বিলম্বিত জামাইবরণ
সপ্তাহের শেষের দিকে পড়ায় খুব আয়েশ করে যে কাটানো গিয়েছে জামাইষষ্ঠী, তেমনটা বোধহয় নয়। কাজেই, সপ্তাহ শেষে খাওয়াদাওয়ার
জোয়ার আসবে যে বাঙালির পাতে, তাতে কোনও সন্দেহ না-রাখাই ভাল। অনেকের হয়তো ‘জামাই আদর’ আপাত ভাবে শেষ হয়েছে,
অনেকের আবার ‘বিলেটেড জামাইবরণ’। ভাতের সঙ্গে আর কী কী পদ সাজিয়ে মন ভরানো যাবে জামাইবাবাজির, সে ভাবনাতেই আপাতত
ডুবে রয়েছে আপনার রান্নাঘর। তবে, জামাইবরণ থাকুক, নাই বা থাকুক— খাওয়ার ব্যাপারে বাঙালির একটা উপলক্ষ হলেই হল।

কচুর লতির ঘণ্ট
উপকরণ
কচুর লতি জিরে, তেজপাতা, ফোড়নের জন্য পেঁয়াজ কুচি টোম্যাটো কুচি কাঁচালঙ্কা সাদা তেল: প্রয়োজন মতো
সরষে বাটা: ১ বড় টেবল-চামচ নারকেল: ১টা (কোরানো) নুন-চিনি: আন্দাজ মতো ঘি: সামান্য
প্রণালী
কচুর লতি ভাল করে ধুয়ে, কুচি করে কেটে সেদ্ধ করে নিন।
সেদ্ধ লতি থেকে ভাল করে জল ঝরিয়ে চটকে মেখে রাখুন।
তেল গরম করে জিরে, তেজপাতা ফোড়ন দিন।
পেঁয়াজ ও টোম্যাটো কুচি হাল্কা করে ভেজে নিন।
এ বার কাঁচালঙ্কা দিতে হবে।
সরষে বাটা ও ১/৪ নারকেল কোরা দিয়ে পুরো মিশ্রণটি ভাল করে কষতে হবে।
এ বার চটকানো লতি এই মিশ্রণে দিতে হবে।
কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করে আন্দাজমতো নুন-চিনি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
উপরে ঘি ও বাকি নারকেল কোরা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।


ছানা দিয়ে এঁচোড়ের কোফতা আর কালিয়া
উপকরণ
ছোট কচি এঁচোড়: ১টা মাঝারি আলু: ১টা
ছানা: ১৫০ গ্রাম (এক কাপ বাড়িতে কাটানো, জল ঝরানো)
বেসন/ময়দা: ৩-৪ চা-চামচ বেকিং পাউডার: ১/৩ চা-চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ আদাবাটা: ১ চা-চামচ
গরমমশলা গুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ নুন: স্বাদ মতো
গরমমশলা: ১/২ চা-চামচ তেল: ২/৩ কাপ


ফোড়নোর জন্য
আস্ত জিরে: ১/২ চা-চামচ তেজপাতা: ২টি
হিং গুঁড়ো: ১/৪ চা-চামচ
গ্রেভির জন্য মশলা
(এক সঙ্গে দিয়ে বেটে নিতে হবে)
আদা: এক ইঞ্চি নারকেল কোরা: ২ চা-চামচ কুচানো টোম্যাটো: ১-২টি
হলুদগুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো: ১ চা-চামচ
জিড়েগুঁড়ো: ১ চা-চামচ ধনেগুঁড়ো: ২ চা-চামচ কাজুবাদাম: ৪টি
টক দই: ২ চা-চামচ জল: ১-২ চা-চামচ

(এক সঙ্গে ফেটিয়ে রাখুন)
ঠান্ডা কড়াইশুঁটি: ১ ছোট কাপ ফ্রিজে রাখা তেল: ২-৩ চা-চামচ
ঘি: ১ চা-চামচ দই: ২ চা-চামচ ক্রিম: ২-৩ চা-চামচ
চিনি: ১ চা-চামচ নুন: স্বাদ অনুযায়ী গরমমশলা গুঁড়ো: আন্দাজ মতো


প্রণালী

প্রথমে এঁচোড় কুরিয়ে প্রেসার কুকারে সামান্য জল ও নুন দিয়ে আলুর সঙ্গে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
ভাল করে জল ঝরিয়ে নিয়ে এঁচোড় ও আলু এক সঙ্গে মসৃণ করে মেখে নিতে হবে। তার পর ছানাও ভাল করে মাখতে হবে এই মিশ্রণের সঙ্গে।
এ বার কোফতার মশলাগুলো মেশাতে হবে নুন-চিনি দিয়ে।
বেসন/ময়দার সঙ্গে বেকিং পাউডার মিলিয়ে কোফতার মশলার সঙ্গে মিশিয়ে নিন।
এ বার এই মাখা থেকে একটু করে লেচি নিয়ে গোল-গোল বড়ার মাপে গড়ে নিতে হবে।
প্যানে ভাল করে তেল গরম করে বড়াগুলো বাদামি করে ভেজে তুলে রাখুন।
এ বার তেল কমিয়ে (২চা-চামচ) ফোড়নের উপকরণগুলো দিতে হবে।
সুগন্ধ বেরোলে বাটা মশলাটা দিয়ে কষতে হবে যত ক্ষণ না তেল থেকে মশলাটা আলাদা হয়।
এ বার জমানো কড়াইশুঁটি দিয়ে মাঝারি আঁচে রাখতে হবে কিছু ক্ষণ।
পরিমাণ মতো গরম জল দিতে হবে। ফুটে উঠলে নুন ও চিনি দিয়ে আঁচ কমিয়ে ৭-৮ মিনিট রাখতে হবে।
এর পর ঢাকা খুলে ফেটানো দই ও ক্রিম দিয়ে ভাল করে ফুটে উঠলে আভেন বন্ধ করে দিন।
অন্য একটি প্যানে ঘি গরম করে গরমমশলা গুঁড়ো হাল্কা করে নেড়ে নিয়ে কোফতার গ্রেভিতে মিশিয়ে দিন।
এ বার গ্রেভি-সহ কোফতা একটি পাত্রে ঢেলে উপরে কুচানো ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

টিপস
বেসন বুঝে নেবেন, যতটা প্রয়োজন। আর সম্পূর্ণ গ্রেভি তৈরি হলে কোফতাগুলো দেবেন, দেওয়ার পর বেশি ফোটাবেন না।

কাঁঠাল বীজের চপ
উপকরণ
সিদ্ধ করা কাঁঠাল বীজ: ১৫-২০টা ব্রেড-ক্র্যাম্ব: ২ কাপ ডিম: ১টি (ডিমের পরিবর্তে দুধ)কিসমিস-কাজু: সামান্য
আদা বাটা: ২ চামচ সেদ্ধ আলু: ১টি নুন: স্বাদ মতো পেঁয়াজ বাটা: ৪ চামচ ধনেপাতা কোঁচানো: সামান্য
গুঁড়ো করা ভাজা মশলা (জিরে-পাঁচ ফোড়ন শুকনো তাওয়ায় নেড়ে): ১ চামচ তেল: ভাজার জন্য পরিমাণ মতো
প্রণালী
সেদ্ধ বীজ বাকি সমস্ত উপকরণের (ব্রেড ক্র্যাম্ব, ডিম বাদে)
সঙ্গে ভাল করে মিহি করে মেখে চপের আকারে গড়ে নিতে হবে।
কড়াইয়ে তেল গরম করে প্রতিটি চপ ডিমে ডুবিয়ে ভাল করে
ব্রেডক্র্যাম্ব লাগিয়ে সোনালি করে ভেজে নিন।
স্যালাডের সঙ্গে পরিবেশন করা যাবে।

শাহি ফিস
উপকরণ
বড় রুই বা মৃগেল মাছ পেঁয়াজ বাটা: ১ টি বড় রসুন বাটা: ১ বড় চামচ আদা বাটা: ১ বড় চামচ
নুন: পরিমাণ মতো চিনি: অল্প একটু হলুদগুঁড়ো: ১ চা-চামচ লঙ্কাগুঁড়ো: ১ চা-চামচ ধনেগুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ
ফ্রেশ ক্রিম: ১ চা-চামচ গরম মশলাগুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ গোটা জিরে: অল্প তেজপাতা: ১টি
প্রণালী
মাছে নুন, হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিতে হবে।
তেলে পেঁয়াজ, রসুন-আদা বাটা ভাল করে কষিয়ে নিতে হবে।
এ বার জিরে, তেজপাতা দিয়ে হাল্কা নাড়াচাড়া করতে হবে।
হলুদ, লঙ্কা, ধনেগুঁড়ো দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ
নাড়াচাড়া করা চিনি-নুন দিতে হবে।
অল্প জল দিয়ে মশলা কষিয়ে তাতে মাছগুলো দিয়ে ফুটতে দিতে হবে।
মাখা মাখা হয়ে এলে উপর থেকে ফ্রেশ ক্রিম মিশিয়ে নিয়ে হবে।
উপর থেকে আরও একটু ক্রিম ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

চিকেন বাদাম পোলাও

গাজরি চিকেন
উপকরণ
বাসমতী চালের ভাত হাড়ছাড়া চিকেনের টুকরো চিনে বাদামগুঁড়ো
লেবুর রস নুন গোলমরিচগুঁড়ো আদাবাটা সয়া সস্ চিলি সস্
কর্নফ্লাওয়ার টোম্যাটো কুচি সবুজ-হলুদ ক্যাপসিকাম কুচি
লঙ্কাকুচি জৈত্রিগুঁড়ো ঘি দুধে গোলা জাফরান (সামান্য) সাদা তেল

উপকরণ
দই দিয়ে মাখানো চিকেন পেঁয়াজ বাটা গাজর বাটা
আদা বাটা রসুন বাটা কাঁচালঙ্কা বাটা শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো
হলুদ গুঁড়ো তেজপাতা গোটা জিরে দারচিনি দই
গোটা এলাচ অলিভ অয়েল অথবা সাদা তেল নুন-চিনি

প্রণালী
চিকেনের টুকরোগুলোকে লেবুর রস, নুন, মরিচগুঁড়ো
দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখতে হবে কিছু ক্ষণ।
এ বার একটা বাটিতে কর্নফ্লাওয়ার গুলে তাতে
আদাবাটা, সয়া সস্, নুন, জৈত্রিগুঁড়ো ভাল করে
মিশিয়ে একটা ব্যাটার বানিয়ে নিন।
এর পর ম্যারিনেট করা চিকেনের টুকরোগুলো
ব্যাটারে ডুবিয়ে সাদা তেলে ডিপ ফ্রাই করতে হবে।
কড়াইতে ঘি দিয়ে তাতে বেশ খানিকটা বাদামগুঁড়ো,
টোম্যাটো কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, জৈত্রিগুঁড়ো, লঙ্কা কুচি,
চিলি সস্ দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন।
ভাত, পরিমাণ মতো নুন, গোলা জাফরান, ভাজা চিকেন
টুকরোগুলো দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
প্রণালী
কড়াইয়ে প্রথমে তেল গরম করে তাতে তেজপাতা,
গোটা জিরে, দারচিনি আর গোটা এলাচ ফোড়ন দিন।
এ বার একে একে কাঁচালঙ্কা বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা,
পেঁয়াজ বাটা ও গাজর বাটা দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন।
এ বার দই দিয়ে মাখানো চিকেন দিয়ে আরও
কিছু ক্ষণ কষিয়ে নিয়ে আন্দাজমতো নুন দিন।
এ বার হলুদ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, অল্প
একটু চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
মিশ্রনটির থেকে তেল ছাড়লে অল্প জল দিয়ে কষতে
থাকুন। এই রকম তিন-চার বার করতে হবে।
এর পর কড়াই ঢাকা দিয়ে চিকেন সেদ্ধ হতে দিন।
চিকেন সেদ্ধ হয়ে গেলে গরম ভাত বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ছানার মোহনভোগ
উপকরণ
ফ্রেশ দুধ: ১ লিটার বা ছানা: ১৫০-১৭৫ গ্রাম চিনি বা আইসিং সুগার: ১৪০-১৫০ গ্রাম
কেশর: ১ চা-চামচ (৩- টেবল-চামচ গরম দুধে ভেজানো) অ্যামন্ড বাদাম কুচানো: ৫ - টা
পেস্তা, কাজু: সাজানোর জন্য ছোট এলাচগুঁড়ো: ১/ চা-চামচ
নাটমেগ/জায়ফল পাউডার: এক চিমটে কেশরী ফুড কালার: ৩- ফোঁটা

প্রণালী
প্রথমে দুধ ফুটিয়ে লেবুর রস দিয়ে ভাল ভাবে ছানা কাটিয়ে নিতে হবে।
জল ঝরিয়ে ছানা ব্লেন্ডারে দিয়ে তার সঙ্গে চিনি, এলাচগুঁড়ো, নাটমেগ বা জায়ফল গুঁড়ো,
দুধে ভেজানো কেশর আর কেশর ফুড কালার দিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।
কাচের পাত্রে ঢেলে ফ্রিজে খানিকটা সময় রেখে কাজু, পেস্তা কুচি দিয়ে গার্নিশ করে পরিবেশন করুন।

কাস্টার্ড-মালাই
উপকরণ
দুধ: ২ ১/২ কাপ ভ্যানিলা কাস্টার্ড পাউডার: ৩ চা-চামচ চিনি: ৪ চা-চামচ কাজুবাদাম
কলাকমলালেবু আঙুর পাকা পেঁপে আপেল
প্রণালী
প্রথমেই একটা পাত্রে দুধ ফুটতে দিন।
দুধ ফুটে এলে তাতে চিনি মিশিয়ে নাড়তে থাকুন।
এর পর একটা ছোট বাটিতে কিছুটা ঠান্ডা দুধের সঙ্গে ভ্যানিলা কাস্টার্ড-পাউডার
মিশিয়ে গুলে নিন এবং ফুটন্ত দুধের মধ্যে যোগ করে নাড়তে থাকুন।
১ মিনিট নাড়ার পর আগুন থেকে সরিয়ে নিন এবং এতে কাজুবাদাম ছড়িয়ে দিন।
একটা পানীয়-পাত্রের মধ্যে নীচের দিকে সব রকম ফল (ছোট টুকরো করে কাটা)
সাজিয়ে উপর থেকে কাস্টার্ড মিশ্রণটি ঢেলে দিন।
এর উপর মনের মতন করে ফল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
অথবা
ফ্রিজে ১ ঘণ্টা রেখে তার পর পরিবেশন করুন ঠান্ডা ঠান্ডা কাস্টার্ড-মালাই।

কচুর লতির ঘণ্ট

দ্যুতি মুস্তাফি, ধানবাদ
ছানা দিয়ে এঁচোড়ের কোফতা ও ছানার মোহনভোগ

শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা
কাঁঠাল বীজের চপ

গীতা হাজরা, চন্দননগর

চিকেন বাদাম পোলাও

সুমনা দে মল্লিক, হায়দরাবাদ

শাহি ফিস ও গাজরি চিকেন

সায়ন্তী ভট্টাচার্য, সুইডেন
কাস্টার্ড-মালাই

অমৃতা পাল, কানাডা

আপনারাও পাঠাতে পারেন নতুন পুরনো ভিন্ন স্বাদের নানা রেসিপি, ছবি-সহ, নীচের ঠিকানায়
হাওয়াবদল, আপনার রান্নাঘর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতির সঙ্গে আপনার ছবি পাঠানো বাধ্যতামূলক।

 
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদল • আপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ