১৫ ভাদ্র ১৪১৮ বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর ২০১১


হুগলি: আরামবাগ
ব্যানার্জি পাড়ার পুজো
পুজোর শুরু
আরামবাগ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জীপাড়া। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে আরামবাগ চলে এসেছিল রবীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। পাত্রসায়েরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো তখন ২৫০ বছরের প্রাচীন।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে যে ইতিহাস আছে তা হল, রবীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগে পুজো করতে চাননি। মা স্বপ্নাদেশ দেন, ‘এখানে তুই নতুন করে পুজো কর। আমার চ্যাঙ মাছের ঝোল খেতে ইচ্ছে করছে। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী শুধু চ্যাঙ মাছের ঝোল দিবি, তাহলেই হবে।’

গত ১৫০ বছর ধরে পূর্বপুরুষ রবীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন তাঁর বংশধরেরা।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মূর্তি এক চালার। ডাকের সাজ। দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মহিষাসুরের মুখের আদলে একটুও পরিবর্তন হয়নি। এমনকি বাহনদেরও।

বৃহস্পতিবার দশমী পড়লেও পরিবারের সদস্যদের কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়ার নিয়ম।

খড় এবং তালপাতার ছাউনির পুজো মণ্ডপটি সাপের আড্ডাস্থল হয়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালে পাকা-মোজাইক করা স্থায়ী মণ্ডপ গড়া হয়েছে।

ভোগ বিশেষত্ব
ষষ্ঠীর দিন তিনকেজি চ্যাঙ মাছ পৌঁছে যায় ব্যানার্জী পাড়ার সুশীল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ-র বাড়িতে। মাছ জিইয়ে রাখা হয় অনেকগুলি বড় পাত্রে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে চ্যাঙ মাছের ঝোল করে মাকে পুজো দেওয়া হয়। সেটাই প্রসাদ।

চ্যাঙ মাছের ঝোল প্রতীকী রেখে নবমীর দিন বলি দেওয়া হয়। শহরের বিশিষ্ট মানুষদের নিমন্ত্রণ করে পাঁঠার মাংস-ভাত খাওয়ানো হয়। তবে চ্যাঙ মাছের ঝোলের প্রসাদ পেতে তিনদিনই দূর দূরান্ত থেকে গ্রামের মানুষেরা আসেন। পুজোর খরচ বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হয়। সবটাই পরিবারের চাঁদায়।

গড়বাড়ির রাজপরিবারের পুজো

পুজোর শুরু
কথিত আছে প্রায় ৪৫০ বছর আগে গড়বাড়ির রাজা রনজিৎ রায় এই পূজার প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর পালিত কন্যা দুর্গার দিঘির জলে ডুবে মৃত্যুর পর। মেয়ের স্মৃতিতেই পূজাকে কেন্দ্র করে তিনি চারদিন ধরে ‘দান মেলা’ বসাতেন। বংশধররা যাতে পূজার ঐতিহ্য একই ভাবে বজায় রাখতে পারেন রাজা দেবীর নামে ১৭৮ একর ভূ-সম্পত্তি রাখেন। রামকৃষ্ণ কথামৃততে এই পূজার উল্লেখ আছে বলে রাজপরিবারের সদস্যদের দাবি।

দেবীর ভূ-সম্পত্তি এখন নেই। দেবীর নামে ১৭৮ একর জমি আরামবাগ ব্লকভূমি ও ভূমি রাজস্ব দত্তর খাস বলে ঘোষনা করেছে কয়েক বছর আগে। বর্তমানে পূজা চলছে রাজপরিবারের চারশো শরিকের চাঁদায়। ১০০ টাকা করে চাঁদায় মোট ৪০ হাজার টাকার পূজায় নানান রীতি এবং আড়ম্বর সবই সংক্ষিপ্ত। ‘চার বছর আগেও এই পূজাকে কেন্দ্র করে খরচ ধরা হত প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।’জানালেন রাজপরিবারের সদস্যরা।

অষ্টমীতে ৫ হাজার বস্ত্র বিতরনণর রেওয়াজ কমতে কমতে বছর/বার একেবারেই বন্ধ।

একাদশীর দিন ২০টি গ্রামের দরিদ্রনারায়ণ সেবার ব্যাপক আয়োজনের বদলে এক কুইন্ট্যাল চালের খিচুড়ি হয়।

১০৮টি ঢাকের বাজনা কমে ১২টি ঢাকে ঠেকেছে। অন্য বাদ্যযন্ত্র নহবত, ব্যাণ্ড ইত্যাদি বন্ধ।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
গড়বাড়ির একচালা দুর্গামূর্তির জন্য মাটি ওঠে জন্মাষ্টমীর দিন। ঘট ওঠে মহালয়ার পরের দিন, প্রতিপদে।

সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী তিনদিনই পাঁঠা বলি হয়।

দশমীতে রাজবধূদের রাধার সাজে সজ্জিত হয়ে সিঁদুর খেলার জন্য ১ হাজার টাকার সিঁদুর কেনা হয়।

রাংতাখালির প্রাচীন পুজো
পুজোর শুরু
প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার গোবিন্দ কুণ্ডু। এখন সেই জমিদার পরিবার ভেঙ্গে ২০০টি পরিবার হয়েছে। পুজোর চারটি দিন সকলেই রাংতাখালি আসেন।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
রাংতাখালির কুণ্ডু বাড়ির পুজোয় দুর্গার কোনো মূর্তি নেই। পাকা দোতলা ঠাকুর মন্দিরে অষ্টধাতুর ‘জয়া-শীতলা-মনসা’ দুর্গারূপে পূজিত হন। প্রথমার দিন ঢাক বসে। চতুর্থীর দিন ব্রাহ্মণরা, গঙ্গামাটি জ্ঞানে, দ্বারকেশ্বর নদীর পলিমাটি দিয়ে অষ্টধাতু মূর্তি ধুয়ে দেন। তারপরে সেই অষ্টধাতুর মূর্তি দুর্গার পোশাক এবং অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়।

পুজোর ঠিক ৩০ দিন আগে বাঁধানো মণ্ডপের দোতলা ছাদের উপর প্রায় ৪০ ফুট উঁচু বাঁশের ডগায় লাল পতাকা ওড়ানো হয়। এই ‘নিশানা’ হল প্রতিবেশী ৮-১০টি গ্রামের নিমন্ত্রণ পত্র। নবমীর দিন যাঁরাই আসবেন তাঁদের মাংস-ভাত খাওয়ানোর রীতি। এই রীতি এখন আছে বটে কিন্তু ২০টি পাঁঠার বদলে দুটি পাঁঠা বলি হয়। সেই পাঁঠাও এক মাস আগে কিনে লালন-পালন করতে হয়।

রাংতাখালির জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম দেবাংশু কুণ্ডু জানান, ‘আমাদের প্রাচীন পুজোর অনেক ঐতিহ্যের মধ্যে অন্তত অষ্টমীর দিনের রীতিনীতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।’ এ দিন শুধুই পরিবারের মহিলাদের অনুষ্ঠান। সন্ধিক্ষণ বা ‘খ্যান’-এর পুষ্পাঞ্জলির সময় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালান বধূরা। সধবা এবং বিধবা মহিলারা পুষ্পাঞ্জলি দেবেন নিজ নিজ বিয়ের বেনারসী শাড়ী পরে। দন্তহীন বিধবাদেরও পোকায় কাটা বেনারসী পরিহিত, অনেকটা কনের অবস্থায় দেখতে গ্রামের মানুষ ভিড় করেন।

পুষ্পাঞ্জলির পর ধুনো পোড়ানো অনুষ্ঠানে পরিবারের বধূদের মাথায় এবং দুহাতে ধরা মাটির পাত্রে ধুনো জ্বলাকালীন তাঁদের কোলে শিশুদের বসানো হবে। এই প্রথা সমস্ত শিশুদের মঙ্গল কামনায়।

অতীতে পুজোর মূল আকর্ষণ ছিল যাত্রা প্রতিযোগিতা। এখন বন্ধ। ঝাড় লণ্ঠনগুলি বিক্রি হয়ে গেছে। কাঙ্গালী এবং সাহায্যপ্রার্থীরাও কেউ আসেন না। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে দু-একজন ভিক্ষাজীবীকে কিছু অর্থসাহায্য করেন পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য।


তথ্য: পীযূষ নন্দী
ছবি: মোহন দাস
 
হাওয়াবদল
উত্তর ২৪ পরগনা
• শ্যামনগরের ঘটকবাড়ি
• বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি
উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসত
• শিবের কোঠায় মোগল বধূর পুজো
• শিবানন্দ রোডের গুহবাড়ি
কলকাতা
• কলুটোলা রায় বাড়ি
কলকাতা: বেহালা
• হালদারবাড়ি
• মুখোপাধ্যায়বাড়ি
হুগলি: আরামবাগ
• ব্যানার্জি পাড়ার পুজো
• গড়বাড়ির রাজপরিবারের পুজো
• রাংতাখালির প্রাচীন পুজো
হাওড়া
• জগৎবল্লভপুরের রায় পরিবার
• আমতার ন্যায়রত্ন পরিবার
মেদিনীপুর
• তমলুকের ভট্টাচার্যবাড়ি
• রোহিণীগড়ের দুর্গাপুজো
বধর্মান
• কাঞ্চননগরের দাসবাড়ি
• রাধাবল্লভ জীউ মন্দিরের পুজো
বধর্মান: কাটোয়া
• চৌধুরীবাড়ি
• গঙ্গাটিকুরির বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি
পুরুলিয়া
• গড় পাথর মহড়া রাজবাড়ি
• বিষ্ণুপুর রাজবাড়ি
• ছাতনার রাজবাড়ি
বীরভূম
• বসাকবাড়ি
• সরকারবাড়ি
মুর্শিদাবাদ
• বহরমপুর আদিদুর্গা পুজো
• কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো
• ডোমকল জমিদারবাড়ির পুজো
উত্তরবঙ্গ: রায়গঞ্জ
• রায়চৌধুরী পরিবারের পুজো
• দক্ষিণ বীরনগরের সাহাবাড়ি
উত্তরবঙ্গ: কোচবিহার
• রামেন্দ্র ভবনের পুজো
• দিনহাটার সাহাবাড়ি
উত্তরবঙ্গ: জলপাইগুড়ি
• ভুঁইয়াবাড়ি
• কামারপাড়ার নিয়োগীবাড়ি