দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ থেকে ২০ অক্টোবর ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

শুক্রবার, ৪ঠা আশ্বিন, ১৩৬৯ (৩০শে ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, SEPTEMBER 21, 1962
• পূজা মরশুমে ফেরিওয়ালাগণ কর্তৃক ফুটপাত ব্যবহার: পূজা মরশুমে ফুটপাত ব্যবহারে ফেরিওয়ালাদের স্বাধীনতা থাকিবে কিনা? — এই প্রশ্নে কর্পোরেশন ও পুলিস কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানা পোড়েন সুরু হইয়াছে। পুলিস কমিশনার কর্পোরেশনের কমিশনারকে নাকি জানাইয়াছেন যে, ফুটপাত ব্যবহারের জন্য কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যে হারে সংশ্লিষ্ট ফেরিওয়ালাদের অনুমতি দিতেছেন তাহাতে পূজার সময় যানবাহন চলাচল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হইয়া পড়িতে পারে। কর্পোরেশনের কমিশনার শ্রী এস বি রায় ঐ চিঠির একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট টাউন প্ল্যানিং এ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী গণপতি সুরের নিকট পেশ করিয়াছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের ইঞ্জিনিয়ারগণ ফেরিওয়ালাদের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি ফি বাবদ দশ টাকা গ্রহণ করিতে রাজি হইতেছেন না।
এ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার স্ট্যান্ডিং টাউন প্ল্যানিং এ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী গণপতি সুর জানান যে, ফুটপাত ব্যবহারের ব্যাপারে পুলিসের বাধা দিবার কোনও অধিকার নাই। কারণ কর্পোরেশনে গৃগীত প্রস্তাব অনুযায়ীই তিনি টাউন প্ল্যানিং এ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি সংশ্লিষ্ট ফেরিওয়ালাদের অনুমতি দিতেছেন। ফেরিওয়ালাদের জনৈক মুখপাত্র আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধির নিকট জানান যে, কতকগুলি ক্ষেত্রে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও পুলিস ফেরিওয়ালাদের ফুটপাতে বসিবার অধিকার দিতেছে না। উক্ত মুখপাত্র বলেন যে, দুই একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে কোন চূড়ান্চ সিদ্ধান্ত গৃহীত না হইলে কয়েক হাজার ফেরিওয়ালাকে অশেষ দুর্ভোগের সম্মুখীন হইতে হইবে।


কলিকাতায় ন্যায্য মূল্যের মাছের দোকান: কলিকাতা কর্পোরেশনের বাজারগুলিতে মাছের ন্যায্য মূল্যের দোকান বসাইবার সিদ্ধান্ত হইয়াছে। প্রতি বাজারে এক অথবা একাধিক ন্যায্য মূল্যের দোকানে বসানো হইবে। আরও জানা যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের হইতে মাছ আমদানীর চেষ্টা চলিতেছে। ২২শে সেপ্টেম্বর খুলনায় এই ব্যাপারে ত্রিপাক্ষিক এক বৈঠক হইতেছে। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানের মত্স্য দপ্তরের প্রতিনিধিগণ ছাড়া শুল্ক বিভাগ ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এব ইন্ডিয়ার পক্ষ হইতে প্রতিনিধিগণ রহিবেন। সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান হইতে কলিকাতায় মাছ আমদানী সম্পর্কে ঐ বৈঠকে আলোচনা হইবে। মত্স্য বিভাগের জনৈক মুখপাত্র জানান যে, এক শ্রণীর কাণ্ডজ্ঞানহীন মত্স্য ব্যবসায়ীর কারসাজি সম্বন্ধে তাঁহারা সম্পূর্ণ অবহিত আছেন। ঐ শ্রেণীর ব্যবসায়ীকে এড়াইয়া রাজ্যের ভিতর ও বাহির হইতে মাছ সংগ্রহের জন্য তাঁহারা চেষ্টা করিতেছেন। ইতিমধ্যে তাঁহারা অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যের সরকারের নিকট হইতে এই ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাইয়াছেন। তিনি আরও জানান যে, মজার ব্যাপার এই যে, কিছুদিন হইতে কিছু লোক তাঁহার পিছু লাগিয়াছে। এই সব লোক ব্যবসায়ীদের পক্ষ হইতে মত্স্যমন্ত্রীর গতিবিধি ও কথাবার্তার উপর লক্ষ্য রাখিবার জন্য নিযুক্ত হইয়াছে বলিয়া তিনি সন্দেহ করেন।

• পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যার চাপ: পশ্চিমবঙ্গের লোকসংখ্যার পাঁচ ভাগের প্রায় এক ভাগ বৃহত্তর কলিকাতায় ভিড় করিয়াছে। লোকগণনার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করিয়া রাজ্যের সেন্সাস সুপারিন্টেন্ডেন্ট এই তথ্য জানান। অবিলম্বে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে এখানে নাগরিক জীবন পর্যদুস্ত হইবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। কলিকাতা এবং হাওড়ার পৌর এলাকা সহ আশ-পাশের ৫৫৪ বর্গমাইলে লোকসংখ্যা ৬৮৫২৬৯৫। আয়তনে কিন্তু এই এলাকা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ৯.৬৪ ভাগ। কিন্তু এখানে রাজ্যের অকৃষি শ্রমজীবির শতকরা ৪.১ জন কাজ করে। এবং মোট লোকসংখ্যার ১৯.৬% জনেরই বাস এই অঞ্চলে। শুধু এবং হাওড়ায় এই রাজ্যের অকৃষি শ্রমিকের শতকার ২৫.৬ জন কাজ করে। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরের মোট ৮৫৪০৮৪২ জনের মধ্যে এই এলাকাতেই ৫৯২০০০২ জনের বাস। রাজ্যের মোট শহুরে লোকসংখ্যা ইহা শতকরা ৬৯.৩১ ভাগ। প্রশ্ন উঠিয়াছে, শহর উণ্ণয়নে কাহাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে। কলিকাতার বাহিরে যাও, ক্রমাগত এই প্রচার সত্ত্বেও মহানগরীতে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে নাগরিক জীবন সমস্যা সঙ্কুল। রাজ্যের সেন্সাস সুপারিন্টেন্ডেন্ট শ্রী জে সি সেনগুপ্ত ১৯৬১ সালের সেন্সাস রিপোর্টের শিল্পাঞ্চল ভিত্তিক বিশ্লেষণ করিতেছেন। তিনটি এলাকার বিশ্লেষণ হইবে। ইহা প্রথম। কলকাতা এবং হাওড়া পৌর এলাকা সহ বারুইপুর, নৈহাটী, জগদ্দল, নোয়াপাড়া, ব্যারকপুর, টিটাগড়, খড়দহ, বরানগর, দমদম, মেটিয়াবুরুজ, টালিগঞ্জ, বেহালা, মহেশতলা, বজবজ, উলুবেরিয়া, বাউরিয়া, সাঁকরাইল, ডোমজুড়, জোগাছা, বালি, হুগলী, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বর, চুঁচুড়া, চন্দননগর, মগড়া এই ২৬টি থানা লইয়া আলোচ্য শিল্পাঞ্চলটি ধরা হইয়াছে। এখানে কোনও থানাতেই একৃষি শ্রমিকের সংখ্যা শতকরা ৬৫ ভাগের কম নয়। এখানে প্রতি বর্গ মাইলে ১০৭০ জনের বাস।

রবিবার, ৬ আশ্বিন, ১৩৬৯ (১ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, SEPTEMBER 23, 1962
• পেশাদার ‘কিউ’দার: পূজা মরশুমের ভিড়ে রেলের টিকিটের লাইনে দাঁড়ানর জন্য একদল পেশাদার লোক তত্পর হইয়াছে। পয়সার বিনিময়ে ইহারা টিকিট কাটিয়া দেয়। কালোবাজারে টিকিট বিক্রীর অভিযোগও আছে। শুক্রবার বিকালে শিয়ালদহ স্টেশনের টিকিটঘরের সামনের মেঝেতে সারি সারি নামের শ্লিপের লম্বা লাইন দেখিলাম। যাত্রীরা সারারাত ঐ লাইনে দাঁড়াইয়া পরদিন ভোরে টিকিট কাটিবেন। অবস্থা এখন এমন যে দিনের বেলায় ঐ শ্লিপের সাহায্যে লাইনে স্থান সংরক্ষণ করা হইয়াছে। এই ভদ্রলোকের চুক্তি না মানিলেই গোলমাল। পূর্ব রেলের বিভিন্ন ট্রেনের মোট ৬৫৫টি বসিবার এবং ৮৪৫টি শুইবার আসনের টিকিট বিক্রী শুরু হওয়ামাত্রই শষ হইয়া যায়। বোম্বাই এবং মাদ্রাজ মেলের অবস্থাও তথৈবচ। আনন্দবাজার পত্রিকার হাওড়া অফিস হইতে প্ররিত এক বিবরণে প্রকাশ, এবার দূর্গাপূজাবকাশে কমপক্ষে একলক্ষ যাত্রী ইস্টার্ন এবং সাউথ ইস্টার্ন রেলে হাওড়া এবং শিয়ালদহ হইয়া আগামী ৪ঠা ও ৯ই অক্টোবরের মধ্যে বর্হিভ্রমণে বাহির হইবেন বলিয়া রেল কর্তৃপক্ষ অনুমান করিতেছেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য ইস্টার্ন রেলওয়ে ১০টি এবং সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে ৩টি বিশে, ট্রেন আগামী ৪ঠা হইতে ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে ছাড়িবার ব্যবস্থা করিয়াছেন। ট্রেনগুলিতে কেবলমাত্র প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণীর বগী থাকিবে এবং কোন শ্লিপিং কোচের ব্যবস্থা থাকিবে না।

• লীগ ও শীল্ড বিজয়ী মোহনবাগান
মোহনবাগান— (৩) (এন পুরকায়স্থ—২, অরুময়)
হায়দরাবাদ (১) (রহমন— নিজ গোল)
শনিবার বিপুল দর্শক সমাগমের মধ্যে আই এপ এ শীল্ড ফাইনালে কলিকাতার জনপ্রিয় লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান ক্লাব হায়দরাবাদ একাদশকে ৩-১ গোলে পরাজিত করিয়া তিনবার শীল্ড বিজয়ের গৌরব অর্জন করিয়াছে। এই বত্সর লীগ ও শীল্ড বিজয়ী হইয়া মোহনবাগান মোট চারিবার ‘ডবল’ লাভের কৃতিত্ত্ব অর্জন করিল। ইতিপূর্বে ১৯৫৪, ১৯৫৬ ও ২৯৬০ সালে তাহারা এই গৌরবের অধিকারী হইয়াছিল। মোহনবাগান ও হায়দরাবাদের খেলাটি ইদানীংকালের শীল্ড ফাইনালের ‘শ্রেষ্ঠ ম্যাচ’ হিসাবে অভিহিত করা যায়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও প্রবল উত্তেজনার মধ্যে উভয় দলের উন্নত ক্রীড়ামান দর্শকদের প্রভূত আনন্দ দান করে।
১৯৫৪ সালের শীল্ড ফাইনালে মোহনবাগান হায়দরাবাদ স্পোর্টিংকে পরাজিত করিয়া প্রথম ‘ডবল’ লাভ করিয়াছিল। আবার ১৯৬২ সালে সেই হায়দরাবাদের দলকে পরাজিত করিয়া অষ্টমবার শীল্ড বিজয়ীর গৌরবের সঙ্গে ভারতীয় দল হিসাবে নতুন রেকর্ড করিল। ইতিপূর্বে কোন ভারতীয় দল আটবার শীল্ড লাভের গৌরব অর্জন করে নাই। একমাত্র বিদেশী দল হিসাবে ক্যালকাটা নয়বার শীল্ড লাভ করিয়াছে।
প্রায় ৪৮ ঘণ্টা প্রবল বারিবর্ষণ ও শুক্রবার বৈকাল হইতে সারা রাত্রিব্যাপী ঝড় হওয়া সত্ত্বেও মাঠের অবস্থা খারাপ হইয়াছে বলিতে পারি না। মাঠ নরম ছিল, কিন্তু জল বা কাদার চিন্হ কোথাও ছিল না। শক্ত মাটিতে খেলিতে অভ্যস্ত হায়দরাবাদ দলের কাছে এইরূপ মাঠ কিছুটা নতুন। দীর্ঘদিন পর তাহারা বাংলার মাটিতে খেলিতেছে। তবুও মাঠ উন্নত ক্রীড়াধারার পথে যে বাধা সৃষ্টি করিয়াছে একথা বলিতে পারি না।

বুধবার, ৯ আশ্বিন, ১৩৬৯ (৪ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, SEPTEMBER 26, 1962
• হাওড়া স্টেশনে বহির্গামী যাত্রীর ভিড়: পূজার ছুটিতে বাহিরে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই হাওড়া স্টেশনে ভিড় শুরু হইয়াছে। যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা করিয়াছেন, তাহার সুযোগ গ্রহ করিতে লোককে হিমসিম খাইতে হইতেছে। তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের দূর্দশার সীমা নাই। আসন রিজার্ভেশনের আশায় ভোররাত্রে যাত্রীরা লাইন দিয়া দাঁড়ায়। হুড়াহুড়ি পড়িয়া যায় যাত্রীসাধারণের মধ্যে। এমন অবস্থা হয় যে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় পরও তাঁহার ভাগ্যে আসন একটিও জুটে নাই। অবশেষে বিফলমনোরথে স্টেশন ত্যাগ। এমন যাত্রীও আছেন, যাঁহারা পরপর দুই তিন দিন গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিয়াছেন।
কারণ সুস্পষ্ট। আসন সংখ্যা যেখানে একটি ট্রেনে ৭৫টি, সেখানে হাওড়া স্টেশনের জন্য নির্দিষ্ট আছে ৩৫ কি ৪০। প্রর্থীর সংখ্যা হয়তো দুইশত কি ততোধিক। এই ভাবে শেষ পর্যন্ত কিউ দিয়া অপেক্ষা করিয়াও কোন ফল হয় না। অতঃপর ধৈর্যচ্যুতি। গত ২২শে সেপ্টেম্বর হইতেই আসন রিজার্ভেশন প্রর্থীর ভিড় সুরু হয়। দিল্লি-কালকা মেল, বোম্বাই মেল, পাঞ্জাব মেল, তুফান এক্সপ্রেস, জনতা ও ডি-লুক্স-এর যাত্রীর ভিড়ই সর্বাপেক্ষা বেশী। শিয়ালদহ-পাঠানকোট এক্সপ্রেস-এর ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীও অনেক বৃদ্ধি পাইয়াছে।

বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৬৯ (৫ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, SEPTEMBER 27, 1962
• মহালয়া উপলক্ষে বিশেষ বেতার অনুষ্ঠান: বৃহস্পতিবার শেষ রাত্রী ৪টার সময় কলিকাতা বেতার কেন্দ্র হইতে ৪৪৭.৮ মীটারে দূর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান—মহিষাসুরমর্দিনী। রচনা ও প্রযোজনা— বানীকুমার। আবৃত্তি ও চণ্ডীপাঠ — বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সংগীত — পঙ্কজ মল্লিক। অংশগ্রহণে — সুমিত্রা সেন, বাঁশরী লাহিড়ী, সুপ্রীতি ঘোষ, কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, প্রতিমা বন্দ্যোঃ, গৌরী মিত্র, অসীমা ভট্টাঃ, দ্বিজেন মুখোঃ, তরুণ বন্দ্যোঃ, অখিলবন্ধু ঘোষ, শৈলেন মখোঃ, শ্যামল মিত্র, অরুণ ঘোষ, অম্বুজ মল্লিক, রবীন্দ্র বন্দ্যোঃ, প্রভাত মিত্র, রবীন বসু ও সন্ধ্যা মুখোঃ।

শুক্রবার, ১১ আশ্বিন, ১৩৬৯ (৬ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, SEPTEMBER 28, 1962
• পূজা কদিন ? বিজয়া কবে ?... নানা মুনির নানা মত: এ বছরে বিজয়া দশমীর দিন লইয়া পঞ্জিকা বিশারদদের ভিতর বিবাদ চলিতেছে। গুপ্তপ্রেস ও পি এম বাগচির ভাষ্য অনুযায়ী ১৯-এ, ২০-এ এবং ২১-এ আশ্বিন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সপ্তমী, অষ্টমী ওনবমী পূজার সময় নির্ধারিত। ২১-এ আশ্বিন, ৮ই অক্টোবর, সোমবার নবমীর দিনেই দশমী কৃত্যের বিধান দেওয়া আছে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্তের বিধান কিন্তু অন্যরূপ, পূজার সময়ও যথেষ্ট।
আলিপুরে ভারত সরকারের নটিকেল এলমানাক বিভাগের কর্তা শ্রী লাহিড়ীর অভিমত, নবমীর দিন দশমীর তিথি শুরু হইলেও ২২-এ আশ্বিন, ৯ই অক্টোবর, মঙ্গলবার দুপুর ১২-৩০ মিঃ পর্যন্ত থাকিবে। সুতরাং ৯ই অক্টোবর সকালে কৃত্যাদি সারিয়া বিকালে বিসর্জন চলিতে পারে। আর পূজার সময় অল্প থাকিলেও বাধা নাই, নির্দিষ্ট ক্ষণের মধ্যে সংকল্প মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া ফেলিলেই তিথির পরিবর্তনে পরে কিছু যায় আসে না।

বুধবার, ১৬ আশ্বিন, ১৩৬৯ WENESDAY, OCTOBER 3, 1962
• প্রাক-পূজা পালা: কলকাতা “পালাচ্ছে”
(বিশেষ প্রতিনিধি) বাবু সাহেব টিকিট!
—ইয়ে বাবু টিকিট!
—টিকিটবাবু টিকিট!
—জজ ম্যাজিস্ট্রেট টিকিট!
—টিকিট! —টিকিট! —টিকিট!
—পড়ল যদি গড়বেতায় পড়বে না কী কলকাতায়! বলতে বলতে ছড়ার বোমাপালান মানুষগুলো যেমন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল টিকিটঘরের জানলার অবিকল যেন সেই দৃশ্য। হাওড়ায়, শিয়ালদহে, দমদমে এবং সম্ভবত গঙ্গার কম-নামী ঘাটগুলোতেও, জলে স্থলে সর্বত্র।
রেল জানলা খুলেছে গেল ২২শে থেকেই। আগামী ১৬ই অবধি তার আঙ্গিনার কুস্তির সেই আখড়া চালু থাকবে। ইতিমধ্যে দমদম বাড়তি উড়োজাহাজ তলব করেছে। পলকে বালীগঞ্জের ভীড় বাগডোগরায় চালান হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা তবুও যেমনি ছিল তেমনি আছে। এখনও ‘টিকিট’ ‘টিকিট’ করে তেমনই সে হাত পা ছুড়ছে। কেননা এখনও সময় আছে। স্কুল কাছারি ছুটি হয়ে গেছে বটে কিন্তু সরকারী আর সওদাগরী আফিসগুলো এখনও সবুজ নিশান দেখায় নি, পকেটে মাইনে গুঁজে দিয়ে দিয়ে খেলা দেখছে। ফলে হাওড়া এখনও দৈনিক ৫০ হাজারের কোঠা ছাড়াতে পারে নি। ডালহৌসি পাড়ায় ঘরে ঘরে দম দেওয়া পুতুল গুলো ছাড়া পাওয়া মাত্র এক লাফে সে লাখে পৌঁছাবে। কলকাতা তখন মানে আর ক’ঘণ্টা পরেই—দৈনিক লাখ হিসেবে পালাবে। কেন না, পুতুলের পিছু পিছু খুকুরাও তখন পলাতক। কনিষ্ঠ কেরানীর আগে আগে পা ফেলে বড় বাবুরাও।

বৃহস্পতিবার, ১৭ আশ্বিন, ১৩৬৯ THURSAY, OCTOBER 4, 1962
• ‘শ্রীরাধার’ জলযাত্রা: বুধবার কাশীপুর জেটি হইতে ‘শ্রীরাধার’ জলযাত্রা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণ মন্ত্রী শ্রীশঙ্কর দাস বন্দোপাধ্যায়ের পত্মী শ্রীমতি ইলা বন্দোপাধ্যায় একটি নারিকেল ভাঙ্গিয়া এই শুভযাত্রার উদ্বোধন করেন। ২৪৫ টনের মালবাহী স্টীমার শ্রীরাধা। ১৪২ ফুট দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ২২ ফুট, ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি গভীরতা।
কাশীপুর ইস্টবেঙ্গল ইঞ্জিনীয়ারিং ওয়াকার্সের কারখানায় এই স্টীমারটি তৈয়ারী করিতে ব্যায় হইয়াছে ৩ লক্ষ টাকা। বাণিজ্যপোত ‘শ্রীরাধা’ বাংলা হইতে আসামে পণ্য লইয়া যাওয়া আসা করিবে। সার্ভিসটি পরিচালনা করিবেন ‘ইস্টবেঙ্গল রিভার স্টীম সার্ভিস’।

শুক্রবার, ১৮ আশ্বিন, ১৩৬৯ FRIDAY, OCTOBER 5, 1962
• ‘কলকাতা পালাচ্ছে’: বৃহস্পতিবার প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী হাওড়া স্টেশন ত্যাগ করেন। এই দিন পূজার ছুটিতে যাত্রীদের ভীড় সুরু হয়। রেল-কর্তৃপক্ষ চারটি স্পেশ্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেন। তন্মধ্যে তিনটি হাওড়া ও একটি শিয়ালদহ স্টেশন হইতে ছাড়ে। আজ শুক্রবার অফিস, আদালত, ব্যাঙ্ক এবং সওদাগরী সংস্থাগুলিতে পূজার ছুটি সুরু হইবে। শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে ভিড়ও বাড়িবে। দুইটি স্টেশনে এই দিন ছয়টি স্পেশ্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা হইয়াছে।

• কলিকাতায় সার্বজনীন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি: এ বত্সর কলিকাতায় সার্বজনীন পূজার সংখ্যা গত বারের তুলনায় ৬ ভাগের মত বাড়িয়াছে। গত বত্সর ছিল ৬১২, এবত্সর সংখ্যা বাড়িয়া দাঁড়াইয়াছে সাড়ে ছয়শতে। পূজার কয়েকদিন সার্বজনীন পূজা মন্ডপগুলির কাছাকাছি রাস্তায় যে আলোর ব্যবস্থা আছে, তাহার উন্নতিসাধনের বন্দোবস্ত হইয়াছে। পূজার তিনদিন শান্তিরক্ষার ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ৬ হাজার পুলিস কলিকাতার কাজে বহাল করা হইতেছে। প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন পুলিসের সংখ্যা বাড়াইয়া ১০ হাজার করা হইবে। ১১টি বৃহত্ পূজা মন্ডপের মধ্যে ৯টি মন্ডপের কাছে টেলিফোনের সুবিধাসহ পুলিসের তাবু বসানোর ব্যবস্থা হইয়াছে। পূজার চারদিন সন্ধা ৬টা হইতে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা চলিবে। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর লালবাজারে পুলিস কমিশনারের সঙ্গে ইলেকচ্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন, গ্যস কোম্পানী, পোর্ট কমিশনার্স, ফায়ার ব্রিগেড প্রভৃতির পক্ষে প্রতিনিধিগণের যে বৈঠক হইয়া গিয়াছে সেই বৈঠকে ঐ সব ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত লওয়া হয়।

বাগবাজার সার্বজনীন পূজা প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার পত্রিকার উদ্যোগে
আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে দর্শকের ভীড়। —আনন্দবাজার চিত্র


• শিয়ালদহে অস্বাভাবিক যাত্রীর ভীড়:
বৃহস্পতিবার পঞ্চমীর দিন শিয়ালদহের খবর: বহিরাগত যাত্রীদের ভীড় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। বিকাল তিনটায় একটি স্পেশাল ট্রেন বারৌনী যাত্রা করে। লোকাল ট্রেনগুলির ভীড় আরও বেশী হয়। শহরতলীর হাজার হাজার লোক আসে—পূজার শেষ বাজারের জন্য। অধিক রাত্রি পর্যন্তস্টেশন এলাকা জমজমাট থাকে। ঐদিন দুপুরে বেলঘরিয়া স্টেশনে একটি আপ ট্রেন বিলম্বে পৌছিলে একদল উচ্ছৃঙ্খল যাত্রী ঐ ট্রেনের গার্ডকে প্রহার করে। ফলে গার্ড আহত হয়। রেল পুলিস এই প্রসঙ্গে একজনকে গ্রেপ্তার করে।

• রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ছুটির আমেজ: রাইটার্স বিল্ডিংএ পূজার ছুটি সুরু হইয়াছে। বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন হইতেই মন্ত্রী, অফিসার এবং আমলারা ঘরমুখী। এইদিন কাজে যেন আর মন বসে না। শুক্রবার ৫ই অক্টোবর হইতে ছুটি সুরু। খুলিবে ১৫ই অক্টোবর সোমবার। মন্ত্রীদের অনেকেই পূজায় কলিকাতায় থাকিবেন না। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন অবসর যাপনের জন্য বৃহস্পতিবার রাত্রিতে চাইবাসা যাত্রা করেন। তিনি ১৪ই অক্টোবর কলিকাতায় প্রত্যাবর্তন করিবেন। অন্যান্য মন্ত্রীদের মধ্যে কেহবা নিজ নির্বাচন কেন্দ্রে, কেহবা ভারতের বাহিরে স্বাস্থ্য নিবাসে যাইতেছেন।

রবিবার, ২০ আশ্বিন, ১৩৬৯ (১৫ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, OCTOBER 7, 1962
• সপ্তমীর কলিকাতা: শনিবার সপ্তমী পূজার দিনে কলিকাতা মহানগরী যেন উত্সবে মাতিয়া ওঠে। সকাল হইতে গভীর রাত্রি পর্যন্ত উত্সবের সমারোহ—বাঙালীর জাতীয় উত্সবে আনন্দের ঢেউ।
সংবত্সরের প্রতীক্ষার পর মা আসিয়াছেন। দুঃখ-দৈন্যের মধ্যেও তাঁ সন্তান দল মায়ের ষোড়শোপচারে পূজার আয়োজনও করিয়াছেন। প্রত্যুষ হইতে ঢাকের বাজনায় মুখর হইয়া উঠে পূজা মন্ডপ।
শরতের শুভ্র আকাশে সোনালি আলোর ঝিকিমিকি। এরি মধ্য পূজা মন্ডপে ছেলেমেয়ে ও শিশুর দল। অঙ্গে তাদের উত্সবের সাজ, মুখে তাদের উচ্ছল হাসি।
ঐ দিন কোন কোন পল্লীতে প্রভাত ফেরীও বাহির হয়। শিশু ও তরুণীদের কন্ঠে মায়ের আগমনী গান। দেবী চণ্ডীর মাহাত্মও প্রচারিত হয়।
অপরাহ্নের দিকে কোনো কোনো অঞ্চলে এক পশলা বৃষ্টি হইয়া যায়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আকাশ শুভ্র, সমুজ্জ্বল হইয়া উঠে। নীল আকাশে চলে তখন ‘সাদা মেঘের ভেলা’।—পূজার উদ্যোক্তাদের মন হইতেও উদ্বেগ চলিয়া যায়। সন্ধার কলিকাতা বিচিত্র রূপ ধারণ করে। আলোয় আলোয় ভরিয়া উঠে পূজা মন্ডপ এবং সংলগ্ন গলি ও রাস্তাঘাট। ভিড় চলে। দর্শনার্থী জনতার মিছিল চলে। দেবী দর্শনের জন্য মানুষের মিছিল। উত্তর হইতে দক্ষিণ কলিকাতা পর্যন্ত রাজপথে ভীড়, ট্রামে-বাসে ভিড়,—ভিড়, সর্বত্র ভিড়। সমগ্র কলিকাতা বুঝি নামিয়া আসে সন্ধার রাজপথে।
বার পার্কসার্কাস ময়দানের সার্বজনীন পূজায় সর্বাধিক ভিড় হয়।পূজা ও প্রদর্শনীর জন্য বিস্তীর্ণ স্থান জুড়িলেও সন্ধার দিকে মানুষ কিল কিল করে সেখানে। প্রতিমাটি অবশ্য অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখে। জনতা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য এবার এখানে সর্বাধিক সংখ্যক পুলিশ মোতায়ণ রাখা হয়। গত বছর যেখানে ছিল ৮০ জন পুলিশ, সেখানে এবার দুইজন নারী পুলিশসহ ১২০ জন পুলিশ মোতায়ণ করা হইয়াছে। পূজার উদ্যোক্তাগন আজ রবিবার অষ্টমীর দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশী হইবে বলিয়া আশা রাখেন।
বাগবাজার সার্বজনীন দূর্গোত্সব ও প্রদর্শনী স্থলে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যবস্থা ভালোই। তবে সন্ধার দিকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক আরও বেশী হইলে ভালো হয়। দেশবন্ধু পার্ক, কলেজ স্কোয়ার, গিরিশ পার্ক, বিডন স্কোয়ার, কুমারটুলী, ২৩ পল্লী, সংঘশ্রী, হাজরা পার্ক, দেশপ্রিয় পার্ক প্রভৃতি সার্বজনীন পূজা মন্ডপেও দেবী দর্শনার্থীর প্রচুর সমাগম হয়। সুদীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়া হাজার হাজার নরনারীকে দেবী দর্শন করিতে হয়। এই সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় দর্শনে বিলম্ব ঘটিলেও অনেকে ইহাকে সাধুবাদ দেন। বহু স্থানে ফুটপাথে ও রাস্তায় শক্ত বেষ্টনী রচনা করিয়া ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়।
সন্ধা হইতে প্রায় চারি ঘণ্টাকাল আসন্ন। যখন নগর পরিক্রমা করি, তখন দেবী দর্শনের জন্য মানুষের কি আগ্রহ তাহা আমরা প্রত্যক্ষ করি। আরতির সময় বাজনা ও ধূপ-ধূনার সূরভির সঙ্গে পুরোহিতের প্রার্থণামন্ত্র পূজা মন্ডপগুলিতে এক মাঙ্গলিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঢাকী নাচিয়া ঢাক বাজায়—কাঁসর ঘণ্টা বাজায় ছেলের দল। ধূনুচি লইয়া পাড়ার ছেলেরা নাচে—নাচে তারা প্রাণের আনন্দে। শারদোত্সবে বাঙালীর প্রাণ এইভাবেই নাচিয়া উঠে।
এই দিন গভীর রাত্রি পর্যন্ত পূজা মন্ডপগুলিতে দেবী দর্শনার্থীর আনাগোনা চলে। রাজপথও থাকে আনন্দমুখর। আলো ঝলমল কলিকাতায় দেবী দূর্গার সপ্তমী পূজার দিনটি এইভাবে আনন্দ ও উত্সবের মধ্যে অতিবাহিত হয়।



সি আই টি বিল্ডিং
(ক্রীস্টোফার রোড)

সুইনহো লেন
সার্বজনীন (কসবা)

গার্লস কলেজ
(হাওড়া)

১৩ পল্লী দুর্গোত্সব
(রাসল স্ট্রীট)

হেমপাল যুবক
সংঘ (বেলুড়)

সোমবার, ২১ আশ্বিন, ১৩৬৯ (১৬ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, OCTOBER 8, 1962
• অষ্টমীর কলিকাতা: ঢাকের বাদ্যি আর মাইকের গান থামতে না থামতেই, শহর কলকাতার কমবয়সী কত্তা-গিন্নী আর উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের সারারাত্তির ধরে প্রতিমা দর্শনের অ্যাডভেঞ্চার শেষ হতে না হতেই অষ্টমীর দিনটি কোথায় টুপ করে ঝড়ে পড়ল। পড় সম তেরশো উনসত্তরের সমুদ্দুরটার মধ্যে কোথায় যে হারিয়ে গেল তা কেউ জানতে পারল না। প্রতিমা দেখতে বেরুনো ফিটন চড়া বাবুরা জানলেন না, অ্যামব্যাসেডর হাঁকানো বড় সাহেব জানলেন না, যধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে যারা ফুচকা খাচ্ছিল তারা জানলো না, স্কুটারের পিছনে স্ত্রীকে চাপিয়ে টেরিলিনের শার্ট আর গ্যাবার্ডিনের ট্রাউজার পরা যে লোকটা সারা শহর চক্কর মারছিল সে জানলো না, একটি চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পাতলুন আর ঢোলা পাঞ্জাবী পরা যে ছোকরাটি পূজো প্যন্ডেলের ভির ম্যানেজ করছিল সে জানতে পারল না। শহর কলকাতার আনন্দের বাজেট থেকে দুটো দিন কথ্থেকে খরচ হয়ে গেল।
তবু অষ্টমীর কলিকাতা আবার হাসল। বরানগর থেকে গড়ে-যাদবপুরের পূজো প্যান্ডেল খোসবাইতে ম-ম করতে লাগল। শ্যামাপ্রসাদ মুখুজ্যে রোড, কলেজ স্ট্রীট, বাগবাজার জ্যাম-জমাট হল, পুলিসের বদলে পাতলুন পরা ভলেন্টিয়ারেরা হুইশেল বাজিয়ে, দড়ি ধরে ‘কচ্ছেন কি দাদু’, ‘এই শিকল দিয়ে দাদা’ বলতে বলতে একাই হাজার জনের মহড়া নিতে লাগল। আবার কলকাতার কলেজ স্ট্রীট মার্কেট, ধর্মতলা আর গড়িয়াহাটার জামা-কাপড় আর শাড়ির দোকান থেকে শাড়ি আর ফ্রকগুলো বার হয়ে তামাম শহরে কুইক মার্চ করতে লাগল। এইদিন শহরের সব অন্ধকার আলো হল, সব আলো রঙিন হল, সব রঙ মানুষের মনে এল। সবমন প্রজাপতি হল। সব মহিলাকেই সুন্দরী মনে হল।
ভবানীপুরের এক ভলেন্টিয়ার জিজ্ঞাসা করল: ‘আপনি হারিয়ে গেছেন?’ খোপায় বেলফুল গোঁজা আর ডেক্রনের শাড়ি পরা ভদ্রমহিলা বললেন: ‘না, আমার স্বামী হারিয়ে গেছেন।’ অমনি পড়ি কি মরি করে ক’জন ভলেন্টিয়ার মাইকের দিকে ছুটল। ‘সমর গুহ রায় আপনার জন্য আপনার স্ত্রী আপিসে অপেক্ষা করছেন।’ এক কাচু মাচু ভদ্রলোক(পরে জানলাম এদের সংখ্যা অনেক) ভলেন্টিয়ারকে কি বল্লেন। অমনি ঘোষণা হল: ‘ছবিরাণী মল্লিক, আপনার স্বামী আপনার জন্য—’। মুখ টিপে হেসে দুই মাস্তান জনান্তিকে বল্ল: ভদ্রমহিলাদের হারিয়ে যাওয়াটা হ্যাবিট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই শুনে আর এক জন খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে লাগল। লরি ভাড়া করে শহর বেড়ান অষ্টমীর দিনে এই প্রথম চোখে পড়ল। মহাষ্টমীর নাম বীরাষ্টমী। বীরেরা লরি করে হল্লা করতে করতে চলল। অনেক বীরাঙ্গনা তাই দেখে মুখ টিপে হাসতে হাসতে জনান্তিকে ‘দেখেছিস কী অসভ্য’ ইত্যাদি বলতে লাগল। বালিগঞ্জের এক প্যান্ডলে সাত ভাই চম্পা গান শুনে একজন বলল: ‘কি পচা গান দিচ্ছে রে!’ এইদিন সব ট্রাম-বাসগুলিই আপিস টাইমের ট্রাম-বাসের রূপ ধারণ করল, যারা প্রইভেট কারে করে প্রতিমা দেখতে বেড়িয়েছিল, তারা গাড়ি পার্ক করার জায়গা না পেয়ে ‘ড্যাম ইট, কি মিসম্যানেজমেন্ট’ ইত্যাদি বলতে বলতে চলে গেল। পার্ক স্ট্রীট আর ধর্মতলা স্ট্রীটে আলোর বাহার দেখে অনেকের চোখ ঝলসালো। বরানগরের মিলনগড়ে যাত্রার আসর বসল। মৌলালীর কাছে, সুরেন বাড়ুয্যে রোডের ওপর বিদ্যুতের আলো নানা রকম ম্যাজিক দেখাতে লাগল। পথের মোড়ে লাইট পোস্টের ওপর একদল ছেলে গোল হয়ে বসে সিগারেট ফুঁকছিল। আর লাইট পোস্টের ওপরে একটা সিনেমার বিজ্ঞাপনে লেখাছিল: ‘নটি বয়।’

• দুইদিনই প্রতিমা নিরঞ্জন: পঞ্জিকার দুই মতের জন্য এবার যেমন দুইদিন বিজয়াদশমী নির্দিষ্ট হইয়াছে, তেমনি সোম ও মঙ্গলবার দুইদিনই গঙ্গার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের ভিড় হইবে বলিয়া জানা যায়।
কলিকাতা কর্পোরেশনের মতো পুলিশ কর্তৃপক্ষও অবশ্য আগামী মঙ্গলবারই (৯ই অক্টোবর) বিজয়াদশমী তথা প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন বলিয়া স্থির করিয়াছেন। তদনুযায়ী পুলিশ কর্তৃপক্ষ ঐদিনই প্রতিমা নিরঞ্জন শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণাদির জন্য রাজপথে ও গঙ্গার ঘাটগুলিতে ব্যাপক পুলিশী ব্যবস্থার কার্যসূচী গ্রহণ করিয়াছেন।
কিন্তু প্রাচীন পঞ্জিকামতে আজ সোমবার নবমীর পরই বিজয়াদশমী নির্দিষ্ট হইয়াছে। এজন্য পুলিশমহল একটি চিন্তিত হইয়াছেন। কারণ অধিকাংশ সার্বজনীন পূজামন্ডপের প্রতিমা মঙ্গলবার নিরঞ্জন ব্যবস্থা হইলেও প্রাচীনপন্থী উদ্যোক্তাদের কিছু কিছু প্রতিমা এবং গৃহস্থবাড়ির অনেক প্রতিমা সোমবারেই গঙ্গায় নিরঞ্জনের ব্যবস্থা হইয়াছে বলিয়া পুলিশের সংবাদ। ইহাতে পুলিশকে এইদিন একদিকে নবমীর প্রতিমা দর্শনার্থীদের ভিড় এবং অপরদিকে নিরঞ্জনের শোভাযাত্রার ভিড় নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি লইতে হইবে। উপরন্তু এইদিন গঙ্গার ঘাটেও কর্পোরেশন হইতে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা হইবে না(উহা মঙ্গলবার করা হইবে)। তাই সমস্যা আরও কিছু জটিল। যাহাহউক, পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার সম্মুখীন হইবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছেন।

মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন, ১৩৬৯ TUESDAY, OCTOBER 9, 1962
• নবমীর কলিকাতা: ‘যেওনা নবমী নিশি’ বলে আর গাইতে হলনা—নবমী নিশি যেতে না যেতেই শহর কলকাতার ঢাকে বিসর্জনের কাঠি পড়ল। বারোইয়ারির প্যান্ডলে প্যান্ডেলে যখন মাইকে ‘মধুর মধুর বংশী বাজে’ গানখানি বাজতে লাগল থখন অনেক গেরস্ত বাড়ির এয়োরা শাঁখ বাজাতে লাগলেন। চালচিত্তির শুদ্ধু প্রতিমা বেদী থেকে বাইরে নামানো হল। নামানোর সময় এয়োরা উলু দিলেন। সিঁদুর খেললেন। গিন্নীরা আচল দিয়ে চোখ মুছলেন। কত্তা অমনি লরি এল কিনা দেখতে ছুটলেন। কত্তার ছেলেরা ‘কই তোমাদের সাজগোজ হল, আর দেরি কোরোনা’, ইত্যাদি বলে বৌ ঝি-দের তাড়া লাগাতে লাগলেন।
লরিতে প্রতিমা উঠল। প্রতিমার সঙ্গে ঘট উঠল। ঘটের সঙ্গে কলা-বৌ উঠল। কলা-বৌর সঙ্গে বাড়ির বউরা উঠল, বউদের সঙ্গে তাদের শাড়ি পরা মেয়েরা উঠল। পাড়ার দু’চারজন উঠল। চাঁদপাল ঘাটে চাঁদের হাট বসল। অন্যদিনের অপিসের কেরাণীরা এইদিন ঢাকী হল। ঢাকীরা হাত পা গুটিয়ে বিড়ি টানতে লাগল। হাওড়া ব্রীজ তারা হয়ে অনেকক্ষণ ধরে জ্বলছিল। আউটট্রাম ঘাটের নোঙরকরা জাহাজগুলোর মাস্তুল অন্ধকারে জোনাকি হল। জোনাকির সঙ্গে দশমীর ছোট চাঁদের খুব ভাব হল।
‘খরচ অনেক কমে গেল।’ কত্তা ভাবলেন। নবমীর দিনেই দশমী হল। ডেমারেজ চার্জ যেন বেঁচে গেল। বারোইয়ারিতলায় অনেক জায়গায় দর্পণ বিসর্জন সোমবারই হয়ে গেল। কিন্তু আর সবই ঠিক ঠাকল। প্যান্ডেল, আলো, মাইক, এমনকি প্রতিমাও। তাই নবমীর কলকাতা প্রায় নবমীর কলকাতারই রইল। গত দু’দিন যারা প্রতিমা দেখার প্রতিযোগিতায় অন্যের কাছে হেরে যাচ্ছিলেন, তারা নবমীতে ‘রেকর্ড ব্রেক’ করার জন্যউঠে পড়ে লাগলেন। রবীন্দ্র সরোবরের মানুষ এইদিন গিরিশ পার্কে এলো। শ্যামবাজার-গড়িয়াহট গেল। গড়িয়াহট পার্কসার্কাসে এলো।
নবমীর দিনে কলকাতা ছড়িয়ে গেল। মেল বন্ধন ভুলল। জাতিভেদ ভুলল। বটতলা আর পাঁচতলা এক হল। বিসর্জন চুকে যাবার পর যারা নবমীর রাত্রে গিলেকরা পাঞ্জাবী আর মিহিখোলের ধূতি পরে বারোইয়ারিতলায় প্রতিমা দেখতে বেরুলেন। এক ইয়ার বকসীর সঙ্গে পথে দেখা হল। কত্তা শুধোলেন তুমি কোনদলের বটে? ইয়ার বকসী বুঝলেন না। কত্তা অমনি সিগারেটে সুখটান মেরে বললেন: ছকসিদ্ধ না প্রাচীন পঞ্জিকা? ইয়ার তবুও চোখ দুটো ছানাবড়া করে তাকালেন। কত্তা তখন এগিয়ে এসে কোলাকুলি করে বললেন: আমরা প্রাচীন পঞ্জিকা। তাই কোলাকুলি আজই সেরে রাখলাম।

• পূজায় কলিকাতায় ভিড়: শনি, রবি, সোম—এই তিনদিন শিয়ালদহ বিভাগে শহরতলী হইতে প্রায় ১৬ লক্ষ নরনারী অর্থাত্ দৈনিক গড়ে ৫ লক্ষেরও অধিক লোক লোকাল ট্রেনে কলিকাতায় আসে পূজার আনন্দ উত্সবে যোগ দিতে। ট্রেনের কামরায় স্থান না পাইয়া বহু যাত্রী, রেল ইঞ্জিন ও বগীর মাথায়, ফুটবোর্ডে বাদুরঝোলা হইয়া আসে। স্বাভাবিক সময় প্রত্যহ এই বিভাগে তিন লক্ষ লোক যাতায়াত করেন। কলিকাতার সন্নিহিত একটি স্টেশনে খোঁজ লইয়া জানা গেল, যে স্বাভাবিক সময় ছুটির দিনে ১০০ টাকা/১১০ টাকার বেশী টিকিট বিক্রি হয় না। এবার একমাত্র সপ্তমী পূজার দিনই ঐ স্টেসনে ১১২০ টাকার কিছু বেশী টিকিট বিক্রি হইয়াছে।

• বিজয়ার মিষ্টি: শুধু মাছ, মাংসের নয়, পুজোর কয়দিন কলিকাতায় মিষ্টিরও গলাকাটা দর চলিয়াছে। বিজয়া উপলক্ষে মিষ্টির দর সোমবার হইতে আরও চড়িতে শুরু করিয়াছে। মঙ্গলবার দর আরও বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে। পূজার মরসূমে চাহিদা বাড়িয়াছে। ব্যাপারীরাও সুযোগ গ্রহণে এতটুকু তত্পরতার অভাব দেখান নাই। সোমবার কলিকাতার মিষ্টির দর ছিল এইরূপ: কিলো প্রতি সন্দেশ— ১৩/১৪ টাকা, রসগোল্লা— ৪টাকা, পানতুয়া— ৪টাকা, দই— ৩.৪০ নঃ পঃ, রাবড়ী— ৯টাকা, মিহিদানা— ৫টাকা, দরবেশ— ৪টাকা। আমাদের হাওড়া অফিস হইতে হাওড়ায় মিষ্ঠির দর বৃদ্ধির সংবাদে জানান হয় রবিবার হইতে হাওড়া শহরে মিষ্ঠির মূল্য অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। শহরের নামকরা মিষ্ঠির দোকানে সন্দেশ এক কিলো ১২টাকা, রসগোল্লা ৪.৫০ নয়া পয়সা, পানতুয়া ৪টাকা, রাবড়ী ৬টাকা, খাস্তা গজা ৪টাকা, মিহিদানা ৩.৫০ নয়া পয়সা, বোঁদে ৩টাকা এবং দৈ ৩.৮০ নয়া পয়সা কিলো দরে বিক্রয় হয়।

• কলিকাতায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড: সোমবার মধ্যরাত্রে বহুবাজার থানা অঞ্চলে বহুবাজার ও কলেজস্ট্রীটের সংযোগস্থলের নিকট একটি কাঠগোলায় এক ভীষণ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখা এক সময় চারতলা সমান উচুতে উঠে। প্রায় দেড় ঘণ্টা প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া ১০ খানি দমকল রাত্রি দেড়টা নাগাদ আগুন আয়ত্তে আনিতে সক্ষম হয়। পুলিস ও দমকলকর্মী আশপাশের বাড়ি হইতে বিপন্ন প্রায় ৩০ জন নর-নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে। প্রকাশ যে, আগুন প্রথমে একটি কাঠগোলায় লাগে। উহা ক্রমশ পার্শ্ববর্তী একটি অর্ধসমাপ্ত বাড়িতে ছড়াইয়া পড়ে। স্থানীয় অধিবাসিগণ অভিযোগ করেন যে, ঐ এলাকায় ব্যাপকভাবে চোলাই মদ তৈয়ারী হয় এবং আগুন ঐ চোলাই মদের কয়েকটি কারখানায় ছড়াইবার ফলেই আগুনের শিখা ৪ তলা সমান উঁচু হয়। আমরা রাত্রি দেড়টায় যখন ঘটনাস্থল ত্যাগ করি, তখন দমকলকর্মীরা আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে আনিয়া ফেলিয়াছেন। উহার কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন আয়ত্তে আসে।


কালীঘাট জনমঙ্গল সমিতির দুর্গোত্সব

শ্রী কলোনী ৩নং ব্লক

কাম্ ডহরি (পূর্বপাড়া জোড়া মন্দির)গড়িয়া।

ইন্টালী সংঘ, শম্ভুবাবু লেন

টালীগঞ্জ অশোকনগর সার্বজনীন দুর্গোত্সব

পশ্চিম রেল পার, শ্রীরামপুর

মানিকতলা শীতলাতলা সার্বজনীন

শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন, ১৩৬৯, FRIDAY, OCTOBER 12, 1962
• পুজার চারটি দিন উত্সব নগরী: এবারের মত চার দিনের শারদ উত্সব শেষ। নির্দ্বিধায় বলা যায, এই বত্সর ভিড় অনেক সুনিয়ন্ত্রিত, সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য কম, ততটা সোচ্চার নয় এবং পুলিসে জনসাধারণে সহযোগিতা প্রশংসনীয়।
বারোয়ারি পুজার সংখ্যা গতবারের চেয়ে বেশীই ছিল, ভিড়ও ছিল যথারীতি, কিন্তু বিশেষ উল্লেখযোগ্য, দুই একটি ছোটখাট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছাড়া বড় রকমের কোন দুর্ঘটনা হয় নাই। আগুন নিভাইতে দমকল যথেষ্ট তত্পরতা দেখাইয়াছে।
আরও উল্লেখযোগ্য, জনসাধারণ ভিড় নিয়ন্ত্রণে ও মন্ডপ নির্মাণে এইবার পুলিসের সঙ্গে বেশী সহযোগিতা করিয়াছে। ফুটপাত অবরোধ বিশেষ হয় নাই এবং পথচারীরাও ফুটপাত ছাড়িয়া গাড়ির মিছিল আটকায় নাই। দক্ষিণ কলিকাতায় বিডন এবং বিডন স্ট্রীটে ও নিমতলাঘাটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ পুলিস ভালভাবেই করিয়াছে। তবে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে ব্যবস্থাটা আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল। বিশেষত দশমীর দিনে কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকায় বাগবাজারের প্রতিমা বিসর্জনকারী শোভাযাত্রা অসুবিধায় পড়ে। অনেকে রাস্তা অবাধ করার দাবি তোলেন। পরে অবশ্য পথ খুলিয়া দেওয়া হয়।
বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তারের সংখ্যাও এইবার কম। ছিনতাই-এর ঘটনা তেমন শোনা যায় নাই। পুলিস সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী— এই তিনদিনে ৬০২জন এবং বিজয়াদশমীর দিনে ২৩ জন গ্রেপ্তার (উদ্দাম নৃত্যভঙ্গীর অভিযোগে) করিয়াছে। গতবার এক বিজয়ার দিনেই ১৬৫জনকে পাকড়াও করা হয়।
গত বছর ছিনতাই ছিল ৬টি, এবার একটিও নাই। শিশুর গয়না চুরির ঘটনা গতবার পাঁচটি, এবার একটি। পকেটমারের ঘটনাও কম— মাত্র তিনটি। ছোটখাট সম্পত্তি চুরির সংখ্যা গতবার ছিল ৬৭টি, এবার ৬২টি। এইবার চারদিনে নিখোঁজের সংখ্যা ১৪৮। তার মধ্যে ৬৬জনকে পুলিস বাড়ি পৌঁছাইয়া দিয়াছে, বাকী সকলে নিজেরাই বাড়ি গিয়াছে।
প্রথম তিনদিন রাজপথে রাজপথে কর্তব্যরত ছিল ছয় হাজার পুলিস। বিজয়ার দিনে এই সংখ্যা বাড়িয়া হয় দশ হাজার। এইবার পুলিস জুয়াড়ি এবং বেআইনী মদের দিকেও বিশেষ দৃষ্টি রাখে। ধৃত জুয়াড়ির সংখ্যা ধৃত জুয়াড়ির সংখ্যা ৫৯জন এবং বেআইনী মদ চালানে ধরা পড়িয়াছে ১০জন। দুইদিন বিসর্জন চলা সত্ত্বেও পুলিস ভালভাবেই টাল সামলাইয়াছে।
শুধু পুলিসের কাজই প্রশংসনীয় হয় নাই, জনসাধারণ এবং পুজার উদ্যোক্তারাও নগরজীবন বিপর্যস্ত না করার ব্যাপারে এইবার আরও বেশী তত্পরতা দেখাইয়াছে।
কর্পোরেশনেরও প্রশংসা প্রাপ্য। পৌর-বাজারে, পথের মোড়ে এবং গঙ্গারঘাটে আলোকসজ্জা এত ভিড়েও নাগরিকদের নজর এড়ায় নাই। ট্রাম এবং সরকারী বাসের কর্মীদের উদয়াস্ত পরিশ্রম পুরা চারদিন শহরকে চলমান রাখিয়াছে। মোট কথা, বহু দুর্নামে ‘‘কলংকিত’’ কলিকাতা বাঙালীর এই শ্রেষ্ঠতম উত্সব সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করিয়া শহরবাসীর মনে আত্মবিশ্বাস অনেকটা ফিরিয়া আনিয়াছে।

• কলিকাতায় বিসর্জন উত্সব: সোমবার সন্ধ্যায় যাহা শুরু হইয়াছিল মঙ্গলবার সারারাত্রি ধরিয়া তাহা শেষ হইয়াছে। এবং সেই সঙ্গে বিজয়ার প্রীতিসম্ভাষণ এবং আলিঙ্গনও সর্বজনীন হইয়াছে। মঙ্গলবার অপরাহ্ন হইতে রাজপথে ঢাকীর হাতে ‘‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন’’ সুর বাজিয়েছে। সন্ধ্যার পর ‘‘দুর্গা মাঈ কী জয়’’ ধ্বনি মুহূর্তে মুহূর্তে সেই সুরের কন্ঠ চাপিয়া ধরিতে চাহিয়াছে— ঢাকের আওয়াজ প্রকাশের পথ খুঁজিতে গিয়া বারে বারে হোঁচট খাইয়াছে।
শান্তি ও শৃঙ্খলা এবারকার নিরঞ্জন উত্সবের বৈশিষ্ট্য। বিডন স্ট্রীট-নিমতলাঘাট স্ট্রীট এবং কার্জন পার্ক হইতে শুরু করিয়া ইডেন উদ্যান, বাবুঘাট, ম্যান অব ওয়ার জেটি বরাবর হাজার হাজার দর্শনার্থীর নীরব ও নির্ঝঞ্ঝাট প্রতীক্ষা সত্যই প্রশংসনীয়।
মঙ্গলবারের আকাশ ছিল পরিষ্কার, সন্ধ্যার পর হিমেল হাওয়ার স্পর্শে তাহাকে আরও মিষ্টি করিয়াছে। নিরঞ্জন অনুষ্ঠানে কোনও বিঘ্ন ছিল না। প্রায় এক হাজার প্রতিমা এদিন গঙ্গায় ভাসান দেওয়া হইয়াছে। লরীর বিরামহীন আনাগোনা গভীর রাত্রি পর্যন্ত গঙ্গার ঘাট এবং নির্দিষ্ট রাজপথগুলিকে যাতাইরা রাখিয়াছে।
কলিকাতা কর্পোরেশন এবং জল পুলিসের উদ্যোগে এবারও গঙ্গার ঘাটগুলিতে আলোর ব্যবস্থা ছিল। পুলিস যানবাহন এবং ভীড় নিয়ন্ত্রণ করিয়াছে জলপুলিসের ডুবুরিরা দুইটি লঞ্চে করিয়া গঙ্গার বুকে সর্বদা পাক খাইয়াছেন। আর অফিসারসহ প্রায় দশ হাজার পুলিস নগরীর পথে পথে সজাগ থাকিয়াছেন। বড় রকমের কোন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় নাই।
নিমতলাঘাট এবং বাবুঘাট অঞ্চলে নিরঞ্জন দর্শনার্থীদের ভীড় যেন ফাটিয়া পড়িয়াছিল। সর্ববয়সের এবং সর্বশ্রেণীর মানুষের সমাবেশ। ধীরে ধীরে এই সমাবেশ স্বতঃস্ফূর্ত মেলার আকার ধারণ করে। পানবিড়ি ফুচকা হইতে শুরু করিয়া খেলনার নানা সামগ্রী এবং টুকিটাকি সৌখিন জিনিসের পসার ভীড়ের পূর্ণতা আনিয়া দেয়। গভীর রাত্রে সেই ভীড় কমিয়াছে, কিন্তু একেবারে ফাঁকা হয় নাই।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের ইনস্পেক্টর জেনারেল শ্রীউপানন্দ মুখার্জ্জি এবং কলিকাতার পুলিস কমিশনার শ্রী এস এম ঘোষ লঞ্চে করিয়া গঙ্গার ঘাটগুলি পরিদর্শন করেন।
কলিকাতার নিরঞ্জন শোভাযাত্রায় তেমন কোন বিরোধের খবর পাওয়া যায় নাই। যাহা হইয়াছে খুব সামান্য, উল্লেখযোগ্য নয়। তবে ভদ্রকালীর দোলতলায় দুই দল নিরঞ্জন শোভাযাত্রীর সংঘর্ষের ফলে চারজন আহত হয়।

শনিবার ২৬ আশ্বিন, ১৩৬৯, SATURDAY, OCTOBER 13, 1962
• কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা: কে জাগে?
‘নারিকেলোদকং পীত্বা কো জাগর্তি মহাতলে?’ কেবলমাত্র নারকেলের জল পান করে কে জাগে আজ এই পৃথিবীতে?
আজ রাত্তিরে যদি কেউ এই জিজ্ঞাসাটা ঠোঁটে নিয়ে পথে নামেন কিংবা নিঃশব্দে কোন সদরের কড়ায় হাত রাখেন তা হলে তিনি দেখতে পাবেন ঢুলু ঢুলু চোখে আলুথালু বেশে গোটা কলকাতাই প্রায় জেগে বসে। অন্তত, পল্লী নির্বিশেষে বাঙ্গালী কলকাতার প্রতিটি ঘর। কেননা, আজ ‘কঃ (কে)+জাগর (যে জাগে)’ তথা কোজাগরী পূর্ণিমার রাত। ‘নিশীথে বরদা লক্ষ্মী কো জাগর্ত্রীতিভাষিণী। তস্মৈ বিত্তং প্রষাচ্ছমি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।।’ লক্ষ্মী আজ রাতে নগর-পরিক্রমায় বের হবেন। দুয়ারে দুয়ারে নিঃশব্দে পা ফেলে তিনি জানতে চাইহেন— কে জাগে? —নারকেলের জল পান করে কে আজ জেগে বসে আছে?—পাশা খেলছ? তাকে আমি সম্পত্তি দান করব!
সম্পত্তি তথা সম্পদের প্রশ্নটা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বরাবরই আছে। সুতরাং, কী মেটে ঘরের এক কোণে শূণ্য গোলার আড়ালে, কী ভাড়াবাড়ীর ততোধিক ভারাক্রান্ত দেওয়ালের এক পাশে— সম্পদের দেবী লক্ষ্মীও আছেন। বাঙ্গালীর ঘরে তিনি অনুক্ষণের ঈশ্বরী। ঝাঁপি-কড়ি-পাঁচালী— ‘চঞ্চলা’ বলে যত বদনামই থাক তাঁর, ভাঙ্গা-ছেঁড়া কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে ধরে রাখা বাঙ্গালীর সংসারে তিনিই একমাত্র সান্ত্বনা, —শেষ ধন্বন্তরি। সে জন্যই বুঝি তাঁর নিত্য পুজো, এই দুর্দিনেও সাপ্তাহিক আম্র-পল্লব-কাঁটালি, বাত্সরিক—গাঢ়সী, পৌষলী, কোজাগরী। এবং নানা নামে আরও কত কী!
তবে লক্ষ্মী সবচেয়ে বুঝি চেখের কাছাকাছি এই কোজাগরী পূর্ণিমা দিনেই। অন্তত গ্রাম বাংলায়। মাঠে মাঠে বিপদকাল কাটিয়ে ধানক্ষেত ফসলের মাঠে রূপান্তরিত হচ্ছে, নতুন ধানের সম্ভাবনায় গেরস্থের আঙিনায় নিত্য গোবরমাটির লেপ পড়ছে, শিশির-ভেজা ঘাসে নিঃশব্দে শিউলী ঝরছে— ‘লক্ষ্মী যেন বসিয়াছে আঁচলখানি পেতে।’

রবিবার, ২৭ আশ্বিন, ১৩৬৯ (২২ আশ্বিন, ১৮৮৪ শক) SUNDAY, OCTOBER 14, 1962
• পূজা বোনাসের দাবিতে: কলিকাতা কর্পোরেশনের প্রায় ২৬ হাজার কর্মচারী পূজা বোনাসের দাবিতে আগামী ১লা নবেম্বর হইতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছেন বলিয়া জানা যায়। প্রকাশ, কলিকাতা কর্পোরেশনের মজদুর পঞ্চায়েতের পক্ষ হইতে কমিশনারের নিকট এক চিঠি মারফত্ ঐ ধর্মঘটের সিদ্ধান্তের কথা জানান হইয়াছে। ঐ চিঠিতে পঞ্চায়েতের পক্ষ হইতে বলা হইযাছে যে, পুজা উপলক্ষে গত মাসে কর্পোরেশনের সকল শ্রেণীর কর্মচারীকে এক মাসের মূল বেতন অগ্রিম হিসাবে দেওয়া হইয়াছে। এবং ঐ অগ্রিম টাকা পর পর তিন দফায় কাটিয়া লওয়া হইবে। কিন্তু ঐ টাকা পূজা-বোনাস হিসাবে দিবার জন্য পঞ্চায়েত কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানাইয়াছে। যদি কর্তৃপক্ষ ঐ দাবি মানিয়া লইতে অস্বীকার করেন বা বিলম্ব করেন তবে সেক্ষেত্রে তাঁহারা (কর্মচারীরা) অবশ্যই ১লা নবেম্বর হইতে ধর্মঘটে অবতীর্ণ হইবেন। চিঠিতে আরও বলা হইয়াছে যে, কলিকাতার আশেপাশে কয়েকটি পৌরসভায় সকল শ্রেণীর এক মাসের মূল বেতন পূজা-বোনাস হিসাবে দেওয়া হইয়া থাকে। কিন্তু কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত কর্মচারীদের ঐ বোনাস দিবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন নাই।

বুধবার, ৩০ আশ্বিন, ১৩৬৯ (২৫ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, OCTOBER 17, 1962
• কলিকাতার বাজার মত্সহীন করার হুমকি: মাছের দাম কমাইবার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মত্স্য দপ্তর এবং আড়ত্দারদের মধ্যে মতবিরোধের পরিণতি হিসাবে অদূর ভবিষ্যতে কলিকাতার বাজার মত্স্যশূণ্য হইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। প্রকাশ, মুনাফা-নিরোধ আইন অনুযায়ী মাছের আমদানী প্রভৃতির হিসাব দিবার জন্য সরকার যে নির্দেশ দিয়াছেন, আড়ত্দারদের বড় একটি অংশ উহার সহিত সম্পূর্ণ অসহযোগিতার মনোভাব অবলম্বন করিয়াছেন। গবর্নমেন্ট উহাদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যাবস্থা অবলম্বন করিলে তাঁহারা মাছের আমদানী বন্ধ করিয়া কলিকাতার বাজার মত্স্যহীন করার হুমকিও দিয়াছেন বলিয়া সংবাদ পাওয়া যায়।
প্রকাশ, সরকারী বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে সোম এবং মঙ্গলবার কলিকাতা ও হাওড়ার বহু আড়ত্দার ও মত্স্য ব্যবসায়ীর গোপন বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে মুনাফানিরোধ আইন অনুযায়ী সরকার হইতে যে নোটিশ জারী করা করা হইয়াছে, ত্সম্পর্কে আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করিয়া উহার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রস্তাব হয়।এইরূপও নাকি স্থির হয় যে, আড়ত্দারগণ নোটিশ অনুযায়ী কোন রিটার্ণ দাখিল করতে প্রস্তুত নহেন। কারণ তাঁহারা ঐ বিজ্ঞপ্তি আইন বহির্ভূত বলিয়া মনে করেন। তত্সত্ত্বেও সরকার হইতে তাঁহাদের উপর যদি কোন কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, তবে তাহার বিরুদ্ধে আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে মাছের আমদানী ও বিক্রী বন্ধ করিয়া দিয়া বহু ব্যবসায়ী দৃঢ় অভিমত প্রকাশ করেন। সভার এই বিবরণ যথাসাধ্য গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।
অপর দিকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় কলিকাতার বাজারে মাছের কেনা-বেচা চালাইবার উদ্যোগ সম্পর্কে মঙ্গলবার পর্যন্ত যে সংবাদ পাওয়া যায়, তাহা আদৌ আশাপ্রদ নহে। কলিকাতায় মাছের আমদানী বৃদ্ধি সম্পর্কে কি পূর্ব পাকিস্তান কি ভারতের অন্তর্গত অন্যান্য রাজ্য, কোন তরফের সহিতই রাজ্য সরকারের চুক্তি এই দিন পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয় নাই। ফলে মত্স্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবিত ধর্মঘটের হুমকি কার্যকরী হইলে মহানগরীর বাজারগুলিতে মাছ পাওয়া দুষ্কর হইবে বলিয়া তথ্যাভিজ্ঞ মহলে আশঙ্কার সৃষ্টি হইয়াছে।

শুক্রবার, ২ কার্তিক ১৩৬৯ (২৭ আশ্বিন, ১৮৮৪ শক) FRIDAY, OCTOBER 19, 1962
• এই মাসেই ট্রাম রাস্তা মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ হইবে: দীর্ঘ পাঁচ বত্সর ধরিয়া টালবাহানার পর অবশেষে কলিকাতা ট্রামওয়েজ কোম্পানী শহরের ট্রামলাইনের ও ট্রামপথের সংস্কার করিতে সম্মত হইয়াছেন।
বৃহস্পতিবার ট্রাম কোম্পানীর এজেন্ট শ্রীআর ডব্লু সি টার্নবুল রাজ্য সরকারের পরিবহণমন্ত্রীকে জানান যে, ৩১শে অক্টোবরের মধ্যেই তাঁহারা কলিকাতার ট্রামলাইনের সংস্কার-কাজ শেষ করিবেন।
ট্রাম পথের উপর বড় বড় গর্তগুলি সারাই করা হইবে। এই বাবদ তাঁহারা ৪ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। ট্রাম লাইনের বিভিন্ন স্থানে পথে যেসব ভাঙ্গা চোরা আছে তাঁহার মোট দৈর্ঘ নাকি ১৫২৫ জগ।
কলিকাতা ট্রামওয়েজ কোম্পানীর সহিত কর্পোরেশনের এই চুক্তি ছিল যে, ট্রাম লাইন পথের যে যে অংশের উপর দিয়া গিয়াছে, সেই অংশগুলির মেরামতের দায়িত্ব কোম্পানীর। কিন্তু গত পাঁচ বত্সর কলিকাতা কর্পোরেশন পুলিশ কর্তৃপক্ষ বহু চিঠিপত্র লিখিয়াও ট্রাম কোম্পানীকে এই ব্যাপারে অগ্রসর করাইতে পারেন নাই।
যাহা হউক, বৃহস্পতিবার সেক্রেটারিয়েট ভবনে পরিবহণ মন্ত্রী শ্রী শঙ্কর দাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত কলিকাতা ট্রাম কোম্পানীর এজেন্ট শ্রীটার্নবুল ও কলিকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার শ্রীএস বি রায়ের মধ্যে এক বৈঠক হয়।

• কলিকাতায় সাবওয়ে নির্মাণ: রাজ্য সরকার শীঘ্রই ডালহৌসী-শিয়ালদহ এবং চৌরঙ্গী-ধর্মতলা অঞ্চলে সাবওয়ে তৈরীর কাজ সুরু করিতে চাহেন।
অর্থ ও পরিবহনমন্ত্রী শ্রীশঙ্করদাস ব্যানার্জির অভিমত, এ কাজের দায়িত্ব সরকারেই গ্রহণ করা উচিত— পৌর প্রতিষ্ঠান বা অন্য কাহারও উপর সাবওয়ে তৈরীর ভার দিলে অযথা দেরী হইবে।
চৌরঙ্গীতে একটি এবং ডালহৌসীতে দুইটি সাবওয়ে তৈরীর জন্য রাজ্যের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট ১৯ লক্ষ ৪ হাজার টাকা খরচ ধরা হইয়াছে।
এই তিনটি সাবওয়ের পরিকল্পনা পাকা করার জন্য অবিলম্বে রাজ্য সরকার, পৌর প্রতিষ্ঠান, কলিকাতা মেট্রোপলিটন সংস্থা প্রভৃতির প্রতিনিধিদের একটি যুক্ত বৈঠক বসিবে। কাজ সুরু করার পূর্বেই সরকার সম্মত প্রতিবন্ধক দূর করিতে চাহেন।

এ বারের বিশেষ সংযোজন:
প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ীর কিছু ব্যাঙ্গচিত্র

তির্যক
 
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
• গীতাঞ্জলি বিশ্বাস
• দেবশ্রী চক্রবর্তী দুবে
শুভশ্রী নন্দী
ত্রিভুবনজিৎ মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ঝর্না বিশ্বাস
দীপাঞ্জনা ঘোষ ভট্টাচার্য
মধুমিতা দে
রূপা মণ্ডল
ভাস্করণ সরকার
 

 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.