শব্দটি আসলে ‘বেরিয়া’, যার অর্থ ভাজা বা রোস্ট। আর পারসি এই শব্দ থেকেই বিরিয়ানির উত্পত্তি। প্রাচীন পারস্য অর্থাত্ এখনকার
ইরান থেকে বিরিয়ানি শব্দটি এলেও মোগল আমলের রান্নাঘরেই তা পুনরাবিষ্কৃত হয়। সুবাস ভরা লখনউই বিরিয়ানি, হায়দরাবাদী বিরিয়ানি,
করাচি বিরিয়ানি, সিন্ধি বিরিয়ানি, বোম্বে বিরিয়ানি— নামে ও স্বাদে এমনকী গন্ধেও বিরিয়ানির রকমফের ঘটেছে শুধু ভারতে নয়, গোটা
বিশ্বজুড়ে। এখনও এই মোগল-পদকে নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করা হচ্ছে। তেমনই কয়েকটি গবেষণালব্ধ বিরিয়ানি আপনার রান্নাঘরে।

চিকেন বিরিয়ানি
উপকরণ
• চিকেন: ৫০০ গ্রাম • পেঁয়াজ: ৩ টি • রসুন বাটা: ১ টেবল-চামচ • আদা বাটা: ১ টেবল-চামচ • হলুদগুঁড়ো: ১/২ চামচ • লঙ্কাগুঁড়ো: ১/২ চামচ
• ধনেগুঁড়ো: ১ চামচ • জিরেগুঁড়ো: ১ চামচ • চিনি: সামান্য • নুন: পরিমাণমতো • বিরিয়ানি মশলা: ২ চামচ • গোটা গরমমশলা • তেজপাতা: ১টি
• দুধ: ২ টেবল-চামচ • কেশর: ১ চিমটে • গরমমশলাগুঁড়ো: ১ চামচ • ধনেপাতা কুচি • টক দই: ৫০ গ্রাম
• গোলাপ জল: ২ টেবল-চামচ • আলু সেদ্ধ করে কেটে নেওয়া: ১টি • ডিম সেদ্ধ: ২-৩টি • ভাত: প্রয়োজনমতো • কাঁচালঙ্কা চেরা: ২-৩টি

বিরিয়ানি করতে কিছু প্রক্রিয়া আগে থেকে করে নিতে হবে—
• ভাত একটু শক্ত করে নামিয়ে নিতে হবে। গলানো ভাত চলবে না।
• ভাত করার সময় এর সঙ্গে একটা ছোট কাপড়ে গোটা গরমমশলা বেঁধে নিতে হবে।
• আপনার প্রয়োজনমতো পেঁয়াজ কেটে সেটাকে ভেজে নিতে হবে (বেরেস্তার জন্য)।
• আলু ও ডিম সেদ্ধ করে ভেজে নিতে হবে।
• একটা পাত্রে দুধে কেশর ভেজাতে হবে।
• চিকেনের সঙ্গে টক দই মাখিয়ে রাখতে হবে।
প্রণালী
• প্রথমে কড়াইতে তেল দিয়ে তেজপাতা ও গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিয়ে বাকি পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ভেজে সব মশলা দিয়ে চিকেন রান্না করে নিতে হবে।
• চিকেন অর্দ্ধেক সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে একটু বিরিয়ানির মশলা ও ধনেপাতা দিয়ে নাড়িয়ে কিছুটা অংশ তুলে নিন।
• এ বার কড়ায় যে চিকেনটা আছে তার উপর সমান করে ভাত দিয়ে একটি স্তর বানাতে হবে।
• তার উপর ভেজে রাখা পেঁয়াজ, ধনেপাতা কুচি, সেদ্ধ ডিম ও আলু, কাঁচা লঙ্কা কুচি দিয়ে দিন।
• এর উপর একটু বিরিয়ানি মশলা, গরমমশলাগুঁড়ো, দুধে ভেজানো কেশর আর গোলাপ জল ছড়িয়ে দিন।
• এ বার বাকি চিকেন দিয়ে তার উপর ভাত সমান করে দিয়ে আবার স্তর বানিয়ে নিতে হবে।
• এই ভাতের স্তরের উপর আগের মতো আবার সব উপকরণ দিয়ে দিয়ে দিন।
• এই ভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী স্তর বানিয়ে একদম শেষে সামান্য কেশর ও গোলাপ জল ছড়িয়ে দিন।
• এ বার পরিমাণমতো নুন-চিনি ও এক চিমটে বিরিয়ানি মশলা দিয়ে পাত্রের মুখ ঢাকা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট খুব কম আঁচে রেখে দিন।
• মাঝে একটু ভাত নাড়িয়ে নিতে হবে, কিন্তু পাত্রের মুখ খোলা যাবে না।
• এই ভাবে ১০-১৫ মিনিট রান্না করলেই তৈরি চিকেন বিরিয়ানি।
• মটন বা চিকেন কষার সঙ্গে স্যালাড কেটে পরিবেশন করুন।

এই প্রক্রিয়ায় মটন বিরিয়ানিও করা যায়—
সে ক্ষেত্রে মটন আগে রান্না করে প্রেসার কুকারে সিটি দিয়ে নিতে হবে। মটন ম্যারিনেটের সময়ও একটু বেশি লাগবে।

চিংড়ির দম বিরিয়ানি
উপকরণ
• বাগদা চিংড়ি: মাঝারি আকারের পরিষ্কার করা ২৫০ গ্রাম • বাসমতি চাল: ৩৫০ গ্রাম • আলু: ৩-৪ টুকরো
• বিরিয়ানি মশলা— জায়ফল, জয়িত্রী, কাবাব চিনি, ছোট এলাচ, বড় এলাচ, তেজপাতা, সাদা জিরে, সাদা মরিচ: প্রত্যেকটির ২ টুকরো এক সঙ্গে গুঁড়ো করা
• পেঁয়াজ: ২টি— ১টা মাঝারি মাপের কুচি করে কাটা ও ১টা মাঝারি মাপের ফালি করে কাটা
• ঘি: পরিমাণমতো • সাদা তেল: পরিমাণমতো • ছোট এলাচ: ৪ টুকরো • বড় এলাচ: ৪ টুকরো • দারচিনি: ৩/৪ টুকরো (ছোট)
• লবঙ্গ: ৫ টুকরো • সাদা দই: ৫০ গ্রাম • আদা-রসুন বাটা: ১ চা-চামচ • জাফরান/হলুদ ফুড কালার: ১ চিমটে (দুধে ভেজানো)
• গোলাপ জল: ২/৩ ফোঁটা • মিঠে আতর: ২/৩ ফোঁটা • ময়দা: ২০০ গ্রাম (মেখে লেচি করে বিরিয়ানির পাত্রের মুখ আটকানোর জন্য)

প্রণালী
• চাল আলাদা করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন।
• চিংড়ি মাছ দই, আদা-রসুন বাটা ও নুন মাখিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন।
• কড়াইতে ঘি গরম করে কুচানো পেঁয়াজ মুচমুচে করে ভেজে একটা পাত্রে তুলে রাখুন।
• এ বার ডুমো করে কেটে রাখা আলু ভেজে তুলে নিতে হবে।
• কড়াইতে পরিমাণমতো তেল গরম করে অন্য পেঁয়াজ আর মশলা মাখানো চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন।
• এ বার বিরিয়ানি মশলা, ১ ফোঁটা মিঠে আতর, জাফরান/হলুদ ফুড কালার কড়াইতে দিয়ে ভাল করে কষে নিন।
• মশলা থেকে তেল আলাদা হয়ে গেলে আঁচ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কষানোর সময় প্রয়োজন হলে একটু জল দিন।
• আগে থেকে ভাত করে রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে, ভাত যেন শক্ত থাকে।
• ভাত করার সময় জলে ছোট এলাচ, বড় এলাচ, দারচিনি এবং লবঙ্গ দিয়ে দেবেন— এতে ভাতে সুবাস হবে।
• এর পর একটি তলা পুরু পাত্রে ভাল করে ঘি/তেল মাখিয়ে নিন।
• তাতে এক স্তর ভাত এবং তার উপর এক স্তর মশলা দিয়ে কষানো চিংড়ি মাছ, ভাজা পেঁয়াজ ও ভাজা আলু দিন।
• এই ভাবে স্তরে স্তরে বাকি ভাত, চিংড়ি মাছ ও আলু সাজান।
• স্তর সাজানো হয়ে গেলে, উপর থেকে বাকি জাফরান/হলুদ ফুড কালার, ১ ফোঁটা মিঠে আতর, ১ ফোঁটা গোলাপ জল এবং পরিমাণমতো নুন দিতে হবে।
• এ বার এই পাত্রের মুখে ঢাকনা বসিয়ে ময়দার লেচি দিয়ে আটকে দিতে হবে।
• মুখবন্ধ পাত্রটি অল্প আঁচে বসিয়ে দিতে হবে। ২০ মিনিট পর আঁচ বন্ধ করে দিন।
• ময়দার লেচি কেটে ঢাকনা সরিয়ে যে কোনও কাবাবের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

চিংড়ি বিরিয়ানি
উপকরণ
• মাঝারি মাপের চিংড়ি: ৫০০ গ্রাম • বাসমতি চাল: ২ কাপ • বড় পেয়াঁজ: ১ টি • শা জিরে স্টার আনিস: ২টি • তেজ পাতা: ৩ টি • লবঙ্গ: ৫-৬ টি
• গোটা ছোট এলাচ: ৪-৫ টি • বড় এলাচ: ২ টি • দারচিনি: ২ টি স্টিক • গোল মরিচ: ৭-৮ টি • কাবাব চিনি: ৪-৫ টি • টোম্যাটো: ১টি
• জায়ফলগুঁড়ো, জয়িত্রীগুঁড়ো, ঘি, সাদা তেল, নুন, হলুদ, লঙ্কা • দই: ১/২ কাপ • লেবুর রস: ১ চামচ • সেদ্ধ ডিম: ২-৩ টি
• গরমমশলাগুঁড়ো • আদা বাটা: ১/২ চা চামচ • রসুন বাটা: ১/২ চা চামচ • জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো
• দুধে ভেজানো কেশর: সামান্য • গোল্ডেন করে ভাজা শুকনো পেঁয়াজ • পুদিনা পাতা • কমলা রং (দিতে পারেন)

প্রণালী
• চিংড়ি মাছ ভাল করে ছাড়িয়ে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নুন, হলুদ,আদা বাটা, রসুন বাটা, লেবুর রস,
জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে মেখে ৩-৪ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
• বাসমতি চাল ধুয়ে আধ ঘণ্টা বাদে জল ঝরিয়ে তুলে নিতে হবে।
• এ বার যতটা চাল তার দেড় গুণ জল দিয়ে তাতে তেজপাতা,
২টি স্টার আনিস, গোটা গরমমশলা দিয়ে মাঝারি আঁচে জল ফুটিয়ে নিন।
ফোটানোর সময় ঘি বা সাদা তেল দিলে ভাত ঝরঝরে হবে।
• কড়াইতে তেল দিয়ে চিংড়ি মাছ হাল্কা করে ভেজে নিতে হবে।
• এ বার অন্য কড়াইতে তেল/ঘি দিয়ে তাতে সা জিরে, বাকি গোটা মশলা (গোল মরিচ, কাবাব চিনি, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ) দিয়ে দিন।
• সুন্দর গন্ধ বের হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে নিন।
• সুন্দর সোনালি রং ধরলে তাতে টোম্যাটো, নুন, লঙ্কা দিয়ে ভাল করে ভেজে নিন।
• এ বার দই, অল্প জায়ফলগুঁড়ো, জয়িত্রীগুঁড়ো দিয়ে ভাজা চিংড়ি দিয়ে দিন।
• একটু নেড়েচেড়ে তার উপর অর্ধেক ভাত দিয়ে বিরিয়ানি মশলা, পুদিনা পাতা ছড়িয়ে দিতে হবে।
• এ বার বাকি ভাত দিয়ে আঁচ একদম কম করে পাত্রটি ঢাকা দিয়ে দিন।
• ৫-৭ মিনিট এ ভাবেই রেখে দিতে হবে।
• এ বার ঢাকা খুলে অল্প একটু কমলা রং দিয়ে দিতে হবে। কেশরও ছড়িয়ে দিন।
• আগে থেকে শুকনো ভাজা পেয়াঁজ ছড়িয়ে রায়তার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ডিম যোগ করতে চাইলে—
সেদ্ধ ডিম খোসা ছাড়িয়ে অর্ধেক করে কেটে নিন।
নুন-হলুদ মাখিয়ে হাল্কা করে ভেজে ভাতের উপর সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেই তৈরি বিরিয়ানি।
 
ইলিশের বিরিয়ানি
উপকরণ
• গাদা-পেটি এক সঙ্গে রেখে ১ ইঞ্চি মোটা করে কাটা ইলিশ মাছ: ৬ টুকরো • বাসমতি চাল: ২ কাপ • জাফরান: ১ চা-চামচ
• ঘি: ৬ টেবল-চামচ • দুধ: ৪ টেবল-চামচ • আদা বাটা: ১ টেবল-চামচ • ফেটানো টক দই: আধ কাপ • সাদা তেল: আধ কাপ
• গোটা ছোট এলাচ: ৬টি • নুন: স্বাদ মতো • গোটা লবঙ্গ: ৫টি • গোটা জয়িত্রী: ৪টি • জায়ফল-জয়িত্রী গুঁড়ো: আধ চা-চামচ
• আস্ত গোলমরিচ: ১০-১২টি • চিরে নেওয়া কাঁচালঙ্কা: ৮টি • মিহি করে কুচানো ধনেপাতা: আধ আঁটি

প্রণালী
• বাসমতি চাল ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
• জাফরান দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
• গোটা এলাচ, লবঙ্গ, জয়িত্রী আর গোলমরিচ দিয়ে চাল সেদ্ধ করে নিন।
• একটু শক্ত থাকতেই নামিয়ে নিয়ে ভাল করে জল ঝরিয়ে রাখুন।
• মাছের টুকরোগুলোয় অল্প করে নুন-হলুদ মাখিয়ে হাল্কা করে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
• এ বার কড়াইতে আধ কাপ তেল গরম করে আদা বাটা আর নুন দিয়ে ভাল করে কষে নিন।
এ বার আঁচ কমিয়ে ফেটানো দই আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ কষাতে হবে।
• মাছের টুকরোগুলো দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে আঁচ বন্ধ করে দিন।
• এ বার একটা তলা-ভারী ডেকচিতে অর্ধেক ভাত সমান ভাবে ছড়িয়ে দিন।
• মাছের টুকরোগুলো পাশাপাশি সাজিয়ে ঝোলটা ছড়িয়ে দিতে হবে।
• এ বার ৩ চামচ ঘি, ধনেপাতা, জায়ফল-জয়িত্রীগুঁড়ো, জাফরান ছড়িয়ে দিতে হবে মাছের উপর।
• এ বার বাকি ভাত এর উপরে সমান ভাবে ছড়িয়ে দিন, আর তার উপরে আরও এক প্রস্ত ঘি, ধনেপাতা, জায়ফল-জয়িত্রী গুঁড়ো, জাফরান।
• আটার লেচি দিয়ে ডেকচির মুখ ভাল করে বন্ধ করে ১০ মিনিট আল্কা আঁচে বসিয়ে রাখুন।
• পরিবেশন করার আগে ডেকচি ভাল করে নাড়িয়ে ভাত-মাছ মিশিয়ে নিলেই তৈরি ইলিশের বিরিয়ানি।

চিকেন বিরিয়ানি

সায়ন্তী ভট্টাচার্য
সুইডেন
চিংড়ির দম বিরিয়ানি

সৌমা মুখোপাধ্যায়
জেনিভা, সুইত্জারল্যান্ড
চিংড়ি বিরিয়ানি

অর্পিতা সাহা
পোর্টল্যান্ড, ওরেগন
ইলিশের বিরিয়ানি

ভ্রমরী নন্দী
নিউ জার্সি

আপনারাও পাঠাতে পারেন নতুন-পুরনো ভিন্ন স্বাদের নানা রেসিপি, ছবি-সহ, নীচের ঠিকানায়
হাওয়াবদল, আপনার রান্নাঘর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতির সঙ্গে আপনার ছবি পাঠানো বাধ্যতামূলক।

 
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদল • আপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ