|
|
ছায়ালোকবাসীদের খেলা
কালকেতু |
|
|
|
“দেখেছ, কপালে কি রকম টিপ দিয়েছে যেন ভোরবেলার সুয্যি।”
স্বামীর কথায় আমার পাশের মহিলাটি বক-গলায় দেখলেন। স্মারক পুস্তিকা বিক্রি করছেন সুলতা চৌধুরী, কপালে সিঁদুর টিপ।
“তুমি ওই রকম দাওনা কেন?”
“ আচ্ছা।”
এই সংলাপ শুনতেই হল কারণ ওদের পাশে বসেছি। একটু পরেই মহিলাটি বললেন, “আচ্ছা অনুভা গুপ্তের মত সিল্কের শাড়ি পড়লে আমায় কেমন দেখাবে?”
“যাচ্ছে তাই”।
এত দ্রুত উত্তর কোন স্বামীকেই এ পর্যন্ত দিতে দেখিনি। |
|
স্টেডিয়ামের কানাচে এরাও ব্যাট (অনুভা গুপ্ত) এবং বল (মঞ্জু দে) নিয়ে নেমে
পড়েছেন। উইকেটকীপার বিশ্বজিৎ ধরা পড়ে মুখ দেখাতে নারাজ হল। |
রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে চলচ্চিত্রের দুঃখ কলাকুশলীদের সাহায্যার্থে আয়োজিত ক্রিকেট খেলা দেখছিলাম। খেলছিলেন ছবি বিশ্বাস বনাম সত্যজিৎ-রায়ের দল। যা ভেবেছিলাম তা ঘটেনি। অত্যন্ত সীরিয়স হয়েই তারকারা খেলছেন ফলে দর্শকদের (বিশেষতঃ মহিলা) প্রায় গোমড়া মুখেই দেখতে হয়েছে।
স্মারক পুস্তিকা বিক্রয়ের জন্য, কোটা নিয়ে স্টেডিয়ামে দর্শকদের মধ্যে পরিশ্রম করতে দেখা গেল, কয়েকজন কীপার ছিলেন। আর ধীমান দাস এবং গোপাল সান্যালকে চল্লিশোর্ধ বহু লোকই কলকাতার মাঠে খেলতে দেখেছেন বলে সনাক্ত করলেন।
এঁরা ছাড়াও যাঁরা মাঠে নেমেছিলেন, তাঁরা হলেন কালী ব্যানার্জি, বিকাশ রায়, অসিতবরণ, অনুপ কুমার, তরুণ কুমার, বীরেন চ্যাটার্জি, এন বিশ্বনাথন এবং অনেকেই। পরিচালকদের মধ্যে সত্যজিৎ রায়, অজয় কর, অসিত সেন, সুধীর মুর্খাজি এবং প্রযোজক প্রমোদ লাহিড়ী। সৌমিত্র চ্যাটার্জি তাঁর আউট সম্পর্কে রীতিমত সন্দেহ প্রকাশ করেন, বলটি ছিল বিশ্বজিতের। আম্পায়ার পাহাড়ী সান্যালকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এল ডবলিউ।
খেলার শেষে পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। বেশী রান এবং বেশী উইকেট সংগ্রহের পুরস্কার ছিল দুইটি মার্ফি রেডিও। ৮টি উইকেটের থলি নিয়ে দিলীপ মুখার্জি পেলেন একটি এবং আর একটির জন্য ব্যবস্থাপকদের রীতিমত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হয়। কারণ ইন্দর সেন এবং অজয় বিশ্বাস(দুজনেই সহ পরিচালক) দুজনেই ৩৮ রান করেছেন, কাকে দেওয়া হবে? মাথা ঘামাতে দেখলাম সত্যজিত রায়, ছবি বিশ্বাস, অসিত চৌধুরী, মধু বোস প্রমুখদের। অবশেষে ইন্দর সেনকেই দেওয়া হয়। স্মারক পুস্তিকা বিক্রয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার একটি গীটার কিন্তু বিজয়িনীর সংখ্যা পাঁচ (সুলতা, রুমা, অনুভা, শর্মিষ্ঠা, গৌরী। অবশেষে নীলামে চড়িয়ে গীটার সমস্যার ফয়শালা হয়। প্রাপ্ত দেড়শোটি টাকা সাহায্য তহবিলেই তাঁরা দান করেন।
|
|
দুই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়, অধিকাংশই আপনার চেনা মুখ। |
সবশেষে খেলার ফলাফলটা জানিয়ে দিই। সত্যজিৎ রায় টসে জিতে বিপক্ষ দলকে ব্যাট করতে পাঠান। খেলা হয় ম্যাটিং উইকেটে। একটিও ওভার বাউন্ডারী হয়নি। ছবি বিশ্বাসের দল ১৩ উইকেটে ১০১ রান করেন। সত্যজিৎ রায়ের দল ৭ উইকেটে ১২৪ রান করে খেলা জেতেন। কত উইকেটে তা বলা সম্ভব নয়। আম্পায়ার ছিলেন হেমেন্দ্র, পাহাড়ী সন্যাল, শানুবাবু এবং রণজিৎ সিংহ, ধারাবিবরণী দেন কমল ভট্টাচার্য ও অজয় বসু।
খেলা দেখে ফিরছি এক বৃদ্ধা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “হ্যাঁ বাবা উত্তমকুমার খেলচিল?” বললাম না। যেন অষ্টগ্রহের ফাঁড়া কাটল এমনভাবে বললেন, “যাক পোড়ারমুখীটার পাল্লায় পড়ে ভাগ্যিস যাইনি!” |
ফিরে দেখা... |
|