সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
দু’চাকার সওয়ারি
এত দিন কথায় কথায় লোকে বলত ‘মানুষ চাঁদে চলে গেল, আর...’। আজ ২০১৩ সালে সে কথা বেশ পুরনো হয়ে গিয়েছে। এ বার বোধহয় চাঁদে জমি কেনার কথা বলবে সবাই! আর এমন সময়ে দাঁড়িয়ে কলকাতাবাসীরা এখনও বলবেন, এ শহরে ‘মানুষ-টানা’ দু’চাকার রিকশা চলে, যার সওয়ারিও মানুষ!

১৮৬০-এর দশকে জাপানে প্রথম রিকশা আবিষ্কার হয়। উনিশ শতকে সমগ্র এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এই পরিবহণ ব্যবস্থা। ১৮৮০ সাল নাগাদ ভারতে প্রথম রিকশার আমদানি হয় সিমলায়। শতক ঘুরতে না ঘুরতেই এই দু’চাকার আবির্ভাব ঘটে কলকাতায়। শত বর্ষ কাটতে চলল তার এই শহরে। বলা হয়, চিনের ব্যবসায়ীরাই প্রথম মূলত পণ্য সামগ্রী বহনের জন্য রিকশার ব্যবহার শুরু করে এই শহরে। পরবর্তী কালে ইংরেজরা এর রূপান্তর ঘটায় ‘স্বল্প মূল্যের পরিবহণ’ ব্যবস্থা হিসেবে। ব্রিটিশ শাসন কাল শেষে এতগুলো বছর কেটে যাওয়ার পরও থেকে গিয়েছে হাতে-টানা রিকশা। শহর কলকাতায় রিকশার মূল সওয়ারি এখন স্কুলপড়ুয়ারা। তবে তাড়ার সময় অফিসযাত্রীদের ভরসাও সেই রিকশা।

২০০৫ সালে তত্কালীন রাজ্য সরকার এই পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৬ সালে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই মর্মে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন সব রিকশাচালকদের পুনর্বাসনও দেবে সরকার। এর পর ক্ষমতা বদল হয়। কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন শহরের এই স্বল্প মূল্যের পরিবহণ ব্যবস্থা যেমন ছিল তেমনই থাকবে। ২০১১ সালের শেষ দিকে এই ঘোষণার পর প্রায় ৬ হাজার রিকশাচালককে সচিত্র পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়। ২০১২ সালের শেষের দিক— শোভনবাবুর দাবি অনুযায়ী, কল্লোলিনীর বুকে তখন ৮৭৮০টি লাইসেন্সওয়ালা টানা-রিকশা চলছে। কলকাতা পুরসভা তখনই ঠিক করে এই লাইসেন্স আর পুনর্নবীকরণ করা হবে না, যাতে এই পরিবহণ সমূলে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এখনও পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়নি।

খালি পায়ে, ঘর্মাক্ত শরীরে এক শীর্ণকায় মানুষ টেনে নিয়ে চলেছেন অপর এক জন ধোপদুরস্ত মানুষকে— অমানবিক! কিন্তু, কোথায় যেন তিনি শহরের ঐতিহ্যকেও বহন করে নিয়ে চলেছেন তাঁর সওয়ারির সঙ্গে। ‘রাজ’ আমলের এই প্রথা এ যুগে লজ্জার ঠিকই, কিন্তু শহর কলকাতা কোথায় যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছে এই টানা-রিকশার ‘টুং টাং’ শব্দের সঙ্গে। সে যুগ তো বটেই, আধুনিক কলকাতার পুরনো অলিগলিতে এখনও তাই দেখা পাওয়া যায় দু’চাকার সওয়ারির।

• অটোমান খাদ্য সম্ভার
খাবার কি কখনও ‘ঐতিহ্য’ হয়! নাকি, সে বহন করে কোনও স্থান বা সমাজের সংস্কৃতি! তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের খাদ্য ভাণ্ডার কিন্তু এই বাক্যগুলিকেই মান্যতা দেয়। কী ভাবে?

১২৯৯ সালে ওসমান বে-র নেতৃত্বে ঐতিহাসিক তুরস্কের গোড়াপত্তন হয়। ষোলো ও সতেরো শতকে তুরস্কের এই অটোমান সাম্রাজ্যের পুরধায় ছিলেন সুলেমান ‘দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’। তাঁর আমলে তুরস্ক পৃথিবীর এক অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে। ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। কনস্তান্তিনোপল— বর্তমানের ইস্তানবুল— ছিল এই সাম্রাজ্যের রাজধানী। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অটোমান সাম্রাজ্য ছিল পূর্ব ও পাশ্চাত্যের মিলনক্ষেত্র। এ হেন সাম্রাজ্যের খাদ্য সম্ভারও যে বহু স্বাদের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। চোদ্দ শতকের মাঝামাঝি তাই উপস্থাপিত হয় রাজকীয় ‘তুর্কি খাবার’— দই স্যালাড, অলিভ তেলে রান্না করা মাছ, ফল ও সব্জির ভিতর পুর দেওয়া নানাবিধ ‘ডিশ’। মধ্য ইউরোপের অস্ট্রিয়া থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এই সাম্রাজ্য পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে সুস্বাদু খাবার তৈরির জন্য বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে আসত। পনেরো শতকের শেষ দিকে প্রায় চোদ্দশো রাঁধুনি মোতায়েন করা হয় রাজদরবারের জন্য। বিশেষ আইন পাশ করা হয় খাবার ‘টাটকা’ কি না তা পরীক্ষার জন্য।

সমীক্ষা ও ভোজনরসিকদের মতে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রচলিত প্রায় ৬ হাজার রন্ধন প্রণালীর চার হাজারই আজ বিলুপ্তির পথে। ১৯২৪ সালে এই সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে হারিয়ে যেতে শুরু করে রাজকীয় সব ‘খানা’ও। প্রায় একই সঙ্গে ভিন্ দেশি রন্ধন প্রণালী জায়গা করে নেয় তুরস্কের রোজকার জীবনধারায়। তা ছাড়া, রাজকীয় সব খাদ্য প্রণালীর সাবেকিয়ানাও বদলে গিয়ে নিজেদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে শুরু করে সকলে। এমনকী খোদ ইস্তানবুলের মানুষও। বানানোর ঝক্কি আর সময়ের অভাবই এর মূল কারণ। আমাদের এখানকার মোমো-র মতো ‘মান্টি’ ছিল ওদের অতি সুস্বাদু একটি খাবার। মূলত ভেড়া বা গরুর মাংস সেদ্ধ করে বা ভাপিয়ে, আটা বা ময়দার লেচির মধ্যে ভরে তৈরি করতে হয় মান্টি। কষ্টকর না হলেও, সুস্বাদু মান্টি তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কিন্তু আজকের ‘জেট’ জমানায় সে সময় কার আছে? আর বাজারেই যখন পাওয়া যায় ‘রেডিমেড’ প্রিয় খাদ্যটি, তখন তৈরির ঝামেলাই বা করে কে?

• রাজপুতদের ডেরায়
রাজস্থান— নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ছোট্ট মুকুলের ‘সোনার কেল্লা’র কথা। শুধু সোনার কেল্লাই নয়, রাজপুত বীরদের এই রাজ্যে রয়েছে অগুণতি কেল্লা ও দুর্গ। বেশ কিছু দুর্গ সমতলে থাকলেও, পাহাড়ের উপরে নির্মিত ছ’টি দুর্গ এ বার জায়গা পেতে চলেছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। আট থেকে উনিশ শতকের মধ্যে নির্মিত এই দুর্গগুলি সে সময়ের রাজকীয় সংস্কৃতি, বাণিজ্য, এমনকী সামরিক নির্মাণশৈলীর ধারক ও বাহক। উঁচু দেওয়াল পরিবেষ্টিত প্রায় প্রতিটি দুর্গেরই একাধিক প্রবেশপথ। দুর্গের ভেতরে প্রাসাদ, দেবস্থান, সৌধ, জলাধার— সব মিলিয়ে আস্ত একটা শহরের অস্তিত্ব যেন। চিত্তোরগড়, কুম্ভলগড়, রণথম্ভোর, জয়সলমের, অম্বর ও গাগরন— আরাবল্লি পর্বতমালার এই ছ’টি ‘হিল ফোর্ট’ এ বার বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। গত দু’বছরের চেষ্টার পর ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে এই ঘোষণা হাসি ফুটিয়েছে রাজস্থান সরকার-সহ সমগ্র দেশবাসীর মুখে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রেশকুমারী কাটোক জানিয়েছেন রাজস্থানের কোনও জায়গা এই প্রথম বিশ্ব ঐতিহ্যের শিরোপা পাবে।

চিত্তোরগড়

রণথম্ভোর

কুম্ভলগড়
• চিত্তোরগড়: সাত শতকে মৌর্য বংশীয় চিত্রাঙ্গদা মৌর্য এই দুর্গ নির্মাণ করেন। আর তাঁর নামানুসারেই নাম ভারতের এই সর্ববৃহত্ ও রাজস্থানের গুরুত্বপূর্ণ দুর্গটির। পনেরো ও ষোলো শতকে তিনবার আক্রান্ত হয় এই দুর্গ— আলাউদ্দিন খিলজি, বাহাদুর শাহ ও শেষে মুঘল সম্রাট আকবরের হাতে তিনবারই পরাজিত হয় রাজপুত রাজারা। সম্মান বাঁচাতে রানি পদ্মিনী, রানি কর্ণবতী-সহ রাজপুত রমণীদের আগুনে আত্মাহুতির শুরু আলাউদ্দিন খিলজির আক্রমণের সময় থেকেই। পাহাড়ের উপরে প্রায় ৭০০ একর জমির উপর নির্মিত দুর্গটির আকার খানিকটা মাছের মতো। গম্ভীরী নদীর উপর বেলেপাথরের সেতু পেরিয়ে, সমতল থেকে দুর্গ পৌঁছনোর রাস্তা বেশ আঁকাবাকা। মেওয়ারের রানা কুম্ভের তৈরি মোট সাতটি গেট পেরিয়ে পৌঁছতে হয় দুর্গ— পেয়দল পোল, ভৈরন পোল, হনুমান পোল, গণেশ পোল, জোর্লা পোল, লক্ষ্মণ পোল ও রাম পোল। দুর্গের ভেতরে ৬৫টি ঐতিহাসিক নির্মাণের মধ্যে ছিল ৪টি প্রাসাদ, ১৯টি মন্দির, ৪টি স্মৃতিসৌধ ও ২০টি জলাধার।

• কুম্ভলগড়: মেওয়ারের রানা কুম্ভর নিজস্ব নকশা ও তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই দুর্গ। কথিত, দুর্গের দেওয়াল তৈরির সময় তা বারবার ভেঙে যাওয়ায় রানা এক সাধকের পরামর্শ নেন। অদ্ভুত সেই পরামর্শ অনুযায়ী ওই স্থানে কাউকে নিজে থেকে আত্মাহুতি দিতে হবে। মৃতদেহর মাথা যেখানে পড়বে, সেখানে মন্দির ও দেহের জায়গায় দুর্গের দেওয়াল তৈরি করার প্রস্তাব দেন সেই সাধক। বেশ কিছু দিন কেটে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি, বলা হয় ওই সাধক নিজেই, আত্মাহুতি দিলে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। দুর্গের মূল প্রবেশদ্বার ‘হনুমান পোল’-এ মন্দিরটি আজও আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার উচ্চতায় নির্মিত দুর্গটির চারপাশের দেওয়াল প্রায় ৩৬ কিলোমিটার বিস্তৃত— এশিয়ায় দ্বিতীয় দীর্ঘতম। দুর্গের ভিতরে ৩৬০টি মন্দির আছে যার মধ্যে ৩০০টি জৈন এবং বাকিগুলি হিন্দু। মহারানা প্রতাপের জন্ম এই দুর্গেই।

• রণথম্ভোর: স্বাধীনতাপূর্ব ভারতে জয়পুরের মহারাজাদের শিকার খেলার জায়গা ছিল রণস্তম্ভ, বর্তমানের রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান। সেই অঞ্চলেই ৯৪৪ সালে নাগবংশী মহাপুরুষ নাগবালকের উত্তরসূরি নাগিল জাঠরা নির্মাণ করে এই দুর্গ। বারো-তেরো শতকে তৈরি লাল পাথরের তিনটি হিন্দু মন্দির আছে দুর্গের ভেতরে— শিব, গণেশ ও রামলালাজির। পৃথ্বীরাজ চৌহাণের সময় জৈন ধর্মের প্রভাব পড়ে এই দুর্গে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ পঞ্চম তীর্থঙ্কর সুমতিনাথের একটি জৈন মন্দিরও পাওয়া যায় এখানে।

জয়সলমের

অম্বর

গাগরন
• জয়সলমের: হলুদ বেলে পাথর দিয়ে তৈরি ভাটি রাজপুতদের এই দুর্গের পরিচিত নাম ‘সোনার কেল্লা’। আর রাজা রাও জয়সওয়ালের নামে তার অন্য নাম। মধ্য যুগে জয়সলমের ছিল পারস্য-মিশর-আরব-অফ্রিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। স্বাধীনতার পরে অবশ্য সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় গোটা শহরটাই ছিল দুর্গের ভেতরে। তবে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরটি নেমে আসে ত্রিকূট পর্বতের পাদদেশে। খালি হয়ে যায় দুর্গ। কিন্তু তার ভিত পলিমাটির হওয়ায় ও জনবসতির অবিবেচিত জীবনধারণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্গের বেশ কিছু অংশের, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রানি কা মহল’।

• অম্বর: মীনাদের তৈরি ছোট্ট শহর আমের আদতে দেবী অম্বার নামানুসারে নাম। রাজা মান সিংহ সেই শহরেই গড়ে তোলেন আমের দুর্গ। এই দুর্গের বৈশিষ্ট্য তার নির্মাণশৈলীতে— হিন্দু ও রাজপুত, দুই সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া যায় এই দুর্গে। ১৬০৪ সালে যশোরের রাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করে শীলা দেবীর মূর্তি উপহার পায় মান সিংহ। দুর্গের ‘গণেশ’ প্রবেশদ্বারের কাছে একটি মন্দির আছে চৈতন্য-প্রবর্তিত ধর্মের এই দেবীর। মার্বেল ও লাল বেলেপাথরের তৈরি এই দুর্গে দিওয়ান-ই-খাস, শিস মহল, সুখ নিবাস নামে আলাদা আলাদা অংশ ছিল। রাজপুত রাজারা তাদের পরিবার নিয়ে বসবাসও করত এই দুর্গে। সে কারণে অম্বরকে প্রাসাদ আখ্যাও দেওয়া হয়েছে।

• গাগরন: আহু ও কালীসিন্ধু নদীর সঙ্গমস্থলে নির্মাণ করা হয় এই দুর্গ। সপ্তম শতকে শুরু হলেও নির্মাণকাজ শেষ হয় চোদ্দ শতকে। এর নির্মাণশৈলীতে বারো শতকের দোদিয়া ও খিঞ্চি রাজপুত সংস্কৃতির বিস্তর প্রভাব দেখা যায়। এই দুর্গের অবস্থান বৈশিষ্ট্যই একে আলাদা করে অন্যান্য কেল্লাগুলো থেকে। এক দিকে নদী, অন্য দিকে জঙ্গল— এমন প্রাকৃতিক সুরক্ষা খুব কম দুর্গেই দেখা যায়।

• পাহাড়ি রেলপথ
ব্রিটিশ শাসন কালে নির্মিত ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের বেশ কিছু ‘মিটার গেজ’ রেললাইনকে একত্রে বলা হয় ‘মাউন্টেন রেলওয়েজ অব ইন্ডিয়া’। ভারতীয় রেলের অন্তর্ভুক্ত ৭টি এমন রেলপথের মধ্যে তিনটি— দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলওয়ে, নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে ও কালকা-সিমলা রেলওয়ে— স্থান পায় ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। পার্বত্য অঞ্চলের বাধা কাটিয়ে যে নৈপুণ্যের সঙ্গে এ সমস্ত জায়াগায় রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে, তারই স্বীকৃতি স্বরূপ এই ‘ঐতিহ্য’ তকমা।

দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলওয়ে

নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে

কালকা-সিমলা রেলওয়ে
• দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলওয়ে: তখন ব্রিটিশ রাজত্ব কাল। শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা রেল সংযোগ ছিলই। ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে’র তত্ত্বাবধানে শিলিগুড়ি থেকে সে রেলপথ বিস্তৃত হয় দার্জিলিং অবধি। ১৮৭৮ সালে এই নির্মাণ কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৮৮১ সালে। ১৯৫৮ সাল থেকে এই রেলপথ ‘নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে’র অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এই রেলপথ স্থান পায় ১৯৯৯ সালে, যা ভারতে প্রথম।

• নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে: ১৯০৮ সালে ইংরেজ-নির্মিত এই বাষ্পচালিত রেল প্রথমে ছিল ‘মাদ্রাজ রেলওয়ে’র অধীনে। পরবর্তী কালে তা ডিজেলচালিত হলেও, স্থানীয় মানুষজন, এমনকী পর্যটকদের দাবি ছিল সেই স্টিম-ইঞ্জিনেরই! সিঙ্গল লাইনের এই ‘মিটার গেজ’ রেল ভারতের অন্যান্য জায়গা থেকে আলাদা একটাই কারণে— সারা ভারতের মধ্যে একমাত্র এখানেই ট্র্যাক ‘র‌্যাক-পিনিয়ন’ বা এবিটি প্রযুক্তিতে নির্মিত। প্রায় ৪১ কিলোমিটার পাহাড়ি এই রেলপথে রয়েছে ২০৮টি বাঁক, ১৬টি টানেল ও ২৫০টি সেতু। চড়াইয়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগলেও, নামতে লাগে তিন ঘণ্টার একটু বেশি সময়। ২০০৫ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে।

• কালকা-সিমলা রেলওয়ে: হিমাচল প্রদেশের বর্তমান রাজধানী সিমলা ছিল ইংরেজদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। অন্য দিকে কালকার অবস্থান হরিয়ানার পঞ্চকুলা জেলায়। ২১৫২ ফুট থেকে প্রায় ৬৮১১ ফুট উচ্চতার এই চড়াই পথে আছে ৯১৯টি বাঁক, ১০৩টি টানেল ও ৮৬৪টি সেতু। এ পথে ৩৭৫৩ ফুট দৈর্ঘ্যের দীর্ঘতম টানেলটির নাম ব্যারোগ। পাহাড়ের দু’দিক খুঁড়ে টানেল তৈরির ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর আত্মঘাতী হন ইঞ্জিনিয়ার ব্যারোগ সাহেব। পরে পুরনোটির এক কিলোমিটার দূরত্বে একটা নতুন টানেল বানিয়ে এই কাজ শেষ করেন ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ ভালকু। ২০০৮ সালে এই রেলপথ ‘মাউন্টেন রেলওয়েজ অব ইন্ডিয়া’র অন্তর্ভুক্ত হয়ে ঐতিহ্যের শিরোপা পায়। গ্রীষ্মে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে বিশেষ ট্রেন শিবালিক এক্সপ্রেস ও শিবালিক প্যালেস স্যালো চলে এই রুটে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• কারাকুম মরু রহস্য
গোনুর তেপে— খ্রিস্টজন্মের প্রায় দু’হাজার বছর আগের এক দুর্গ-শহর। সেই সময়ের নিরিখে যথেষ্ট উন্নত সভ্যতার পরিচয় দিয়েছিল এই শহর। কালক্রমে অন্যান্য সভ্যতার মতোই পশ্চিম তুর্কমেনিস্তানের কারাকুম (গারাগুম) মরুভূমির নীচে হারিয়ে যায় এই সভ্যতা। বিংশ শতকের শেষ দিকে রাশিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক ভিক্টর সারিয়ানিদির নেতৃত্বে কারাকুমের বালির স্তর সরিয়ে আবিষ্কৃত হয় গোনুর তেপে। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে চমকে দিয়েছে এই শহর। কিছু দিন আগে এখানে পাওয়া গিয়েছে একটি সুন্দর ‘মোজাইক’-এর অংশ বিশেষ। রোমান ও গ্রিক সভ্যতায় ‘মোজাইক’ ব্যবহারের প্রমাণ থাকলেও ব্রোঞ্জ যুগে তার ব্যবহারের নিদর্শন এই প্রথম।

গোনুর তেপের অদূরেই আর এক প্রত্নতাত্ত্বিক শহর মার্ভ। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৩০০ অব্দে প্রতিষ্ঠিত এই শহর খ্যাতির শীর্ষে ওঠে দ্বাদশ শতকে। ১২২১ সালে মোঙ্গলদের আক্রমণে ধ্বংস হয় শহরটি, মৃত্যু হয় লক্ষাধিক মানুষের। এমনই এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মিলেছে সুলতান সাঞ্জারের প্রায় অবিকৃত সমাধি। এর উপরের গম্বুজাকৃতি নকশা আশ্চর্য করেছে বিজ্ঞানীদের। এই ধরনের নকশার ব্যবহার দেখা গিয়েছে রেনেসাঁ-যুগে। এই দুই ‘হারানো’ শহর ভবিষ্যতের ‘প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভাণ্ডার’ বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

• প্রাচীনতম ‘মাথামোটা’ ডাইনোসরের খোঁজ
কানাডার আলবার্টায় এক সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে পাকিসেফেলোসর। ২০০৮ সালে এলাকার একটি খেত থেকে আবিষ্কৃত হয় এই ডাইনোসরের জীবাশ্ম। খেতের মালিকের নামানুসারে ওই ডাইনোসরটির নাম রাখা হয় অ্যাক্রোথোলাস অডেটি। ছ’ফুট লম্বা ও প্রায় ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটত। মাথার অদ্ভুত গঠনই সমগোত্রীয়দের থেকে এদের আলাদা করেছে। গম্বুজাকৃতি মাথার হাড়গুলি নিরেট এবং প্রায় দু’ইঞ্চি পুরু। প্রায় ৫০ বছর আগে এই প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হলেও ২০০৮-এর নতুন আবিষ্কার এদের একেবারে নতুন প্রজাতি বলে শনাক্ত করেছে। নিরেট মাথা দ্বন্দ্বযুদ্ধে কাজে লাগত বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এই পর্যায়ের প্রাণী শুধুমাত্র উত্তর আমেরিকাই নয়, বিশ্বের প্রাচীনতম বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এই ডাইনোসরের প্রজাতির আবিষ্কার অপেক্ষাকৃত ছোট দেহের ডাইনোসরদের সম্পর্কে আরও বিশদ ভাবে জানতে সাহায্য করবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলি গত মাসের ৭ মে থেকে কানাডার রয়্যাল অন্টারিও যাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

• স্টোনহেঞ্জের ‘রহস্য’ভেদ
কারও মতে এক বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনাস্থল, কারও মতে প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা অধ্যয়ন কেন্দ্র, কেউ বা বলেন প্রাচীন মানুষদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ঠিকানা— স্টোনহেঞ্জের ‘রহস্য’ নিয়ে ঐতিহাসিকদের ‘বিরোধ’ বহু দিনের। সাম্প্রতিক এক আবিষ্কার এই বিরোধিতার মাত্রাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। এক দল ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর মতে স্টোনহেঞ্জের সূচনা হয়েছিল বিশাল আকারের এক সমাধিক্ষেত্র হিসাবে। রেডিও-কার্বন ডেটিং স্টোনহেঞ্জের আনুমানিক ‘বয়স’ জানিয়েছে ২৪০০-২২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে খোঁজ পাওয়া হাড়গোড়গুলি আরও ৫০০ বছরের পুরনো বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। অর্থাত্ খ্রিস্টজন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে সমাধিক্ষেত্র হিসাবেই ব্যবহৃত হত ‘আধুনিক’ স্টোনহেঞ্জ। হাড়গুলি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের আরও ধারণা, কোনও এক বিশেষ গোষ্ঠী বা পারিবারিক সমাধিক্ষেত্র হিসাবেই স্টোনহেঞ্জ ব্যবহৃত হত। এখানে পাওয়া ৬৩টি কবরস্থ দেহের হাড়গোড় পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের অনুমান এগুলি প্রায় ৩ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে কবর দেওয়া হয়, এবং সেগুলির অবস্থান চিহ্নিত করা ছিল ব্লু স্টোন দিয়ে। তবে পরবর্তী কালে তৈরি হওয়া ‘আধুনিক’ স্টোনহেঞ্জটিকে উপাসনাস্থল বলার থেকে প্রাচীন ব্রিটেনের মিলনস্থল বলতে চান বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে আশপাশের এলাকা ছাড়াও সুদূর স্কটল্যান্ড থেকেও মানুষ এখানে জড়ো হত বিশেষ ভোজে যোগ দিতে। খননকার্যে পাওয়া শুয়োর ও গবাদি পশুর দাঁতের টুকরো থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা ন’মাস থেকে পনেরো মাস বয়সের পশুর মাংসই খাওয়া হত এখানে। নতুন এই খোঁজ স্টোনহেঞ্জের রহস্য সমাধানে এক নতুন মাত্রা দেবে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের।

• টাইটানিক-ব্যান্ডমাস্টারের বেহালা উদ্ধার
বিশাল প্রমোদতরীর প্রকাণ্ড হলঘর। বেহালার মূর্ছনায় আচ্ছন্ন শ্রোতারা। হঠাত্ই কেটে গেল সুর। অতলান্তিকে হিমবাহের ধাক্কায় ডুবে গেল সেই প্রমোদতরী— টাইটানিক। সলিলসমাধি হল ১৫০০ যাত্রীর। সম্প্রতি খোঁজ মিলল টাইটানিকের সেই বেহালার, বাদক ওয়ালেস হার্টলের। হার্টলে তাঁর বাগদত্তা মারিয়া রবিনসনের কাছ থেকে উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন বেহালাটি। মৃত বাদকের দেহ মিললেও তাঁর সেই বেহালার এত দিন কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়া বেহালা তাঁর কাছেই রয়েছে— ২০০৬ সালে দাবি করেন নিউ ইয়র্কশায়ারের এক ব্যক্তি। চামড়ার খাপে মোড়া বেহালাটির গায়ে বাদকের নামের আদ্যক্ষর লেখা আছে। সম্ভবত মারিয়ার পরিবারের কাছ থেকে বহু হাত ঘুরে এই বেহালাটি বর্তমান মালিকের কাছে পৌঁছয়। টাইটানিকের উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর নিলামকারী সংস্থা দীর্ঘ ৭ বছর গবেষণা করে বেহালাটিকে আসল বলে চিহ্নিত করেছে। শীঘ্রই সেটি নিলামও হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি— বেহালাটির ন্যূনতম মূল্য ধরা হয়েছে এক লক্ষ ডলার।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• ‘থতমত... রডোডেনড্রন’
উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে কার্যত লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে রডোডেনড্রন। ভারত ছাড়াও নেপাল, চিন ও মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে চিরসবুজ এই গুল্মের ১ হাজারটিরও বেশি প্রজাতি। ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, সিকিম, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যাণ্ড, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে এই গুল্ম উদ্ভিদের প্রায় ৮০টি প্রজাতি। এর মধ্যে সিকিম হিমালয়ে সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। বারবাটাম, ক্যামপালুটান, হডসোস্নি, আরবোরিয়াম, আটলান্টিকাম, ম্যাক্সিমাম, ক্যালেনডুলাসিয়াম-সহ সিকিম হিমালয়ের ১৬০০ থেকে ৩৬০০ মিটার উচ্চতায় আল্পাইন পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে রডোডেনড্রনের ৩৬টিরও বেশি প্রজাতি। দার্জিলিং পাহাড়ে সান্দাকফু, ফালুট, সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে রডোডেনড্রনের ঘন জঙ্গল। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এই জঙ্গল নষ্ট হতে বসেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি বেসরকারি হোটেলগুলিতে জ্বালানির প্রয়োজনে যথেচ্ছ ভাবে রডোডেনড্রনের কাঠ ব্যবহার করা হয়। সীমান্তবর্তী নেপালের গ্রামগুলিতে অবাধে পশুচারণা রডোডেনড্রনের চারা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে। সম্প্রতি দার্জিলিঙের ‘ফেডারেশন অফ সোসাইটিস ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন’-এর তরফে দশ সদস্যের একটি দল সমীক্ষা চালায়। গৈরিবাস, তালপুকুরি, ফালুট, মৌলে, পাসিভঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় তিন দিনের এই পর্যবেক্ষণ শিবির চলে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যেখানে নিয়ম মেনে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে লাল, সাদা, গোলাপি রঙের রডোডেনড্রন ফুলে ভরে উঠত পাহাড়ি অঞ্চল, সেখানে গাছে ফুল ফুটছে এপ্রিল মাসে। সমীক্ষা অনুযায়ী, পূর্ব ভারতের ৯০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৩টিরই সংরক্ষণ প্রয়োজন। ১৯৯৩ সালে সিকিমে রডোডেনড্রন-সহ বিরল প্রজাতির ‘সাব আল্পাইন’ গাছগুলির সংরক্ষণ ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য প্রথম একটি বৃক্ষোদ্যান তৈরি করা হয়। বর্তমানে সিমলায় রডোডেনড্রন বাগান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

• বাঘের রং সাদা— বিবর্তনই কারণ
‘দক্ষিণরায়’ হোক বা দ্রুতগতি সম্পন্ন চিতা বাঘ— প্রায় সবার গায়েই বিধাতার তুলির টানে অদ্ভুত কালো-হলুদ রঙের কারসাজি। কিন্তু ব্যাঘ্রকুলে অনেকেই আবার সাদা। কেন এই সাদা রং তা নিয়ে সম্প্রতি মাথা ঘামিয়েছেন চিনের বিজ্ঞানীরা। ১৯৭০ সালে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় শশী ও রবি নামে এক বাঘ দম্পতি ১৩টি শিশুর জন্ম দেয়— যাদের মধ্যে তিনটি সাদা। চিনের পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সু-জিন লুয়ো ও তাঁর সতীর্থরা পরীক্ষা করে দেখেছেন জিনের একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থের পরিবর্তনই এই সাদা রঙের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীদের মতে কোনও প্রাণীর কোষের স্বাভাবিক রঞ্জক পদার্থই দেহবর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীরা সাদা বাঘের দেহকোষের জিন পরীক্ষা করে দেখেছেন কোষের মধ্যে বিশেষ রঞ্জক জিন ‘এসএলসি৪৫এ২’ আছে। বিশেষত মানুষ-সহ ঘোড়া, মুরগি ও মাছের দেহের হাল্কা রঙের জন্যও এই রঞ্জক পদার্থটি দায়ী। এই বিশেষ রঞ্জকটি কালো-হলুদ রং তৈরিতে বাধা দেয়। কিন্তু সাদা বাঘের গায়ে হাল্কা কালো ডোরার কারণ ‘এসএলসি৪৫এ’ জিনের মধ্যে ‘এ৪৭৭ভি’ নামক অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিবর্তন। সম্প্রতি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ নামক একটি জার্নালে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন। বর্ণ পরিবর্তনের প্রকৃত কারণ হিসেবে বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেণ্ডেলের বংশগতি সংক্রান্ত তথ্য কী বলে? মেণ্ডেলের সূত্র অনুযায়ী জিনের ভিন্নধর্মী উপাদানের মধ্যে যেটি প্রকাশিত হয় না তাকে প্রচ্ছন্ন উপাদান বা ‘রিসেসিভ ফ্যাক্টর’ বলে। অর্থাত্ সাদা বাঘের ক্ষেত্রে হলুদ রঞ্জক সৃষ্টিকারী জিনটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বাঘের দেহবর্ণ সৃষ্টিকারী রঞ্জক দু’টি হল ফিওমেলানিন ও ইউমেলানিন। এদের মধ্যে কালো-হলুদ রং তৈরি করে ফিওমেলানিন রঞ্জক। কিন্তু সাদা বাঘের ক্ষেত্রে এই রঞ্জক তৈরির প্রক্রিয়াটি অ্যামাইনো অ্যাসিড পরিবর্তনের ফলে বা ‘পয়েন্ট মিউটেশন’-এর কারণে রাসায়নিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সাদা বাঘ এখন বিলুপ্তপ্রায়।

• ‘পাইরেটস’ অফ ফিলিপিন্স
‘পাইরেটস’ অফ ফিলিপিন্স— প্রখ্যাত অভিনেতা জনি ডেপের ‘পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান’-এর মতো কোনও চলচ্চিত্র নয়। এই জলদস্যুদের নিবাস মূলত ইন্দো-মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বৃষ্টি অরণ্য। কারডিওকনডিলা পাইরাটা— সম্প্রতি ফিলিপিন্সে গভীর কালো চোখের এই নতুন প্রজাতির পিঁপড়ের সন্ধান পেলেন এক জার্মান পতঙ্গবিজ্ঞানী। পিঁপড়ে-সাম্রাজ্যে গভীর কালো চোখের অধিকারী শুধুমাত্র মহিলা পিঁপড়েরাই। পুরুষ পিঁপড়েরা এমন সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই প্রজাতির পিঁপড়ের দেহ ইষত্ স্বচ্ছ, ফলে বৃষ্টি অরণ্যের দুর্ভেদ্য অন্ধকারের মধ্যে এরা কার্যত অদৃশ্য হয়ে থাকে। শুধুমাত্র চোখ দু’টিই দেখা যায়— এক অদ্ভূত রকমের ডোরাকাটা কালো দাগ, দূর থেকে দেখলে আচ্ছাদনের মতো মনে হয়। এমন বৈশিষ্ট্যের জন্যেই এদের নাম জলদস্যু বা ‘পাইরেট’দের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে ‘পাইরাটা’। অন্য দিকে এই বৈশিষ্ট্যটিই প্রজননের সময় এদের লিঙ্গ নির্ধারণে সাহায্য করে। কারডিওকনডিলা গণের পিঁপড়েদের ফিলিপিন্সে ১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম খুঁজে পান। এই গণের অধীনে প্রায় ৬টি ভিন্ন প্রজাতি আছে, তাদের আবার কমপক্ষে ১০৫ রকমের নাম আছে। গভীর কালো চোখ আসলে আত্মরক্ষার কারণেই, মত বিজ্ঞানীদের। ‘জুকিস’ নামের একটি জার্নালে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে প্রথম তাদের মতামত প্রকাশ করেন। সমীক্ষা অনুযায়ী গভীর জঙ্গলের মধ্যে শত্রুপক্ষের চোখকে ফাঁকি দিতেই তাদের এমন ঈষত্ স্বচ্ছ দেহ ও চোখের এই বিশেষ আচ্ছাদন। অন্ধকারের মধ্যে দেখলে এদের দেহ দু’টি পৃথক বস্তু বলেই ভ্রম হয়।

• তীক্ষ্ণ শ্রবণ-ক্ষমতার অধিকারী মথ
তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর শব্দ খুব সহজেই শুনতে পায় এক ক্ষুদ্র পতঙ্গ— মথ। সন্ধিপদ পর্বভুক্ত ও লেপিডোপটেরা বর্গের ক্ষুদ্র নিশাচর পতঙ্গটির এই বিশেষ ক্ষমতা সম্পর্কে এত দিন বিজ্ঞানীরা অজ্ঞাত ছিলেন। সম্প্রতি স্কটল্যাণ্ডের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন ওয়াক্স মথদের শ্রবণ-ক্ষমতা ৩০০ কিলো হার্জ বা তারও বেশি। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, শব্দ উত্পন্নের জন্য কোনও কম্পনশীল বস্তুর প্রয়োজন হয় যাকে ‘স্বনক’ বলে। কম্পনশীল বস্তু থেকে উত্পন্ন শব্দ তরঙ্গের আকারে বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে বিস্তার লাভ করে। তবে মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণীর শোনার ক্ষমতা বা শ্রুতিসীমার মান বিভিন্ন হয়। আমরা কানে যে শব্দ শুনতে পাই অর্থাত্ শ্রতিগোচর শব্দের কম্পাঙ্ক ২০-২০০০০ হার্জের মধ্যে থাকে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কম্পাঙ্কের ঊর্ধ্বসীমা কমতে থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বাদুড় বা চামচিকে জাতীয় প্রাণীরা অনের বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায় সেকেন্ডে যা প্রায় ২০০ কিলো হার্জ, একে ‘আলট্রাসোনিক’ বা শব্দোত্তর শব্দ বলা হয়। এই শব্দকে কাজে লাগিয়েই বাদুড়েরা তাদের অবস্থান নির্ণয় করে এমনকী শিকারও ধরে। জলজ প্রাণীদের মধ্যে ডলফিনের শ্রুতিসীমা অনেক বেশি, সেকেন্ডে প্রায় ১৬০ কিলো হার্জ। কিন্তু সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে এই ক্ষুদ্র পতঙ্গটি। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বাদুড় জাতীয় শিকারী প্রাণীদের কাছে নিজেদের অস্তিত্ব গোপন রেখে পারস্পরিক কথোপকথনের জন্য মথেরা এই বেশি তরঙ্গদৈর্ঘের শব্দ ব্যবহার করে। তবে শুধুই কি আত্মরক্ষা না কি অন্য কোনও কাজের জন্যেও মথেরা তাদের অজ্ঞাত শক্তিবলে এই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দের সৃষ্টি করে তা জানতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পার্বণ
• কবীরের জন্মজয়ন্তী
চতুর্দশ শতাব্দীর এক জন বিখ্যাত কবি এবং ‘ধর্মগুরু’ ছিলেন সাধক কবীরদাস। তিনি তাঁর উদার ভাবধারা ও মতাদর্শে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। এ সবে প্রভাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ তাঁর অনুগামী হয়েছিলেন। প্রতি বছর মে-জুন মাসে উত্তরপ্রদেশ-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও পবিত্রতার সঙ্গে তাঁর জন্মতিথি পালিত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অগণিত ভক্ত তাঁর রচিত দোহা পাঠ ও প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করে।

কথিত আছে, এক মুসলমান তাঁতি দম্পতি ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে বারাণসীর গঙ্গার ঘাটে তাঁকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। তাঁরা বাচ্চাটির নাম রাখেন ‘কবীর’। ওই তাঁতি পরিবারেই কবীরের বেড়ে ওঠা। অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন এই কিশোর সাধক রামানন্দের সান্নিধ্যে মানব জীবন দর্শনের নতুন দিশার সন্ধান পান। এর পর কবীরদাস তাঁর কাব্য প্রতিভা এবং সহজ সরল ব্যাখ্যায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ঊর্দ্ধে এই নতুন জীবন দর্শনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন, আকৃষ্ট করেন। কবীর রচিত দোহায় (দুই পঙক্তির কবিতা) তাই ধর্মীয় কথার চেয়ে মানুষের জীবন ভাবনার নানা অন্তর্নিহিত নির্যাসই বেশি চোখে পড়ে। সাধক কবীরদাসের জীবন দর্শন তাই আজও মানুষের মনকে ছুঁয়ে যায়।
“বুরা জো দেখা ম্যায় চলা, বুরা না মিলা কোয়ি!
জো ম্যায় খোঁজা আপনা, মুঝসে বুরা না কোয়ি!!”

কবীর এই দোহায় পুণ্য অর্জনের জন্য মানুষের মন ও ভাবনা চিন্তার শুদ্ধিকরণের প্রয়োজনীয়তার কথাই বুঝিয়েছেন।

• লাদাখে হেমিস উত্সব
১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হেমিস লাদাখের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ গুম্ফা। বৌদ্ধ লামা পদ্মসম্ভবার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রতি বছর দু’দিন ধরে তিব্বতি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী (মে-জুন মাসে) উদযাপিত হয়। গুম্ফার প্রধান লামার তত্ত্বাবধানে এই সময়ে গুরু পদ্মসম্ভবার জন্মজয়ন্তী মহা সমারোহে পালিত হয়। প্রতি ১২ বছর অন্তর এখানে গুরু পদ্মসম্ভবার নানা রকমের উজ্জ্বল পাথর বসানো প্রতিকৃতি জনসমক্ষে প্রদর্শিত হয়। এই অনুষ্ঠানে তিব্বতি মানুষ জন রংবেরঙের পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিশাল আকৃতির শিঙা, দামামার মতো বাদ্য এবং কাঁসর এক সঙ্গে বাজানো হয়। এ সবের মিলিত গুরুগম্ভীর সুরধ্বনীর সঙ্গে চলতে থাকে বিচিত্র ও বিশাল আকৃতির মুখোশ পরে নাচের অনুষ্ঠান। উত্সবকে কেন্দ্র করে গুম্ফার চারপাশে স্থানীয় হস্তশিল্পের পসরা বসে। বর্ণময় এই উত্সব লাদাখের পার্বত্য সৌন্দর্যকে আরও চাকচিক্যময় করে তোলে। এ বছরের হেমিস উত্সব অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ও ১৯ জুন।

• উরস উত্সব
রাজস্থানের জয়পুর থেকে ১৩২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি ছোট শহর অজমেঢ়। এ শহরেই রয়েছে সুফিসাধক খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির সমাধি এবং তার উপর গড়ে উঠেছে অজমেঢ় শরিফের দরগা। শোনা যায়, দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের (১১৪১-১২৩৬) দিকে আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসে মইনুদ্দিন চিস্তি তাঁর উদার ভাবধারা এবং জীবন দর্শন দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করেন। তাঁর প্রচারিত ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হন হাজার হাজার মানুষ। মইনুদ্দিন চিস্তি ‘গরিব নবাব’ নামেও পরিচিত। তাঁর সমাধির উপর এই অজমেঢ় শরিফের দরগা একটি অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। অজমেঢ় শরিফের দরগাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মে-জুন মাসে একটি ধর্মমেলা হয়। যেটি উরস উত্সব নামেই পরিচিত। ইসলামি ক্যালেন্ডারের ষষ্ঠ মাসের শেষ দিনে দরগায় সাদা পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এই পবিত্র উত্সবের সূচনা হয়। দূর দুরান্ত থেকে আসা মানুষ ‘গরিব নবাব’-এর দরগায় চাদর, গোলাপ, জুঁই ফুল, চন্দন, আতর, ক্ষীর ইত্যাদি অর্পণ করেন। দরগার তরফ থেকে ভক্তদের তাবারুক বা পবিত্র ভোগ বিতরণ করা হয়। সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় কাওয়ালি, কবিতা পাঠ ও প্রার্থনায় দিনভর কাটান ভক্তেরা। রজব মাসের ষষ্ঠ দিনের শেষে ফতেহা ও সালামতি পাঠের সঙ্গে সঙ্গে দরগা থেকে আতশবাজি জ্বালানো হয়। এর পর বসে ‘মুশায়রা’ বা কবিতা পাঠের আসর। পবিত্র সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির উদ্দেশেই এই মুশায়রা করা হয়ে থাকে। এ সবের শেষে দরগার মেহফিল খানায় অজমেঢ় শরিফের প্রধান পীরের তত্ত্বাবধানে আলোচনার আসর বসে।

• ‘সিন্ধু দর্শন’
ভারতের উত্তর প্রান্তে সিন্ধু নদকে কেন্দ্র করে একটি উত্সব হয়। নদের নামানুসারে এই উত্সবের নাম সিন্ধু দর্শন। প্রাচীন এই নদকে কেন্দ্র করে এক সময় গড়ে উঠেছিল সিন্ধু সভ্যতা। গঙ্গার মতোই এ নদের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে লেহ-তে তিন দিন ধরে এই উত্সব অনুষ্ঠিত হয়— যৌথ আযোজক কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং জম্মু-কাশ্মীর সরকার। সিন্ধু দর্শন উত্সবের সূচনা ১৯৯৭ সালে। এ উত্সবের মাধ্যমে সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতির মিলন ঘটে। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা সেখানকার বিভিন্ন নদ-নদীর জল সিন্ধু নদে অর্পণ করেন।

উত্সবের সময় আগত হাজারো পর্যটকের দেখভাল ও মনোরঞ্জনের দায়িত্ব সামলাতে কয়েক বছর আগে এখানে সিন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং লাদাখ অটোনমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল স্থাপিত হয়েছে। উত্সবের জন্য ২০০১ সালের ১৬ জুন সিন্ধুর পাড়ে ‘সিন্ধু ঘাট’-এর উদ্ঘাটন করেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। পর্যটন শিল্পকে গুরুত্ব দিতে ও রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে সরকারি প্রচেষ্টায় এখানে গড়ে তোলা হবে ৫০০ আসন বিশিষ্ট সভা কক্ষ, মুক্ত মঞ্চ, প্রদর্শন শালা, সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র এবং একটি গ্রন্থাগার। লাদাখের এই উত্সব তাই ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্দ্ধে উঠে দেশের অন্যতম ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একটি মিলন উত্সবে পরিণত হয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্র
• ভ্রমণ-মানচিত্রে নয়া আর্কষণ নেগেব
তার পরিচয় ছিল ধুলোমাখা জীর্ণ মরুভূমি হিসেবে। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলে গিয়ে এ বছর বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে উঠে এসেছে তার নাম— নেগেব। প্রকৃতিপ্রেমী থেকে শুরু করে স্থাপত্যশিল্পে আগ্রহী— বহু ধরনের পর্যটকই আজকাল ছুটে আসছেন ইজরায়েলের এই জায়গায়। একটি ট্র্যাভেল ওয়েবসাইটের বিচারে ২০১৩-র সেরা আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে নেগেব।

ইজরায়েলের দক্ষিণে অবস্থিত নেগেব বহু বছর ধরেই প্রত্যন্ত মরুভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু পর্যটন শিল্পকে উত্সাহ দিতে সাম্প্রতিক কালে এখানে নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়। স্পা-রিসর্ট থেকে ইকো-ভিলেজ বা নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর— সমস্ত কিছুই গড়ে উঠছে। নেগেবে লোহিত সাগরের কাছের শহর আইলাট-এ যাওয়ার জন্য ‘হাই স্পিড রেলওয়ে’ পরিষেবারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল সৈকতাবাস, ডাইভিং ইত্যাদিরও সুযোগসুবিধা রয়েছে। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো তামার খনিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। আইলাটের প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে ‘টিমনা ন্যাশনাল পার্ক’ হোক বা নেগেবের কৃত্রিম সরোবরে ‘প্যাডেল বোটিং’— মরুশহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এখানে পা রাখছেন ভ্রমণপিপাসুরা। টিমনা ও আইলাটের মাঝে রয়েছে ‘হাই-বার-ইয়োটভাটা নেচার রিজার্ভ’। এই সংরক্ষণস্থলে মরুশহরের নিশ্চিহ্নপ্রায় জীবজন্তুদের কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন ঘটানো হয়। সব মিলিয়ে নয়া আকর্ষণ নেগেব-এর এখন তুঙ্গে বৃহস্পতি।

• অচেনা কাশ্মীরকে তুলে ধরতে উদ্যোগ
গুলমার্গ-সহ অতি দর্শনীয় জায়গাগুলিতে পর্যটকের চাপ কমাতে জম্মু-কাশ্মীরের অচেনা জায়গাগুলিকে আরও ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রক ইতিমধ্যেই নতুন ‘ট্যুরিস্ট স্পট’গুলিকে চিহ্নিত করেছে। নতুন তালিকায় রয়েছে দুধপাহাড়ি, সুখনাগ, শালিগঙ্গা, তুসময়দান, ঊসমার্গ এবং দ্রেং-এর মতো অপেক্ষাকৃত অচেনা জায়গা। এ মাসের ৬ জুন উত্তর কাশ্মীরের বুধগাম জেলার দুধপাহাড়িতে এক সরকারি সফরে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন কাশ্মীরের পর্যটনমন্ত্রী গুলাম আহমেদ মীর। তিনি বলেছেন এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলবে সরকার। দুধপাহাড়ির সঙ্গে তুসময়দান-ঊসমার্গ-দ্রেং-এর সংযোগকারী একটি ট্যুরিস্ট সার্কিট গড়ে তোলা ছাড়াও সেখানে ‘কেবল কার’-এর বন্দোবস্ত করা হবে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সমীক্ষা করে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে রাজ্যের কেবল কার কর্পোরেশন-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটক টানতে শীতকালীন খেলাধুলো ছাড়াও ভেড়া প্রতিপালন বা ভেষজ উদ্যান সফল ভাবে গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথাও ভেবে দেখা হচ্ছে। পর্যটন শিল্পে স্থানীয় মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছেন, নিজেদের বাড়ির একাংশে অতিথিশালা খুলতে রাজ্য সরকার স্থানীয় বাসিন্দাদের এককালীন ২ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তাও করবে। এমনকী পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত হতে স্থানীয় যুবক-যুবতীদের এ সংক্রান্ত ট্রেনিং দিয়েও সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। পর্যটনমন্ত্রী আশাবাদী, ভবিষ্যতে দুধপাহাড়ির সবুজ প্রান্তর বা সুখনাগ ও শালিগঙ্গার ঝরনা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পাল্লা দেবে কাশ্মীরের বিশ্বখ্যাত ‘স্কি রিসর্ট’ গুলমার্গের সঙ্গে।

• নতুন করে সেজে উঠছে শতাব্দীপ্রাচীন মার্বেল প্যালেস
নতুন করে সেজে উঠছে কলকাতার ৪৬ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মার্বেল প্যালেস। ১৮৩৫ সালে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে রাজেন্দ্র মল্লিক তৈরি করান এই প্যালেস। সে কালের নামকরা বিত্তশালী, নিঃসন্তান নীলমণি মিত্র দত্তক নেন রাজেন্দ্রকে। তার তিন বছর বয়সে মারা যান নীলমণিবাবু। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ গড়ায় আদালতে। আদালত ব্যারিস্টার জেমস উইয়ার হগকে নাবালক রাজেন্দ্রর অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব দেন। তিনি এবং নীলমণিবাবুর প্রয়াত স্ত্রী হীরামণি চেয়েছিলেন, রাজেন্দ্র মল্লিকবাড়ির নাম চিরস্থায়ী করুন। আসেন পাশ্চাত্যের স্থপতি ও বাস্তুকারেরা। তারই ফলস্বরূপ নাকি এই প্রাসাদ— প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ, ২৫ ফুট চওড়া নাচঘরের অন্যতম আকর্ষণ কাঠের সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ফ্রেমে ২৫ ফুট বাই ১৫ ফুট মাপের দামি কাচের আয়না, আছে পেল্লায় ঝাড়বাতি, মিনে করা বিশাল মাপের নানা ছাঁদের ফুলদানি, মার্বেলে খোদাই নিখুঁত শিল্পকর্ম। কিন্তু কবে তৈরি, কী ভাবে এল, তার হদিস নেই। ‘রেড ভেন মার্বেল রুম’-এ গোলাপ কাঠের তৈরি ১২ ফুট উঁচু রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তি থেকে শুরু করে কাচের খোপে রাখা রবিশঙ্করের সেতার ও জোড়া তবলা, বারান্দায় রাখা প্রায় সাত ফুট উঁচু কারুকাজ করা হুঁকো এ সবেরও কোনও তথ্যও নেই। দর্শকদের আগ্রহ বাড়াতে তাই এখানকার দ্রষ্টব্যগুলিতে লাগানো হচ্ছে পরিচয়-ফলক। কলকাতার ‘প্রাচীনতম’ চিড়িয়াখানা তৈরি হয় এই চত্বরেই। এখনও খোলা বাগানে রয়েছে কিছু পেলিক্যান, নানা রকম হরিণ, প্রাসাদের বারান্দার খাঁচায় অস্ট্রেলিয়ার ‘স্যামন রেড রোসিলা’, ‘রেড রোসিলা’, ‘ইস্টার্ন রোসিলা’, নানা দেশের পাখি। পর্যটন দফতরের লিখিত অনুমতি নিয়ে তবেই যেতে পারেন দর্শকেরা। ‘রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক বাহাদুর ট্রাস্ট’-এর সদস্য দীপেন মল্লিক এ বিষয়ে বলেন, “একসঙ্গে এত রকম কাজ ১৭৮ বছরের প্রাচীন এই সংগ্রহশালায় এই প্রথম।”

• পর্যটন মানচিত্রে ঠাঁই পদ্মা-চরের
সবুজে ঢাকা পদ্মার দু’পাড়। পাড়ে বসলেই দেখা মিলবে বাহারি সব পরিযায়ী পাখির। পদ্মার জল ছুঁয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে যায় মাছরাঙা, গাঙচিল আর শামুখখোলের দল। স্থানীয় বাসিন্দারা পড়ন্ত বিকেলে নদীর ধারে বসে উপভোগও করেন সেই অপার সৌন্দর্য। পদ্মা পেরোলে বাংলাদেশের রাজশাহি জেলা। এ পার থেকে খালি চোখেই দেখা মেলে রাজশাহির উঁচু উঁচু মিনারের। আর এই সৌন্দর্য সকলের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাজ্য পযর্টন দফতর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সীমান্তের কোল ঘেঁষা রানিনগরের চর মাঝদেয়াড় এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে তৈরি হবে ঝা চকচকে রাস্তা ঘাট, পার্ক। বন্দোবস্ত করা হবে আলোরও। জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) সন্দীপ দত্ত বলেন, “ওই এলাকায় প্রাকৃতিক শোভা দেখার মতো। পর্যটকদের কাছে এই শোভা তুলে ধরার জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। এ ছাড়াও পিপিপি মডেলে বিভিন্ন রকম বিনোদনের ব্যবস্থা, ট্যুরিস্ট লজ ও শৌচাগার নির্মাণ করা হবে।” পদ্মার জলজ্যান্ত মাছ পড়বে পর্যটকদের পাতে। পাওয়া যাবে চরের বাথান বাড়ির দুধেল গরুর নির্ভেজাল দুধ। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে ভাব জমালেই দূরবিনে চোখ রেখে এক ঝলক দেখে নেওয়া যাবে রাজশাহি শহরটাকে। ডোমকলের মহাকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “বর্ষায় এই এলাকা আরও সেজে ওঠে। বাড়ে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। ইচ্ছে করলে পর্যটকরা নৌকা বিহারেও বেরোতেও পারেন।”

পরিষেবা
• হায়দরাবাদ থেকে সরাসরি উড়ানে মাসাদ
এ মাসের ৩০ তারিখ থেকে হায়দরাবাদ-মাসাদ সরাসরি উড়ান চালু হবে। দক্ষিণ ভারতের কোনও শহর থেকে প্রথম শুরু হচ্ছে এই পরিষেবা। হায়দরাবাদে ইরানে কনস্যুল জেনারেল হাসান নুরানি জানিয়েছেন, ইরানের যাত্রীবাহী উড়ান সংস্থা এসমান এয়ারলাইন্সের সাপ্তাহিক দু’টি উড়ান দু’ দেশের মধ্যে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে। ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাসাদ। এখানে শিয়া ধর্মাবলম্বী মুসলমানরা ‘জিয়ারাত’ করতে যান। এ ছাড়াও মাসাদের আলি রেজা মসজিদ মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান। সরাসরি উড়ান চালু হলে তাঁরা উপকৃত হবেন। এখন মাসাদে যেতে বেশ কয়েক বার বিমান পাল্টাতে হয়। রাজধানী তেহরানের পর মাসাদেই ভারত থেকে সরাসরি উড়ান চালু হল। পর্যটন দফতর সূত্রে খবর, ভারত ও ইরানের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার পর্যটক প্রতি বছর যাতায়াত করেন। বর্তমানে মুম্বই ও দিল্লি থেকে সপ্তাহে সরাসরি তেহরান পর্যন্ত ৬টি উড়ান চালু আছে। সব ক’টি উড়ানই পরিচালনা করে ইরানের অন্য একটি বিমান সংস্থা মাহান এয়ার। খুব তাড়াতাড়ি এই পরিষেবা প্রত্যহ চালু করার কথা ভাবছে সংস্থাটি।

• এয়ার ইন্ডিয়ার ৫টি বোয়িং বিক্রির সিদ্ধান্ত
বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা, জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি এবং দূরপাল্লার ‘নন স্টপ’ রুটে টিকিটের চাহিদা কমের কারণে ৮টির মধ্যে ৫টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এলআর বিমান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিল এয়ার ইন্ডিয়া। অসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী কে সি বেনুগোপাল সম্প্রতি লোকসভায় জানিয়েছেন, ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কেনা লম্বা উড়ানে ব্যবহৃত (মূলত ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত) পাঁচটি বিমান বিক্রি করবে সংস্থা। উপরোক্ত কারণগুলি উল্লেখ করে তিনি আরও জানিয়েছেন, বেশ কিছু লম্বা রুটে বিমান পরিষেবা শুরুই করা যায়নি। তার মূল কারণ, টিকিটের চাহিদা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ছিল। তার উপর জ্বালানীর দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

• সময়ানুবর্তিতা বাড়াল ভারতীয় রেল
সময়ে ট্রেন চলে না— ভারতীয় রেলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বেশ পুরনো। কিন্তু সম্প্রতি সেই রেল মন্ত্রকই জানিয়েছে তারা সময়ানুবর্তিতা বাড়িয়েছে ৪ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শুধু সময়ে চলাতেই নয় সুরক্ষার ক্ষেত্রেও পরিষেবা বাড়ানো গিয়েছে ৭.৬ শতাংশ। রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল জানিয়েছেন, গত অর্থবর্ষে ৮৫ কোটির বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে রেল। পাশাপাশি ১০০ কোটি টনেরও বেশি পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছছে। তার সঙ্গে সময়ানুবর্তিতা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের আরও সক্ষম করে তুলেছে ভারতীয় রেল। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রায় ৫০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন বসানো হয়েছে। ৭০৫ কিলোমিটার রেললাইনকে ডাবল লাইন এবং ৬০৫ কিলোমিটার লাইনকে ব্রডগেজ করা হয়েছে। এ ছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম রেলের পরিষেবা-এলাকা বাড়াচ্ছে রেল। তার জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের কাজও অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ট্রেনে মহিলাদের উপর অপরাধ যাতে কমানো যায় তার জন্য ২৪ ঘণ্টার একটি হেল্পলাইন খুব শীঘ্রই চালু করবে রেল।

• বিশেষ ট্রেনে জুড়ল পুরী থেকে শিরডি
যাত্রী চাপ সামলাতে পুরী থেকে শিরডি যাতায়াতের বিশেষ ট্রেন চালু করেছে ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে। এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ থেকে চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত এই বিশেষ ট্রেন প্রতি শুক্রবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে ছাড়বে এবং শিরডি পৌঁছবে রবিবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে। ট্রেনটি শিরডি থেকে রবিবার দুপুর ১টায় ফের রওনা হয়ে পুরীতে পৌঁছবে সোমবার রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে। এই বিশেষ ট্রেনটিতে থাকবে একটি এসি ২ টিয়ার, দু’টি এসি ৩ টিয়ার, ন’টি স্লিপার ক্লাস ও ছ’টি জেনারেল দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা থাকবে। শিরডি থেকে শেষ ট্রেনটি পুরীর উদ্দেশে রওনা দেবে এ মাসের ৩০ তারিখ। খুরদা রোড, ভুবনেশ্বর, ধেনকানাল, তালচের রোড, অঙ্গুল, সম্বলপুর, তিতলাগঢ়, নাগপুর, আকোলা-সহ মোট ২১টি স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়াবে।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ