মুর্শিদাবাদ |
বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাবের পুজো |
|
২০১১ সালের ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বহরমপুর পুরভবন থেকে তিনটি গাড়ির কনভয় ছুটল শারদোৎসবের ভিড়ে ঠাসা রাজপথে। মুর্শিদাবাদের ইতিহাস গবেষক খাজিম আহমেদ ও কবি সমীরণ ঘোষ-সহ মোট তিন জনের বিচারকমণ্ডলী রয়েছেন ওই কনভয়ে। বহরমপুর পুরসভার পক্ষ থেকে তাঁরা সারারাত ধরে সারা শহরের সব পুজোমণ্ডপ চষে বেড়িয়েছিলেন। অবশেষে তাঁদের বিচারে পুরসভার পক্ষ থেকে সেরা পুজোর শিরোপা তুলে দেওয়া হয় বহরমপুর শহরের ‘বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাব’-কর্তাদের হাতে।
প্রতিমার শৈলী, মণ্ডপসজ্জা, আলোর কারুকাজ ও সামগ্রিক পরিবেশ— এই চারটি ভাগে কৃতিত্ব যাচাই করে সেরার শিরোপা দেওয়া হয়। বিশাল এলাকা জুড়ে ৬০ ফুট উঁচু অক্ষরধামের আদলে গড়া মণ্ডপের ভিতরে ছিল নটরাজ শৈলীর সপরিবার দেবীদুর্গা ও মহিষাসুর। দুর্গা প্রতিমার মাথার পিছনের চালিতে মৃন্ময়ী মহিষাসুরমর্দিনীর ১০ রকমের মুখমণ্ডল।
|
পুজোর শুরু |
বহরমপুরের বিষ্ণুপুরে রয়েছে কয়েকশো বছরের প্রাচীন কালীমন্দির। ওই মন্দির ও কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা নিয়ে নানান কাহিনি ও মিথ প্রচলিত রয়েছে। পৌষ মাস জুড়ে সেখানে ঐতিহাসিক মেলা বসে। বিষ্ণুপুর বিলপাড়ের ওই মন্দিরে শতাধিক বছর আগে থেকেই জাঁকজমকপূর্ণ কালীপুজো হয়। সেই বিচারে বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি লাগোয়া দুর্গাপুজো অবশ্য খুবই নবীন, বয়স মাত্র ১৯। এ বছর কুড়িতে পা রাখবে। ‘বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাব’-এর সম্পাদক ও বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বতোষ পাণ্ডে বলেন, “প্রতিমা দর্শনের জন্যই বলুন আর পুজো দেওয়ার জন্যই বলুন পাড়ার মহিলাদের যেতে হয় বেপাড়ায়। তাই কালীপুজোর পাশাপাশি এলাকায় দুর্গাপুজো প্রতিষ্ঠার জন্য পাড়ার মহিলাদের কাছ থেকে চাপ আসতে থাকে। সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কালীবাড়ী লাগোয়া বিলপাড়ে দুর্গাপুজোর প্রতিষ্ঠা করা হয়।”
|
পুজোর বৈশিষ্ট্য |
|
বরাবরের মতো গত বছরের পুজোতেও ধুমধামের সঙ্গে অষ্টমীর ভোগ রান্না হয়। পোলাও ছাড়া ওই ভোগের মেনুতে ছিল কামিনীভোগ চালের খিচুড়ির সঙ্গে দু’টো নিরামিষ তরকারি। পোলাও, খিচুড়ি ও তরকারি মাটির হাঁড়ি বোঝাই করে ওই তল্লাটের ৫০০টি বাড়িতে পৌঁছে দেন উদ্যোক্তারা।
ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত ৫ দিন ধরে গিজগিজ করা ভিড়ে ওই তল্লাটে পা গলানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে প্রতিমা বির্সজনের আগে পুজোমণ্ডপের সামনে সিঁদুর খেলা, দশেরার রাবন বধ ও আতসবাজি উৎসব ‘আমরা ক’জন’ পুজো কমিটিকে বহরমপুরের অন্য পুজো কমিটির থেকে পৃথক আসনে বসিয়েছে। পুজোর উৎসবে মেতে থাকার পাশাপাশি বিপন্ন রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওই ক্লাবের সদস্যরাই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা রেখেছেন।
প্রতি বছর ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা ছাড়াও নিয়মিত রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় ওই ক্লাবের উদ্যোগে। ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘শিশু উদ্যান’, যেখানে কচিকাঁচারা খেলাধুলো করে মনের আনন্দে। |
তথ্য: অনল আবেদিন
ছবি: গৌতম প্রামাণিক |
|
|
|