১৫ ভাদ্র ১৪১৮ বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর ২০১১



কলকাতা: বেহালা
হালদারবাড়ির পুজো
আনন্দবাজার পত্রিকা
বৃহস্পতিবার, ২৯ আশ্বিন, ১৩৭১ (Thursday, October 15, 1964)
...বেহালার এর চেয়েও পুরনো বনেদী পুজো আরও হয় এবারও হচ্ছে। সবচেয়ে পুরনো পুজো বাজার রোড-নেতাজী সুভাষ রোডের হালদার বাড়ি। প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর আগে সেদিনের বর্ধমান মহারাজের সভাপন্ডিত এ পুজোর পত্তন করেন। তবে যে ভিটেতে এ পুজো হত, এখন আর সেখানে নয়, হয় পাশের এক পাকা দালানে।...


ওপরের প্রতিবেদন অনুযায়ী:
১৯৬৪ থেকে ২০১১ সাতচল্লিশ বছর।
১৯৬৪ সালে বয়স ছিল প্রায় সাড়ে তিনশো। সহজ গণিতে তা হলে এখন বয়স প্রায় তিনশো সাতানব্বই। হালদার বাড়ির সেই প্রাচীন পুজোর আরও কিছু তথ্য দিলেন এ প্রজন্মের জ্যোতিষবিদ সঞ্জয় হালদার।
পুজোর শুরু
বেহালার ১৪ নম্বর বাস স্টপের কাছে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের উল্টোদিকে পুরনো বাজার। ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে একটুখানি ভেতরে গেলেই ডান দিকে সেই প্রাচীন পুজা-দালান। পনেরোশো খ্রিস্ট্রাব্দে বর্ধমান মহারাজা আবু রায়ের কুল পুরোহিত অযোধ্যা হালদার ছিলেন এই পারিবারিক দুর্গাপুজোর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর অবর্তমানে দুই ছেলে রামভদ্র ও রামগোপাল ভিন্ন মত অবলম্বনে পুজো করলেও, পরবর্তীকালে বৈষ্ণব মতেই রূপান্তরিত হয়।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
হালদারবাড়ির পুজো বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পুরাণ মেনে, বৈষ্ণব মতে করা হয়। রথের দিন কাঠামো পুজো করে তাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে রাখা হয়। পূজা-দালানে প্রথম পুজোর এই কাঠামোতেই গড়া হয় দেবীমূর্তি। ডাকের সাজের মাতৃমূর্তি এই পরিবারের পুজোর বৈশিষ্ট্য। মহালয়ার দিন থেকে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়, নবরাত্রি পালনে তা শেষ হয় দশমীতে। মহালয়ার পর দিন বা প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী অবধি রোজই হয় চণ্ডীপাঠ। আর সপ্তমী থেকে শুরু হয় চারদিনের উৎসব।

পূজা-দালানের পেছন দিকে আছে পারিবারিক পুকুর। সপ্তমীর সকালে সেখানে কলাবউ স্নান করাতে নিয়ে যান হালদার বাড়ির ছেলেরা।

সন্ধিপুজোয় বিশ কিলো চালের চূড়া দেখার মতো। সেই চূড়া ঘিরে সাজানো থাকে বিভিন্ন প্রকারের ফল ও মিষ্টি। মা এ-ক্ষণে চামুন্ডা রূপে পূজিত হন।

দশমীতে পালন করা হয় বেড়া-অঞ্জলি। কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যরাই এই আচার পালন করতে পারেন। মাকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। বছর পনেরো আগেও জয়ঘন্টা বাজিয়ে, কাঁধে করে মা ফিরে যেতেন স্বামীর ঘরে। পারিবারিক সেই পুকুরেই হয় মূর্তি নিরঞ্জন। পুজো শেষে ৩১ জন ব্রাহ্মণকে সাম্মানিক স্বরূপ অর্থ ও বস্ত্র দেওয়া হয়।

ভোগ বিশেষত্ব

সপ্তমী থেকে দশমী অবধি ভোগের আয়োজনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকে সাদা ভাত, ডাল, তরকারি, এঁচোড়ের ডালনা, পাঁচ রকমের ভাজা, পোলাও।

অষ্টমীতে ভোগের পাতে অবশ্যই থাকে গর্ভমোচার তরকারি। ভোগ রান্না করেন বাড়ির দীক্ষিত মহিলারা।


মুখুজ্জেবাড়ির পুজো
আনন্দবাজার পত্রিকা
বৃহস্পতিবার, ২৯ আশ্বিন, ১৩৭১ (Thursday, October 15, 1964)

...ব্রাহ্ম সমাজ রোডের মুখুজ্জে বাড়ির পুজোও দুশো বছরের। যশোর জেলার ঝিকরগাছা থেকে বেহালায় এসে জগৎরাম মুখোপাধ্যায় এই পুজোর পত্তন করেন। আগে ‘ঘটে পটে,’ মধ্যে মাটির প্রতিমা, আর এখন সোনার দূর্গা। এই পূজোয় ধুমধাম এখনও হয় কিন্তু আগের মতো নয় পল্লীর প্রবীনরা এখনও সেই ‘ভাতে ভবানী’ ও ‘সন্দেশের শিবুর’ স্মৃতি চারণ করেন। অর্থাৎ ভবানী মুকুজ্জের আমলে এখানে ভাতের আর শিবু মুখুজ্জের আমলে এখানে সন্দেশের পাহাড় তৈরী হত।...

ওপরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর তিনটি বছর পেরোলেই আড়াইশোতে পা দেবে এই পারিবারিক পুজো। মুখোপাধ্যায় বাড়ির এই পুজোর অনেক অজানা তথ্য দিলেন তপন কুমার মুখোপাধ্যায।
পুজোর শুরু
যশোহর নিবাসি জগৎরাম মুখোপাধ্যায় সুখেই ঘরকন্না করছিলেন। বয়স তখন তিরিশ হবে, আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। কিস্তু শ্মশানঘাটে হঠাৎই আবার প্রাণ ফিরে পান। এই অদ্ভুত ঘটনায় বাড়ির লোক খুশি হয়েছিলেন হয়তো, কিন্তু তৎকালীন সামাজিক আচারবিচারের জন্য তাঁর আর ঘরে ফেরা হয়নি। অগত্যা গঙ্গার এ পারে এসে বেহালা চত্বরে বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে অযোধ্যা হালদারের মেয়ের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।

১৭৭০ সাল। জগৎরামের চার ছেলে ও একমাত্র কন্যা জগত্তারিণী প্রত্যেকবারের মতো সে বছরও গেছে মামার বাড়ির দুর্গাপুজায়। কিন্তু আদরিণী মেয়ের মনে হল তাকে যেন কিছুটা অবহেলা করা হচ্ছে সেখানে। অভিমান করে বাড়ি ফিরেই বাবাকে জানাল সেও বাড়িতে দুর্গাপুজো করবে। তাও আবার এই বছরেই। সে দিন ছিল অষ্টমী। মেয়ের জেদের কাছে নতি স্বীকার করে পর দিনই ঘটে-পটে পুজো করলেন জগৎরাম। মায়ের ভোগ ছিল খিচুড়ি আর কলাই ডাল। পুজোর সেই শুরু। জগৎরামের নাতি যদুনাথ মুখোপাধ্যায় কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকাকালীন ঢাকেশ্বরীর মূর্তি দেখে ঠিক করলেন, কলকাতার বাড়িতে সেই আদলে সোনার দুর্গামূর্তি গড়বেন। কিন্তু শুধু সোনার তৈরি প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না বলে অষ্টধাতু সংযোগে মাতৃমূর্তি স্থাপন করলেন ১৮৬৯-এ। তার পর থেকে এই সোনার প্রতিমাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে প্রতি বছরের দুর্গোৎসব।


পুজোর বৈশিষ্ট্য
এ বাড়ির পুজো হয় তান্ত্রিক মতে। তাই বলির প্রচলন আছে এখনও। পশুবলির সঙ্গে চালকুমড়ো, আখ বলিও হয়।

মামার বাড়ির অনুকরণে যেহেতু এই বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল, তাই পুজোর নিয়ম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুরূপ। তবে ভোগের তারতম্যের সঙ্গে মনে রাখার মতো কিছু বিশেষ আচার উল্লেখযোগ্য। নবরাত্রির রীতি মেনে পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে।

ষষ্ঠীর দিন পরিবারের সুসজ্জিত মহিলারা বরণডালা নিয়ে মাকে আহ্বান করেন। সঙ্গে থাকে কুল পুরোহিতের তৈরি ‘শ্রী’।

এক বছর পূজা প্রাঙ্গনে সন্ধিপুজোর আগে একটি ছোট্ট মেয়ে লাল শাড়ি পরে খেলে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু পুজোর পর তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অদ্ভুত ভাবে সবাই দেখে দুর্গামূর্তির ঠোঁটের কোণে এক টুকরো লাল কাপড়, সেই বালিকার শাড়ির অংশ। এই অলৌকিক ঘটনার পর থেকে এ বাড়ির সন্ধিপুজো বন্ধ হয়ে যায়।

নবমীর দিন হয় ‘সধবা পূজা’ পরিবারের জ্যেষ্ঠা সধবা যিনি, তাঁর পুজো।

দশমীর বিদায় সন্ধ্যায় একটি বিশেষ স্তোত্র ‘বটুক ভৈরব’ পাঠ করা হয়। পারিবারিক পুকুরে নবপত্রিকা ও ঘট বিসর্জন দিয়ে বাৎসরিক দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ভোগ বিশেষত্ব
প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী অবধি প্রতিদিনই মায়ের আরতি হয় ফল-মিষ্টি যোগে।

সপ্তমী থেকে নবমী, দিনে তিনবার ভোগ দেওয়া হয়। পরিবারের দীক্ষিত মহিলারা ভোগ রান্না করেন।
সকালে খিচুড়ি ভোগ, দুপুরে সাদা ভাত, ডাল, তরকারি এবং অবশ্যই ‘মাছপোড়া’। ল্যাটা, সিঙ্গি, মাগুর বা অন্য কোনও মাছ পুড়িয়ে ভোগের পাতে দেওয়া এ বাড়ির বৈশিষ্ট্য। রাতে লুচি, বেগুনভাজা, পায়েস, মিষ্টি।

নবমীর রাতে ভাতে জল ঢেলে রাখা হয়। বিজয়ার দিন সেই পান্তা-ভোগই দেওয়া হয়। সঙ্গে কচুর ঘন্ট, মাছপোড়া আর চালতার অম্বল। কৈলাসের লম্বা পথ পাড়ি দিতে ‘কন্যারূপী’ মাকে দেওয়া হয় দই, খই, মুড়কি, চিড়ে।

থেঁতো করা পান খাইয়ে বিসর্জনের অনুষ্ঠান করা হয়।

তথ্য ও ছবি: শেলী মিত্র
 
হাওয়াবদল
উত্তর ২৪ পরগনা
• শ্যামনগরের ঘটকবাড়ি
• বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি
উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসত
• শিবের কোঠায় মোগল বধূর পুজো
• শিবানন্দ রোডের গুহবাড়ি
কলকাতা
• কলুটোলা রায়বাড়ি
কলকাতা: বেহালা
• হালদারবাড়ি
• মুখোপাধ্যায়বাড়ি
হুগলি: আরামবাগ
• ব্যানার্জি পাড়ার পুজো
• গড়বাড়ির রাজপরিবারের পুজো
• রাংতাখালির প্রাচীন পুজো
হাওড়া
• জগৎবল্লভপুরের রায় পরিবার
• আমতার ন্যায়রত্ন পরিবার
মেদিনীপুর
• তমলুকের ভট্টাচার্যবাড়ি
• রোহিণীগড়ের দুর্গাপুজো
বধর্মান
• কাঞ্চননগরের দাসবাড়ি
• রাধাবল্লভ জীউ মন্দিরের পুজো
বধর্মান: কাটোয়া
• চৌধুরীবাড়ি
• গঙ্গাটিকুরির বন্দ্যোপাধ্যায়বাড়ি
পুরুলিয়া
• গড় পাথর মহড়া রাজবাড়ি
• বিষ্ণুপুর রাজবাড়ি
• ছাতনার রাজবাড়ি
বীরভূম
• বসাকবাড়ি
• সরকারবাড়ি
মুর্শিদাবাদ
• বহরমপুর আদিদুর্গা পুজো
• কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো
• ডোমকল জমিদারবাড়ির পুজো
উত্তরবঙ্গ: রায়গঞ্জ
• রায়চৌধুরী পরিবারের পুজো
• দক্ষিণ বীরনগরের সাহাবাড়ি
উত্তরবঙ্গ: কোচবিহার
• রামেন্দ্র ভবনের পুজো
• দিনহাটার সাহাবাড়ি
উত্তরবঙ্গ: জলপাইগুড়ি
• ভুঁইয়াবাড়ি
• কামারপাড়ার নিয়োগীবাড়ি