উত্তর ২৪ পরগনা: বেলঘরিয়া |
মানসবাগ সর্বজনীন দুর্গোৎসব |
গত বছরের থিম ছিল বারো মাসে তেরো পার্বণ। গোটা মণ্ডপ সেজেছিল তেরো পার্বণের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের চিত্রকলা দিয়ে। সাবেকি দুর্গা প্রতিমা ছিল বারকোষের মধ্যে। সেরার পুরস্কার যে এতগুলি জুটেছিল তার অন্যতম কারণ এমন অভূতপূর্ব থিম। প্রতিমা, মণ্ডপ, থিম, পরিবেশ সব মিলিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারে ন’টি সম্মান এসেছিল। মূল রাস্তা থেকে কিছুটা ভেতরের দিকে হয় এই পুজো। কিন্তু তাতে কি, মণ্ডপের ভিড় প্রায় বিটি রোড পর্যন্ত চলে আসে। আসলে মানসবাগের পুজো মানেই লোকে লোকারণ্য। |
|
পুজোর শুরু |
৬৫ বছর আগে বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা বরদাকান্ত চট্টোপাধ্যায় বেলঘরিয়ায় এসে নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পুজোর সময় স্থানীয় মানুষেরা ভিড় জমাতেন চট্টোপাধ্যায় বাড়ির ঠাকুর দালানে। বছর দুয়েক পর থেকে সাধারণ মানুষের উৎসাহেই সেই বাড়ির পুজো বারোয়ারি পুজোয় পরিণত হয়। নামকরণ হয় মানসবাগ সর্বজনীন।
|
পুজোর বৈশিষ্ট্য |
পাড়ার সকলেই এই পুজোতে সামিল হন— এটাই এখানকার সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য।
পুজোর চারদিন তো বটেই সারা বছর ধরেই মানসবাগের পুজোর উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেন। বৃক্ষ রোপন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তদান ইত্যাদি ছাড়াও গরিব ছাত্রদের দিকেও হাত বাড়িয়ে দেন এঁরা। পুজোর সময় ২০০ শিশু ও ১০০ জন মহিলাকে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। পুজোর শেষে বিজয়া দশমীতে হয় সিঁদুর খেলা। অন্তত এই দিনটায় পাড়ার বিবাহিত মেয়েরা বাপের বাড়িতে থাকেন।
পাড়ার বয়স্ক লোকেরা এই পুজো-উদ্যোগের মাথাতে থাকলেও মূল কাজের জায়গায় কিন্তু অপেক্ষাকৃত ছোটরাই জড়িয়ে থাকে। উদ্যোক্তাদের মতে, পারিবারিক পুজো থেকেই যে হেতু এই পুজোর উত্পত্তি তাই সমস্ত বিষয়ে পারিবারিক নিয়মরীতি মেনে চলার চেষ্টা থাকে। এমনকী থিম নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ‘পরিবার’ বিষয়টিকে ভীষণ ভাবে মাথায় রাখা হয়।
|
এ বারের পুজোয় |
এ বারের থিম বাংলার ব্রতকথা। বিভিন্ন রকমের পাঁচালি থাকবে মণ্ডপ জুড়ে। মাধ্যম মাটি হলেও যত রকমের ব্রতকথার বই বাজারে পাওয়া যায়, সবেরই প্রদর্শন হবে মণ্ডপ জুড়ে। আধুনিক সমাজ থেকে যে হেতু ব্রতকথা ও তুলসীমঞ্চের পাঠ প্রায় উঠে যেতে বসেছে, তাই সেটাকে ফের বাঙালি জীবনে মনে করাতেই এমন উদ্যোগের কথা ভেবেছেন উদ্যোক্তারা। |
তথ্য ও ছবি: বিতান ভট্টাচার্য |