|
বারুইপুরের ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো |
বারুইপুরের ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপ্রতিমাকে গণেশ জননী রূপে পুজো করা হয়। এলাকার মানুষের কাছে এই বাড়ির পুজো শিবানী পীঠ নামে খ্যাত।
রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন পুজোর শুরু। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। এ বাড়িতে পুজোয় রুই মাছ উত্সর্গ করা হয় বলির বদলে। কুমারী পুজো এবং সধবা পুজোও হয় এখানে। পুজোর তিন দিন দুপুরে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। দশমীর দিনই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় বাড়ির পুকুরে। |
|
মালঞ্চের ব্রহ্মচারীবাড়ির দুর্গাপুজো |
সোনারপুরের মালঞ্চের ব্রহ্মচারী বাড়ির দুর্গাপুজো বৃহন্নন্দিকেশ্বর মতে অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপ্রতিমার এখানে মহিষাসুরমর্দিনী রূপ। ঠাকুর দালানে কাঠামো পুজো দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয় জন্মাষ্টমীর দিন।
বোধনের মাধ্যমে মূল পুজো-পর্ব শুরু হয়। ঠাকুরদালানে বেলমঞ্চের সামনে সম্পন্ন হয় নবপত্রিকা স্নান পর্ব। নবমীর দিন মাটি দিয়ে বেদি তৈরি করে চালকুমড়ো, আম ও কলা বলি দেওয়া হয়। বলিদান-পর্ব শেষ হলে ওই বেদির মাটি দিয়ে কাদা মাখামাখি করে এক বিশেষ খেলা হয়, সে এক বিশেষ পর্ব। দশমীর দিন দেবীকে পান্তা ভোগ নিবেদন করে, ওই দিনই বিকেলে বাড়ির ছেলেরা প্রতিমা কাঁধে করে মালঞ্চের গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে আসেন। |
|
বিবেকনগর পালবাড়ির দুর্গাপুজো |
৭৪ বছর আগে পুর্ববঙ্গের কুমিল্লা জেলার মোহনপুর গ্রামে কামিনীকুমার পাল এই পুজো শুরু করেন। পেশায় ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন, কিন্তু পরে ব্যবসা শুরু করায় তিনি নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। তবে পুজো ওই গ্রামেই হত। ১৯৫০ সালে কামিনীবাবু কলকাতায় স্থায়ী ভাবে ঘাঁটি গাড়েন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই বাড়িতেই পুজো হয়ে আসছে।
ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় কাঠামো পুজো করে আগে বাড়িতেই ঠাকুর বানানো হত, এখন বাইরে থেকে প্রতিমা আনা হয়। এখানে দুর্গার বাঁ দিকে গণেশ থাকেন। সন্ধিপুজো হয় না, তবে অর্ধরাত্রি পুজো হয় অষ্টমীর রাতে। অর্ধরাত্রি পুজোর বৈশিষ্ট্য, চালের গুঁড়ো দিয়ে একটি মানুষের আদল তৈরি করে তাকেই বলি দেওয়া হয়। প্রতি সন্ধেবেলায় আরতির সময় শীতল ভোগ— মিষ্টি, লুচি, হালুয়া দেওয়া হয়। আগে পুজোর চার দিনই এলাকার মানুষজনকে খাওয়ানো হত, এখন সেটা এক দিনে নেমে এসেছে।
মাতৃমূর্তি বিসর্জন দিয়ে আসার পর পরিবারের সবাই মিলে এক জায়গায় বসা হয়। পুরোহিত মহাশয় সবার হাতে অপরাজিতা ফুলের লতা এবং হলুদ কাপড় দিয়ে বালা পরিয়ে দেন।
|
সোনারপুরের চক্রবর্তীবাড়ির পুজো |
দক্ষিণ গোবিন্দপুরের লাঙলবেড়িয়ার চক্রবর্তীবাড়ির পুজো এ অঞ্চলে বেশ বিখ্যাত। লোকমুখে প্রচলিত, এই পারিবারিক পুজোর বয়স দু’শো বছরেরও বেশি।
অষ্টমী পুজোর দিন বলির প্রথা থাকলেও তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু দিন। কিন্তু নিয়ম অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ক্ষীরের পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। সপ্তমী ও নবমীতে ভোগ হিসেবে মাছ নিবেদন করা হয়। অষ্টমীতে নিরামিষ আর দশমীতে পান্তা ভোগ দিয়ে মাকে বিদায় জানানো হয়।
প্রথা অনুয়ায়ী পরিবারের সদস্যেরাই মা দুর্গাকে কাঁধে করে বাড়ির পুকুরে বিসর্জন দিয়ে আসেন। |
|
বারুইপুরের রায়চৌধুরীবাড়ির পুজো |
|
পারিবারিক এই পুজোটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ‘জমিদারবাড়ির পুজো’ হিসেবে বিখ্যাত।
রথের দিন জমিদারবাড়ির রথ চলে যাওয়ার পর ঠাকুর দালানে কাঠামো পুজো শুরু হয়। নবপত্রিকা স্নান করানো হয় দুর্গাদালানেই। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত ছাগ বলি হয়। অষ্টমীর দিন বলি দেওয়া ছাগটি রায়চৌধুরী পরিবারের নায়েবদের দান সামগ্রী-সহ দেওয়া হয়। নবমীর ছাগ দান সামগ্রী-সহ দেওয়া হয় কামারকে।
এ বাড়িতে সন্ধিপুজো হয় বোমা ফাটিয়ে।
প্রসাদ পাওয়ার জন্য গ্রাম থেকে ‘প্রজা’রা আজও জমিদারবাড়ির প্রাঙ্গণে আসেন। দশমীর দিন গ্রাম থেকে বাহকরা এসে কাঁধে করে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যান গঙ্গায়। দেবীকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর মাথায় রুপোর ছাতা ধরা হয়। পাখার হাওয়া করা হয় প্রথা মেনে। বিসর্জনের পর দু’টি নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয় আজও। এটাই দস্তুর যে!
|
সাউথ গড়িয়ার হালদারবাড়ির পুজো |
|
বারুইপুর থানার সাউথ গড়িয়া গ্রামে আশুতোষ হালদার মহাশয় ১৯০৭ সালে বৈষ্ণব মতে দুর্গাপুজো শুরু করেন।
বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ার দরুণ ঠাকুরকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় এখান। অষ্টমীর দিন গ্রামের সবাইকে নিমন্ত্রণ করে লুচি ভোগ খাওয়ানো হয়। দশমীর দিন দেবীকে নিবেদন করা হয় পান্তা ভাত ও কচুশাকের ভোগ। |