১৫ ভাদ্র ১৪১৮ বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর ২০১১


উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসত
শিবের কোঠায় মোগল বধূর পুজো
তখন বারো ভুঁইয়ার রাজত্ব। আকবরের সময়ে মোগলরা প্রতাপাদিত্যকে হারাতে না পেরে অন্য কৌশল নেয়। অধুনা বাংলাদেশের যশোহরের ধুমঘাটে যশোরেশ্বরী কালী দর্শনের নাম করে সেনাপতি মান সিংহ প্রতাপাদিত্যের দুর্গের নকশা নিয়ে যান। পরে আক্রমণ করে মোগলরা সেটি জয়লাভও করে। কালীর বিগ্রহের সঙ্গে প্রতাপাদিত্য এবং তাঁর সেনাপতি ও পরামশর্দাতা শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে বন্দি করেন মান সিংহ। দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পথে বেনারসে প্রতাপাদিত্য মারা যান। শঙ্করকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। মোগলদের কারাগারে পিতৃতর্পণ করতে চান শঙ্কর। কিন্তু তাঁকে সেই অনুমতি দেওয়া হয় না। এর পরে কারাগারেই অনশন শুরু করেন শঙ্কর। এই খবর জানতে পেরে যোধাবাঈ তর্পণের অনুমতি দেন। শঙ্করের মন্ত্র শুনে মুগ্ধ হয়ে যান যোধা। তিনি শঙ্করকে প্রশংসা করে বলেন, তুমি পণ্ডিত, আর পণ্ডিতের অস্ত্র ধরা সাজে না। তিনি শংকরকে দুর্গা পুজো করার জন্য অনুরোধ করেন। শঙ্কর বলেন ‘‘আমি শৈব, শিবের পূজা করি। দুর্গা পুজো করি না।’’ এর পরেও যোধা বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে যাও। আমার নামে সংকল্প করে দুর্গা পুজো কর। আমি নিজে সেখানে যাব। সমস্ত খরচও দেব।’’

১৬৬০ সাল থেকে বারাসতে দেশের বাড়িতে এসে পুজো শুরু করেন শঙ্কর। যোধাবাঈ অবশ্য অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। কিন্তু তাঁর নামেই পুজোর সংকল্প হয়। তিনি টাকাও পাঠিয়ে দেন।
পুজোর শুরু
১৬৬০ সালে শুরু, অর্থাত্ পুজো সাড়ে তিনশো বছরেরও প্রাচীন। বারো ভুঁইয়ার অন্যতম প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি ও পরামর্শদাতা শৈব শঙ্কর প্রচলন করেন এই পুজো। তাই উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের দক্ষিণপাড়ায় শঙ্করবংশীয় শিবের কোঠায় মোগল বধূর পুজোর পরতে পরতে রয়েছে রোমাঞ্চকর ইতিহাস।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
পুজো শুরু হয় জন্মাষ্টমী থেকে। এই দিন কাঠামো পুজো দিয়েই সূত্রপাত দেবী আবাহনের। ঠাকুর দালানে সেই কাঠেই এ দিন থেকে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। বছরের পর বছর ধরে সেই একই কাঠামোতে খড়-মাটি দিয়ে তৈরি হয় চিন্ময়ী দেবীর মৃন্ময়ী রূপ।

এখন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ৯ রূপ চণ্ডীপাঠ হয়।

ষষ্ঠীর দিন প্রতিষ্ঠিত শিবের মন্দিরে বেলতলায় হয় বোধন। প্রথমে শিবের পুজো তার পরে দেবীর পুজো। কলাবউ কোনও নদী বা পুকুরে স্নান করানো হয় না, থালাতেই স্নান করানো হয়। আগে পশুবলি হলেও এখন কুমড়ো বলি হয়।

মহাষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলির পর ধুনো পোড়ানো হয়।

ভোগ বিশেষত্ব
দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকমের তরকারি, পায়েস ও নাড়ু দেওয়া হয়। মহাষ্টমীতে লুচি ভোগের পাশাপাশি মূল নৈবেদ্যে গোটা ফল দেওয়া হয়; পান সুপুরি, গরমমশলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোটা ফল। স্বপ্নাদেশের পর থেকে নৈবেদ্যে আতা ফল অবশ্যই থাকে।

দেবীর ভোগের পায়েস প্রসাদ হিসেবে খুব জনপ্রিয়। পায়েস তৈরি হয় গরুর দুধের মধ্যে গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে। সামান্য চিনি আর এলাচ দেওয়া হয় যাতে বেশি গন্ধ আর মিষ্টি না হয়। গরুর দুধ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় পায়েস।


শিবানন্দ রোডের গুহবাড়ির পুজো
পুজোর শুরু
গুহ বাড়ির পুজো ১৩৭ বছরের পুরনো। শুরু হয় ১৮৭৫ সালে। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরের লক্ষ্মীপুরে এই পুজো হত। ১৯৬২ সাল থেকে বারাসতের শিবানন্দ রোডের মণ্ডপে পুজো হয়ে আসছে। সেই হিসেবে এ বার এই পুজোর সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। পুজো শুরু করেন রসিকলাল গুহ। তিনি ব্রিটিশ আমলে আইন আদালতের পেশায় যুক্ত ছিলেন। ষষ্ঠ প্রজন্মের পুজো এখন করেন সুমিত গুহ।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
ফরিদপুরের সেই পুরোনো কাঠামোতেই পুজো হয়। বাংলাদেশে যে চৌকির উপরে দেবীকে বসানো হত সেই চৌকিটিও অপরিবর্তিত রয়েছে।

মূর্তির দিক থেকেও এই পুজোর বৈশিষ্ট্য অনবদ্য। দেবী মূর্তির দু’পাশে জয়া ও বিজয়া নামে দুই সখি থাকেন। দেবীর সামনে বিশাল জল ভর্তি কলসি, নাম তার জলাধার। সেই জলাধারে দেবীর পায়ের প্রতিচ্ছবি দেখেই বিসর্জন হয়।

ভোগ বিশেষত্ব
এক এক দিন এক এক রকমের ভোগ এই পুজোর একটি বিশেষত্ব। সপ্তমীতে পঞ্চ ব্যঞ্জনে অন্ন ভোগ, অষ্টমীতে পোলাও ভোগ, নবমীর দিন খিচুড়ি ভোগ এবং দশমীর বিসর্জনের আগে পান্তাভাত ভোগ দেওয়া হয়। পান্তাভাত তৈরি হয় আতপ চাল দিয়ে। চাল সকালে ভিজিয়ে রাখা হয়। দুপুরে পাথরের থালায় সেই ভেজা চালের মধ্যে গন্ধরাজ লেবু মিশিয়ে তৈরি হয় পান্তা। সঙ্গে শাপলা ফুল ও শাপলার লতি সাজিয়ে দেওয়া হয়।

তথ্য: অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
ছবি: সুদীপ ঘোষ

 
হাওয়াবদল
উত্তর ২৪ পরগনা
• শ্যামনগরের ঘটকবাড়ি
• বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি
উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসত
• শিবের কোঠায় মোগল বধূর পুজো
• শিবানন্দ রোডের গুহবাড়ি
কলকাতা
• কলুটোলা রায়বাড়ি
কলকাতা: বেহালা
• হালদারবাড়ি
• মুখোপাধ্যায়বাড়ি
হুগলি: আরামবাগ
• ব্যানার্জি পাড়ার পুজো
• গড়বাড়ির রাজপরিবারের পুজো
• রাংতাখালির প্রাচীন পুজো
হাওড়া
• জগৎবল্লভপুরের রায় পরিবার
• আমতার ন্যায়রত্ন পরিবার
মেদিনীপুর
• তমলুকের ভট্টাচার্যবাড়ি
• রোহিণীগড়ের দুর্গাপুজো
বধর্মান
• কাঞ্চননগরের দাসবাড়ি
• রাধাবল্লভ জীউ মন্দিরের পুজো
বধর্মান: কাটোয়া
• চৌধুরীবাড়ি
• গঙ্গাটিকুরির বন্দ্যোপাধ্যায়বাড়ি
পুরুলিয়া
• গড় পাথর মহড়া রাজবাড়ি
• বিষ্ণুপুর রাজবাড়ি
• ছাতনার রাজবাড়ি
বীরভূম
• বসাকবাড়ি
• সরকারবাড়ি
মুর্শিদাবাদ
• বহরমপুর আদিদুর্গা পুজো
• কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো
• ডোমকল জমিদারবাড়ির পুজো
উত্তরবঙ্গ: রায়গঞ্জ
• রায়চৌধুরী পরিবারের পুজো
• দক্ষিণ বীরনগরের সাহাবাড়ি
উত্তরবঙ্গ: কোচবিহার
• রামেন্দ্র ভবনের পুজো
• দিনহাটার সাহাবাড়ি
উত্তরবঙ্গ: জলপাইগুড়ি
• ভুঁইয়াবাড়ি
• কামারপাড়ার নিয়োগীবাড়ি