সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• বিশ্ব ঐতিহ্য-তালিকায় নব সংযোজন
‘পার্ল অফ এশিয়া’ নামে খ্যাত নম পেন শহরের গোড়াপত্তন হয় ১৪৩৪ সালে, ফরাসি উপনিবেশ হিসেবে। মেকং নদীর পাড়ে কম্বোডিয়ার এই রাজধানী শহর দেশের সব চেয়ে বড় শহরও বটে। এখানকার ফরাসি আমলের ঘরবাড়ি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। ঐতিহাসিক সেই নম পেনেই গত মাসে আয়োজিত হয়েছিল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৩৭তম অধিবেশন। ১৬ থেকে ২৭ জুন— বারো দিনের এই মহাযজ্ঞের শরিক ছিল এ শহরের প্রতিবেশী শহর সিয়েম রিপ। ২১ সদস্যের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি-সহ কম্বোডিয়ার এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের ১২৮টি দেশের ১৪৬০ জন প্রতিনিধি। আগামী বছর এই অধিবেশন বসবে পশ্চিম এশিয়ার কাতারে।

এ বছর ১৯টি নতুন নাম যোগ হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায়, যার মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ৬টি ও সলোমন দ্বীপের ১টি স্থান ‘হেরিটেজ ইন ডেঞ্জার’-এর তকমা পেয়েছে—
প্রাচীন দামাস্কাস শহর প্রাচীন বোসরা শহর পামিরা প্রাচীন আলেপ্পো শহর এই সংক্রান্ত তথ্য... আলেপ্পোর প্রাচীন সভ্যতা ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ
ক্রাক্ দে সেভালিয়ার্স ও কল’অত সলাহ এ-দিন উত্তর সিরিয়ার প্রাচীন গ্রামাঞ্চল সলোমন দ্বীপের ‘ইস্ট রেনেল’

ঐতিহ্য তালিকার নতুন সদস্যদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
১) রাজস্থানের পাহাড়ি কেল্লা (ভারত): এই রাজ্যের অগুনতি কেল্লার মধ্যে পাহাড়ের উপর নির্মিত ৬টি ‘ফোর্ট’ স্থান পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। এই সংক্রান্ত তথ্য... রাজপুতদের ডেরায়

২) মনুমেন্টস অব কেইসং (উত্তর কোরিয়া): ৯১৮-১৩৯২ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত কোরিয়ার শাসন ভার ছিল কোরিও বংশের হাতে। তাদের রাজধানী কেইসঙে তাই রয়েছে সে সময়কার বেশ কিছু সৌধ এবং শহরের চারপাশের সুরক্ষা-প্রাচীর। এ ছাড়া এখানে সঞ্জুক সেতু, শহরের প্রবেশদ্বার ‘নামদে’ ও ৭০০ বছরের পুরনো একটি স্কুলও রয়েছে।

৩) জিংঝিয়াং তিয়ানসান (চিন): পূর্ব ইউরোপ থেকে এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত তিয়ানসান পর্বতমালার অর্ধেকেরও বেশি অংশ রয়েছে চিনের জিংঝিয়াং অঞ্চলে। পাহাড়ের নিয়ম মেনে তার বৈচিত্রও নানাবিধ— বনানী, জলাভূমি, তুষারশৃঙ্গ, গিরিখাদ, হিমবাহ এমনকী লুপ্তপ্রায় ‘স্নো লেপার্ড’ও আছে এই পর্বতমালায়।

৪) মাউন্ট ফুজি (জাপান): জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত, আগ্নেয়গিরিও বটে। এবং আজও সে জীবন্ত। এই সংক্রান্ত তথ্য... আগ্নেয়গিরির মোহিনী রূপ

৫) মাউন্ট এতনা (ইতালি): ইউরোপ মহাদেশের সর্বোচ্চ জীবন্ত আগ্নেয়গিরি, উচ্চতা প্রায় ১০৯০০ ফুট। প্রথম বার এর ভয়ঙ্কর রূপ দেখা যায় ৬০-৩০ খ্রিস্টপূর্বে। অগ্ন্যুত্পাতের সময় ধোঁয়ার ‘রিং’ দেখা যায় ১৯৭০ ও ২০০০ সালে। বিরল এ ঘটনা প্রথম বার এতনা আগ্নেয়গিরিতেই দেখা যায়।

৬) মেডিসি ভিলা ও বাগান (ইতালি): রেনেসাঁ যুগে ইতালিতে এক সমৃদ্ধ ব্যাঙ্কিং-পরিবার ছিল মেডিসি। ফ্লোরেন্স শহরের বাইরে এই পরিবারের প্রথম বসতবাড়ি বা ‘ভিলা’ ছিল ত্রেবিও ও কাফাজ্জিয়োলো। ১৫৯৫-৯৬ সালের ভিলাগুলিতে লক্ষণীয় ছিল বাগান, যার প্রথম নমুনা পাওয়া যায় কাস্তেলো ভিলাতে। রেনেসাঁ ও বারোক স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় মেডিসি পরিবারের অভিজাত এই বাড়িগুলিতে।

৭) আগাডেজ (নাইগার): সাহারা মরুভূমির আগাডেজ অঞ্চলের নামানুসারেই এই শহর। উনিশ শতক পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশে অটোমান সাম্রাজ্যের সীমান্ত ছিল এই শহর। পনেরো শতকে সাহারা বাণিজ্য পথের একটি সংযোগস্থল ছিল আগাডেজ। মাটির ইট দিয়ে তৈরি পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্তম্ভ বা ‘মিনারেট’ সম্ভবত এখানেই রয়েছে!

৮) নামিব বালি সমুদ্র (নামিবিয়া): দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলবর্তী মরুভূমি নামিব— এখানে মানুষের অস্তিত্ব প্রায় দেখাই যায় না। জীব বলতে কিছু বিশেষ ধরনের গাছ যা কেবল এই অঞ্চলেই পাওয়া যায়। আর দেখতে পাওয়া যায় নানা প্রজাতির গিরগিটি।

৯) রেড বে বাস্ক ‘তিমি’-স্টেশন (কানাডা): নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডর অঞ্চলের এই তিমি-ঘাঁটি ষোলো শতকে নির্মিত। তিমি শিকার করে তার তেল পাঠানো হত ইউরোপে, জ্বালানী হিসেবে। তিমি শিকারের পুরনো এই পদ্ধতি যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত ছিল, তাই, কানাডার ১৭তম ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেল রেড বে তিমি ঘাঁটি।

১০) এল পিনাকাতে ও গ্রঁ দেসের্তো দে অল্টার বায়োস্ফিয়ার রিসার্ভ (মেক্সিকো): অবস্থান উত্তর মেক্সিকোর সোনোরান মরুভূমিতে। ৫৪০টিরও বেশি প্রজাতির গাছগাছালি, ৪৪ রকমের স্তন্যপায়ী, দু’শোরও বেশি প্রজাতির পাখপাখালি ও ৪০ রকমেরও বেশি সরীসৃপের দেখা পাওয়া যায় এই সংরক্ষিত অঞ্চলে।

১১) তাজিকিস্তান জাতীয় উদ্যান (তাজিকিস্তান): দেশের প্রথম ‘প্রাকৃতিক’ ঐতিহ্যবাহী স্থানের তকমা পেল এই উদ্যান। পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পার্বত্য ‘বাস্তুতন্ত্র’— হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালার পরই পামির। আর সেই পামির পর্বতের বেশির ভাগটাই এই উদ্যানের অংশ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক বাঁধ ও মেরু অঞ্চলের বাইরে দীর্ঘতম (৭৭ কিলোমিটার) ‘ফেদচেঙ্কো’ হিমবাহের অবস্থান এই উদ্যানেই।

১২) কার্পেথিয়ান পর্বতের কাঠের গির্জা (পোল্যান্ড ও ইউক্রেন): দু’টি জায়গায় রয়েছে মোট ১৬টি কাঠের তৈরি গির্জা। ইউনেস্কোর মতে, স্লাভিক দেশের প্রাচীনপন্থীদের কাঠের কাজের এ এক অসামান্য নিদর্শন। ২০১০ সালে এই গির্জাগুলির নাম মনোনয়নের জন্য পাঠানো হলেও সেগুলি তালিকাভুক্ত হল এ বছর।

• কম্বোডিয়ার ঐতিহ্য-ভাণ্ডার
গত মাসে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৩৭তম অধিবেশন বসেছিল এক সময়ের কম্বুজ অর্থাত্ বর্তমান কম্বোডিয়ার রাজধানী শহর নম পেন-এ। ৮০২ সালে কম্বোডিয়ায় খেমের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিতীয় জয়বর্মন। এর পর বংশানুক্রমে প্রায় ৬০০ বছর তাঁরা রাজত্ব করেন এশিয়ার এই দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে। তাঁদের শাসনকালেই এ দেশে তৈরি হয় বেশ কিছু স্থাপত্য— মূলত মন্দির, যা পরবর্তী কালে জায়গা করে নেয় বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায়— আঙ্কোর ভাট, বেয়ন ও প্রিয়া বিহার এমনই তিনটি মন্দির। প্রথম দু’টি ১৯৯২ সালে ও প্রিয়া বিহার ২০০৮ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়। ১১৭৭ সালের পর থেকে, মূলত সপ্তম জয়বর্মনের রাজত্বকাল থেকেই হিন্দু ধর্মের এই মন্দিরগুলি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক হয়ে ওঠে।

আঙ্কোর ভাট

বেয়ন মন্দির

প্রিয়া বিহার
• আঙ্কোর ভাট: ১১০০ সালের মাঝামাঝি, খেমের শাসনভার তখন দ্বিতীয় সূর্যবর্মনের হাতে। প্রায় ৫০ হাজার শিল্পী-কর্মী নিয়োগ করে তিনি নির্মাণ করেন এক বিষ্ণু মন্দির— বিশ্বের সর্ববৃহত্ ধর্ম-স্থাপত্য। মন্দিরের দেওয়ালে হিন্দু পুরাণের নানা মুহূর্ত খোদাই করা আছে। স্বর্গ-পাতাল, এমনকী সমুদ্র মন্থনের দৃশ্যও খোদিত রয়েছে। আদতে হিন্দু দেবালয় হলেও চোদ্দ শতকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে এই মন্দির বৌদ্ধ মঠে পরিণত হয়। পাঁচটি স্তম্ভ বিশিষ্ট এই বিষ্ণু মন্দির বিশ্বের পুরনো সপ্তম আশ্চর্যের একটি।
• বেয়ন মন্দির: আঙ্কোর থাম শহরের মাঝামাঝি জায়গায় তিন ধাপে গড়া এই মন্দিরটি নির্মাণ করতেই লেগেছিল বেশ কিছু বছর। বেয়ন মন্দির ঘিরে পাথরের তৈরি সুবিশাল অবয়ব সারা দুনিয়ার কাছে এ দেশের পরিচিতি গড়ে তুলেছে। মন্দিরের প্রায় ৫০টি স্তম্ভের প্রতিটিতেই দিক নির্দেশক হিসেবে রয়েছে চারটি করে মুখ। চোখ বন্ধ, ঠোঁটে স্মিত হাসির রেখা— কথিত আছে, নির্বাণ লাভ করার পর বোধিসত্তের মুখই এই অবয়ব। তবে অন্য মত বলে, মন্দিরের নির্মাণকর্তা সপ্তম জয়বর্মনেরই মুখের আদল পাওয়া যায় এই শিল্পকর্মে।
• প্রিয়া বিহার: শিব ঠাকুরের ‘শিখরেশ্বর’ ও ‘ভদ্রেশ্বর’ রূপকে নিবেদন করেই এই মন্দির। নবম শতকে শুরু হলেও মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হয় খেমের রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় সূর্যবর্মনের রাজত্বকালে। কথিত আছে, দ্বিতীয় সূর্যবর্মনের সময় পুরোহিত দিবাকর পণ্ডিত একটি সোনার নটরাজ মূর্তি দান করেন প্রিয়া বিহারে। দনগ্রেক পর্বতমালার পে তাডি চূড়ার উপর এই মন্দির নিয়ে প্রতিবেশী দেশ তাইল্যান্ডের সঙ্গে বিবাদ বাধে কম্বোডিয়ার। এই কারণে, ২০০৭ সালে ইউনেস্কো এই মন্দির নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরবর্তী কালে, ঐতিহ্যের গুরুত্ব মাথায় রেখে ঠিক হয় কম্বোডিয়াই এর দায়িত্ব নেবে। পরের বছরই বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঢুকে পড়ে প্রিয়া বিহার।

• ‘মিনিয়েচার’ শিল্পকলায় তীর্থঙ্কর শান্তিনাথ
হস্তিনাপুরের রাজা তখন ইক্ষাকু বংশের বিশ্বসেন, তাঁর রানি অচিরা। সুখ-সমৃদ্ধি-শান্তির রাজ্যে হঠাত্ই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে থাকে প্রজাদের। কোনও উপায় না দেখে রাজা পণ করলেন রাজ্য বিপন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি অন্ন-জল গ্রহণ করবেন না। বিশ্বসেনের এমন প্রতিজ্ঞার কথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং তাঁর কাছে আসেন। তিনি একটি বিশেষ স্তোত্র শিখিয়ে দিলেন অন্তঃসত্ত্বা রানি অচিরাকে। দেবরাজের আদেশানুসারে রানি সেই মন্ত্র জপ করে প্রাসাদের উপর থেকে তাকিয়ে দেখেন সমগ্র রাজ্য। অদ্ভুত এক শান্তি ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যজুড়ে। এর পর জৈষ্ঠ্য মাসের তেরোতম দিনে রানি জন্ম দিলেন ষোড়শ তীর্থঙ্কর শান্তিনাথের। বিশ্বসেনের বয়স কালে উত্তরাধিকার সূত্রে শান্তিনাথ রাজত্বভার তুলে নেন নিজের হাতে। তাঁর রাজত্বকাল ছিল সুখ-শান্তির প্রতীক। বীরত্বের জন্য ‘চক্রবর্তী’ উপাধিও পেয়েছিলেন শান্তিনাথ। পরবর্তী কালে মহানির্বাণের খোঁজে সংসারত্যাগী হয়েছিলেন তিনি। কথিত আছে, শান্তিনাথের জীবনসীমা ছিল এক লক্ষ বছর, যার মধ্যে এক বছর তিনি কাটিয়েছিলেন তপস্যা করে। আর ২৫ হাজার বছর কাটিয়েছিলেন সন্ন্যাসী হিসেবে।

এ হেন ‘দিগম্বর’-এর জীবনকথা ও তাঁর সময়কালের বিবরণ যে অমূল্য সম্পদ, তা না বলে দিলেও হয়! চোদ্দ শতকে রচিত ‘শান্তিনাথ চরিত্র’ নামে এক সংস্কৃত পাণ্ডুলিপিতে— সখ্যতা, সংহতি, বিশ্ব শান্তি— তিন ‘বার্তা’ প্রকাশ পেয়েছে। লেখার সঙ্গে তীর্থঙ্করের জীবনের ১০টি ছবিও আছে পাণ্ডুলিপিতে। আঁকা ছবির ধরনে গুজরাতের জৈন শিল্পের আভাস পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছবিগুলি ‘মিনিয়েচার’ শিল্পের অতি প্রাচীন নমুনা। নানা রঙের ব্যবহারে ছবিগুলি সে যুগের এক উত্কৃষ্ট শিল্পকর্ম। পাণ্ডুলিপিতে রুপো দিয়ে তৈরি সাদা রঙের উপর লেখনীর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে আঠা দিয়ে তৈরি কালো কালি। ইউনেস্কোর এ বারের বার্ষিক অধিবেশনে, এই পাণ্ডুলিপিকে ‘গ্লোবাল ট্রেজার’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

জৈন সন্ন্যাসী মুনি পুণ্যবিজয় এই পাণ্ডুলিপি পেয়েছিলেন পরিবারসূত্রে। পরবর্তী কালে তিনি সেটি আমদাবাদের এক সংগ্রহশালায় দান করেন।

• মুছে গেল ‘গানের ভুবন’
২০০০ সালের ৩০ মে, শহর কলকাতার প্রাণোচ্ছল পার্ক স্ট্রিটের মুকুটে জুড়েছিল আরও এক নতুন পালক— মিউজিক ওয়ার্ল্ড— গানের ভুবন। আক্ষরিক অর্থেই, দিনে দিনে এই বিপণি হয়ে উঠেছিল কলকাতাবাসীর এক মনোজ্ঞ জগত্। সুরের দুনিয়ার প্রায় সকল রকম সিডি থরে থরে সাজানো— ফিল্মি বা ভজন থেকে শুরু করে আধুনিক, বাংলা গানের অগুনতি রকমফের, হালফিল বা পুরনো হিন্দি ছবির গান ও সংলাপ, অন্যান্য ভাষার গান, ইন্সট্রুমেন্টাল— কী নেই! গানের ভুবনে ঢুকলেই যে কেনাকাটা করতে হবে তার কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। ইচ্ছে হলে হেডফোন লাগিয়েও গান শোনা যেত কিছু ক্ষণ। আর ‘দেখা’ করার এমন জায়গা— এক দশকের একটু বেশি সময় ধরে সববয়সী নাগরিক কখনও না কখনও সেই অভিজ্ঞাতার স্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু পরের প্রজন্ম বঞ্চিত হল সেই সুরেলা-স্বাদ থেকে। ১ জুলাই, থেমে গেল মিউজিক ওয়ার্ল্ডের যাত্রা!

রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের হাতে উদ্বোধন হওয়ার পর, এই তেরো বছরে অজস্র নামীদামি শিল্পী-স্রষ্টার স্পর্শ পেয়েছিল ‘মিউজিক ওয়ার্ল্ড’। ২০১১ সাল পর্যন্ত, সারা দেশে এই বিপণির ৩৯টি কেন্দ্র ছিল। ২০১২ সালে অন্যান্য শহরের কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে তখনও জীবিত ছিল সাতটি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না!

কলের গান, লং প্লেইং রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডি— আজকের প্রজন্ম খুশি নয় কোনও কিছুতেই! ইন্টারনেটে দুনিয়া চষে ফেলে তারা গান ‘ডাউনলোড’ করে, প্রযুক্তির ‘পেন ড্রাইভ’ বা ‘ডেটা কেবল’ দিয়ে তা হাতবদল হয় নিমেষের মধ্যে! তা হলে আর কষ্ট করে কেনই বা ভার বহন করে ‘গানের ভুবন’! এখন তার অস্তিত্ব খুঁজতে তাই ইতিহাসের পাতাই সম্বল।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• প্রাচীন ‘কৃষিবিপ্লব’
মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে ব্যস্ত একটি পরিবার। খাবার মূলত কৃষিজাত। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে দক্ষিণ চিনের উপক্রান্তীয় অঞ্চলের এক চিত্র। আর সেই চিত্রই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানী মহলে। সম্প্রতি দক্ষিণ চিনের জিনকুন প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন পাঁচ হাজার বছর আগেই এখানকার প্রাচীন মানুষেরা চাষাবাদ করতে শিখে গিয়েছিলেন। এত দিন পর্যন্ত জানা ছিল চিনের মানুষেরাই প্রথম চাষ শুরু করে ইয়াংসি নদীর তীরে এবং প্রথম কৃষিজাত দ্রব্য ছিল ধান। প্রায় দু’বছর ধরে যৌথ ভাবে এই এলাকায় খননকার্য চালাচ্ছিল লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও বেজিঙের চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের একদল গবেষক। তাঁরা এই এলাকায় খুঁজে পেয়েছেন প্রচুর পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবারের অস্তিত্ব। এগুলির উত্স বাদাম বা সাগু হতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। সাগুর ব্যবহার থেকে তাঁদের ধারণা বিভিন্ন জাতীয় পাম গাছের চাষ করতেন এই প্রাচীন মানুষেরা। কলা চাষও করতেন তারা। এই আবিষ্কার চিনে চাষের ইতিহাসকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে দিল বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

• মানব সঙ্করের খোঁজ
আধুনিক মানুষের সঙ্গে কি ‘সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছিল তাদের পূর্বপুরুষ নিয়ান্ডারথালদের? ১৮২৯ সালে নিয়ান্ডারথালের জীবাশ্মের প্রথম খোঁজ পাওয়ার পর থেকেই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল বিজ্ঞানীমহলে। অবশেষে সেই ধাঁধার উত্তর মিলল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ইতালির মন্টি লেসিনি এলাকার রিপারো ডি মেজেনা পর্বতে খোঁজ মেলে এক জীবাশ্মের। জীবাশ্মটির খুলির গঠন আধুনিক মানুষ ও নিয়ান্ডারথালের মধ্যবর্তী। চোয়াল যথেষ্ট শক্তপোক্ত হলেও জীবাশ্মটির সুগঠিত থুতনির অস্তিত্ব আশ্চর্য করেছে বিজ্ঞানীদের। প্রসঙ্গত আধুনিক মানুষের থুতনি ও চোয়ালের গঠনের সঙ্গে এর বেশ মিল। তবে খুলির বাকি অংশের সঙ্গে মিল রয়েছে নিয়ান্ডারথালদের। বিশেষত মাথার গঠন একেবারেই নিয়ান্ডারথালদের মতো। প্রায় ৩০-৪০ হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে একসঙ্গে বসবাস করত নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষ। সেই সময়ই এই দুই প্রজাতির মধ্যে মিলন হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করে তার সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছে আধুনিক মানুষের। তবে জীবাশ্মের জিন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ যা মা-এর দিক থেকে আসে তার সঙ্গে মিল রয়েছে নিয়ান্ডারথালের। এ থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান জীবাশ্মটির পিতা আধুনিক মানুষ হলেও মা ছিল নিয়ান্ডারথাল। বিজ্ঞানীদের আরও দাবি, ওই মহিলা নিয়ান্ডারথালকে ধর্ষণ করেছে পুরুষ আধুনিক মানুষটি!

• চিনের ‘ঘৃণ্য রাজা’র সমাধি
চিনের ইয়াংঝৌ শহরের পূর্বে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হল এক প্রাচীন সমাধি। একটি নির্মাণ কাজের সময় খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে শ্রমিকদের নজরে আসে মাটির নীচে থাকা সমাধিস্থলটি। পরীক্ষার পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানান, এটি চৈনিক সম্রাট ইয়াং গুয়াং-এর সমাধি। খ্রিস্টপূর্ব ৬০৪ থেকে ৬১৮ পর্যন্ত ছিল তাঁর রাজত্বকাল। তিনি ছিলেন চিনের অন্যতম ‘ঘৃণ্য’ শাসক। সামরিক ও প্রশাসনিক স্তরে তাঁর অদক্ষতা এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন কয়েক লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। আর এ কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সৈন্যরা। নিজেকে বাঁচাতে তিনি পালিয়ে আসেন ইয়াংঝৌতে। জীবনের শেষ সময়ে এখানে থাকাকালীন এক সেনা আধিকারিকের হাতে মৃত্যু হয় তাঁর। সমাধিস্থলে পাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং সমাধির গায়ের লিপি পর্যবেক্ষণ করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, এটি নিঃসন্দেহে সম্রাট ইয়াং-এর সমাধিক্ষেত্র। এত দিন পর্যন্ত ওই একই শহরের একটি সমাধিকে ইয়াঙের সমাধি বলে মনে করা হত। কিন্তু এই আবিষ্কার তা ভুল প্রমাণ করল, দাবি এই খননকার্যের প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক শু জিয়াপিঙের।

• কোয়ালা ভল্লুকের জীবাশ্ম
কোয়ালা ভল্লুকের এক হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। উত্তর অস্ট্রেলিয়ার বৃষ্টি অরণ্যে রিভারস্লেই অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত কোয়ালাটি দু’কোটি বছর আগে এই অঞ্চলে বসবাস করত বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত সমাজসেবী ডিক স্মিথের নামানুসারে এই প্রজাতিটির নাম দেওয়া হয়েছে লিতোকোয়ালা ডিকস্মিথি। রিভারস্লেই এলাকা থেকে এর আগে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্ত প্রাণীর দাঁত বা চোয়ালের জীবাশ্ম পাওয়া গেলেও সদ্য আবিষ্কৃত কোয়ালার খুলিটি প্রায় অবিকৃত। এই আবিষ্কারের ফলে কোয়ালার বিলুপ্ত প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়াল ১৮। প্রসঙ্গত কোয়ালার এখন একটিমাত্র প্রজাতিই জীবিত আছে। এর আগে আবিষ্কৃত কোয়ালার জীবাশ্মগুলির সঙ্গে পসাম প্রজাতির প্রাণীদের মিল থাকলেও সদ্য আবিষ্কৃত জীবাশ্মের সঙ্গে আধুনিক কোয়ালার বেশ মিল। আকৃতিতে লিতোকোয়ালা আধুনিক কোয়ালার এক তৃতীয়াংশ, ওজন ৩-৪ কিলোগ্রাম। এদের খুলির আকার এবং চোখের গঠন দেখে বিজ্ঞানীদের ধারণা আধুনিক কোয়ালার থেকে বেশি দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছিল লিতোকোয়ালারা। গাছে উঠতে অতি তত্পর এই প্রজাতি কিন্তু প্রচণ্ড অলস ছিল। দেড় কোটি বছর আগে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এরা বিলুপ্ত হয় বলে জানান বিজ্ঞানীরা।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• মৃত্যুর পরেও ‘বাবা’ হয় গাপ্পি মাছ
রঙিন মাছ পোয়েসিলা রেটিকুলাটা বা গাপ্পির আর এক নাম ‘মিলিয়ন ফিস’। তবে অ্যাকোয়ারিয়ামের বাহারি রঙিন মাছ হিসেবেই সারা বিশ্বে এর লালন পালন। ১৮৬৬ সালে ত্রিনিদাদে রবার্ট জন লেকমারে গাপ্পি প্রথম ক্ষুদ্র এই মাছটির সন্ধান পান ও পরে তাঁর নামানুসারেই মাছটির নামকরণ করা হয় জিয়ারডিনাস গাপ্পি। ক্যারিবিয়ান ও অতলান্তিক সাগরের মধ্যবর্তী যমজ দ্বীপ অ্যান্টিগুয়া-বারবুডা, বার্বাডোস, ব্রাজিল, জামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ভেনেজুয়েলা ইত্যাদি গাপ্পিদের পছন্দের জায়গা। মূলত ম্যালেরিয়া রুখতে ও মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে এই মাছটির সর্বাধিক পরিচিতি।
সম্প্রতি চমকে দেওয়ার মতো বিষয় উত্থাপন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড রেজনিক। তিনি দেখেছেন মারা যাওয়ার অন্তত ১০ মাস পরেও সুস্থ সন্তানের জন্ম দেয় গাপ্পিরা এবং এটি সম্ভব হয় শুক্রাণু সংরক্ষণের মাধ্যমে। গাপ্পি মাছেরা মূলত ভিভিপেরাস অর্থাত্ সন্তান প্রসব করে এবং নিষেক প্রক্রিয়া এদের দেহাভ্যন্তরে ঘটে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন একটি পুরুষ গাপ্পি মাছ কমপক্ষে ২-৩ বছর বাঁচে, কিন্তু স্ত্রী গাপ্পিদের জীবত্কাল আরও বেশি। তাই মৃত্যুর পূর্বে পুরুষেরা তাদের শুক্রাণু স্ত্রীদের দেহে ছেড়ে যায়। স্ত্রী গাপ্পিরা আবার দক্ষ সাঁতারু ও জীবনসঙ্গী হিসেবে উজ্জ্বল বাহারি রঙের পুরুষকেই বেছে নেয়। দেখা গিয়েছে, একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী গাপ্পি একসঙ্গে একাধিক পুরুষ গাপ্পির শুক্রাণু ধরে রাখতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, জিনগত তারতম্যের কারণে একই সঙ্গে বিভিন্ন রঙ ও বৈশিষ্ট্যের মেলবন্ধনের ফলে অপত্যের দেহে বিবিধ বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ দেখা যায়। কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের মধ্যে শুক্রাণু সংরক্ষণের এই অভিনব পদ্ধতি প্রথম গাপ্পি মাছেদের মধ্যেই দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে গাপ্পিরা হল ‘স্পার্ম ব্যাঙ্ক’-এর উত্কৃষ্ট উদাহরণ।

• পাখিদের ‘গোপন’ রহস্য
দীর্ঘ দিন থেকেই বিষয়টি গবেষণাধীন ছিল। সম্প্রতি পাখিদের পুরুষাঙ্গহীনতা নিয়ে একটি অভিনব তথ্য পেশ করেছেন ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মার্টিন কোন। অ্যাভিস পর্বভুক্ত এক খেচর প্রাণীদের বিশেষ অঙ্গহীনতা আসলে জিনেরই কারসাজি বলে মত বিজ্ঞানীদের। অবশ্য এ বিষয়ে বিজ্ঞানীমহলে মতভেদ রয়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন ‘সাপের পা’-এর মতো পুরুষাঙ্গের এই বিলুপ্তি ধারাবাহিক বিবর্তনেরই ফল। অথচ হাঁসেরা অতিরিক্ত বড় পুরুষাঙ্গের অধিকারী। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে আর্জেন্তিনার লেকের হাঁসেদের পুরুষাঙ্গ ক্ষেত্র বিশেষে তাদের দেহের দৈর্ঘ্যের থেকে বড় হয়। আবার মোরগদের ক্ষেত্রে এই অঙ্গটি বিলুপ্তপ্রায়। একই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মোলাকান স্ক্রাবফাউল ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রাশ টার্কির ক্ষেত্রেও। তাই বিবর্তনের এই ব্যাখ্যাটি কার্যত বিজ্ঞানীরা বাতিল করেন। বিজ্ঞানী ব্রিন্যান মনে করেছিলেন আকাশে ওড়ার সময় দেহের ভার লাঘব করার জন্যেই এই অঙ্গটি লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পরিযায়ী হাঁসেরা এই তথ্যটি ভুল প্রমাণ করেছে। তাই বিজ্ঞানী কোন মনে করছেন শুধুমাত্র জিনগত তারতম্যই এই অঙ্গহীনতার একমাত্র কারণ হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে কোষ বিভাজন ও কোষের মৃত্যুর মধ্যে সামঞ্জস্যই দেহের সার্বিক বৃদ্ধি ঘটায়। কিন্তু কোষ বিভাজনের মাত্রা যদি কোষের মৃত্যু হারের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তা হলে নির্দিষ্ট অঙ্গের অনিয়মিত বৃদ্ধি বা সামঞ্জস্যহীন বৃদ্ধি ঘটে যা টিউবারকিউলোসিসের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। আবার কোষের বিভাজনমাত্রা যদি প্রয়োজনের তুলনায় কমে যায় তা হলে সেই স্থানে নির্দিষ্ট অঙ্গের বিলুপ্তি হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ৯৭ শতাংশ পুরুষ পাখিদের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে অর্থাত্ বংশগত ভাবে এক জনু থেকে অপর জনুতে দেহের একটি বিশেষ অংশে যেমন পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগে কোষের বিভাজনের পরিবর্তে কোষের মৃত্যুর প্রক্রিয়া সঞ্চারিত হতে থাকে। ফলে ওই নির্দিষ্ট অঙ্গটির বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ‘বিএমপি৪’ নামক জিন এই প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। মোরগদের ক্ষেত্রে জিন ‘বিএমপি৪’ সক্রিয় হলে পুরুষাঙ্গের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। হাঁস এবং এমু পাখিদের ক্ষেত্রে এই জিনটি নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে এদের পুরুষাঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। তবে এই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালু রেখেছেন।

• গাছেরাও কষে ‘জটিল অঙ্ক’
পাটিগণিত-বীজগণিত-জ্যামিতি-ত্রিকোণমিতি যতই ‘ভয়াঙ্ক’ হোক না কেন, গাছেরা কিন্তু ছোট থেকেই অঙ্ক কষতে খুব ভালবাসে। জটিল অঙ্ক খুব সহজেই কষে ফেলে তারা। না কোনও গল্প-উপকথা নয়, এমনটাই দেখেছেন ব্রিটেনের একদল গবেষক। প্রধানত সঞ্চিত খাদ্যের উপযুক্ত সংরক্ষণ সংক্রান্ত অঙ্কই গাছেদের প্রিয় বিষয়। দিনের বেলা সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে গাছেরা শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে ও রাতের বেলা শর্করাকে জটিল স্টার্চে রুপান্তরিত করে সংরক্ষিত করে রাখে। রাতের বেলা আলোর অনুপস্থিতিতে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শর্করা ভেঙে শক্তি উত্পন্ন হয়। কিন্তু অতিরিক্ত শর্করার অপচয় মানেই সঞ্চিত খাদ্য ভাণ্ডারে টান। নরউইচের জন ইন সেন্টারের অঙ্কের অধ্যাপক মার্টিন হাওয়ার্ডের মতে খুব সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব-নিকাশ করেই গাছেরা এই খাদ্য খরচ করে। বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র সপুষ্পক উদ্ভিদ আরাবিডোপসিসের উপর পরীক্ষা চালান। জীববিজ্ঞানী অ্যালিসন স্মিথ দেখেন শর্করা ব্যবহারে রাশ টানতে গাছেরা সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়কে খুব ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নেয়। প্রথমত রাত হলেই পাতায় উত্পন্ন সারা দিনের খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিয়ে সময়ের একটা হিসাব কষে নেয়। এর পর শর্করা খরচের সঙ্গে সময়ের অনুপাতকে ভাগ দিলেই কেল্লাফতে! স্মিথ ও তাঁর সহকর্মীরা অনুপাতের জন্য দু’টি রাশি ‘এস’ ও ‘টি’কে একক হিসেবে ধরে নিলেন। ‘এস’-এর কাজ হল শর্করার বিভাজন এবং ‘টি’-এর কাজ হল এই বিভাজন রোধ করা। এই দুই রাশির অনুপাতই গাছেদের জটিল সমস্যার সহজ সমাধান সূত্র।

• পশ্চিমঘাটে সবুজায়ন
পশ্চিমঘাট বা সহ্যাদ্রি পর্বতমালা ভারতের পশ্চিমভাগে প্রসারিত একটি পর্বতশ্রেণি। এই পর্বতমালা দাক্ষিণাত্য মালভূমির পশ্চিমসীমা বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত । গুজরাত-মহারাষ্ট্র সীমানায় তাপ্তি নদীর দক্ষিণে এই পর্বতের উৎপত্তি। এর পর মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও কেরলের মধ্য দিয়ে ১৬০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই পর্বতমালা কন্যাকুমারী শহরের কাছে ভারতের দক্ষিণ বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে। এই পর্বতমালার ব্যাপ্তি প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার। সম্প্রতি পশ্চিমঘাটকে সবুজে মোড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতর। কমপক্ষে ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত দাক্ষিণাত্য পর্বতমালায় এই প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, জনসাধারণ ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহের পরেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও সংশ্লিষ্ট বনাঞ্চলকে বাঁচানোর জন্য মাধব গ্যাডগিলের পরিচালনাধীন একটি ‘ইকোলজিক্যাল টিম’ ২০১১ সালের অগস্টে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ দফতরে একটি রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে ছিল পশ্চিমঘাটের অন্তত ৭৫ শতাংশ এলাকায় শিল্প নিষিদ্ধ করা হোক। এই রিপোর্ট বিশদ পর্যালোচনার জন্য কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বে অপর একটি কমিটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক। কস্তরীরঙ্গনের কমিটি গ্যাডগিলের রিপোর্ট বাতিল করে দেয়। নতুন রিপোর্টে, ১৯৭৬ সালের পরিবেশ রক্ষা আইন অনুযায়ী পশ্চিমঘাটের ৯০ শতাংশ বনাঞ্চল-সহ প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ও বাকি ৩৭ শতাংশ পাহাড় সংলগ্ন অংশ ‘ইকোলজিক্যালি সেনসিটিভ এরিয়া’ বা ইএসএ-র অধীনস্থ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অর্থাত্ রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমঘাটের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষণ করা হবে ও বাকি অংশ উন্নয়নের জন্য রাখা হবে। এই ইএসএ-র অধীনে প্রস্তাবিত ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে দাক্ষিণাত্যের ৬টি রাজ্যের প্রায় ৪,১৫৬টি গ্রাম রয়েছে। কমিটি সূত্রে খবর, গ্রামগুলির পঞ্চায়েতের তরফ থেকেও এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সবুজ বাঁচাতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচিতে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতাও থাকবে।

পার্বণ
• মাহেশের রথ
বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণ। যে কোনও পার্বণ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মেলার সংস্কৃতি বাংলায় অতি প্রাচীন। পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত বিখ্যাত এবং প্রাচীনতম মেলাগুলির মধ্যে অন্যতম হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের মেলা। মাহেশে অনুষ্ঠিত জগন্নাথের রথযাত্রা পুরীর পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম। মাহেশের রথ ও রথের মেলার ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন। শোনা যায় ভগবান জগন্নাথের স্বপ্নাদেশে দ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী মাহেশে জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। এও শোনা যায় সংসার ত্যাগের পর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছন মাহেশে, দ্রুবানন্দের মন্দিরে। এই মন্দিরে জগন্নাথ দর্শনের পর তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন। পরে বৃদ্ধ দ্রুবানন্দের অনুরোধে তিনি এই মন্দিরের দ্বায়িত্ব নেন। পরবর্তী কালে কমলাকর পিপলাইকে মহাপ্রভু এই মন্দির পরিচালনার ভার তুলে দেন। এই কমলাকর পিপলাই ছিলেন ৬৪ মোহান্তের প্রথম মোহান্ত। ১৩৯৭ সাল থেকে তাঁর উদ্যোগেই মাহেশে শুরু হয় বিখ্যাত এই রথযাত্রা। প্রথম মোহান্ত কমলাকর পিপলাইয়ের কেশগুচ্ছ আজও সংরক্ষিত আছে মাহেশের মন্দিরে। কিন্তু দ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারীর প্রতিষ্ঠিত মন্দির বা রথ কোনটাই আজ নেই। বর্তমান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় ১৭৫৫ সালে। কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার নয়নচাঁদ মল্লিক ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান মাহেশের রথটি প্রতিষ্ঠা করেন দেওয়ান কৃষ্ণরাম বসু, ১৮৮৫ সালে। আজও মাহেশের মন্দিরে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় জগন্নাথের রথযাত্রা। মাহেশের মন্দির ঘিরে সাত দিন ধরে বিরাট মেলা বসে। বাকি আর পাঁচটা মেলার মতোই বাহারি কাপড়, নানান মুখরোচক খাবার, বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি সবেরই দেখা মেলে এই মেলায়। কিন্তু এ মেলার বিশেষত্ব, ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কলার ব্যাপারি। জগন্নাথের রথ যখন মাহেশের মন্দির ছেড়ে মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় তখন সেখানে আগত হাজার হাজার দর্শনার্থী পুণ্যার্জনের উদ্দেশ্যে ছোট ছোট কলা ছোড়েন রথ লক্ষ্য করে। এই কলার জোগান দিতেই ঝুড়ি মাথায় নিয়ে মেলা জুড়ে ঘুরে বেড়ান অসংখ্য কলার ব্যাপারি। জগন্নাথকে নিবেদনের জন্য ছোট মাপের কলাগুলি তখন মহার্ঘ্য হয়ে ওঠে। বঙ্কিমচন্দ্রের এক উপন্যাসেও যার উল্লেখ পাওয়া যায়। জগন্নাথের এই যাত্রায় পুণ্যার্জনের আশায় রথের দড়ি টানতে অংশ নেন কয়েকশো মানুষ। এই সময় এখানে আগত কয়েক হাজার দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ প্রসাশনকেও। রথযাত্রার সপ্তম দিনে উল্টোরথের মধ্য দিয়ে সাত দিন ব্যাপি এই উত্সবের পরিসমাপ্তি ঘটে, শেষ হয় রথ দেখা কলা বেচার পর্বও।

• জ্বালামুখী মন্দিরের মেলা
হিমাচল প্রদেশের কাঙ্গড়া জেলায় জ্বালামুখী আগ্নেয়গিরীর মাথায় যে মন্দির তা ‘জ্বালামুখী মন্দির’ নামে পরিচিত। এটি সতীর ৫১ (মতান্তরে ৫২) পীঠের মধ্যে অন্যতম একটি। ধর্মশালা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে এই মন্দির। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দেবী জ্বালামুখী ছাড়াও অন্নপূর্ণা, চণ্ডী, হিংলাজ, বিন্ধবাসিনী, মহালক্ষ্মী, সরস্বতী, অম্বিকা এবং অঞ্জনা— দেবীর এই আট রূপেরও জ্বালাকুণ্ড রয়েছে। জ্বালামুখী মন্দিরে আসা ভক্তরা এই আটটি কুণ্ডেও পুজো দেন। শোনা যায় ১৮০৯ সালে মহারাজা রঞ্জিত সিংহ এই মন্দির দর্শনে আসেন। এর পরেই তিনি আফগান যুদ্ধে জয়লাভ করেন। ভগবানের আশীর্বাদের প্রতিদানে তিনি এই মন্দিরের ছাদ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে রঞ্জিত সিংহের পুত্র খরক সিংহ এই মন্দিরের রূপোর দরজা বানিয়ে দেন। চৈত্র এবং আশ্বিন মাসের নবরাত্রিতে বছরে দু’বার এই মন্দির প্রাঙ্গণে জ্বালামুখী মেলা হয়। লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য, নাটক, মল্লযুদ্ধ এবং নানাবিধ ক্রীড়া প্রতিযোগীতা এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। বছরের এপ্রিল এবং অক্টোবর মাসে আগ্নেয়গিরীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা জ্বলন্ত লাভা এবং গ্যাসকে স্থানীয় বাসিন্দারা ঈশ্বরের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অগ্নিকুণ্ড বলে মনে করেন। এ ছাড়াও এই জ্বালাকুণ্ড নিয়ে রয়েছে মতান্তর, রয়েছে একাধিক লৌকিক-অলৌকিক কাহিনি ভিত্তিক পৃথক ধর্মবিশ্বাস। এই কারণেই কাঙ্গড়া এবং হিমাচলপ্রদেশের বাসিন্দারা জ্বালামুখীকে তাদের ঈশ্বর রূপে পুজো করেন। আগত ভক্তরা ভোগ, ক্ষীরের পায়েস, মিষ্টি, ফল দেবতার উদ্দেশে অর্পণ করেন।

• আন্তর্জাতিক আম উত্সব
ভারতের জাতীয় ফল আম। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৩৬৫-র বেশি প্রজাতির আম পাওয়া যায়, যার মধ্যে ভারতেই পাওয়া যায় প্রায় হাজার প্রজাতির আম। তাই আন্তর্জাতিক আম উত্সব পালনের সবচেয়ে ভাল জায়গা ভারত ছাড়া আর কোথায়ই বা হতে পারে! রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক উদ্যোগে দেশের রাজধানী দিল্লিতে প্রতি বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তিন দিন ধরে পালিত হয় এই আম উত্সব। চারশোও বেশি প্রজাতির আম দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রদর্শিত হয় এখানে। হিমসাগর, ল্যাংড়া, আলফানসো, নিলম, নাজুক বদন, বোম্বাই আম— এমনই আরও কত রকম আমের দেখা মেলে এই উত্সবে। উত্সবকে আকর্ষনীয় করে তোলবার জন্য আম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্ব, আম খাওয়ার প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজনও করেন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও ছোট ছোট দোকানে বা কিয়স্কে আমের জুস, জেলি, জ্যাম, পাঁপড়, আমের সরবত— এ রকম নানা রকম মুখরোচক এবং লোভনীয় খাবারদাবারের দেখা মেলে। উত্সব প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রজাতির আম এবং আমের কলমের পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসেন দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ছোট বড় চাষি, ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের এই আম উত্সবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় জমান আম রসের টানে। প্রতি বছর ‘আম দরবারে’ আম জনতার উপস্থিতি তাই চোখে পড়ার মতো।

• পাঁচ পীরের দরগা
প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষ বৃহস্পতিবার তাওয়াই নদীর তীরে রামনগরে পাঁচ পীরের দরগায় পালিত হয় এই উরস উত্সব। এটি মূলত একটি ধর্মীয় উত্সব যেখানে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ পুণ্যার্জনের আশায় আসেন। দরগায় সবুজ এবং লাল পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় এই উত্সবের। আগত ভক্তরা ফুল, ফল, মিষ্টি দিয়ে সুগন্ধি ধূপ জ্বালিয়ে ভক্তি নিবেদন করেন পাঁচ পীরের দরগায়। দরগাটি ছোট। শান্তির খোঁজে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত এখানে ছুটে আসেন, ভোগ নিবেদন করেন, চাদর চড়ান। রামনগরের দরগায় পাঁচ পীরের সমাধি থাকা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। যেমন, অধ্যাপক ইয়াসিন-এর দাবি এই পাঁচ পীরের সমাধি রয়েছে পাকিস্তানে। মূল সমাধি থেকে পবিত্র মাটি এনে এই দরগার স্থাপন করা হয়। মতান্তর থাকলেও রামনগরের পাঁচ পীরের দরগায় মানুষের বিশ্বাসে ভাঁটা পড়েনি। প্রতি বছর তাই একই ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত ছুটে আসেন এখানে।

পর্যটন কেন্দ্র
• ‘হ্যাঙ্গিং রক’ সাজাতে ২ মিলিয়ন
‘হ্যাঙ্গিং রক’-এ পর্যাটক সমাগম বাড়াতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকার। মেলবোর্নের প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ‘হ্যাঙ্গিং রক’-এর চার পাশের এলাকায় পরিকাঠামো খাতে ২ মিলিয়ন ডলার খরচের ঘোষণা করা হয়েছে। মাউন্ট ম্যাসেডনের উত্তরে অবস্থিত হ্যাঙ্গিং রক বেশি পরিচিত জোয়ান লিন্ডসের লেখা ‘পিকনিক অ্যাট হ্যাঙ্গিং রক’ -এর পটভূমি হিসেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ছবিটা পাল্টাতে শুরু করেছে। বর্তমানে ‘হ্যাঙ্গিং রক’-এর পরিচিতি বাড়ছে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজনস্থল হিসেবে। কিছু দিন আগেই এখানে ব্রুস স্প্রিংস্টিন এবং রড স্টুয়ার্টের মতো বিখ্যাত রকস্টারদের কনসার্ট হয়েছিল। ফল স্বরূপ বহু পর্যটকই এখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। এই কারণেই এখানে পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামো ঢেলে সাজোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অস্ট্রেলিয়ার ফেডেরাল রিজিওন্যাল সার্ভিসেস মন্ত্রী ক্যাথরিন কিং জানিয়েছেন, পরিকাঠামোর উন্নতিতে নজর দেবে সরকার। তিনি বলেছেন, ম্যাসিডন রেঞ্জেস প্রদেশের উচিত স্থানীয় পরিবেশকে মাথায় রেখে পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানো হবে। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অস্ট্রেলীয় সরকারের এটি অত্যন্ত গুরুত্বর্পূণ বিনিয়োগ।

• মেক্সিকোর হিডেন বিচ
১৯০০ সালের আগে পর্যন্তও মারিয়েটা আইল্যান্ডস পরিচিত ছিল মেক্সিকো সরকারের বোমা বিস্ফোরণের পরীক্ষাগার হিসেবে। কিন্তু এই পরিচিতি বদলে র্বতমানে মেক্সিকোর নয়া পর্যটনস্থল হিসেবে নাম ছড়িয়েছে মারিয়েটা আইল্যান্ডস-এর। বিশেষ করে মেক্সিকো উপকূলের কয়েক মাইল দূরে মারিয়েটা আইল্যান্ডস-এর একটি দ্বীপের টানে এখানে ছুটে আসছেন বহু পর্যটক। হিডেন বিচ বা লা প্লায়া ডি আমোর— ভালবাসার বিচ নামে পরিচিত এই দ্বীপের জনপ্রিয়তা মূলত ছড়িয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মাধ্যমেই। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টামব্লার বা পিন্টেরেস্ট নামক সাইটগুলিতে এর ‘হিট’ বাড়ছে প্রতি দিনই। হিডেন বিচের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এখানে ভিড় জমাচ্ছেন বহু মানুষ। যদিও হিডেন বিচে যাওয়ার পথ কিন্তু সহজ নয়। প্রথমে বোটে বেশ কিছুটা গিয়ে সমুদ্রের মধ্যে একটা সরু টানেলের মধ্য সাঁতরে পৌঁছতে হয় হিডেন বিচে। বহু বিরল জীবজন্তুর বাসভূমি এই দ্বীপ গড়ে উঠেছিল সম্ভবত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে, জানিয়েছেন এই দ্বীপের ট্যুর অপারেটর ভেনচুরা ওসারিও। সে সময় বোমা ফাটানোর জন্য এই জায়গাগুলিকে ব্যবহার করত মেক্সিকো সরকার। এর ফলে এখানে বহু গুহার সৃষ্টি হয়। মনে করা হয় যে প্রাকৃতিক নিয়মে পাহাড়ের ক্ষয়জনিত কারণেই সৃষ্টি হয় হিডেন বিচ। ওসারিও মতে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি ছাড়া হিডেন বিচের কথা কেউই জানতে পারতেন না। পর্যটকদের ভিড় সামলে মারিয়েটা দ্বীপের সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচাতে মেক্সিকো সরকার সম্প্রতি এই দ্বীপগুলোকে ‘ন্যাচারাল রির্জাভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া সরকারের তরফে পারমিট জারি করে এখানে পর্যটকের সংখ্যা বেঁধে দেওয়ারও চেষ্টা করা হচ্ছে।

• কুইন্সল্যান্ডে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ
পর্যটনে উত্সাহ দিতে নতুন ভাবে সেজে উঠছে অষ্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড। ইতিমধ্যেই ৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে আগামী এক দশকে পর্যটন শিল্পে প্রভূত কর্মসংস্থানের আশা করছেন কুইন্সল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। এর ফলে শহরের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠবে পাঁচতারা হোটেল, ফেরি টার্মিনাল-সহ ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড রিসর্ট। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্থানীয় বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের ছাড়পত্র মিলেছে। যে সমস্ত পরিকল্পনা কুইন্সন্যান্ড কোঅর্ডিনেটর জেনারেল-এর দফতরে জমা পড়েছে বা এখনও পরিকল্পনাধীন আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল উত্তর কুইন্সল্যান্ডে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের এলা বে রিসর্টের পরিকল্পনা। এর ফলে এখানেই কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের। এ ছাড়া ব্রিসবেন ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে পুণর্নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে একটি পাঁচতারা হোটেল-সহ হাই-রাইজ টাওয়ার গড়ার কাজ শুরু করা হবে। পর্যটনের প্রসারে বিশ্বখ্যাত গ্রেট কেপেল আইল্যান্ডের ভোল বদলাতে প্রায় ৫৯২ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করারও চিন্তাভাবনা করছে স্থানীয় পর্যটন বিভাগ। কুইন্সল্যান্ডের পর্যটনমন্ত্রী জান স্টাকি জানিয়েছেন, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, উত্তর কুইন্সন্যান্ড-সহ শহরে দক্ষিণ-পূর্ব জুড়েও বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।

• ক্রিকেটের শারজায় এ বার ইকো-ট্যুরিজম
শারজার মালেইহা অঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজমের প্রসার ঘটাতে উদ্যোগ হল স্থানীয় প্রশাসন। মালেইহা অঞ্চলে এ ধরনের একটি বড় প্রকল্পের কথা গত মাসের গোড়ার দিকে ঘোষণা করেন শারজার শাসক ও সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য হিজ হাইনেস শেখ সুলতান বিন মোহাম্মদ আল কাশিমি। মালেইহার পঁচিশ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে এই প্রকল্প গড়তে শারজা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (শুরুক)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ‘শারজা এলভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্রটেক্টেড এরিয়াজ অথরিটি’ (ইপিএএ)। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এখানে অবসর যাপনের সমস্ত রকমের আধুনিক সুযোগসুবিধাই গড়ে তোলা হবে। হোটেল, রিসর্ট, রেস্তোরাঁ-ক্যাফে থেকে শুরু করে সংরক্ষিত এলাকায় স্পেশ্যালিটি ট্যুরেরও ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্প সর্ম্পকে সুলতান জানিয়েছেন, এই প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল এখানকার বৈচিত্রর্পূণ পরিবেশের সঙ্গে বসতির সঙ্গতি রেখে পর্যটনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানে উত্সাহ দেওয়া।

পরিষেবা
• বিমানবন্দর উন্নয়ন
দেশের বিমানবন্দরগুলিকে ঢেলে সাজাতে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১২০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি বরাদ্দ হয়েছে, জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। এই বরাদ্দ টাকার বেশির ভাগটাই আসবে (প্রায় ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার) বেসরকারি সংস্থা থেকে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে বিমান সংস্থাগুলির কাছে ভারতই হবে বিশ্বের সবথেকে বড় ‘বাজার’। যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে এই সময়ে। সেই কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ৪৯ শতাংশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে এয়ার এশিয়া ও এতিহাদ সংস্থা দু’টি ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই ঘটনাকে ‘ভাল লক্ষণ’ বলেই মনে করছেন অজিত সিংহ।

• মুম্বইয়ে ‘বেস্ট’-এর এসি বাস
ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মুম্বইয়ের বিভিন্ন প্রান্তে প্রত্যেক ১৫ মিনিট অন্তর বাতানুকুল বাস চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বেস্ট। এই পরিষেবা বিশেষ কিছু অঞ্চল যেমন, লোয়ার পারেল, নরিম্যান পয়েন্ট প্রভৃতি ‘বিজনেস হাব’ বা যাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শহরের নানা জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। বেস্টের জেনারেল ম্যানেজার, ওমপ্রকাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একটি সমীক্ষা করা হবে। যেখানে যাত্রীদের চাহিদা সব থেকে বেশি হবে, সেখানে এই পরিষেবা চালু করবে বেস্ট। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাসের ভাড়া প্রি-পেড ট্যাক্সির তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হবে। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শুধুমাত্র বাস দাঁড় করানোর সঠিক জায়গা পাওয়া গেলে পরিষেবা শীঘ্রই শুরু করা যাবে। এতে শুধুমাত্র যাত্রীরাই সুবিধা পাবেন না, পরিবেশ সচেতনতাও বাড়বে। কারণ, বাস পরিষেবা চালু হলে, অনেকেই ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার কমাবেন বলে ওমপ্রকাশবাবু আশাপ্রকাশ করেছেন। ফলে পেট্রোলের ব্যবহার কমবে, তার সঙ্গে কমবে পরিবেশ দূষণও। বেস্ট কমিটি সদস্য সন্দীপ দেশপাণ্ডে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে একটি স্মার্টকার্ড কাউন্টার খোলার কথাও ভাবা হয়েছে। একবার টাকা ভরিয়ে বেস্ট-এর যে কোনও বাসে চড়তে পারবেন যাত্রীরা।

• পছন্দসই আসনে বসতে ফেলো কড়ি
বিমানে এ বার নিজের পছন্দসই আসন আগাম বুক করতে লাগবে বেশি টাকা। এমনটাই ঘোষণা করল বিমান সংস্থা ইন্ডিগো। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানের প্রথম দু’টি সারি বা ১২ ও ১৩ নম্বর সারিতে আগাম টিকিট বুক করতে যাত্রীদের ঘরোয়া উড়ানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা এবং আন্তর্জাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা দিতে হবে। যদিও কবে থেকে এই অতিরিক্ত মূল্য কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে সংস্থার তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। ইন্ডিগো আরও জনিয়েছে, বিমানের প্রত্যেকটি জানালা পার্শ্ববর্তী আসন আগাম বুক করতে যাত্রীদের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২০০ ও ৩০০ টাকা দিতে হবে। মাঝের আসনটি আগাম বুক করতে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১০০ ও ২০০ টাকা দিতে হবে। এ বিষয়ে সমস্ত ট্রাভেল এজেন্ট সংস্থাগুলিকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন চেক-ইন-ব্যাগেজ, পছন্দসই আসন, উড়ানে পরিবেশিত খাদ্য ও পানীয়ের মতো পরিষেবার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে।

• কেরলে চালু ‘সি প্লেন’ পরিষেবা
পর্যটন শিল্পের প্রসারে আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার ‘সি প্লেন’ পরিষেবা চালু করল কেরল। ‘গডস ওন কান্ট্রি’তে ব্যাক ওয়াটার্স জুড়ে এই বিশেষ বিমানে চড়ে কেরলের সামুদ্রিক শোভা উপভোগ করার সুযোগ পর্যটকদের নিঃসন্দেহে আরও বেশি করে আকর্ষণ করবে। যদিও এমন পরিষেবা এর আগেই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে চালু হয়ে গিয়েছে। তবে ভারতের মূল ভূখণ্ডে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। গত মাসের ২ তারিখ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডি অষ্টমুদি হ্রদে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও পর্যটকদের জন্য এই পরিষেবা মিলবে অগস্ট মাস থেকে। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী এপি অনিলকুমার জানিয়েছেন, এ বছরের শেষে এরও চারটি সংস্থা তিরুঅনন্তপুরম, কোচি, কোঝিকোড়, ম্যাঙ্গালোর, কোল্লাম, আলাপুঝা, এর্নাকুলাম প্রভৃতি ব্যাক ওয়াটার্স থেকে এই পরিষেবা শুরু করবে। এই পরিষেবা শুরু করার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই অষ্টমুদি, কুমারকম, ভেম্বানাদ ও বেকাল এই চারটি জায়গায় ওয়াটার ড্রোম, ভাসমান জেটি তৈরি করেছে। পরে আরও ২১টি জায়গায় এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও বিমানগুলি ওঠানামার জায়গায় পর্যটকদের জন্য হাউসবোট ও বিশেষ লাউঞ্জ বানানোর কাজ চলছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। প্রাথমিক ভাবে মাথাপিছু প্রতি ঘণ্টায় ৬ হাজার টাকা করে টিকিটের মূল্য ধার্য করা হয়েছে। পরে প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করা হতে পারে।

খবর এক মুঠো
জগন্নাথ, পাঁপড়, জিলিপি, মেলা— এই সবেই জমে উঠল বঙ্গের রথযাত্রা... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ