ। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ, পুজো উপলক্ষে পঞ্চমীর দিন শুরু হওয়া মেলা। শেষ হয় দ্বাদশীর দিন। ছোটদের উপকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানে এ দিনগুলিতে উপচে পড়ে ভিড়।
|
|
পুজোর বৈশিষ্ট্য |
বাদকুল্লায় ছোট, বড়, মাঝারি ও বাড়ির পুজো মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫টি পুজো হয়। অনামী ক্লাব তাদের অন্যতম। বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে পুজো উপলক্ষে আসেন। ক্লাবের বর্তমান পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিমাদ্রী পাল বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ক্লাবের সদস্যরা নিজেরাই প্যান্ডেল তৈরি করতেন। এখন ক্লাবের ৪০০ সদস্য মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে পুজো করেন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকেও নেওয়া হয় সামান্য কিছু। গত বছর খরচ হয়েছিল সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘খুব নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর হয় এখানে। প্রতি দিন ভোগও দেওয়া হয়।’’
পুজোর পাশাপাশি ক্লাবে অ্যাথলিট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এই ক্লাবে। প্রায় ১৫০ জন ছেলেমেয়ে রয়েছে এই প্রশিক্ষণ শিবিরে। এ জন্য বছরে মোটা টাকা খরচও হয়। হিমাদ্রীবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমরা কোনও স্পনসর পাই না!’’ |
তথ্য: সৌমিত্র শিকদার
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য |
|
|
|