মেদিনীপুর (শহর) |
কোতয়ালি বাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো |
পুজো করব বললেই তো হল না। তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন জায়গা। কোতয়ালি বাজারে তো জায়গাই নেই। চারদিকে দোকান, বাজার। তাই রাস্তার ধারে গাছের তলাতেই ছোট্ট প্যান্ডেল করে পুজো। সেই অল্প পরিসরেই নিজেদের ভাবনা ফুটিয়ে তোলেন উদ্যোক্তারা। বড় বাজেটের বিশালাকার প্যান্ডেলে ঘুরতে ঘুরতেও মানুষের নজর এড়িয়ে যায় না এই পুজো। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরের শতাধিক পুজোর মধ্যে কোতয়ালি বাজারের ওই পুজো গত বছর প্রথম হয়েছিল আনন্দবাজারের বিচারে।
|
|
পুজোর শুরু |
পাশের পাড়াতেই জমজমাট পুজো হয়। দূরদুরান্ত থেকেও মানুষ পুজো দেখতে ছুটে আসেন। কোতয়ালি বাজারের লোকজনও সেখানে যান। কিন্তু মেয়েরা? ঘর গেরস্থালি সামলে অন্য পাড়ায় গিয়ে কি পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন? পাশের পাড়া তো কি, সেই পুজোকে কি নিজেদের পুজো বলে মনে হবে! তাই কিঞ্চিৎ দুঃখ ছিল মনে। আর সেই দুঃখ ভোলাতেই ৩৮ বছর আগে কোতয়ালি বাজারে পুজো শুরু করেন স্থানীয় যুবকেরা। আজ অবশ্য তাঁরা বৃদ্ধ। পুজোর রাশ গিয়েছে নতুন প্রজন্মের হাতে। যাঁদের কারও জন্ম হয়েছিল পুজো শুরুর বছরেই কিংবা দু’এক বছর আগে পরে।
|
পুজোর বৈশিষ্ট্য |
উদ্যোক্তাদের কথায়, এই পুজোতে রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। বিচারকদের এতটুকু আগ্রহী করতে পারেনি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি অন্যান্য অনুকরণ বা অনুসরণের প্যান্ডেল। এক লহমায় দুই শহরের মধ্যে এই পুজোকেই প্রথমের মর্যাদা দিয়েছিলেন তাঁরা। মণ্ডপে হাজির ছিল লাঙল, গরুর গাড়ি, কুলো... দেবী দুর্গা হাঁটুর নীচে কাপড় পরে গ্রামের বধূ। সামনে তুলসী মঞ্চ। নিষ্পলক দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছিলেন সকলেই।
মণ্ডপের সামনে জায়গা না থাকায় এক সঙ্গে বহু মানুষের জমায়েত হতে পারে না। চলার পথেই সকলে দেখতে দেখতে এগিয়ে যান। যদিও বিগত বছরে এই প্রথা ভাঙতেই হয়েছিল। আনন্দবাজারের বিচারে প্রথম হওয়ায় ও সেই ছবি প্রকাশিত হওয়ায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না রাস্তায়। ভিড় সামলাতে স্বেচ্ছাসেবকদের নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল। তাতে কিন্তু সকলেই খুশি হয়েছিলেন। তার থেকে উৎসাহও পেয়েছেন।
|
এ বারের পুজোয় |
উদ্যোক্তা কৌশিক পাল বললেন, “এ বারও আমরা ছোট জায়গাতেই ‘থিম’ করতে চাই। যা দর্শকদের আনন্দ দেবে।” তার সঙ্গে অবশ্য আক্ষেপও, “এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা কোতয়ালি বাজারের বাজার কমিটি। বাজারে আর কতজন বসেন, কত টাকাই বা চাঁদা দিতে পারেন! তা ছাড়া পাড়াও ছোট্ট। তাই বড় বাজেটের পুজো করতে পারি না।”
স্বল্প বাজেটকে ভরসা করেই এ বারও দর্শক টানতে মরিয়া পুজো কমিটি। গত বছর পুরস্কার জেতার পর মনে আরও জোর বেড়েছে যে। তাই পুজোর আগাগোড়া থেকে সেরা হওয়ার যাবতীয় ছবি নিয়ে বানিয়েছেন অ্যালবামও। ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে অ্যালবাম দেখিয়েই তো জানান দিতে হবে, ছোট জায়গাতেও কী ভাবে বড় হয়ে ওঠা যায়। |
তথ্য: সুমন ঘোষ
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
|
|
|