|
|
অষ্টগ্রহ সমাবেশের ভয়ে বহু লোক দিশাহারা
(স্টাফ রিপোর্টার) |
|
|
|
গুজবের শেষ নাই,মনে যাহা আছে নির্ভয়ে বলিয়া যাওয়ার দিন। শ্রোতারও অভাব নাই। বরাত ভাল হইলে ফাউ হিসাবে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাধিয়া যাইতে পারে। মরণ-বাঁচনের প্রশ্ন ত!
শুক্রবার অফিসে মিনিটে মিনিটে টেলিফোন ধরিয়া একটিমাত্র ধারণা হইয়াছেপৃথিবী হইতে প্রায় এক কোটি মাইল ঊর্ধ্বে মহাকাশে অষ্টগ্রহ সমাবেশের পরিণতি কি হইবে জানি না, তবে কিছু লোক তাহার আগেই দিশাহারা হইয়া উঠিয়াছেন।
সেই দিনটি উপস্থিত হইয়াছে। আজ শনিবার ২,৮৪১ বৎসর পরে মহাকাশে আটটি গ্রহের সমাবেশ হইতেছে। ফল অনেক কিছু হইতে পারে মৃত্যু, বিভীষিকা, মহাপ্রলয়, ভূমিকম্প-এমন কি, দ্যুলোক ভূলোকে নামিয়া আসিতে পারে কিংবা পৃথিবী টুকরো টুকরো হইয়া ঊর্ধ্বাকাশে উৎক্ষিপ্ত হইতে পারে। জ্যোতির্বিদ এবং জ্যোতিষীদের মতভেদের ব্যাপার-বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী ইউরোপে তুষারঝঞ্ঝা ইত্যাদির দুঃসংবাদ পড়িয়া পড়িয়া বুঝিয়া গিয়াছি, বন্যায় হউক বা ভূমিকম্পে হউক, কিংবা দুর্ঘটনায় হউক আমাদের কাহারও বাঁচিবার সম্ভাবনা নাই। অদ্যই শেষ রজনী, অষ্টগ্রহের ষড়যন্ত্রে আমরা সকলেই প্রলয় প্ররোধি জলে ভাসিয়া যাইবে। |
|
“ত্রাহি মাং।” শুক্রবার কলিকাতার পার্কে পার্কে প্রার্থনার ধূম। |
কোন একটি সদাগরী অফিসে আমি একজন কনিষ্ঠ কেরাণীমধ্যবিত্ত ছা-পোষা বাঙালী। ভাবিয়াছিলাম শহর ছাড়িয়া অজ পাড়াগাঁয়ে গিয়া আশ্রয় লইব। কারণ গত মহাযুদ্ধের সময় দেখিয়াছি বোমা ভয়ে আমাদের পাড়ার সব বড়লোক বাবুরা গ্রামের দিকে ছুটিয়াছিলেন। গ্রামই নাকি নিরাপদ, কিন্তু আমার কপালই মন্দ, সপরিবারে হাওড়া স্টেশনে গিয়া দেখি, বিরাট লম্বা লাইন পড়িয়াছে। একবার মনে করিয়াছিলাম রেল কর্মচারী বা পেছনের কয়েকজন ভদ্রলোককে পান খাওয়া বাবদ কিছু দিয়া লাইনে ঢুকিয়া পড়ি। পরে ভাবিলাম, এই অন্তিম সময়ে সেই কাজও নিরর্থক। তাই আবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরিয়া আসিয়াছি। ভালই হইয়াছে, ট্রেনে চড়িলে নির্ঘাৎ দুর্ঘটনা হইত।
অন্যান্য আরও কয়েকজনের সঙ্গে গড়ের মাঠে তাঁবু খাটাইবার কথাও স্থির করিয়াছিলামযাহাতে মাথার উপর বাড়িঘর ধসিয়া না পড়ে, কিন্তু ফৌজি কর্তারা এমন নিষ্ঠুর যে, তাঁহারা মাঠে মারার এই সুযোগও দিলেন না।
বীমা করিবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই ছিল না। এক দালালের পাল্লায় পড়িয়া তাহাও মাত্র কিছুদিন আগে করিয়াছি। এই বোকামির জন্য এখন আপশোস হইতেছে। মহাপ্রলয় ঘটিলে তো আমি একা মরিব না, পুত্রকলত্র লইয়াই মরিব। আমার অছি কে হইবে? দশ হাজার টাকাই বা কে পাইবে? আর পাওয়ার কথা ছাড়িয়া দিলাম, টাকা দিবার লোকও যে কেউ থাকবে না।
বীমার এই প্রিমিয়ামের কথা বুকে বারবার খরচ করিয়া বিঁধিতেছে। যদি কোন কারণে দৈবাৎ বাঁচিয়া যাই, তাহা হইলে জানি, বীমা কোম্পানীর মুখে হাসি ফুটিবে। তবে সম্পাদক মহাশয়, মনে মনে একটিমাত্র বিষয় বড় আহ্লাদ হইতেছে। প্রতি মাসের পাঁচ তারিখে বেতন পাই, যদি মরি, এইবার আর সেই টাকা পাইতে হইতেছে না। এবং কাজে কাজেই মুদির দোকানের দেনা, ঘরের ভাড়া, ইস্কুলের বেতন, গয়লার বিল, কিছুই শোধ করিতে হইবে না। অন্তত একবারও যে উহাদের হাত হইতে উদ্ধার পাইব, ভয় হইতে তো বটেই, ভাবযন্ত্রণা হইতেওএই কথা চিন্তা করিয়া বড়ই তৃপ্তি পাইতেছি। আমার কাছে তাই ‘শেষের সে দিন’ তত ভয়ঙ্করও মনে হইতেছে না।
আর বিশেষ কিছু লিখিবার নাই। আপনি আমার শতকোটি নমস্কার জানিবেন। বিদায়। ইতি।
পুনশ্চ। আর একটি কথা হঠাৎ মনে পড়িল। বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের আমিও একজন প্রতিনিধি। আমার পক্ষে এত হা হুতাশ মানায় না। নানারকম লাঞ্ছনায় যে মরিয়াই আছে, তাহার আর নূতন করিয়া মরিবার ভয় কি? |
ফিরে দেখা... |
|