জীববৈচিত্র পুরস্কার
এক জন প্রাণী বাঁচান, অন্য জন বাবার স্মৃতি
লাবাদাড় হাতড়ে নধর একটি গোসাপকে পাকড়াও করেছিলেন জনা বিশেক আদিবাসী যুবক। বেঁধেধরে নিয়েও যাওয়ার ব্যবস্থাও করে ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। আচমকাই কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে তাঁদের পথ আটকালেন এক যুবক। তার পর বিস্তর ঝগড়া করে গোসাপটিকে ছিনিয়ে নিলেন ওই যুবক। ছেড়ে দিলেন গোসাপের পরিচিত জলাবাদাড়ের আশ্রয়েই।
শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, হাওড়ার পাঁচলা এলাকার পরিবেশকর্মী ইন্দ্রজিৎ আদকের ঝুলিতে এমন অভিজ্ঞতা আরও রয়েছে। তাঁর কথায়, “এক বার তো এক দল শিকারীর সঙ্গে প্রায় মারামারি লেগেই গিয়েছিল। ভাগ্য ভাল, বড় ধরনের গোলমাল বা রক্তারক্তি পর্যন্ত তা গড়ায়নি।”
এই ভাবেই কখনও উদ্ধার করেছেন কচ্ছপ, টিয়া বা ভাম। আবার কখনও জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করেছেন মেছোবেড়াল, হিমালয়ান ঝুঁটিবিহীন শজারু, কখনও বা জলাবাদাড়ে ঘুরতে ঘুরতেই খোঁজ পেয়েছেন বিরল প্রজাতির সাপের। এবং এই ধরনের কাজের জন্যই বুধবার আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র দিবসে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিল পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদ। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার -সহ পর্ষদ ও পরিবেশ দফতরের কর্তাব্যক্তিরা।
শেখ এক্রাম, ইন্দ্রজিৎ আদক।—নিজস্ব চিত্র
ইন্দ্রজিৎ জানান, পাঁচলা-ডোমজুড় এলাকায় প্রচুর জলাজমি রয়েছে। আর সেখানেই রয়েছে মেছোবেড়াল, হিমালয়ান ঝুঁটিবিহীন শজারু, গোসাপের মতো প্রাণী। “এক দিকে নগরায়নের বিস্তার, অন্য দিকে চোরাশিকার, দু’য়ের দাপটে এই প্রাণীরা বিপন্ন হয়ে পড়ছে।”বলছেন ইন্দ্রজিৎ। এবং এই প্রাণীদের পাশাপাশি বিপন্ন হয়ে পড়ছে কয়েক প্রজাতির বিষধর ও বিষহীন সাপ, একশোরও বেশি পাখি। ইন্দ্রজিতের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজের জন্য পুরস্কৃত হয় মধ্যমগ্রাম পুরসভার জীববৈচিত্র তত্ত্বাবধায়ক দলকে-ও।
তবে শুধু বনপ্রাণী সংরক্ষণেই এ দিন আটকে ছিল না জীববৈচিত্র দিবসের অনুষ্ঠান। না হলে বাবার স্মৃতি আঁকড়ে পুরনো চাল সংরক্ষণকারী শেখ এক্রামের কথা জানতেই পারতেন না শহুরে নাগরিকেরা। এবং প্রায় হারিয়ে যাওয়া চাল সংরক্ষণের জন্যই পুরস্কার পেলেন দাঁতনের বামুনদা গ্রামের এই কৃষক।
পর্ষদের এক কর্তা বলছিলেন, শেখ এক্রাম এখনও ৮ বিঘা জমিতে ‘হাইব্রিড’ চালের চাষ করেননি এবং সেই কারণেই বোধ হয় এখনও হারিয়ে যায়নি নিমাইশাল, ধুলিয়া বা ভুতিয়ার মতো চাল। শুধু তাই নয়, কেউ এই ধানের বীজ চাইলে তা বিনি পয়সাতেই দিয়ে দেন তিনি। এক্রামের কথায়, “আমার বাবা শেখ সাহেবজান এই চালগুলি চাষ করতেন। মারা যাওয়ার পর আমি চাষ শুরু করি। এখনও করছি। অন্যরাও যাতে এই চাল চাষ করে, তার জন্যই বীজ দিয়ে দিই।” এ দিন জনে জনে এই চালের কথাই বলে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। বললেন, “এতে তেমন সার লাগে না, ফসলের খরচ-ও কম হয়।” কিন্তু এ সবের বাইরে গিয়ে তিনি পুরনো চালকেই বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি এবং বাবার মন্ত্র দিয়ে যাচ্ছেন নিজের পাঁচ ছেলের কানেও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.