মণিপুরে জঙ্গি-সন্ত্রাসের প্রভাব পড়েছে নাচুনে হরিণের ‘পরিবারে’ও।
রাজ্যের বন দফতরের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এমনই কথা জানানো হয়েছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, লোকটাক হ্রদের কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানের ভাসমান তৃণভূমিতে (স্থানীয় ভাষায় ‘ফুমদি’) গত দশ বছরে সাঙ্গাই বা নাচুনে হরিণ সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১০টি। ২০০৩ সালে ওই উদ্যানে ১৮০টি নাচুনে হরিণ ছিল। এ বছর মার্চ মাসে হওয়া পশুসুমারি অনুযায়ী, তা এখন ২০৬।
বনকর্তারা বলছেন, ২০০৩ সালের ওই সুমারির পরপরই কেইবুল লামজাও উদ্যান-সহ ২৪৬ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত লোকটাক হ্রদের অনেকটাই চলে গিয়েছিল জঙ্গিদের দখলে। সে সব অঞ্চলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সেনা অভিযান চালানো হয়। সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের প্রভাব পড়ে নাচুনে হরিণ অধ্যুষিত অরণ্যেও। বিস্ফোরণে পুড়ে যায় ভাসমান ওই তৃণভূমির অনেক জায়গাই। বনকর্তাদের বক্তব্য, সন্ত্রাসের জেরে প্রাণ হারায় অনেক নাচুনে হরিণও। |
বন দফতর এবং একটি পশুপ্রেমী সংস্থার উদ্যোগে দেশের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যানে সাম্প্রতিক সুমারি অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে ২০৬টি সাঙ্গাই, ২১২টি হগ-ডিয়ার এবং ২৬৯টি বুনো শুয়োর রয়েছে। ২০৬টি সাঙ্গাইয়ের মধ্যে ৯০টি পুরুষ, ৮৯টি স্ত্রী ও ২৭টি শাবক। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকায় ছিল নাচুনে হরিণের নাম। ওই সময় কেইবুলের ভাসমান তৃণভূমিতে তার দেখা মেলে। গোটা বিশ্বে এই উদ্যানই সাঙ্গাইয়ের একমাত্র প্রাকৃতিক বিচরণস্থল।
সাঙ্গাই বিশেষজ্ঞ সামুনগৌ জানান, ভাসমান ওই তৃণভূমির সীমিত পরিসরে থাকে সাঙ্গাইরা। তাদের সংখ্যাও কম। সে কারণে নিজেদের পরিবারের মধ্যেই যৌন সম্পর্ক হয়। জিনঘটিত কারণে তাই ওই হরিণের আকার ক্রমশ ছোট হচ্ছে। কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল এবং ‘লোকটাক ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র প্রকল্প আধিকারিক টি ইবোবির মতে, লোকটাকের আশপাশের মৎসজীবীরা জলে রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। ওই বিষের প্রভাব পড়ছে সাঙ্গাই বংশেও।
প্রশাসনের অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘অল লোকটাক লেক ফিশারমেন্স ইউনিয়ন’। তাঁদের বক্তব্য, “জলই মৎসজীবীদের জীবিকার একমাত্র উপায়। কী কারণে তাঁরা জলে বিষ মিশিয়ে নিজেদের পরিবেশ নষ্ট করবেন।” মৎসজীবীদের ওই সংগঠন কেন্দ্রের কাছে, লোকটাকের বিষক্রিয়া নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। |