দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জানুয়ারি ১৯৬২ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

কলিকাতা, রবিবার, ৭ই মাঘ, ১৩৬৮ (১লা মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SUNDAY, JANUARY 21, 1962
অধ্যাপক মহলানবিশের পদত্যাগের সংবাদ: অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ বরানগরে ভারতীয় পরিসংখ্যান পরিষদের অধ্যক্ষপদে ইস্তফা দিয়াছেন বলিয়া বিশ্বস্তসূত্রে জানা গিয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান-উপদেষ্টা হিসাবে আর কাজ না করার ইচ্ছাও নাকি তিনি প্রকাশ করিয়াছেন। প্রকাশ, কিছুদিন আগে পরিষদের কর্মসমিতির বৈঠকেই অধ্যাপক মহলানবিশ অধ্যক্ষ পদ ত্যাগের প্রস্তাব পেশ করেন, কিন্তু এই সম্পর্কে তখন কোন সিদ্ধান্ত লওয়া হয় নাই। শনিবার রাত্রে অধ্যাপক মহলানবিশের পদত্যাগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি অবশ্য বলেন‘আমি এই সম্পর্কে হাঁ বা না কিছুই বলতে চাই না।’ অর্থাভাবে পরিষদের কর্মীদের ডিসেম্বর মাসের বেতন সময়মত দিতে না পারায় সম্প্রতি যে বিক্ষোভ দেখা দেয় তাহার সহিত এই পদত্যাগের সম্পর্ক আছে বলিয়া জানা যায়। অধ্যাপক মহলানবিশ নাকি মনে করেন ১৯৫৯ সনের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট অনুসারে বিধিবদ্ধ সংস্থা হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ছিল পরিষদকে যথেষ্ট অর্থ সাহায্য করা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ হইতে উপযুক্ত পরিমাণ সহযোগিতার অভাবও অন্যতম কারণ বলিয়া সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন। প্রসংগত উল্লেখযোগ্য, পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মহলানবিশ নিজেই।
অধ্যাপকদের সংযত ও সুশৃঙ্খল বিক্ষোভ অভিযান: শনিবার অপরাহ্নে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি সংযত ও সুশৃঙ্খল বিক্ষোভ অভিযান পরিচালিত হয়। কলেজ কোড প্রবর্তন, ইউ-জি-সির সাহায্য চালু রাখা, অধ্যাপকদের বেতনের হার বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক কারণে অধ্যাপকদের শাস্তিবিধান ব্যবস্থা প্রত্যাহারের দাবি জানাইবার জন্য অধ্যাপকমণ্ডলীর পক্ষ হইতে এই বিক্ষোভ অভিযানের ব্যবস্থা হয়। এই বিক্ষোভ মিছিলটি কার্জন পার্ক হইতে যাত্রা শুরু করিয়া গভর্নমেন্ট প্লেস ইস্ট-এ পৌঁছালে পুলিস উহার গতিরোধ করে। সেখানে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াইয়া থাকেন। পুলিসকে তাঁহারা জানান যে, সমিতির পক্ষ হইতে একটি প্রতিনিধিমণ্ডলী মুখ্যমন্ত্রী ডঃ রায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপাল শ্রীমতী নাইডুর সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহেন।
সমগ্র ভারতে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবার্ষিকীর বিরাট আয়োজন: স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম-শতবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের ১১/২ লক্ষ গ্রামে স্বামীজীর বাণী প্রচারের এক বিরাট আয়োজন করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় সমাজসেবী পর্ষদ ‘ভারতীয় নারী’ সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের বিভিন্ন রচনা ১৭টি ভাষায় মুদ্রিত করিয়া বিতরণ করিবেন। পশ্চিম বাঙ্গলার প্রায় ৩৫ হাজার গ্রামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে স্বামীজীর জন্মোৎসব উদযাপিত হইবে। শনিবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে স্বামী বিবেকানন্দ জন্ম-শতবার্ষিকী কমিটি কর্তৃক আহুত এক সভায় এই তথ্য পরিবেশন করা হয়। স্বামীজীর শততম জন্ম-জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে নাগরিকদের ইতিকর্তব্য নির্ধারণের জন্য এই সভা হয়। আইনমন্ত্রী শ্রীঅশোক সেন সভাপতিত্ব করেন।

কলিকাতা, সোমবার, ৮ই মাঘ, ১৩৬৮ (২রা মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, JANUARY 22, 1962
কলিকাতায় দুগ্ধ সরবরাহে বিঘ্ন: অবিলম্বে বেতনবৃদ্ধি এবং অন্যান্য দাবিতে হরিণঘাটা দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্রে শনিবার মধ্যরাত্রি হইতে দুধের গাড়ীর প্রায় শতাধিক কর্মী ধর্মঘট করায় রবিবার কলিকাতায় দুগ্ধ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে শহরের কয়েক হাজার ক্রেতার বিশেষত বৃদ্ধ, অশক্ত, রোগী ও শিশুদের ভয়ানক অসুবিধা হয়। কলিকাতায় হরিণঘাটা সরকারী দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র হইতে দৈনিক ৩৫০টি দোকানের মাধ্যমে গড়ে ১৭০০ মণ দুগ্ধ বিক্রীত হয়। এই ধর্মঘটের ফলে দুগ্ধ উৎপাদন অবশ্য ব্যাহত হয় নাই। দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্রের ডিরেক্টর বলেন যে দুই এক দিনের মধ্যে কলিকাতায় সুষ্ঠুভাবে দুগ্ধ বিতরণ করা সম্ভব হইবে। তিনি আরও বলেন যে, ধর্মঘটীদের অধিকাংশই দুগ্ধ ভ্যানের রক্ষী।
সারা ভারত বাংলা ভাষাভাষী সম্মেলন: রবিবার ইউনির্ভাসিটি ইনস্টিটিউট হলে সারা ভারত বাঙ্গলা ভাষা ভাষী সম্মেলন উপলক্ষে ‘বাঙ্গালী কল্যাণ যজ্ঞ’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘যজ্ঞাগ্নি’ স্পর্শ করিয়া এই দিন কয়েকশত বাঙ্গালী তাঁহাদের মনে ‘বাঙ্গালী বোধ’ জাগ্রত করার পবিত্র শপথ গ্রহণ করেন। এই দিন সন্ধ্যায় এক নাগরিক সম্মেলনে বিভিন্ন বক্তা ধন-বন্টন, ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন, দেশের অঙ্গচ্ছেদ ইত্যাদি ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙ্গালীর প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বৈষম্যমূলক আচরণের’ প্রতিবাদ করেন। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বিহার আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কুক্ষিগত লুপ্ত অঞ্চলগুলি উদ্ধার করিয়া এক ‘অখন্ড বাঙলা’ গঠনের দাবি জানান হয়। পশ্চিমবঙ্গ হইতে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি অফিস স্থানান্তরের জন্য সভায় তুমুল প্রতিবাদ উত্থাপিত হয়। শ্রীশশাঙ্কশেখর স্যান্ন্যাল এম এল সি সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন ডঃ হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ৯ই মাঘ, ১৩৬৮ (৩রা মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, JANUARY 23, 1962
• উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়... বিস্তারিত
কলিকাতায় জাপানের যুবরাজ আকিহিতো: জাপানের যুবরাজ আকিহিতো এবং তাঁহার পত্নী সোমবার সন্ধ্যায় করাচীর পথে কলিকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছিলে তাঁহাদের সাদর সম্বর্ধনা জানান হয়। সোমবার রাত্রি কলিকাতায় রাজভবনে কাটাইয়া যুবরাজ আকিহিতো ও পত্নী মিচিকো মঙ্গলবার প্রাতে পাকিন্তান সফরের জন্য করাচী যাত্রা করিবেন। তাঁহারা উভয়েই ১৯৬০ সালের ১৩ই নভেম্বর প্রথমবার কলিকাতায় আসিয়াছিলেন। বিমানবন্দরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব, রাজ্যপালের এ ডি সি, জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং কলিকাতাস্থ বাণিজ্যদূত প্রভৃতি বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। শ্রীগুপ্ত যুবরাজকে মাল্যভূষিত করেন এবং তাঁহার পত্নীকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দেন। দুইটি জাপানী নাগরিকদের পক্ষ হইতে অভিনন্দন জানায়।

জাপানের যুবরাজ ও তাঁহার পত্নী।
ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, বুধবার, ১০ই মাঘ, ১৩৬৮ (৪ঠা মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) WEDNES-DAY, JANUARY 24, 1962

• নেতাজীর জন্মদিবস পালন... শহরের নানা চিত্র... বিস্তারিত
রাজস্থান ক্লাবের সাফল্য: মঙ্গলবার অপরাহ্নে পশ্চিমবঙ্গ ভলিবল ফেডারেশন পরিচালিত রাজ্য ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলায় রাজস্থান ক্লাব চেতলা পার্ক দলকে পরাজিত করিয়া বিজয়ীর সম্মান লাভ করিয়াছে। চেতলা পার্ক খেলার সূচনায় উন্নততর নৈপুণ্য প্রদর্শন করিয়া প্রথম গেমে জয়ী হয়। কিন্তু তাহার পরে কি কারণে বোঝা গেল না তাহারা উপর্যুপরি তিনটি গেমে পরাজিত হয়। খেলার শেষে শ্রীযুত রামকুমার ভূয়ালক সভাপতির আসন গ্রহণ করিয়া পুরস্কার বিতরণ করেন। রাজস্থান ক্লাব ৯-১৫, ১৫-১০, ১৫-৪, ১৫-৮ গেমে চেতলা পার্ক দলকে পরাজিত করে।
এশীয় স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা: মঙ্গলবার কলিকাতায় স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা কংগ্রেসের দ্বিতীয় এশীয় সম্মেলনের


পশ্চিম বাঙ্গলার ভলিবল চ্যাম্পিয়ন
রাজস্থান ক্লাব।
ফটো: আনন্দবাজার
উদ্বোধনকালে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন যে, জনসাধারণ যাহাতে এই নীলাকাশের নীচে ভালভাবে থাকিতে পারে, সেজন্য তাঁহাদের চেষ্টা করা দরকার। ইহা করা হইলে চিকিৎসাবাবস্থা টিকিয়া থাকা সার্থক হইবে। মুখ্যমন্ত্রী একশ্রেণীর চিকিৎসকদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন মনোভাবের নিন্দা করেন। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন এ্যান্ড পাবলিক হেলথ ভবনে উহার উদ্বোধন হয়। বোম্বাই-এর বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ ভি এন শিরোদকর সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। সভাপতির ভাষণে তিনি জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধিকে বর্তমান ভারতের জটিলতম সমস্যারূপে বর্ণনা করেন। তাঁহার মতে জন্মনিয়ন্ত্রণের দ্বারা জনসংখ্যা এই ক্রমবৃদ্ধির গতিকে রোধ করা এখন অপরিহার্য হইয়া পড়িয়াছে। তিনদিন ধরিয়া এই সম্মেলন চলিবে। প্রথম কংগ্রেস ১৯৫৮ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় বলেন, প্রায় ষাট বৎসর পূর্বে তিনি যখন মেডিক্যাল ছাত্র তখন ঔষধ ও শল্যচিকিৎসার তুলনায় স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যাকে বিশেষ আমল দেওয়া হইত না। কিন্তু এখন ইহার পরিবর্তন হইয়াছে। তিনি বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার তুলনায় ভারতের অবস্থা অন্যরূপ হইলে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা এবং সদিচ্ছা এদেশে জন্মহারবৃদ্ধি সহ অনেক সমস্যার সমাধানে সাহায্য হইতে পারে বলিয়াই তাঁহার ধারণা।
চিরতারুণ্যের প্রতীক নেতাজীর ৬৬ তম জয়ন্তী: মঙ্গলবার, ২৩শে জানুয়ারী চিরতারুণ্যের প্রতীক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ৬৬তম জয়ন্তী উপলক্ষে মহানগরী কলিকাতা যেন উৎসবের আনন্দে মাতিয়া উঠে। প্রভাত ফেরী, পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন অংশে সকাল-সন্ধ্যায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাজীর গৌরবদীপ্ত জীবনের আলোচনা হয় এবং ভারতমাতার বন্ধন-শৃঙ্খল মোচনে এই দেশনায়কের ত্যাগ ও দুঃখবরণের কথা গভীর শ্রদ্ধার সহিত উল্লেখ করা হয়।
প্রতি সেকেন্ডে সাতজন: ভিড়ের সময় প্রতি সেকেন্ডে সাতজন হাওড়া সেতু অতিক্রম করে। কলিকাতা মেট্রোপলিটন পরিকল্পনা সংস্থা কয়েক মাস পূর্বে ঐখানে যানবাহন ও লোক চলাচলের হিসাব লয়। ঐ পরিসংখ্যানে এই তথ্যটি পাওয়া গিয়াছে।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ১১ই মাঘ, ১৩৬৮ (৫ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) THURSDAY, JANUARY 25, 1962
• ‘ভোট ফর’: নির্বাচন-দ্বন্দ্বের দামামা-পর্ব... বিস্তারিত
• টুকিটাকি কাজের জন্য ছটাকও নাই অথচ কালোবাজার ফলাও... বিস্তারিত
দমদমে ডেনমার্কের রাজা: ব্যাঙ্কক হইতে স্বদেশে ফিরিবার পথে বুধবার রাত্রে সস্ত্রীক ডেনমার্কের রাজা নবম ফ্রেডারিক দমদম বিমান ঘাটিতে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করেন। সরকারীভাবে ১২ দিন তাইল্যান্ড ভ্রমণের পর রাজা ফ্রেডারিক কোপেনহ্যাগেন ফিরিতেছেন। দমদম বিমান ঘাটিতে রাজ্য সরকারের চীফ সেক্রেটারী শ্রী আর গুপ্ত, ডেনমার্কের কন্সাল জেনারেল এবং রাজ্যপালের সেক্রেটারী ও এ ডি সি ডেনমার্ক অধিপতিকে অভ্যর্থনা জানান।
পানের দোকানে অবৈধ পানীয়: কলিকাতার কোন কোন অঞ্চলে পানের দোকানে বে-আইনী মদের কারবার চলিয়াছে। কিছুদিন পূর্বে আবগারী বিভাগ কর্তৃক এই কারবার বন্ধ করিবার জন্য কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে বে-আইনী চোলাই যে কত ব্যাপক তাহা প্রকাশ হইয়া পড়ে। কিন্তু পানের দোকানে মদের বেসাতি আজও বন্ধ হয়

ডেনমার্কের রাজা নবম ফ্রেডারিক
এবং রাণী দমদম বিমানবন্দরে।
ফটো: আনন্দবাজার

নাই। এই অবৈধ ব্যবসায়ের ফলে সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত ভেন্ডারদের ব্যবসায় বিপন্ন হইয়াছে, সরকারের কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি পড়িতেছে।
শীতের বিদায়: আবহাওয়াবিদগণের মতে শীত এখন বিদায়ের পথে। বুধবার সর্বোচ্চ এবম সর্বনিম্ন উভয় তাপমাত্রাই স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশী ছিল। আলীপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের খবরে প্রকাশ যে, বৃহস্পতিবার সকালে কুয়াশা হইবার সম্ভাবনা আছে। রাত্রির তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তন হইবে। বুধবার অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় কলিকাতার সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ২৭ ডিগ্রী সেঃ (৮০ ডিগ্রী ফাঃস্বাভাবিক অপেক্ষা ১ ডিগ্রী সেঃ বেশী) ছিল। বায়ুর সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন আর্দ্রতা ছিল যথাক্রমে শতকরা ৯২ ভাগ এবং ৪৭ ভাগ।
শিক্ষা পর্ষদের কর্মীদের বিক্ষোভ: বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রায় আড়াইশত কর্মচারী পর্ষদ কর্তৃপক্ষ কর্মচারী স্বীকৃত বেতনহার প্রবর্তনের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের এন সি চন্দ্র স্ট্রীটের বাড়ির সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদশর্ন করেন। ঐ সময় ডাঃ রায় বাড়িতে ছিলেন না। বিক্ষোভকারীগণের পক্ষ হইতে তাঁহাদের দাবিদাওয়া সম্পর্কিত একটি স্মারকলিপি ডাঃ রায়ের একান্ত সচিবের হাতে অর্পণ করা হয় এবং ইহার পর তাঁহারা শান্তিপূর্ণভাবে স্থানত্যাগ করেন।

কলিকাতা, রবিবার, ১৪ই মাঘ, ১৩৬৮ (৮ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SUNDAY, JANUARY 28, 1962
• প্রজাতন্ত্র দিবসের সাড়ম্বর অনুষ্ঠান... নানা চিত্র... বিস্তারিত
উল্টা করিয়া টাঙ্গানো জাতীয় পতাকা:
প্রজাতন্ত্র দিবসে যে জাতীয় পতাকাটির নীচে দাঁড়াইয়া পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সেনা ও পুলিসবাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন, সেই পতাকাটি উল্টা করিয়া টাঙ্গানো ছিল। ব্যাণ্ডে জাতীয় সঙ্গীতের সুর বাজিবার সঙ্গে সঙ্গে পতাকাটি তোলা হয়। দেখা যায় সেটি উল্টা করিয়া টাঙ্গানো হইয়াছে। গৈরিক রঙের বদলে ওপরে উঠিয়াছে সবুজ রঙ। কিস্তু ততক্ষণে যা হইবার হইয়াছে। কারণ কুচকাওয়াজ সুরু হইয়া গিয়াছে। রাজ্যপাল অভিবাদন গ্রহণ করিতেছেন। তখন আর ভুল সংশোধনের উপায় নাই। এই উল্টা করিয়া টাঙানো জাতীয় পতাকাটির নীচেই এইদিন সারা সমগ্র প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান চলে।
বিশ্ববিদ্যালয় ‘কলেজ কোড’ লইয়া টালবাহানা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে “কলেজ কোড” প্রণয়ন করেছিলেন, তাহাতে শীঘ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের অনুমোদন পাওয়া যাইবে বলিয়া মনে হয় না। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শ্রীকেশবেশ্বর বসুর নিকট যে পত্র দিয়াছেন, তাহাতেই বিশ্ববিদ্যালয় মহলে ঐ ধারণার সৃষ্টি হইয়াছে। শনিবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেনেটের বার্ষিক অধিবেশনে প্রস্তাবিত কলেজ কোড এ পর্যন্ত আচার্যের অনুমোদন না পাওয়ার জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এ সম্পর্কে সেনেটের সভায় বিবৃতি দেওয়ার সময় অধ্যক্ষ কেশবেশ্বর বসু মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায়ের পত্রটির উল্লেখ করেন। এদিন অধিবেশনের প্রারম্ভেই সেনেটের অধ্যাপক-সদস্যদের পক্ষ হইতে কলেজ কোড সম্পর্কে আলোচনার দাবি জানান হয়। কিন্তু সভার পরিচালক উপাচার্য শ্রীসুরজিৎচন্দ্র লাহিড়ী তাহাতে সম্মত হন না। উপাচার্য অধিবেশনের শেষের দিকে অধ্যক্ষ বসুকে ঐ সম্পর্কে বিবৃতি দানের অনুমতি দেন।
দমদমে হত্যাকাণ্ড: দমদম, ২৭শে জানুয়ারীশুক্রবার সকালবেলায় নরেশচন্দ্র সাহা নামক এক যুবককে দমদমের যপুর রোডস্থিত নিজেদের মুদিখানার ভিতরে রক্তাক্তদেহে মৃত অবস্থায় পড়িয়া থাকিতে দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার শরীরে গভীর অস্ত্রাঘাতের চিহ্ন ছিল। সংবাদে প্রকাশ যে, মৃত যুবকের পিতা ঐ দোকানের মালিক। তিনি দমদমের বহিরাগত কলোনীর বাসিন্দা। তিনি সকালে বাড়ী হইতে দোকানে আসিয়া দেখেন যে, উহার দরজা ভেজান অবস্থায় রহিয়াছে, ভিতর হইতে বন্ধ নহে। তিনি দোকানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া দেখেন যে, তাঁহার পুত্র রক্তাক্তদেহে মৃত অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। খবর পাইয়া পুলিস ঘটনাস্থলে আসে এবং একটি যুবককে সন্দেহক্রমে আটক করে। পরে পুলিস কুকুর লাকিকে আনা হয়। পুলিস-কুকুর জনতার ভিতর দিয়া গন্ধ শুঁকিতে শুঁকিতে অগ্রসর হইয়া ঘটনাস্থল হইতে কিছু দূরে অবস্থানকারী ঐ ব্যক্তির উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়া তাহাকে কামড়াইয়া ধরে। ধৃত ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি যে কলোনীতে বাস করিত সেইখানকারই বাসিন্দা বলিয়া জানা গিয়াছে। এই হত্যা সম্পর্কে পুলিস আরও একটি যুবককে এবং এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে বলিয়া প্রকাশ।
কলিকাতায় স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ উদ্দীপনা: শুক্রবার ছাব্বিশে জানুয়ারী পশ্চিম বাংলার অন্যান্য স্থানের সঙ্গে কলিকাতা মহানগরীতেও প্রাণচঞ্চল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ত্রয়োদশ প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করা হয়। সূর্যকরোজ্জ্বল প্রভাতে নগরীর ভবনে ভবনে পার্কে পার্কে নানা ছোট ও বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্থানে স্থানে সুত্রযজ্ঞ, সর্বধর্ম প্রার্থনাসভা, কংগ্রেস সেবাদল সমাবেশ, কুচকাওয়াজ প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়।

কলিকাতা, সোমবার, ১৫ই মাঘ, ১৩৬৮ (৯ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, JANUARY 29, 1962
বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী উদযাপন: রবিবার প্রত্যুষে স্বামী বিবেকানন্দের শুভ জন্মলগ্নে সুরু করিয়া সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া কলিকাতায় এই মহামানবের জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হয়। ভারতীয় ধ্যান-ধারণার মূর্ত প্রতীক বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই দিন মহানগরী ভাবাবেগ ও উদ্দীপনায় মাতিয়া উঠে। সকাল ছ’টায় স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম স্থান হইতে স্বামীজীর প্রতিকৃতিসহ রিলে দৌড় সুরু হয়। সকাল দশটায় আজাদ হিন্দ বাগে স্বামীজীর ব্রোঞ্জ মূর্তির আবরণ উন্মোচিত হয়। অপরাহ্নে শ্যামস্কোয়ারে এক পক্ষব্যাপী অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর সূচনা হয়। বিবেকানন্দের জন্মোৎসব সমিতি অনুমোদিত স্বামীজীর জন্মশতবার্ষিকী উৎসব কমিটির পক্ষে এই উৎসব উদযাপিত হইতেছে। সকাল ৬টায় পুরললনাদের মঙ্গলশঙ্খ ধ্বনির মধ্যে ৩নং গৌর মুখার্জি স্ট্রীটে বিবেকানন্দের জন্মস্থান হইতে স্বামীজীর প্রতিকৃতি বহন করিয়া রিলে দৌড় সুরু হয়। উত্তর কলিকাতা ও হাওড়ার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়া শোভাযাত্রা সকাল ৯-৩০ মিনিটে আজাদ হিন্দ বাগে আসিয়া শেষ হয়। একটি দীর্ঘ সুসজ্জিত শোভাযাত্রা প্রতিকৃতি অনুগমন করে। বেলা বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে শোভাযাত্রায় ভিড় বাড়িতে থাকে। শোভাযাত্রার বিজ্ঞাপিত পথের মোড়ে মোড়ে আগ্রহব্যাকুল নর-নারীর ভিড়। বরানগর, বালীতে জয়তু স্বামীজী শোভিত বহু তোরণ নির্মিত হয়। পুরললনাগণ পথের মোড়ে মোড়ে স্বামীজীর প্রতিকৃতির উপর পুষ্পবৃষ্টি করেন। দক্ষিণ কলিকাতা হইতেও অনুরূপ একটি শোভাযাত্রা আজাদ হিন্দ বাগে উপস্থিত হয়।

রবিবার বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী উৎসব উপলক্ষে স্বামীজীর প্রতিকৃতি সহ রিলে দৌড়।
আরও ছবি...

এশিয়ান টেনিসের উদ্বোধন দিনের খেলা স্থগিত: ক্যালকাটা সাউথ ক্লাবের পরিচালনায় শনিবার হইতে এই বৎসরের আন্তর্জাতিক এশিয়ান লন টেনিস প্রতিযোগিতার খেলা তাহাদের উডবার্ণ পার্কস্থ কোর্টে অনুষ্ঠানের সকল ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য উদ্বোধন দিনেই উদ্যোক্তাদের নৈরাশ্যের সম্মুখীন হইতে হয়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং ঠান্ডা বাতাসের পরিবেশে বেলা প্রায় ১টার সময় তালিকানুযায়ী সাতিটি খেলা সুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে বারিবর্ষণও আরম্ভ হয় এবং কুড়ি মিনিট পরেই খেলাগুলি স্থগিত করিয়া দিতে হয়। এই বর্ষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাইতে থাকায় এই দিনে আর কোন খেলার অনুষ্ঠান সম্ভব হয় না।
মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসবে শ্রীসুধীরঞ্জন দাশের ভাষণ: রবিবার সকালে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজের ১২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের সভাপতিরূপে বিশ্বভারতীর উপাচার্য শ্রীসুধীরঞ্জন দাশ মেডিক্যাল ছাত্র-ছাত্রীদিগকে সেবাব্রতী হিসাবে কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, মেডিক্যাল কলেজ হইতে বাহির হইয়া কেহ চাকুরী গ্রহণ করিবেন, কেহ বা স্বাধীনভাবে চিকিৎসা-ব্যবসায়ে সুরু করিবেন। জীবিকার্জনকালে তাঁহাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে তাঁহারা পীড়িত মানবতার সেবক। রোগকাতর মানুষকে তাঁহারা সেবা ও চিকিৎসার দ্বারা নিরাময় করিয়া তুলিবেন। সেবা মহান আদর্শই যেন তাঁহাদিগকে এই বৃত্তিতে উদ্বুদ্ধ করিয়া তোলেশুধু অর্থার্জনই যেন তাঁহাদের কেমাত্র উদ্দেশ্য না হয়।
রবিবার কাশীপুর এলাকায় লরীর ধাক্কায় দুইটি শিশুর জীবনান্ত: দুইটি শিশু তিন বছরের তারা এবং দশ বছরের সাবিত্রী রবিবার দুপুরে কাশীপুর থানা এলাকায় লরী চাপা পড়িয়া ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অভিযোগে প্রকাশ, সাবিত্রী ও তারা দুই বোন বি-টি রোড এবং শীলস্ গার্ডেন লেনের মোড়ের কাছে ফুটপাথ দিয়া যাইবার সময় সহসা একটি লরী ফুটপাথের উপর উঠিয়া পড়িয়া তাহাদের ধাক্কা মারে। তৎক্ষনাৎ তাহাদের মৃত্যু ঘটে। দুর্ঘটনার পর জনতা বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠে। চালক লরী লইয়া পালাইবার চেষ্টা করে বটে কিন্তু ধরা পড়ে। তাহাকে পুলিস গ্রেপ্তার করিয়াছে।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১৬ই মাঘ, ১৩৬৮ (১০ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, JANUARY 30, 1962
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচন: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগগুলির ছাত্রছাত্রীদের সেদিন আর নাই। কোথায় সেই পোস্টারের মালা এবং উৎসাহী ছাত্রছাত্রীদের হৈ-হুল্লোড়? সেনেট হলের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনের ‘বৈশিষ্ট্যও’ কি অন্তর্হিত হইয়াছে? আজ মঙ্গলবার এবং আগামীকাল বুধবার যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের ছাত্র ইউনিয়নগুলির নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে সোমবার বিকালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহলে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায় নাই। আশুতোষ ভবনের গায়ে পোস্টার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনগুলির কয়েকজন ‘নেতার’ গুলতানী ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় নাই। অথচ, গত বৎসরেও ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনের বেশ কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরের পোস্টার প্রদর্শনীর ফটো সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় স্থান পাইয়াছিল। এ সম্বন্ধে কয়েকজন ছাত্রনেতা এক বাক্যে বলেন, সাধারণ নির্বাচনই তাহাদের ইউনিয়ন নির্বাচনে নিরুৎসাহের কারণ। নানাকারণেই তাহারা গত বৎসরের মত এবার ইউনিয়ন নির্বাচনে বিশেষ জোর দিতে পারিতেছেন না।
প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার ইংরাজী প্রশ্নপত্রের ধারা পরিবর্তন: এই বৎসর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার ইংরাজীপত্রে মাতৃভাষা হইতে ইংরাজী অনুবাদ করিতে দেওয়া হইবে, না উহার বদলে ইংরাজী গল্প লিখিতে বলা হইবেএই প্রশ্নে এখন পরীক্ষার্থী ও অধ্যাপক মহলে বিভ্রান্তি দেখা দিয়াছে। এমন কি, বিশ্ববিদ্যালয় মহলও এই বিভ্রান্তি হইতে বাদ পড়ে নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সাম্প্রতিক এক প্রস্তাবের ফলেই এই বিভ্রান্তি দেখা দিয়াছে। একাডেমিক কাউন্সিলের প্রস্তাবে অনুবাদের পরিবর্তে গল্প লিখিতে বলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এবং তাহা অবিলম্বে কার্যকরী করিতেও বলা হইয়াছে। এবং সেইমত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালন বিভাগ নাকি ইতিমধ্যেই প্রস্তুত হইতেছেন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা এই বৎসর হইতেই একাডেমিক কাউন্সিলের নির্দেশ গ্রাহ্য হইবে। অথচ প্রাক্ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সিলেবাস অনুসারে এতদিন ধরিয়া কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুবাদ শেখানই হইয়াছে। পরীক্ষারও আর দেরী নাই। প্রাক্ বিশ্ববিদ্যালয় কলা ও বিজ্ঞান শাখায় পরীক্ষা যথাক্রমে ৪ঠা মে ও ৫ই মে শুরু হইবে। এই বৎসর হইতেই এই পরীক্ষা কলা ও বিজ্ঞান এই দুইটি শাখায় দ্বিধাবিভক্ত হইতেছে।

কলিকাতা, বুধবার, ১৭ই মাঘ, ১৩৬৮ (১১ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) WEDNESDAY, JANUARY 31, 1962
 
ভোটযুদ্ধের মহড়া

এই নির্বাচনী পোস্টারখানি খুব সহজেই
দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবে।
ফটো: আনন্দবাজার

শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে কংগ্রেসের সমর্থক
এবং কংগ্রেসের বিরোধী নির্বাচন পোস্টারগুলি
পাশাপাশি বিরাজ করিতেছে। ফটো: আনন্দবাজার
নির্বাচনী প্রচারকার্য বড়ই ব্যায়সাধ্য ব্যাপার।
এই বড় পোস্টারখানি পার্ক স্ট্রীট ও চৌরঙ্গীর
মোড়ে টাঙ্গানো হইয়াছে। ফটো: আনন্দবাজার

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ১৮ই মাঘ, ১৩৬৮ (১২ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) THURSDAY, FEBRUARY 1, 1962
পরলোকে শ্রী প্রকাশ চন্দ্র শেঠ: লিলি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ডিরেক্টর বোর্ডের চেয়ারম্যান শ্রীপ্রকাশ চন্দ্র শেঠ গত বুধবার বেলা ১০টায় উত্তর কলিকাতার ১৩নং রামনারায়ণ ভট্টাচার্য লেনস্থ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হইয়া পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স ৫৭ বৎসর হইয়াছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্ভীক নেত্রী শ্রীমতী হেমপ্রভা মজুমদার পরলোকে: স্বাধীনতা সংগ্রামের যুগের নির্ভীক নেত্রী শ্রীমতী হেমপ্রভা মজুমদার বুধবার মধ্যরাত্রে ৭৪ বৎসর বয়সে পরলোকগমন করিয়াছেন। যে যুগে নারী ছিল পর্দানশীন এবং পুরুষরা ব্রিটিশ সরকারের ভয়ে ত্রস্ত ছিল, সেই যুগে হেমপ্রভা পর্দার বাহির হইয়া আসেন এবং দীপ্ত কণ্ঠে স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেন।

কলিকাতা, শনিবার, ২০শে মাঘ, ১৩৬৮ (১২ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SATURDAY, FEBRUARY 3, 1962
• অষ্টগ্রহ সমাবেশের ভয়ে বহু লোক দিশাহারা... বিস্তারিত
“হ্যালো আনন্দবাজার হ্যালো হ্যালো”
(শুক্রবার অষ্টগ্রহের ফেরে, গভীর রাত্র পর্যন্ত আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসের টেলিফোনের ঠ্যালা সামলাইতে কর্তব্যরত রিপোর্টারের কান ঝালাপালা হইয়া গিয়াছে।)
“হ্যালো, আনন্দবাজার, হ্যালো-”
“হ্যাঁ, বলুন?
“হ্যালো, আমি নৈহাটি থেকে বলছি। বাঁকুড়ায় নাকি বেলা ৩টয় ভূমিকম্প হয়েছে?
“হ্যালো, আনন্দবাজার? হ্যালো, আমি চন্দননগর থেকে বলছি। কলকাতায় নাকি ভূমিকম্প হয়েছে? বেহালায় নাকি ঘরবাড়ী ধসে গিয়েছে?
“হ্যালো, ইচ্ছামতী নদীর জল নাকি জমে বরফের চাঙড় হয়ে গিয়েছে?
“হ্যালো, আনন্দবাজার, হ্যালো, বম্বে মেলের নাকি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, খবর জানেন কিছু?
“হ্যালো, আনন্দবাজার, মিশরমে ভূম্কমপ্ হুয়া হ্যায়, ক্যায়া কুছ খবর মিলা?”
“হ্যালো, আনন্দবাজার, হ্যালো, হ্যালো, আমি দমদম থেকে বলছি। জানেন, আজ সকালে এখানে সূর্য কাঁপতে কাঁপতে আকাশে উদিত হয়েছে। হ্যালো, হ্যালো-”
কলিকাতায় পর্যটন উৎসব সপ্তাহ: ১০ই ফেব্রুয়ারী ভারতের অন্যান্য স্থানের সহিত কলিকাতায় ‘পর্যটন উৎসব সপ্তাহ’-এর উদ্বোধন হইতেছে। পর্যটনের প্রতি জনসাধারণকে উৎসাহী করাই এই সপ্তাহ উদযাপনের উদ্দেশ্য। ১৭ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রাচীরপত্র প্রদর্শনী, বিমানে প্রমোদ ভ্রমণ, পর্যটন সম্পর্কিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বাস, নৌকা ও লঞ্চযোগে প্রমোদ ভ্রমণ, সঙ্গীত ও রবীন্দ্র-নাট্যাভিনয় প্রভৃতি বহুবিধ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া সপ্তাহকাল ধরিয়া ঐ উৎসব পালিত হইবে। ১০ই ফেব্রুয়ারী বিকালে লোয়ার সার্কুলার রোডস্থিত ইনফর্মেশন সেন্টারে পর্যটন সংক্রান্ত এক প্রাচীরপত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়া সপ্তাহব্যাপী উৎসবের সূচনা হইবে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শ্রীঅশোক সেন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করিবেন।

কলিকাতা, সোমবার, ২২শে মাঘ, ১৩৬৮ (১৬ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, FEBRUARY 5, 1962

• ইডেন হাসপাতালে ভর্তি নিয়ন্ত্রণ... বিস্তারিত
• ছায়ালোকবাসীদের খেলা... বিস্তারিত
খাদ্যবিভাগের কর্মীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন: প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের উপর ধর্মঘটোত্তর অত্যাচার, পক্ষপাতিত্ব এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অন্যায় পদোন্নতির অভিযোগ করিয়া উহার প্রতিবাদে শনিবার এসপ্ল্যানেড ইষ্টস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের আঞ্চলিক খাদ্য দপ্তরের কর্মচারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ঐ বিক্ষোভকালে আঞ্চলিক ডিরেক্টার এবং অপরাপর কয়েকজন অফিসারকে কর্মচারীরা কয়েকঘন্টা অফিস কক্ষের ভিতরে ঘেরাও করিয়া রাখেন। সন্ধ্যা প্রায় পৌনে ছয়টার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ হইতে জানান হয় যে, যে দুইটি পদোন্নতির তালিকা জারী করা হইয়াছে, তাহা আপাতত স্থগিত থাকিবে এবং অভিযোগের কারণ পুনরায় বিবেচনা করিয়া দেখা হইবে। ইহার পর বিক্ষোভকারী কর্মচারীরা চলিয়া যান।
মাত্র চার ঘন্টার জন্য ডাঃ রায় ইঞ্জিনিয়ার হইতে পারিলেন না: মাত্র চার ঘন্টার জন্য। চার ঘন্টা এদিক-ওদিক হইলে স্বনামখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় হয়তো বা নামকরা ইঞ্জিনীয়ার হইতে পারিতেন। রবিবার, সকালে কলিকাতায় ইঞ্জিনীয়ারদের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় বলেন, “মাত্র চার ঘন্টার জন্য আমি ইঞ্জিনীয়ার হতে পারলাম না।” ডাঃ রায় বলেন প্রায় ষাট বছর আগে গণিতে গ্র্যাজুয়েট হইবার পর তিনি একইসঙ্গে শিবপুরে ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ’ এবং ‘মেডিক্যাল কলেজ’ ভর্তির জন্য আবেদনপত্র পেশ করেন। যেদিন সকালে তাঁহাকে ভর্তি করা হইয়াছে জানাইয়া মেডিক্যাল কলেজ হইতে চিঠি আসে সেদিন বিকাল ৪টায় ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ হইতেও একই মর্মে চিঠি আসে। কিন্তু তাহার চার ঘন্টা আগেই বেলা ১২টায় টাকা জমা দিয়া তিনি যথারীতি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হইয়া গিয়াছেন!
মহিলা সম্মেলনে ডাঃ রমা চৌধুরী কর্তৃক স্বামীজির জীবনাদর্শন বর্ণনা: রবিবার শ্যামস্কোয়ারে স্বামী বিবেকানন্দ জন্মশতবার্ষিকী উৎসব মণ্ডপে আয়োজিত এক মহিলা সম্মেলনে সভানেত্রীরূপে ডঃ রমা চৌধুরী স্বামীজীর জীবনাদর্শ অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তা বিবৃতি করেন। স্বামীজী মনে করিতেন, নারী জাতির উন্নতি না হইলে ভারতের উন্নতি হইবে না। গত ২৮শে জানুয়ারী হইতে এক পক্ষকালব্যাপী এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া বিবেকানন্দ জন্মশতবার্ষিকী কমিটি উৎসব উদযাপনের ব্যবস্থা করিয়াছেন। ডঃ চৌধুরী বলেন যে, স্বামীজী তাঁহাদিগকে ভারতীয় হইবার শিক্ষা দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন যে, ভারতে জন্মগ্রহণ করিয়াছে বলিয়া যেন ভারতবাসী লজ্জিত না হইয়া বরং গর্বিত হয়। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য জাতির নিকট ভারতের গ্রহণ করার অনেক কিছুই আছে, তেমনি দিবারও অনেক আছে।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ২৩শে মাঘ, ১৩৬৮ (১৭ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, FEBRUARY 6, 1962
অষ্টগ্রহ সমাবেশের অবসান: সোমবার ৫ই ফেব্রুয়ারী, আজ, বিকাল ৫টা ৪৭মিনিট গতে অষ্টগ্রহ সমাবেশের অবসান ঘটিয়াছে। কিন্তু সারা ভারত জুড়িয়া এই বিষয়ে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে তর্কের এখনও বিরাম নাই। অবিশ্বাসীদের মতে, এ ব্যাপারে ভয় পাওয়াটাই ছিল হাস্যকর। আর বিশ্বাসীদের ধারণা এই যে, তাঁহাদের যাগযজ্ঞের ফলেই এ-যাত্রা পৃথিবী রক্ষা পাইয়াছে।
অবশেষে ফয়সালা: কলিকাতার কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তির মূল্য নিরুপম সম্পর্কে কর্পোরেশনের সহিত দীর্ঘকাল ধরিয়া বাদানুবাদ চলিতেছিল, শেষ পর্যন্ত তাহার কিনারা হইয়াছে। সোমবার কলিকাতা কর্পোরেশনের মূলতুবী সভায় মেয়র শ্রীরাদেন্দ্রনাথ মজুমদার ঐ মর্মে ঘোষণা করেন। মেয়র শ্রীমজুমদার সভায় এক বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন,

সোমবার বিকালে জনশূন্য কলিকাতার
একটি গ্রহশান্তি যজ্ঞস্থালী।
গত ১-৪-৪৮ তারিখ হইতে জমির মূল্য নিরুপনের ব্যাপার লইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত কর্পোরেশনের বাদানুবাদ শুরু হয়। এবং ইহার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট কর্পোরেশনের করবাবদ বহু টাকা অনাদায়ী পড়িয়া থাকে। তিনি বলেন, এই ব্যাপারটি আলোচনার জন্য সম্প্রতি স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীচিত্ত চ্যাটার্জি, ডেপুটী চেয়ারম্যান শ্রীগোবিন্দ দে এবং তিনি নিজে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমোরারজী দেশাইয়ের সহিত সাক্ষাৎ করেন। এবং ঐ বৈঠকেই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির মীমাংসা হইয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকার কলিকাতা পৌর আইন অনুযায়ী জমির মূল্য নিরুপন এবং তদানুযায়ী বর্ধিতহারে কর নির্ধারণের প্রস্তাবে সম্মত হইয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আপাতত ৩৪ লক্ষ টাকা অগ্রিম (অন-এ্যাকাউন্ট) দিতে রাজি হইয়াছেন। হরিজন কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার ৮৩.৩৩ লক্ষ টাকার যে প্রস্তাব গ্রহণ করিয়াছেন এইদিনকার সভায় তাহাতে সমর্থন জানানো হয়।

কলিকাতা, শনিবার, ২৭শে মাঘ, ১৩৬৮ (২১ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SATURDAY, FEBRUARY 10, 1962
অপেক্ষাকৃত নিরানন্দ পরিবেশে কলিকাতায় বাণী অর্চনা সম্পন্ন: যা হবার কথা ছিল তা হয় নি। ‘উত্তুরে’র জায়গায় “দখিনা হাওয়ার” দেখা মেলে নি। বসন্তপঞ্চমীর সকালে বৃষ্টিভেজা শীতের দাপটে এবারকার সরস্বতী পূজার মেজাজ অনেকটা নষ্ট করে দিয়েছে। অথচ, অন্য অন্যবার সাধারণত এদিনে শীতের শেষ বিদায়ের বাঁশি বাজে। ঠিক ভরা বসন্ত না হলেও ফাল্গুনের ছোঁয়া তরুণের মনে রঙ ধরায়। ভোর হতে না হতে ছোটর দল স্নান সেরে নেয়। মাথায় তেল নেই, বাসন্তী রঙে ছোপান শাড়িপরা বালিকা-তরুণীর দল পাড়ায় পাড়ায় ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। আর আগের দিন সারারাত জেগে মণ্ডপ সাজানোর পর একদল ছেলে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ী ফেরে। সূর্য সোনালী সাজ নেবার আগেই পাড়ায় পাড়ায় এবং বিদ্যায়তনে শ্রীপঞ্চমীর উৎসব শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবার ঘন কুয়াসা কখন ভোর হল ভাল করে বুঝতে দেয়নিপ্রায় মধ্যাহ্ন পর্যন্ত বরুণদেবের দাপটে অরুণের মুখে ভাল করে হাসি ফোটেনি। আর প্রাণ খুলে হাসতে পারেনি বালখিল্যের দল। স্নান করি করি করেও জলে হাত দিতে ভয় পেয়েছে। বলতে গেলে এদিন আটটার আগে ঠিক ভোর হয়নি।
আনন্দবাজার পত্রিকা ভবনে সরস্বতী
প্রতিমা। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, রবিবার, ২৮শে মাঘ, ১৩৬৮ (২২ই মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) SUNDAY, FEBRUARY 11, 1962
কলিকাতায় পর্যটন সপ্তাহ: শনিবার পর্যটন সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক প্রাচীরপত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়া কলিকাতায় পর্যটন-সপ্তাহের সূচনা হয়। লোয়ার সার্কুলার রোডস্থিত ইনফরমেশন সেন্টারে আয়োজিত ঐ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শ্রীঅশোক সেন। হংকং, সুইজারল্যাণ্ড ও টিউনিসিয়া যথাক্রমে ১ম, ২য় ও তয় স্থান লাভ করিয়া পুরস্কৃত হয়। মোট ৩৫টি দেশ এই প্রদর্শনীতে যোগদান করে। ইহার মধ্যে বিমান চলাচল ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাচীরপত্র, দর্শনীতে অংশগ্রহণ করে ২৫টি দেশ। এয়ার ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, জাপানিজ এয়ার লাইনস্ ও বি-ও-এ-সি যথাক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় পুরস্কার লাভ করে। প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত দেশ দুইটিকে তাম্রনির্মিত নটরাজের মূর্তি দেওয়া হয়। পর্যটন উৎসব সপ্তাহের সভানেত্রী শ্রীমতী ই কুইরোজ পর্যটনের ব্যাপারে কলিকাতার গুরুত্ব উল্লেখ প্রসঙ্গে জানান যে, ১৯৬০ সালে ১ লক্ষ ২৩ হাজার পর্যটক ভারত ভ্রমণ করে। তাহাদের মধ্যে শতকরা ৪২ জন কলিকাতায় অন্ততপক্ষে একদিন করিয়া কাটাইয়া গিয়াছেন। মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন যে, পর্যটন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটা বোঝাপড়ার ভাব সৃষ্টি হয়। আইনমন্ত্রী শ্রী সেন বলেন যে, এইরূপ প্রাচীরপত্র প্রদর্শনী খুব অল্প সময়েই মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করিতে সক্ষম। বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করিবার জন্য ভারতকে আরও নানাভাবে চেষ্টা করিতে হবে। শ্রী এম এল নায়ারও সভায় বক্তৃতা করেন।

কলিকাতা, সোমবার, ২৯শে মাঘ, ১৩৬৮ (২৩শে মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, FEBRUARY 12, 1962
• কলিকাতার শিল্প মেলা... বিস্তারিত
• ময়দানে বিরাট জনসভায় ডাঃ রায়ের ভাষণ... বিস্তারিত
• সজনীকান্ত দাসের জীবনাবসান... বিস্তারিত
কলিকাতায় আন্তর্জাতিক ছাত্র নিবাস: রবিবার সকালে ৯নং হ্যারিসন স্ট্রীটে ভারতের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক ছাত্র নিবাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানের সভাপতিরূপে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় হিংসা ও দ্বন্দ্বে বিক্ষুব্ধ বিশ্বে পরস্পর বোঝাপড়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন যে, পরস্পর মেলামেশা ও ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভ্রান্ত ধারণার নিরসন ঘটে এবং পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হইয়া মৈত্রী স্থাপন সম্ভব হয়। দ্বন্দ্বসঙ্কুল বিশ্বে এই জিনিসটির সমধিক গুরুত্ব আজ বেশী করিয়া অনুভূত হইতেছে।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১লা ফাল্গুন, ১৩৬৮ (২৪শে মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, FEBRUARY 13, 1962
ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিষ্টিক্যাল ইনষ্টিটিউটের সমাবর্তন উৎসবে উপাধি লাভ: সোমবার ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিট্যুটের প্রথম সমাবর্তন উৎসবে পাঁচজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান সাধক ও গুণী ব্যক্তিকে সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই পাঁচজন সম্মানিত ব্যক্তি হইলেনজাতীয় অধ্যাপক শ্রীসত্যেন্দ্রনাথ বসু, রয়াল সোসাইটির সদস্য স্যর রোণাল্ড আইলমার ফিশার, সোভিয়েত রাশিয়ার বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য শ্রীআন্দ্রেই নিকলোভিচ কোলমাগ্রোভ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহরু ও ডাঃ ওয়ালটার অ্যানড্রু সুহাট। বরাহনগর ইনস্টিট্যুট ভবনের মুক্ত অঙ্গনে আম্রকুঞ্জছায়ায় সম্পূর্ণ ভারতীয় পরিবেশে এই সমাবর্তন উৎসবের আয়োজন হইয়াছিল।
সম্মানিত পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে শ্রীজওহরলাল নেহরু ও শ্রী এ এন কোলমোগ্রোভ উপস্থিত হইতে পারেন নাই। অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক কে বি মাধব সম্মানিত ব্যক্তিদের কপালে তিলক পরাইয়া ও হাতে রঙীণ উত্তরীয় ও উপাধিপত্র অর্পণ করিয়া বলেন, “সংখ্যা বিজ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রে আপনাদের বিরাট অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিট্যুটের সভাপতির পক্ষ হইতে আপনাদের ডক্টর অফ ‘সায়েন্স’ উপাধিতে ভূষিত করিতেছি।” অধ্যাপক শ্রীপ্রশান্তকুমার মহলানবীশ সম্মানিত ব্যক্তিদের সহিত সভাপতির পরিচয় করাইয়া দেন। উপাধি বিতরণের পূর্বে অধ্যাপক মহলানবীশ ইনস্টিট্যুটের কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের অবতারণা করিয়া বলেন, সংখ্যা বিজ্ঞানকে নূতন কারিগরি বিজ্ঞান হিসাবে স্বীকৃতি দিবার সময় আসিয়াছে। অন্যান্য কারিগরি বিদ্যার ক্ষেত্রে যেমনটি হইয়া থাকে, ঠিক তেমন সংখ্যা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রয়োগকার্যও পরস্পরের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে সন্নিহিত থাকা উচিত। ইনস্টিট্যুটের শিক্ষাদানের ভবিষ্যৎ কর্মসূচী সম্পর্কে অধ্যাপক মহলানবীশ বলেন, ইনস্টিট্যুটের ছাত্রদের শুধু সংখ্যাবিজ্ঞানের থিয়োরি শিক্ষা দেওয়াই উদ্দেশ্য নহে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, বিজ্ঞান ও যন্ত্রবিদ্যা এবং বিভিন্ন বাস্তব সমস্যাগুলির সমাধানের ক্ষেত্রে সংখ্যাবিজ্ঞানের সম্যক ব্যবহার যাহাতে ছাত্ররা যথার্থভাবে অবগত হইতে পারেন, তাহার ব্যবস্থা করা।

কলিকাতা, বুধবার, ২রা ফাল্গুন, ১৩৬৮ (২৫শে মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) WEDNESDAY, FEBRUARY 14, 1962
দক্ষিণ দমদমের নির্বাচনী সভায় ডাঃ রায়ের আশ্বাস: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় মঙ্গলবার দক্ষিণ দমদমের মতিঝিলে এক নির্বাচনী সভায় বক্তৃতাকালে বলেন, কলোনীবাসী উদ্বাস্তুদের ঋণ যাহাতে মুকুব হয় এবং উদ্বাস্তদের বর্তমান অসুবিধাগুলি যাহাতে দূর হয় তাহার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত আলাপ-আলোচনা চালাইতেছেন। ঐদিন তিনি নোয়াপাড়াতেও এক নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করেন। উভয় সভাতেই তিনি ভারতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখিতে বর্তমান নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থনের জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ জানান। সভা দুইটিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রবেশ কংগ্রেস সভাপতি শ্রীঅতুল্য ঘোষও বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, স্বাধীনতার পর দেশের পরনির্ভরশীলতা দূর করার পথে কংগ্রেস সরকার অনেক কাজ করিয়াছেন। সুতরাং দেশবাসী পুনরায় কংগ্রেসকে সমর্থন করিবেন এ বিশ্বাস তাঁহাদের আছে। মতিঝিলের সভায় প্রায় কুড়ি হাজার এবং নোয়াপাড়ার সভায় প্রায় চল্লিশ হাজার শ্রোতা সমবেত হন। মতিঝিলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বাস্ত সমস্যা দেখা দেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক অবস্থাও তখন ভাল ছিল না। পূর্ববঙ্গ হইতে ৩২-৩৩ লক্ষ নরনারী বাস্তুচ্যুত হইয়া পশ্চিমবঙ্গে আসিয়াছেন। পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। ইঁহাদের মধ্যে ৪ লক্ষ ২০ হাজার পরিবারকে বাড়ী, চাকুরী, ছোটখাট ব্যবসার জন্য অর্থ প্রদান ইত্যাদি নানাভাবে সাহায্য করা হইয়াছে। সওয়া লক্ষ পরিবারকে কোন সাহায্য দেওয়ার প্রয়োজন হয় নাই। তাহারা নিজেদের চেষ্টায় পুর্নবাসন পাইয়াছেন। ডাঃ রায় বলেন, উদ্বাস্তুদের পুর্নবাসনের জন্য এ পর্যন্ত তাঁহারা যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন। তবুও যাহা কিছু করা হইয়াছে তাহা যথেষ্ট নয়। বর্তমানের অসুবিধাগুলি যাহাতে দূর হয়, সেজন্য তিনি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। ইহা সত্য কথা যে, উদ্বাস্তুরা পূর্বের অবস্থা ফিরিয়া না পাইলেও তাঁহারা এখন হৃত মনোবল ফিরিয়া পাইয়াছেন। ডাঃ রায় বলেন যে, তিনটি পাঁচসালা যোজন্যর মাধ্যমে তাঁহারা একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ৮৩২ কোটি টাকা ব্যয় করিতেছেন। ইহার ফল দেশবাসী অবশ্যই পাইয়াছেন। কংগ্রেস সরকার দেশকে উন্নত করিবার জন্য আরও কাজ করিতে চাহেন। ইহাতে দেশবাসীর সাহায্য এবং বর্তমান নির্বাচনে কংগ্রেস-প্রার্থীদের সমর্থন তাঁহারা আশা করিতেছেন।

প্রাচীরপত্রে ভোটরঙ

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ৩রা ফাল্গুন, ১৩৬৮ (২৬শে মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) THURSDAY, FEBRUARY 15, 1962
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনুষ্ঠান: অতীত দিনের দিকপাল ফুটবল খেলোয়াড় শ্রীগোষ্ট পাল ভারত সরকারের নিকট হইতে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ উপাধি লাভ করায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বুধবার সন্ধ্যায় ময়দানস্থ ক্লাবচত্বরে শ্রীপালকে এক সম্বর্ধনা সভায় অভিনন্দন জানায়। ক্লাবের সভাপতি শ্রী ডি এন ভট্টাচার্য অনুষ্টানের সভাপতিত্ব করেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফ হইতে কীর্তিখ্যাত খেলোয়াড় শ্রীগোষ্ট পালকে একখানি ‘অভিনন্দনপত্র’ এবং গরদের জোড় উপহার দেওয়া হয়। শ্রীগোষ্ট পালের অতীত ক্রীড়াশৈলী ও অবিকম্পিত শৌর্যের কথা উল্লেখ করিয়া ‘অভিনন্দন পত্রে’ বলা হয়“তোমার অতীতের কীর্তি ভবিষ্যৎকে অনুপ্রাণিত করুকআগামী দিনের খেলোয়াড়দের মধ্যে তোমার আদর্শ পুনরুজ্জাবিত হয়ে উঠুকআচারে, আচরণে, ভদ্রতায়, শালীনতায়, ক্রীড়াচাতুর্যে বাঙ্গলার খেলোয়াড়গণের মধ্যে ফুটে উঠুক তোমার প্রতিচ্ছবিভারত ক্রীড়া-গগনের হে চিরভাস্বর জ্যোতিষ্ক, তুমি আমাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন গ্রহণ কর।” অতীত এবং বর্তমানের খ্যাতনামা খেলোয়াড়দের একত্র সমাবেশ বেং ফুটবল সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ছিল গোষ্ঠ পাল সম্বর্ধান সভার প্রধান বৈশিষ্ট্য। ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সুনামের মূলে যাঁহাদের ক্রীড়াদক্ষতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তাঁহাদের মধ্যে সূর্য চক্রবর্তী, সুরেন ঠাকুর, হারাণ সাহা, দুলাল গুহঠাকুরতা, প্রমোদ দাশগুপ্ত, সুনীল ঘোষ, পরিতোষ চক্রবর্তী, বেবী গুহ, ব্যোমকেশ বসু, নগেন রায় প্রভৃতি উপস্থিত ছিলেন। ক্রিকেট খেলোয়াড় শৈলেশ বসুর উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সভাপতি শ্রী ডি এন ভট্টাচার্য ক্লাবের সম্বর্ধনা সভায় ‘পদ্মশ্রী’ গোষ্ঠ পালকে গরদের জোড় উপহার দিতেছেন। ফটো: আনন্দবাজার

কলিকাতা, সোমবার, ৭ই ফাল্গুন, ১৩৬৮ (৩০শে মাঘ, ১৮৮৩ শকাব্দ) MONDAY, FEBRUARY 19, 1962
কলিকাতা নগরীর সম্প্রসারণ: মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় শুক্রবার কলিকাতায় কয়েক হাজার উৎকলবাসীর এক সমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সহিত যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় করিতে হইলে কলিকাতা মহানগরীর সম্প্রসারণ একান্ত প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ উৎকল সমাজ এবং কেন্দ্রীয় উৎকল কংগ্রেস নির্বাচনী কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোগে দশ নম্বর চৌরঙ্গী স্ট্রীটে ঐ সভা অনুষ্টিত হয়। অখিল ভারত উৎকল মহাসভার সাধারণ সম্পাদক শ্রী এস মহাপাত্র মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায়কে স্বাগত জানান। বৃহত্তর কলিকাতা উৎকল সমাজের সাধারণ সম্পাদক পণ্ডিত আকুলি মিশ্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় বাংলার ন্যায় উড়িষ্যাকে নিজের রাজ্যের মতই ভালোবাসেন। উড়িষ্যার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তিনি সব সময়েই চেষ্টা করিয়া থাকেন। প্রতিনিধিদের পক্ষে শ্রী এস সি বসু সমবেত সুধীরমণ্ডলীকে ধন্যবাদ জানান।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ৮ই ফাল্গুন, ১৩৬৮ (১লা ফাল্গুন, ১৮৮৩ শকাব্দ) TUESDAY, FEBRUARY 20, 1962
সন্ত রবিদাস জন্মোৎসব: সোমবার সন্ধ্যায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে সন্ত রবিদাস জন্মোৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় বলেন, ভারত শুধু ধনী বা গরীব, ব্রাহ্মণ বা অনুন্নত জাতির দেশ নয়, দেশ সকলের, স্বাধীনতার পর এই দেশকে বড় করিবার এবং উহার গৌরবময় ঐতিহ্যে পুনঃপ্রতিষ্টিত করবার দায়িত্ব দেশবাসীর উপর ন্যস্ত হইয়াছে। বঙ্গীয় প্রাদেশিক অনুন্নত সম্প্রদায় সঙ্ঘের উদ্যোগে ঐ সভার আয়োজন করা হয়। শ্রীসীতারাম সাকসেরিয় সভাপতিত্ব করেন। ডাঃ রায় বলেন, সকলেই যে এক ভগবানের সন্তান, লোকের ভিতরে এই প্রেরণা সঞ্চারের জন্য যুগে যুগে মহাপুরুষদের আবির্ভাব হইয়া থাকে। লোকের অবস্থান সমাজের যে স্তরেই হোক না কেন, কাহাকেও তাঁহারা তাচ্ছিল্য করিতে পারেন না। বর্তমানে তাঁহারা সাধারণ নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত আছেন। কিন্তু তিনি লোকের নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত নহেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যস্ত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহাত্মা গাঁধী বলিয়াছিলেন, দেশে যতদিন একজনও অনুন্নত বা নিরক্ষর থাকেন, ততদিন পরিত্রাণ নাই। এই দেশকে বড় করিবার জন্য তিনি সারা জীবন ব্যস্ত ছিলেন। বিদেশী শাসনাধীনে দেশবাসী ভারতের মহান সভ্যতা ও ঐতিহ্য ভুলিয়া গিয়াছিল। দলাদলি করিয়া তাহারা নিজেদের দুর্বল করিয়াছে। মহাত্মা গাঁধী ও কংগ্রেস এই দুর্বল দেশকে সবল করিবার চেষ্টা করেন। ডাঃ রায় বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশবাসীর দায়িত্ব হইতেছে একযোগে কাজ করা এবং দেশের উন্নতির জন্য সমবেত চেষ্টা করা। যে যে কাজেই লিপ্ত থাকুক না কেন, তিনি দেশের কাজই করিতেছেন। স্বাধীনতার পর দেশবাসী যেসব অধিকার পাইয়াছেন, তাহা যেন তাঁহারা দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করেন। শ্রীবিজয় সিং নাহার এম এল এ বলেন, ঈশ্বরের সামনে কেউ বড় বা ছোট নয়। ভারতের সংবিধানেও সকলের সমানাধিকার স্বীকৃত হইয়াছে, শ্রীরামকুমার ডাওয়ালকা, শ্রীধীরেন বস, শ্রীরামানন্দ দাস প্রমুখ বক্তা সন্ত রবিদাসের জীবনী ও শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেন। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থন করার জন্য হরিজন এবং তপশীল সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে আবেদন জানান হয়। হরিজন বালক-বালিকাদের জন্য শিক্ষাগত এবং গৃহনির্মাণ সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা দিবার জন্য দাবি জানান হয়। অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ আইন সত্ত্বেও যাঁহারা এই আইন মানেন না, তাঁহাদের সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি করা হয়। সন্ত রবিদাসের প্রতিকৃতি লইয়া একটি বড় মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে।

ভোট রঙ্গচিত্র

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।



Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


প্রথম পাতাঅতীতের তাঁরাতারাদের চোখেআমার শহরশিরোনামে শেষ তিরিশ • আনাচে-কানাচে • ক্যামেরা-বন্দি

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.