‘ওল্ড পি ডব্লিউ ডি ভবন’ শতাব্দী প্রাচীন এই ভবনটি কোচবিহার শহরে রাজ ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন। সুনীতি দিঘি তথা বৈরাগী দিঘির পূর্ব দিকে এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল কোচবিহার রাজপ্রাসাদ নির্মাণকালে ইউরোপীয় স্থপতিদের বসবাসের জন্য। মেসার্স মেরিলিয়ার অ্যান্ড এডওয়ার্ড নামে এক ঠিকাদারি সংস্থা দুটো ভবন নির্মাণ করেন আনুমানিক ১৮৮২ সালে। ১৮৮৭ সালে কোচবিহার রাজ প্রশাসন ভবন দু’টি ২০,০০০ টাকায় কিনে নেয় এবং ১৮৮৮ সালের ১৫ জুন ভবন দু’টি নিয়ে একটি কলেজ স্থাপন করেন। নাম রাখা হয় ভিক্টোরিয়া কলেজ। ভিক্টোরিয়া কোচবিহার রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আন্তরিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। সেই কারণে নৃপেন্দ্রনারায়ণ রানি ভিক্টোরিয়ার নামে কলেজের নামাঙ্কন করেন। ১৬ ছাত্র নিয়ে কলেজটি শুরু হয়। পরে অসম, বঙ্গ, রংপুর, রাজশাহী ছাত্ররা এসে এই কলেজে অধ্যয়ন শুরু করল। |
ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন এম জি সি গডলি। ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রথম থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন স্বীকৃত। সে সময় বি এ পরীক্ষার্থীদের কলকাতায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়াতে হত। এই অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোচবিহারে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুরোধ সসম্মানে রক্ষিত হয়েছিল। ১৮৭৮ সলে রাজশাহী কলেজের প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর সমগ্র উত্তরবঙ্গ ও অসম অঞ্চলে সকলের উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠিত হয় ভিক্টোরিয়া কলেজ। এই কলেজে পরপর তিন জন ইউরোপীয় অধ্যক্ষের পর প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ হলেন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের জ্ঞান ভাণ্ডারের ধারক ও বাহক পণ্ডিত প্রবর আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। তিনি সুদীর্ঘ ষোলো বছর অধ্যক্ষ পদ অলঙ্কৃত করেন এবং ভিক্টোরিয়া কলেজকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করান। ১৮৯৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে বাড়ি দু’টির একটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। সে সময় ভিক্টোরিয়া কলেজ অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। অন্য ভবনটি পরবর্তী কালে পূর্ত বিভাগের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৪২ সালে এই ভবনের পাশেই পূর্ত বিভাগের অফিস নির্মিত হলে এই ভবনটিকে বর্তমানে পূর্ত বিভাগের তোর্সা ব্রিজ কনস্ট্রাকশন ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারের অফিস হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে অবশ্য এই ভবনের কাঠামোর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
ইতিমধ্যে এই ভবনটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী এবং দফতরের সচিব। এই ভবনের পুরোনো আদল ফিরিয়ে দিয়ে ওখানে কোচবিহারের রাজকীয় ইতিহাস তুলে ধরার জন্য একটি পূর্ত সংগ্রেহশালা তৈরির সবুজ সংকেত দিয়েছেন পূর্ত দফতর। আশা করা যায় অদূরভবিষ্যতে ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ইতিহাস তুলে ধরবে। |
লেখা ও ছবি: গৌতমী ভট্টাচার্য
|
সম্প্রতি দিনহাটা বয়েজ রিক্রিয়েশন ক্লাব ‘উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান’ শীর্ষক এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করে। উদ্বোধক উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সমীর দাস বলেন, “উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের গতি সত্তরের দশক থেকে উঠে আসে। উন্নয়নের প্রশ্নে পরিকল্পনা কমিশন আলাদা করে কখনও কিছু ভাবেনি। বিভিন্ন দিকে উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকলেও পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।” মুখ্য বক্তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দ্যুতিশ চক্রবর্তী পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যে উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে তার মধ্যে বৈষম্য থেকে গিয়েছে। |
সমাধান হিসেবে ক্ষুদ্র ও কৃষিভিত্তক শিল্পকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ আলোচক সৌমেন নাগ কলকাতার কেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। সভাপতি আনন্দগোপোল ঘোষ বলেন, চারটি বৈদেশিক রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত উত্তরবঙ্গের সমস্যা ভারতবর্ষ থেকে আলাদা। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এই রাষ্ট্রগুলি থেকে ক্রমাগত লোক আসার ফলে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার এই বাড়তি জনসংখ্যার জন্য বাজেটে কখনও আলাদা অর্থ বরাদ্দ করেনি। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের ব্যাপারটি তাঁর কাছে ফুটো কলসিতে জল ঢালার মতো। ২১ জন গবেষক, অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও সাংবাদিক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। |
নাম ‘দেবীডুবা’। অনেকেই মনে করেন বর্তমানে আধ কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদী এক সময় এখান দিয়েই বইত। তখনকার পুনর্ভবা ছিল স্রোতস্বিনী। হয়তো এখানে দেবী বিসর্জন দেওয়া হত। ২০০৭ সালে তপন থানার বজরাপুকুর এলাকার এই জায়গায় স্থানীয় মানুষজন মাটি কাটতে গেলে মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসে লম্বায় প্রায় ৪৫ ফুট ও চওড়ায় প্রায় ২০ ফুট মাপের একটি দ্বিতল নৌকা। |
নৌকায় গোটা গাছের গুড়ি পাটাতন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছিল পিতল ও লোহার অলঙ্করণ। নৌকাটিকে তোলা বা সংস্কার করার আগেই বর্ষা নামায় জলের নীচে চলে যায় এটি। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে স্থানীয় মানুষ এই অভিনব নৌকাটির আবির্ভাব স্মরণে পুণ্যস্নান সারে। বসে যায় মাঝারি মাপের মেলা। মানুষের কাছে পরিচিত ‘গঙ্গামেলা’ নামে। |
লেখা ও ছবি : জয়ন্ত আচার্য |