উত্তরবঙ্গ: রায়গঞ্জ
সুদর্শনপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব
হোয়াইট হাউসের আদলে পুজোমণ্ডপ, সাবেকি প্রতিমা ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। এমন আয়োজনেই গত বছর উত্তর দিনাজপুরের জেলা সদর রায়গঞ্জে সাড়া ফেলে দিয়েছিল শহরের ‘বিগ বাজেট’-এর পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম সুদর্শনপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে দর্শনার্থীদের ভোটে সেরা পুজোর শিরোপা ও শারদ সম্মানও আদায় করে নিয়েছিল এই পুজো।

পুজোর শুরু
রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় সংলগ্ন বিদ্যাচক্র হাইস্কুল মাঠে গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। এ বছর এই পুজো ৬৩তম বছরে পড়বে। প্রচলিত আছে, ব্রিটিশদের তাড়িয়ে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় কিছু বাসিন্দা উত্সবে মেতে উঠতে ওই পুজো শুরু করেছিলেন। সেই থেকে আজও প্রতি বছর পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
সর্বজনীন হলেও প্রাচীন রীতিনীতি ও নিষ্ঠা বজায় রেখেই প্রতি বছর পুজোর আয়োজন করেন সুদর্শনপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা। সদস্যদের ধারণা, সেই কারণেই পুজোর চার দিন কয়েক হাজার বাসিন্দা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ে মণ্ডপে ঢুকে অঞ্জলি দেন।

সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত অন্নভোগ, ফল, মিষ্টি, দুধ, দই-সহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবার ভোগ হিসেবে দেবীকে দেওয়া হয়। পুজোর চার দিন পুরোহিতরা দু’বেলা মঙ্গলারতি, কুমারীপুজো, দেবীস্নান, চণ্ডীপাঠ ও অপরাজিত পুজো করেন।

পুজোর চার দিনই কমিটির সদস্যরা এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাদের পাতপেড়ে খিচুড়ি ও সব্জি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। সপ্তমীর দুপুরে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কমিটির তরফে পুজোমণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় শতাধিক গরিব বাসিন্দাকে পোশাক এবং দুঃস্থ পড়ুয়াদের মধ্যে বই ও খাতা বিলি করার রীতি রয়েছে। এ বছরও এ সবের ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে কমিটির তরফে জানানো হয়েছে।

কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন না করে শুধু চোখ ধাঁধানো বিগ বাজেটের পুজো করে কোনও লাভ নেই। দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। পুজোর আয়োজন করার পাশাপাশি সমাজকে নানা বিষয়ে সচেতন করতে ও দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে আমরা বদ্ধপরিকর। বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে দেওয়া চাঁদাতেই পুজোর যাবতীয় আয়োজন করা হয়। সে ভাবে পুজোর নির্দিষ্ট কোনও বাজেট ধরা হয় না।’’

এ বারের পুজোয়
পুজো কমিটির সম্পাদক নয়ন দাস বলেন, ‘‘আমাদের দুর্গাপুজোর দিকেই তাকিয়ে থাকেন রায়গঞ্জবাসী। প্রতি বছরই তাই নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। এ বছরও আমাদের পুজোয় প্রতিমা, আলোকসজ্জা, মণ্ডপ ও পরিবেশ সব কিছুতেই থাকবে অভিনবত্ব।’’

কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, এ বছর গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরের আদলে প্রায় ৭০ ফুট উঁচু ও ১০০ ফুট চওড়া পুজোমণ্ডপ গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছেন রায়গঞ্জ ও কলকাতার মণ্ডপ শিল্পীরা। বাঁশ, কাঠ, চাটাই, থার্মোকল, জরি, প্লাইউড ও কাপড় দিয়ে মণ্ডপটি গড়ে তোলা হবে। মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরের গায়ে থাকবে কাল্পনিক বিভিন্ন ধরনের নকশা। পাশাপাশি নানা রঙের প্রলেপ ও একাধিক রঙবাহারি ঝাড়বাতি লাগানো হবে। সঙ্গে থাকছে চন্দননগরের ডিজিট্যাল আলোকসজ্জা। পুজোমণ্ডপ সংলগ্ন এলাকা রঙবাহারি আলোকসজ্জায় মুড়ে ফেলা হবে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু ও ১৫ ফুট চওড়া চারটি আলোকতোরণও বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কচিকাঁচা ও সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য আলোর কারসাজিতে জীবজন্তু, পাখি, বিভিন্ন নকশা ও সাম্প্রতিক ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হবে। শুধু তাই নয়, আলোকসজ্জার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার বিষয়ও থাকছে।

রায়গঞ্জ ও কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পীরা ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ ফুট ও ২০ ফুট চওড়া একচালার সাবেকি দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। পুজোমণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় দুশোরও বেশি টবে বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ ও পাতাবাহারের গাছ বসিয়ে বাগান তৈরি করা হবে। বাগানের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ‘মিউজিক্যাল ফাউন্টেন’ বসানো হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাসিন্দাদের গাছ লাগানোর বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি পানীয় জলের অপচয় রুখতেই ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পুজোর দিনগুলিতে কমিটির তরফে পুজোমণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশে গাছ লাগানোর বিষয়ে ও পানীয় জলের অপচয় রুখতে প্রচার চালিয়ে সচেতন করা হবে। এ ছাড়াও পুজোমণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় একাধিক পোস্টার, ব্যানার ও হোর্ডিং লাগিয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা, শব্দ ও দৃশ্যদূষণ না করা, এলাকা জঞ্জালমুক্ত রাখা-সহ পরিবেশকে সাফসুতরো রাখার কাজে সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করারও আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তথ্য: গৌর আচার্য
ছবি: তরুণ দেবনাথ
 
হাওয়াবদল
মুর্শিদাবাদ
বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাব
নদিয়া
বাদকুল্লার অনামী ক্লাব
উত্তরবঙ্গ: রায়গঞ্জ
সুদর্শনপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব
উত্তরবঙ্গ: মালদহ
বিবেকানন্দ স্মৃতি সংসদ
হাওড়া
শিবপুর নবারুণ সঙ্ঘ
বাঁকুড়া
মধ্য কেন্দুয়াডিহি আদি সর্বজনীন
পুরুলিয়া
ভামুরিয়া বাথানেশ্বর
সবর্জনীন দুর্গাপুজো
বর্ধমান
শহরের সেরা তিন দুর্গাপুজো
দুর্গাপুর
মার্কনি দক্ষিণপল্লি
সর্বজনীন দুর্গাপুজো
মেদিনীপুর (শহর)
কোতয়ালি বাজার
সর্বজনীন দুর্গাপুজো
পূর্ব মেদিনীপুর: রামনগর
রামনগর বাজার
ব্যবসায়ী সমিতি
উত্তর ২৪ পরগনা: বনগাঁ
মতিগঞ্জ ঐক্য সম্মিলনী
পূর্ব মেদিনীপুর: হলদিয়া
হাজরা মোড় কমিটির দুর্গোৎসব
উত্তর ২৪ পরগনা: বেলঘরিয়া
মানসবাগ সর্বজনীন দুর্গোৎসব
উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসত
হরিহরপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.