পুজোর আর বাকি মাত্র চার মাস। পর্যটনের নিরিখে এ রাজ্যকে তুলে আনতে পুজোর দিনগুলিকেই ‘পাখির চোখ’ করতে চাইছে সরকার। দেশীয় পর্যটকের নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ নবম। বিদেশি পর্যটকের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে। মহাকরণ সূত্রের খবর, এই দুই তালিকায় রাজ্যের অবস্থানকে উপরে তুলতে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত।
ঠিক হয়েছে, দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে দেশের ছ’টি রাজ্যে বিশেষ প্রচার-অভিযান চালাবে রাজ্য সরকার। বিদেশি এবং ভিন্ রাজ্যের পর্যটকদের টানতে এই প্রচার চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (ফিকি)-কে। রাজ্যের পর্যটনসচিব বিক্রম সেন বলেন, “দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু এবং লখনউ এই ছ’টি শহরে রোড-শো হবে।” তিনি জানান, স্লোগান হিসেবে বাছা হয়েছে ‘পুজোয় মা-কে দেখতে চলুন কলকাতায়’ বা ‘এ বার আসুন মায়ের শহরে’। দিল্লি থেকে ফোনে ফিকি-র অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী বলেন, “অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে পর্যটন-প্রসারে এ ভাবে আমরা হাত মেলানোর সুযোগ পাইনি।” এ ব্যাপারে এ রাজ্যের অভিজ্ঞ ও সুপরিচিত কিছু পেশাদার সংস্থার সহায়তা নেওয়া হবে বলেও সরকারি সূত্রের খবর।
ট্রেন অথবা বিমানের টিকিট কাটা থেকে এ শহরে হোটেলে রাখা পুরো কাজটাই হবে নির্দিষ্ট প্যাকেজের মাধ্যমে। মহাকরণ সূত্রের খবর, এ বিষয়ে কথা হয়েছে রেলের সঙ্গেও। এ রকম পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনে বাড়তি কামরার ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে তারা। এর আগে সিআইআই নানা ভাবে এ রাজ্যে পর্যটক বাড়াতে সক্রিয় হয়েছে। সংগঠনের আঞ্চলিক অধিকর্তা সৌগত মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি ব্যবসায়ীদের এনে এ শহরটা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ বার ১৯টি দেশের ৭৩ জনকে আনতে পেরেছি।” তিনি জানান, দেশের ৬৬ জন ব্যবসায়ী সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে গিয়েছেন।
রাজ্যের তরফে তুলে ধরা হচ্ছে শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবা ট্যুরিজম কমপ্লেক্স। সেখানে গল্ফ ট্যুরিজম-এর সুযোগ থাকবে। দার্জিলিং থেকে দিঘা, মুর্শিদাবাদ থেকে ঝাড়গ্রাম, সর্বত্রই তৈরি করা হবে পর্যটন কেন্দ্র। আরও বেশি হেলিকপ্টার-পরিষেবা চালু করতেও উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য।
কলকাতায় উচ্চ মানের হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিষেবা থাকায় এখানে চিকিৎসা-পর্যটন (মেডিক্যাল-ট্যুরিজম)-এর প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। বুধবার মহাকরণে বিমান সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের ডেকে এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন ওই বৈঠকে যোগ দিতে এসে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল জানান, নতুন কোনও বিমান সংস্থা কলকাতা থেকে উড়ান চালাতে চাইলে তাদের করের বোঝা থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। বিমানের জ্বালানির উপরে রাজ্য যে কর নেয়, নতুন বিমান সংস্থার ক্ষেত্রে তা-ও কম করা হতে পারে বলে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। এ সমস্তই করা হচ্ছে রাজ্যের পর্যটনকে আরও বেশি চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে।
কলকাতা থেকে উড়ান বাড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ইন্ডিগো। মমতা চাইছেন, এয়ার ইন্ডিয়াও এই শহর থেকে উড়ান বাড়াক। কলকাতা হয়ে গয়া ও বুদ্ধগয়ামুখী বৌদ্ধ পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আরও উড়ান বাড়ানোর কথাও তিনি বলেছেন। এক মাসের মধ্যে কলকাতা থেকে দুর্গাপুরের মধ্যে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা হবে বলেও এ দিন আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে ফেসবুকে মমতা জানান, এ দিনের বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। পর্যটনের কথা মাথায় রেখে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও তিনি গঠন করে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, সেই কমিটি প্রতি তিন মাসে এক বার করে বৈঠক করে উন্নয়নের হাল খতিয়ে দেখবে।
পর্যটন দফতরের হিসেবে, দেশীয় পর্যটকের নিরিখে ভারতের প্রথম তিন রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাডু। এর পরে পশ্চিমবঙ্গের আগে আছে যথাক্রমে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও উত্তরাখণ্ড। বিদেশি পর্যটকের নিরিখে এ রাজ্যের আগে আছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং তামিলনাডু। বিভিন্ন বিমান সংস্থা ও ট্র্যাভেল এজেন্টের মতে, এই অবস্থা থেকে উঠে আসতে হলে রাজ্যে পর্যটন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতার বাইরে রাজ্যের অন্যত্র বিদেশি পর্যটকদের থাকার মতো উচ্চ মানের হোটেল নেই। রাস্তার অবস্থাও বেশ খারাপ। আপাতত এই দু’টি পরিকাঠামো গড়ে তোলা না হলে বিদেশি পর্যটকদের টানা যাবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। |