লোকসংস্কৃতির দুই চিত্র...
বীভৎস
অমলেন্দু মিত্রের লেখা ‘রাঢ়ের সংস্কৃতি ও ধর্মঠাকুর’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাঢ়ের বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধ পূর্ণিমার সময় ধর্মঠাকুরের পুজো হয়। বিভিন্ন পণ্ডিতদের মতে ধর্মঠাকুর হল বৌদ্ধদের দেবতা। সেন যুগের প্রাক্কালে শৈবরা বৌদ্ধদের অপসারিত করে ধর্মঠাকুরের থানের উপর অধিকার বিস্তার করে। পূর্বস্থলী ব্লকের জামালপুর গ্রামের ধর্মঠাকুরের উপর একই রকম ঘটনা ঘটে। শৈবরা পাঁঠা বলি দিয়ে থানের পবিত্রতা নষ্ট করে অধিকার ন্যস্ত করে। মধ্যযুগীয় ওই চিন্তা-ভাবনা এখনও কিছু গ্রামীণ অর্ধ বা অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিরাজিত। লাঠি, টাঙি, রামদা, সার্টার ইত্যাদি নিয়ে নৃত্য করতে করতে প্রকাশ্য রাজপথ দিয়ে পাঁঠা নিয়ে যাওয়া কিছু মানুষ নিজেদের ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করে।
সমাজের উচ্চস্তরের মানুষদের এ দলে দেখা যায় না। মিহির চৌধুরি কামিল্যা তাঁর ‘আঞ্চলিক দেবতা লোকসংস্কৃতি’ বই-এর ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, “জামালপুরের গ্রাম দেবতা ‘বুড়োরাজ’। প্রচলিত বিশ্বাস তিনি শিবও, ধর্মও। পুজোর সময় প্রধান নৈবেদ্য থালাটির ঠিক মাঝখান দিয়ে একটি কাঠি ছুঁইয়ে কল্পিত ভাবে দু’ ভাগ করা হয়। যার এক ভাগ ধর্মের, অন্য ভাগ শিবের। অনেকে বলেন বুড়োশিবের ‘বুড়ো’ আর ধর্মরাজের ‘রাজ’ মিলিয়ে তিনি ‘বুড়োরাজ’। বুড়োরাজের কাছে পাঁঠা নিয়ে ও অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বাসে ট্রেনে যাওয়াটা এক শ্রেণির লোকের কাছে পবিত্রকর্ম মনে হতে পারে কিন্তু সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতে এটা একটা বর্বরোচিত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। যাঁরা এটাকে ধর্মীয় ভাবাবেগ মনে করেন তাঁরা আসলে ভাবের ঘরে চুরি করেন। জামালপুরে পাঁঠাবলির পর রক্তাক্ত দেহ নিয়ে বীভৎস নৃত্য সভ্যসমাজের রুচিতে বাধে। ওই বীভৎসতা বন্ধ হওয়া দরকার। রাজনৈতিক নেতারা ভোটের ভয়ে এগিয়ে আসবেন না তা জানা কথা। ফলে ওই বীভৎসতা বন্ধ করতে সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসা দরকার।
লোকেশচন্দ্র বিশ্বাস, কড়ুইগাছি

সুন্দর
চারু ও কারুশিল্পে বৈচিত্রময় মুর্শিদাবাদ জেলার কাঁথা শিল্পের পরম্পরা আজও অব্যাহত। মুসলিম ঘরাণার কিছু নিজস্বতা আছে, যার একটি দৃষ্টান্ত এই কাঁথাশিল্প। কাঁথাশিল্প পুরোপুরি মহিলা নির্ভর। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীরাই এই কারুশিল্পে পারদর্শী। কাঁথাশিল্পের প্রথাগত কোনও বিদ্যা নেই। বাড়ির বয়স্ক মহিলাদের কাছ থেকে ছোটরা এর তালিম নেন। এ ভাবেই চলে আসছে কাঁথাশিল্পের পরম্পরা। কবি জসিমুদ্দিনের কবিতায় উল্লিখিত নকশি কাঁথার কথা আজও আমাদের নস্টালজিক করে তোলে। কাঁথা সেলাইয়ের নেপথ্যে জড়িয়ে রয়েছে অনেক লোকসংস্কার। যেমন অমঙ্গলের আশঙ্কায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কাঁথা সেলাই করতে দেওয়া হয় না। সূর্যাস্তের পর কাঁথা সেলাই করলে দারিদ্র আহ্বান করা হয় বলে মুসলিম মহিলাদের বিশ্বাস। ফলে সন্ধ্যার প্রাক মুহূর্তে কাঁথা সেলাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। জুম্মাবার, অর্থাত্ শুক্রবার কাঁথা সেলাইয়ের শুভারম্ভ হয়। কাঁথার আবার প্রকার ভেদ রয়েছে। যেমন লেপকাঁথা, সুজনিকাঁথা, পিরের মাজারের ঢাকনা হিসাবে ব্যবহৃত মাজারকাঁথা, বাক্সের বিকল্প হিসাবে বস্তানিকাঁথা, খাবারের পাত্রের ঢাকনা হিসাবে বর্তনকাঁথা। অতিথিদের যে কাঁথার উপর খাবার সাজানো হয় তা দস্তরখানা, কোরাণ শরিফ রাখার কাঁথাটির নাম গিলাফ। আরও এক ধরনের কাঁথা রয়েছে তার নাম পর্দাকাঁথা। কাঁথাগুলিতে সুতো দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশা। বর্তমানে কাঁথা সেলাই-এর সর্বব্যাপী চহিদা তৈরি হয়েছে। রাজ্য কুটির শিল্প দফতর কাঁথাশিল্প ও শিল্পীদের উত্‌সাহ দিলে মুর্শিদাবাদের গ্রামগঞ্জের মহিলাদের মতো অনেক মহিলার কর্মসংস্থানের দ্বার খুলে যাবে।
সুভাষ ঘোষ হাজরা, পাঁচথুপি
 
রথের রশি...
  • রথযাত্রার প্রস্তুতি চলছে বর্ধমানে।

  • প্রস্তুতিপর্ব চলছে বৈদ্যপুরের নন্দী পরিবারে।

  • মাহেশে স্নানযাত্রা।

  • স্নানযাত্রা এগরার বাসুদেবপুরে।

  • প্রস্তুতি মেদিনীপুরের বল্লভপুরে।

  • দুর্গাপুরের মামরা বাজারে রথযাত্রার প্রস্তুতি।

  • দেবতার ওজন... দুবরাজপুরে।

  • জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তিতে শেষ মুহূর্তের
    তুলির টান এক খুদে শিল্পীর। ব্যারাকপুরে।

  • দানোর দেশে। বহরমপুরে রথের মেলায়।

  • বার্নপুরের উৎকল সমাজের রথযাত্রার প্রস্তুতি।

  • বর্ধমানের রথতলায় চলছে রথের মেলার প্রস্তুতি।

  • ময়নাগুড়িতে খুদেদের উচ্ছ্বাস।

  • সিউড়ির ভাণ্ডীরবনে চারশো বছরের প্রাচীন রথ।

  • বিগ্রহকে পরানো হয়েছে রাজবেশ। মুর্শিদাবাদের জগন্নাথ মন্দিরে।

  • কোচবিহারে মদনমোহনের রথ টানতে ভক্তের ভিড়।

  • ডায়মন্ড হারবারে রথের রশি টানছে খুদেরা।

  • নলহাটিতে রথ বের করেছেন সিআরপ এফ জওয়ানেরা।

  • রথের দিন কাঠামো পুজো করে এবং মাটি ঠেকিয়ে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু সিউড়িতে।

  • উলুবেড়িয়ার জানাবাড়ির রথের উৎসব এ বার ১২৬ বছরে পড়ল।

  • রথের মেলার চেনা ছবি...

  • কালনা শহরের রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে লালজি দেবতাকে মন্দির থেকে রথে
    চড়ানোর জন্য রীতি মেনে পালকিতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

  • বৃষ্টির মধ্যেই শহর পরিক্রমায় ইসকনের কাটোয়া শাখার রথ।

—নিজস্ব চিত্র

পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ইতিমধ্যেই পস্তাচ্ছি আমরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল হাতেনাতে পেয়েও টনক নড়ে ক’জনের?
ব্যাতিক্রম অবশ্য আছে। আর সেই ব্যাতিক্রমী মানুষদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করি আমরা। তাঁদের দলবদ্ধ অথবা ব্যক্তিগত
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পাঠক সমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনার শরিক হতে চাইলে আমাদের জানান নীচের ঠিকানায়

সংবাদের হাওয়াবদল
হাওয়াবদল
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com
 
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ
..