খবর এক মুঠো
আরও ১২টি গুহার সন্ধান খাসি-জয়ন্তিয়ায়। বিস্তারিত...

মণিপুরে জঙ্গি-সন্ত্রাসে মরেছে নাচুনে হরিণও। বিস্তারিত...

এক টুকরো কাগজ আর কয়েকটা শব্দ— প্রশ্ন তুলে দিল ‘মোগলি’র জনকের কৃতিত্ব নিয়ে। বিস্তারিত...

ইতিহাসের ধারা বেয়ে কোচবিহারের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের ওল্ড পিডব্লিউডি ভবনের ভিক্টোরিয়া কলেজে পরিণত হওয়ার কাহিনি। বিস্তারিত...

‘পুজোয় মা-কে দেখতে চলুন কলকাতায়’ বা ‘এ বার আসুন মায়ের শহরে’— এই স্লোগানেই রাজ্যের পর্যটন প্রসারে অভিনব উদ্যোগ। বিস্তারিত...

এক জন প্রাণী বাঁচান, অন্য জন বাবার স্মৃতি। এক জন পরিবেশকর্মী, আর এক জন পুরনো চাল সংরক্ষণকারী। তাঁদেরই দুই অভিজ্ঞতা। বিস্তারিত...

পাহাড়ের নীলে আর দিগন্তের নীলে বাংলো বাড়িটি ঠায় দাঁড়িয়ে। নাম ‘চিত্রভানু’। স্নিগ্ধ পরিবেশে এক একর জমির উপরে তৈরি বাড়িটি রবীন্দ্র অনুরাগীদের কাছে যেন স্বর্গের হাতছানি। বিস্তারিত...

বাহা মাঃ মড়ে। সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় শালগাছের আরাধনা করেন সাঁওতাল সম্প্রদায়। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, শালগাছ সত্যের প্রতীক। বার্ষিক এই ধর্মীয় উৎসবের নাম ‘বাহা মাঃ মড়ে’। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্র-উদ্যানের ‘জাহের গাড়ে’ (দেবস্থানে) ৩১তম ‘বাহা মাঃ মড়ে’ পালিত হল। উৎসবের উদ্বোধন করেন সাঁওতাল সমাজের সামাজিক নেতা (দিশম গোডেৎ) সীতারাম মুর্মু। পরিবেশিত হয় আদিবাসী নৃত্য ও সঙ্গীত।

কলকাতা থেকে উড়ান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল ড্রাগন এয়ার। এখন সপ্তাহে চারটি উড়ান যাতায়াত করে কলকাতা-হংকং রুটে। সংস্থা জানিয়েছে, এ বছরের অক্টোবর থেকেই উড়ান সংখ্যা বাড়িয়ে ৫টি করা হবে। সংস্থার দাবি, ২০১২ সালের নভেম্বরে কলকাতা-হংকং রুটে উড়ান চালু হওয়ার পরে ড্রাগন আশানুরূপ যাত্রী পেয়েছে। শুধু হংকংয়ে বেড়াতে যাওয়া নয়, সেখান থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্যও যাত্রীরা ড্রাগন এয়ারের উড়ান ব্যবহার করছেন।

গঙ্গাবক্ষে পর্যটনের জন্য বিলাসবহুল বজরা ‘মত্স্যকন্যা-নব অহল্যা’ চালু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। জলপথকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে এই উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পর্যটকদের জন্য সুসজ্জিত বজরাটি চালাবে পরিবহণ দফতর। ওই বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি শুক্র, শনি ও রবিবার ‘মত্স্যকন্যা-নব অহল্যা’ চালানো হবে। দিনে চার বার এই বজরাটি পর্যটকদের নিয়ে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ, কুমোরটুলি, বটানিক্যাল গার্ডেন-সহ হুগলি নদীর বিভিন্ন দর্শনীয় ঘাট পরিদর্শন করাবে। হুগলি নদীর দু’পাশে বিভিন্ন ঘাট এবং মন্দিরের ইতিহাসও পর্যটকদের শোনানো হবে। এর জন্য মাথাপিছু খরচ পড়বে এক হাজার টাকা।

তপনের এই জায়গার নাম ‘দেবীডুবা’। অনেকেই মনে করেন বর্তমানে আধ কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদী এক সময় এখান দিয়েই বইত। তখনকার পুনর্ভবা ছিল স্রোতস্বিনী। হয়তো এখানে দেবী বিসর্জন দেওয়া হত। ২০০৭ সালে তপন থানার বজরাপুকুর এলাকার এই জায়গায় স্থানীয় মানুষজন মাটি কাটতে গেলে মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসে লম্বায় প্রায় ৪৫ ফুট ও চওড়ায় প্রায় ২০ ফুট মাপের একটি দ্বিতল নৌকা। নৌকায় গোটা গাছের গুড়ি পাটাতন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ছিল পিতল ও লোহার অলঙ্করণ। নৌকাটিকে তোলা বা সংস্কার করার আগেই বর্ষা নামায় জলের নীচে চলে যায় এটি। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে স্থানীয় মানুষ এই অভিনব নৌকাটির আবির্ভাব স্মরণে পুণ্যস্নান সারে। বসে যায় মাঝারি মাপের মেলা। মানুষের কাছে পরিচিত ‘গঙ্গামেলা’ নামে।

গ্রামীণ পর্যটনের ধারণা সামনে রেখে পুরুলিয়ার তিনটি পর্যটন ক্ষেত্র সাজিয়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর। জয়চণ্ডী পাহাড়, দামোদরের তীরে তেলকূপি এবং জৈন তীর্থক্ষেত্র পাকবিড়রা চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই এই তিনটি পর্যটন ক্ষেত্রকে গ্রামীণ পর্যটনের ধারণায় সাজিয়ে তোলা হবে। পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট, রাত্রিবাসের জন্য কটেজ, এলাকার হস্তশিল্প স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে বিপণনের ব্যবস্থা করা বা এলাকার উদ্যোমী লোকজনকে গাইড হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া— এই প্রকল্পের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পর্যটনসচিব বিক্রম সেন। তিনি আরও বলেন, এর পাশাপাশি মানবাজারের পুব দিকে মুকুটমণিপুর জলাধারের পশ্চিম প্রান্তে থাকা দোলাডাঙা ও বান্দোয়ানের দুয়ারসিনিকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনবে পর্যটন দফতর। অন্য দিকে, গড়পঞ্চকোটে যে সব প্রাচীন মন্দির পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলিরও সংস্কার করে পর্যটকদের দর্শনোপযোগী করে তোলার ব্যবস্থা করবে রাজ্য পর্যটন দফতর।

জঙ্গলে ঘেরা একচিলতে সমুদ্রতটে এখন ভরে রয়েছে লক্ষ-লক্ষ ‘অলিভ রিডলে’। ডিম ফুটে বেরনোর পরই একরত্তি ওই কচ্ছপ-ছানারা ছুটছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। ওড়িশার কেন্দাপড়া জেলার ভিতরকণিকা অভয়ারণ্যের গহিরমাথার ওই সমুদ্রতটের ছবিটা এখন এমনই। রাজনগর ম্যানগ্রোভ (বন্যপ্রাণী) বন বিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মনোজ কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন, এ বছর মার্চ মাসে হাজার-হাজার কিলোমিটার সাঁতরে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ ‘অলিভ রিডলে’ কচ্ছপ প্রত্যন্ত এলাকার ওই সমুদ্রতটে ডিম দিতে জড়ো হয়েছিল। মা-কচ্ছপগুলি অনেক দিন আগেই সমুদ্রে ফিরে যায়। ডিম ফুটে বের হওয়ার পর এখন ছানারা ছুটছে সে দিকেই। মনোজবাবু জানান, প্রায় ২০ লক্ষ ছোট্ট কচ্ছপ সমুদ্রে নেমেছে। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, ডিম ফুটে বেরোনোর পর তটের বালির প্রায় পুরোটাই এখন একরত্তি ওই সব কচ্ছপে ঢেকে গিয়েছিল। অন্য দিকে পরিবেশবিদরা জানান, বহু বছর ধরে ওই সমুদ্রতটে ডিম পাড়তে পৌঁছয় অলিভ রিডলে-রা। কিন্তু, সম্প্রতি ওই তটও ভাঙনের কবলে পড়ায় কচ্ছপদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

লোকাল বাস বা অটো ধরার ঝামেলা ছাড়াই নিখরচায় বাসে চেপে অফিসটাইমের যাত্রীরা পৌঁছে যাবেন মেট্রো রেলের স্টেশন পর্যন্ত। অভিনব এই পরিষেবা চালু হচ্ছে নাগেরবাজার ও দমদমের মধ্যে। এই ধরনের পরিষেবা রাজ্যে প্রথম। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বিদেশে অনেক বড় বড় শহরে বিমানবন্দর বা স্টেশন থেকে এ রকম পরিষেবা আছে। দমদমে এমন পরিষেবা চালু হলে অফিসের ব্যস্ত সময়ে বহু যাত্রী উপকৃত হবেন।” মিনিবাসের মতো চেহারার সাদা রঙের এই বাসে বসার আসন ৩৫টি। সকাল আটটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত এবং বিকেলে পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এই বাসটি নাগেরবাজার থেকে দমদম স্টেশনের মধ্যে চলাচল করবে। দক্ষিণ দমদম পুরসভা সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে বাসটির আট থেকে দশটি ট্রিপ দেবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে সময় ও ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।

ঘুরতে গিয়েও বাড়ির মতো পরিবেশ পাওয়ার চেষ্টা করেন সব পর্যটকেরাই। যেখানে থাকবে না হোটেল বা রিসর্টের মতো শুধু ব্যবসার হিসাব বা চেক-আউটের কঠোর নিয়ম। বরঞ্চ পুরোটাই বাড়ির মতো পরিবেশ। পর্যটকদের এই মানসিকতার কথা মাথায় রেখে ডুয়ার্সের একটি অংশে রমরমিয়ে চলছে হোম-স্টে বা হোম ট্যুরিজ্যম। মূলত সামসিং, সুনতালেখোলায় ২১টি হোম-স্টে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন পর্যটন আকর্ষণ। শুধু সুন্দর পরিবেশ নয়, ৩০০ টাকায় সকালের চা থেকে রাতের খাওয়া, সবই মেলে বলে দিনের পর দিন হোম-স্টে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পর্যটকেরা জানাচ্ছেন, হোম -স্টেগুলিতে পর্যটকদের জন্যে শোওয়ার ঘরের পাশাপাশি বৈঠকখানা, ডাইনিং হলের মতো অন্দরমহলেও যাওয়ার সুযোগ থাকে। ভোজনরসিকদের জন্য গরম তাইফু, থুকপা নিয়ে হাজির হন গৃহস্থেরা। শীতকাল হলে তো কথাই নেই, বাড়ির মালিকের উঠোনে থাকা কমলালেবু গাছ থেকে কমলালেবু পেড়ে খাওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয়। থাকার খরচও হাতের নাগালে। রোজ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।

সৈকত পর্যটনকেন্দ্র দিঘার পর্যটকদের বিনোদনের জন্য উদ্যোগী হল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। উপকূলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দিঘা থেকে শঙ্করপুর যাওয়ার জন্য উপকূল বরাবার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। নতুন ও পুরাতন দিঘায় তৈরি করা হবে দু’টি ওয়াচ টাওয়ার। আট মিটার উচ্চতার এই দু’টি টাওয়ার তৈরি হলে পর্যটকরা যেমন সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, তেমনি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নজরদারি চালানোর সুবিধা হবে। এ ছাড়াও রামনগরের সাপুয়া থেকে মন্দারমণি পর্যন্ত নতুন রাস্তা তৈরির জন্যও পর্ষদের পক্ষ থেকে রাজ্যের পর্যটন দফতরের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে বলে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই রাস্তা তৈরি হলে পর্যটকদের দিঘা থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে শঙ্করপুর যেতে হবে না। বরং উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সহজেই শঙ্করপুর পৌঁছে যাবেন।” দিঘায় মেরিন অ্যাকোয়ারিয়ামের কাছে পার্ক তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন শিশিরবাবু।

পর্যটকদের জন্য জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে ঢোকার নতুন প্রবেশপথ চালু করল বন দফতর। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জঙ্গলে ঢোকার রাস্তাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেন। বন দফতর সূত্রের খবর, মাদারিহাটের পাশাপাশি ওই রাস্তা দিয়ে জিপ সাফারি চালু হবে। গ্রামের পাশে বন দফতরের কাউন্টার থেকে হাতির পিঠে চড়ার টিকিটও পাবেন পর্যটকেরা। আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার থেকে আসা পর্যটকরা মাদারিহাট থেকে তুলনামূলক অনেক অল্প সময়ের মধ্যে শালকুমারহাট গ্রাম থেকে হাতিতে চড়া ও জিপ সাফারির সুবিধা পাবেন। হিতেনবাবু বলেছেন, “এ বার কেবল জলদাপাড়া বেড়াতে এসেছেন প্রায় ১.২৫ লক্ষ পর্যটক। বন দফতরের ওয়েবসাইটে নতুন প্রবেশের পথটি তুলে ধরা হবে। আগামী বছর পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে বলে আমরা আশা করছি।” রাজ্যের উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং সুন্দরবনে পর্যটকদের থাকার এবং ঘোরার জন্য কী কী ব্যবস্থা রয়েছে তা তথ্যচিত্র তৈরি করে তুলে ধরার কথাও এ দিন বন কর্তারা জানিয়েছেন। বন দফতর সূত্রের খবর, শালকুমারহাট থেকে সকালে দু’বার ও বিকেলে এক দফায় পর্যটকদের জলদাপাড়ার জঙ্গলে ঘোরানোর জন্য ৬টি জিপের ব্যবস্থা করেছে বন দফতর। মাদারিহাট ও শালকুমার দুই জায়গা থেকে যে পর্যটকেরা জঙ্গল সাফারিতে যাবেন তাঁদের একই রুটে জিপ ঘোরাবে। গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে হোম ট্যুরিজমের মাধ্যমে পর্যটকদের রাত কাটানোর জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে এই পুজোর আচারে বিশেষ কোনও ফারাক নেই। প্রতি বছর বৈশাখের শেষ কিংবা জ্যৈষ্ঠের শুরুতে জাহ্নবী তিথিতে হওয়া জয়দুর্গা পুজোর বিশেষত্ব রয়েছে প্রতিমাতে। সিংহবাহিনী মেঘবরণ চতুর্ভুজা দেবীর ডান পাশে রয়েছে লক্ষ্মী, বামে সরস্বতী। কার্তিক ও গণেশের পরিবর্তে লক্ষ্মীর পাশে জয়া, সরস্বতীর পাশে বিজয়া রয়েছে। নীচে মহেশ্বর, বিষ্ণু, ব্রহ্মা, ইন্দ্র। সবার উপরে শ্রীকৃষ্ণ। এ ছাড়াও রয়েছে নিতাই, গৌর, জগাই, মাধাই, প্রহ্লাদ ও হনুমানের মূর্তি। প্রচলিত আছে ১৭৯ বছর আগে ওই পুজোর প্রচলন করেন স্থানীয় জমিদার আমেদ সাহ ওরফে আহমেদ সাহ। যাঁর নামে আহমদপুর বা আমোদপুর হয়েছে বলে মনে করা হয়ে থাকে। জমিদারি গিয়েছে। জমিদারের অস্তিত্বও নেই। কিন্তু জয়দুর্গা রয়ে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওই দেবীর নাম অনুসারে এলাকায় গড়ে উঠেছে জয়দুর্গা হাইস্কুল, জয়দুর্গা গার্লস হাইস্কুল, জয়দুর্গা গ্রন্থাগার, জয়দুর্গা টাউন ক্লাব-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ৭৯ বছরের নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, ৬০ বছরের নকুল গড়াইয়া বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা পুজোর দায়িত্ব তুলে নেওয়ার পরে ব্যবসায়ীরা প্রতিটি জিনিস বিক্রির সময় লাভের একটা অংশ তুলে রাখতেন। তা দিয়েই পুজোর ব্যবস্থা করা হত। বর্তমানে চাঁদা তুলে পুজো হয়।”

কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের জন্মসার্ধশতবর্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশের আবেদন পেতেই মহারাজের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে উদ্যোগী হল ডাক বিভাগ। আধুনিক কোচবিহারের রূপকার বলে পরিচিত নৃপেন্দ্র নারায়ণের ছবি সম্বলিত স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশের সম্ভবনা ঘিরে আশার আলো দেখছেন জেলার বাসিন্দারা। হেরিটেজ সোসাইটি সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেছেন, “মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ বাংলার ক্রীড়া ক্ষেত্র ও উত্তর পূর্ব ভারতে শিক্ষা প্রসারেও প্রচুর অবদান রেখেছেন। সে সব মাথায় রেখেই বহু আগেই মহারাজার স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ হওয়া উচিত ছিল।” তবে ডাক বিভাগের পাঠানো নির্দেশিকা মেনে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ বিষয়ক তথ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে হেরিটেজ সোসাইটি। হেরিটেজ সোসাইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৮৬২ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। গত বছর মহারাজার জন্মদিনে কোচবিহার জুড়ে সাড়ম্বরে তাঁর জন্ম সার্ধশতবর্ষের অনুষ্ঠান হয়। এর পরেই গত ১০ মে ডাক বিভাগে সোসাইটির দিনহাটার সম্পাদক প্রস্তাব পাঠান। সেখান থেকেই নির্দিষ্ট ভাবে প্রস্তাব পাঠানোর পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডাক টিকিটের নাম, কবে সেটা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে, সেটির দাম কত করা যাবে এ সব নিয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।

দু’দশক পরে হাওড়া জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন ভাবে সংযোজিত হতে চলেছে বাগনানের মানকুর। রূপনারায়ণের ধারে তাদের একটি জীর্ণ ডাকবাংলোকে ভেঙে ফেলে দোতলা ভবন তৈরিতে হাত দিয়েছে সেচ দফতর। সংলগ্ন এলাকার পার্কটিও সংস্কার করা হবে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি আধিকারিকদের জন্য তৈরি হলেও ওই ভবনে পরে পর্যটকেরাও থাকতে পারবেন। শীতের মরসুম বা সপ্তাহান্তের ছুটিতে হাওড়ার গাদিয়াড়া, গড়চুমুক, আটান্ন গেট বা ফুলেশ্বরে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। দু’দশক আগে মানকুর গ্রামের পাশে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া সেখানকার ডাকবাংলোতেও তেমনই ভিড় জমত বলে এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সংস্কারের অভাবে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিক থেকে ডাকবাংলোটির ভগ্নদশা শুরু হয়। সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা ওখানে একটা দোতলা বাংলো বাড়ি করব। থাকবে গাড়ি রাখার ব্যবস্থাও। সরকারি আধিকারিকেরা ছাড়াও এখানে ৮-১০ জন থাকতে পারবেন।” তৈরির পরে বাংলোটি পুরোদমে চালু হয়ে গেলে শীতের মরসুমে ফের মানকুরে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে বলে মনে করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের মতে, নদীর ধারে মনোরম পরিবেশে গাদিয়াড়া, গড়চুমুক, আটান্ন গেট বা ফুলেশ্বরের পাশেই তখন স্থান হবে মানকুরের।

‘স্বর্ণযুগে’র স্বর্ণমুদ্রা। মুর্শিদাবাদের গণকর ও উমরপুর এলাকায় রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীরাই সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন গুপ্তযুগের অন্তত শ’দেড়েক স্বর্ণমুদ্রা। মুদ্রার ছবি দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এগুলি চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের গুপ্ত রাজাদের আমলের। রাজ্য প্রত্ন দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় জানিয়েছেন, এই এলাকার কাছেই ষষ্ঠ শতাব্দীতে শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ। তিনি বলেন, “এ বার এই মুদ্রাগুলিও পাওয়ার পরে তাই ভাগীরথীর ধারে ওই এলাকা গুপ্তযুগের একটি বড় নগর বা বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে অনুমান করা যায়।” তাঁর কথায়, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মুদ্রাগুলি প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের। তাই দীর্ঘকাল ধরেই এই মুদ্রাগুলি এই এলাকায় প্রচলিত ছিল। সেক্ষেত্রে এই এলাকায় গুপ্তযুগের প্রভাবও যে অনেকদিন ধরেই ছিল, তা-ও বলা যায়।” মুদ্রাগুলিতে উৎকীর্ণ ধনুকপাণি রাজার বিপরীতে রয়েছেন যে নারী, তিনি মহিষীও হতে পারেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, “এই ধরনের রাজা-রানি উৎকীর্ণ করা মুদ্রা প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলেই হওয়া সম্ভব। এখানে ‘চন্দ্র’ কথাটাও রয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ‘শ্রীবিক্রমঃ’ কথাটাও উৎকীর্ণ রয়েছে। তা থেকে আবার মনে হয় এই মুদ্রা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের।” সুরেশবাবু বলেন, “ওই মুদ্রাগুলির একটিতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে ‘কাচ’ বলে গুপ্ত রাজার নাম। কাচকে কেউ কেউ সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন। সমুদ্রগুপ্তের আর একটি পরিচয় ‘সর্বরাজোচ্ছেত্তা’-ও ওই মুদ্রায় উৎকীর্ণ রয়েছে। তাতে মনে হচ্ছে মুদ্রা সমুদ্রগুপ্তেরই হতে পারে।”

পুজো শুরুর আগেই পৌঁছে যেতেন ১০৮ জন ঢাকি। তাঁদের আসতে হত, কারণ, ঢাকি-বরণ না করে উৎসবের সূচনাই যে করা যেত না। তবে তা প্রায় ছ’দশক আগের কথা। এখন ঢাকির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২। তা বলে রেওয়াজ পাল্টায়নি, ভক্ত সমাগমও কমেনি সাধক কবি ভবা পাগলার ভবানী পুজোয়। এলাকার প্রবীণেরা জানান, ঢাকার আমতা গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন ভবেন্দ্রমোহন চৌধুরী। ছোট থেকেই ভবানীর সাধক তিনি। গান, কবিতা থেকে শ্লোক লেখা, সবেতেই বেশ দক্ষ ছিলেন। স্বাধীনতার পরে ওপার বাংলার ভিটে ছেড়ে পরিবার নিয়ে চলে আসেন কালনায়। শহর লাগোয়া হাসপুকুর এলাকায় থাকতে শুরু করেন। ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে তৈরি করেন ভবানী মন্দির। কাশী থেকে কষ্টিপাথর আনিয়ে কলকাতার এক শিল্পীকে দিয়ে তৈরি করান প্রতিমা। গান, কবিতা লেখাও চলত সমান তালে। নিজের হাতে ভক্তদের পাঠানো চিঠির উত্তর দিতেন। তাঁর লেখা প্রায় ১২ হাজার গান সংরক্ষিত রয়েছে তাঁর পরিবারের কাছে। বছরের প্রতি দিন পুজো হলেও মহাপুজোর আসর বসত বৈশাখের শেষ শনিবার। এখনও তাই। আগের মতোই দেশ-বিদেশের প্রচুর মানুষ এসে যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। ভবানী দেবীর বিষ্ণুরূপ। তাঁর হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম। মহাপুজো শুরুর আগের দিন দুপুরে দেবীকে ‘বিষ্ণুরূপ’ পরিত্যাগ করানো হয়। উৎসবের সাত দিন তিনি থাকেন নিরাবরণা। সাধক কবির নাতি রণজিৎ চৌধুরি বলেন, “সপ্তাহ খানেক পর মা ভবানী আবার শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম হাতে বিরাজ করবেন। ব্যতিক্রম শুধু এই সময়টুকু। দাদুর আমল থেকেই এ রেওয়াজ চলে আসছে। দাদু বলতেন, মা বিশ্বপ্রসবিনী। তাই পোশাক পরার সময় নেই।” এ দিনই সন্ধ্যায় হয় ঢাকি-বরণ।

খড়্গপুর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে কেশিয়াড়ি ব্লকের গগনেশ্বর গ্রামে প্রাচীন ইতিহাসের বহু উত্থান-পতনের স্মৃতিবিজড়িত কুরুমবেড়া দুর্গ। ১৯৫৮ সালের আইনানুযায়ী ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ ওই দুর্গ অধিগ্রহণ করে। কুরুমবেড়া দুর্গের প্রতিটি অংশেই রয়েছে ইতিহাসের হাতছানি। ওই দুর্গের নির্মাণ নিয়েও বহু মতো প্রচলিত। ইংরেজরা জেলার গেজেটিয়ার রচনার সময়ও এটিকে দুর্গ বলেই উল্লেখ করেছে। এই দুর্গে আসতে হলে খড়্গপুর-বেলদা রুটের বাসে কুকাই নেমে পশ্চিমে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে গগনেশ্বরে আসতে হয়। ওড়িশি স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত আয়তাকার এই সৌধটির চার দিকেই প্রায় আট ফুট প্রশস্ত খোলা বারান্দা। এবড়ো-খেবড়ো ঝামা পাথরের উপর চুন-বালির পলেস্তারা। ১৪৩৮ থেকে ১৪৭০ সালের মধ্যে ওড়িশার রাজা কপিলেন্দ্র দেবের আমলে নির্মিত হয় এই দুর্গ। ইতিহাসবিদ রাখালদাস বল্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, গজপতি বংশের রাজা কপিলেন্দ্র দেবের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল বর্তমান হুগলি জেলার দক্ষিণ অংশ মান্দারণ থেকে দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ পর্যন্ত। সেকালে কেশিয়াড়ি ও পাশাপাশি গগনেশ্বর ছিল তসর-সিল্ক উৎপাদনের বড় কেন্দ্র। ব্যবসা-বাণিজ্যের দৌলতে এটিকে ঘিরে একদা গড়ে উঠেছিল সমৃদ্ধ জনপদ। কপিলেন্দ্র দেবের রাজত্বকালে এমন বহু দেবালয় নির্মিত হয়েছিল। কুরুমবেড়া তার অন্যতম। এই সৌধের পূর্ব দিকে রয়েছে একটি দেবালয়ের ধ্বংসস্তূপ। মন্দিরকে ঘিরে চারপাশে শরণার্থীদের থাকার জন্য ঘরও নির্মিত হয়েছিল। ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রণেতা যোগেশচন্দ্র বসু লিখেছেন, “...মন্দির গাত্রে উড়িয়া ভাষায় লিখিত যে প্রস্তর ফলকখানি আছে, তাহার প্রায় সকল অক্ষরই ক্ষয় হইয়া গিয়াছে, কেবল দু’একটি স্থান অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট আছে, উহা হইতে ‘বুধবার’ ও ‘মহাদেবঙ্কর মন্দির’ এই দুইটি কথা মাত্র পাওয়া যায়।” সৌধের প্রাঙ্গণের পশ্চিম দিকে রয়েছে তিন গম্বুজ যুক্ত মসজিদ। একদা জেলা গেজেটিয়ারে লেখা হয়েছিল, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জনৈক মহম্মদ তাহির এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।