মত্স্য পুরাণ
ইলিশ, পাবদা, ট্যাংরা যেন আকাশের চাঁদ। দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না। মৌরলা, কাজরি স্বপ্নসদৃশ। পার্শে, বাটা, কাটাপোনার দরেও আগুন। এমনকী ‘সমুদ্রের মাছ’ বলে আগে যা দেখে অনেকে নাক সিঁটকাতো, সেই পমফ্রেটও এখন রীতিমতো অভিজাত। দিন-আনি-দিন-খাই মানুষের সাধ্যি কী তার গায়ে হাত ঠেকায়! তাই রোজের পাতে স্বাদ আনতে মৎস্যবিলাসী বাঙালি এখন খায় হিমশিম। তবুও মন যে মানে না! স্বাদবদলের ফাঁদে তাই বাঙালির হেঁশেলে ধরা পড়ে এই সব মাছের সঙ্গে আরও নানা রকম মাছ। স্বাদবদল-এ তাই এ বার মাছেদের কথা।

বাটামাছের শুক্তো
উপকরণ
বাটা মাছ: ৩০০ গ্রাম আলু: ১টা পটল: ২টো পেঁপে: ৬ টুকরো কাঁচকলা: ১ টা বেগুন: ৪ টুকরো উচ্ছে: ৩টে সরষে বাটা: ১ টেবল-চামচ
আদা বাটা: ১ টেবল-চামচ রাঁধুনি বাটা: ১/২ টেবল-চামচ মেথি, রাঁধুনি: ফোড়নের জন্য নুন, হলুদ, চিনি: স্বাদমতো সরষের তেল: প্রয়োজন মতো
প্রণালী
মাছে নুন, হলুদ মাখিয়ে সাঁতলে রাখুন।
উচ্ছে ভেজে তুলে রাখুন।
সব সব্জি তেলে সোনালি করে ভেজে নিন।
গরম তেলে রাঁধুনি-মেথি ফোড়ন দিন।
সুগন্ধ বেরোলে উচ্ছে বাদে সব সব্জি দিন।

পরিমাণ মতো নুন, চিনি, হলুদ দিয়ে নাড়াচাড়া করুন।
বাটিতে সরষে বাটা, আদা বাটা, রাঁধুনি বাটা সামান্য জল দিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিন।
সব্জি সমেত কষতে থাকুন। মশলা কষা হলে পরিমাণ মতো জল দিন।
ভেজে রাখা মাছ ও উচ্ছে দিয়ে নাড়াচাড়া করে ঢেকে দিন।
ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

রুইমাছের স্ট্যু
উপকরণ
রুই মাছ: ৪ পিস আলু: ১টা গাজর: ১টা বিন: ৪টে পেঁয়াজ: ১টা টোম্যাটো: ১টা আদা বাটা: ১ চা-চামচ
গোলমরিচগুঁড়ো: ১/২ চামচ তেজপাতা: ১টা গোটা গরমমশলা: ফোড়নের জন্য কর্নফ্লাওয়ার: ১ চা-চামচ দুধ: ১/২ কাপ
লেবুর রস: ১ চা-চামচ নুন, চিনি: স্বাদ মতো ধনেপাতা: ১ টেবল-চামচ সাদা তেল: প্রয়োজন মতো মাখন: ১ টেবল-চামচ
প্রণালী
সব সব্জি সিদ্ধ করে নিয়ে স্টক (সবজি সিদ্ধর জল) আলাদা করে রাখুন।
মাছে নুন, হলুদ মাখিয়ে সাঁতলে রাখুন।
গরম তেলে গোটা তেজপাতা, গরমমশলা ফোড়ন দিন।
পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালি হলে সব্জি দিয়ে নাড়াচাড়া করুন।
নুন, চিনি, টোম্যাটো কুচি দিন।
কষা হলে স্টক ও মাছ দিন।
গোলমরিচগুঁড়ো ছড়িয়ে দিন।
দুধ ও কর্নফ্লাওয়ার গুলে ঢালুন, আঁচ কমিয়ে দিন।
ফুটলে পাতিলেবুর রস দিন।
ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন ।

চিতল মাছের পেটি রোস্ট
উপকরণ
চিতল মাছের পেটি: ২০০ গ্রাম পেঁয়াজ ও দইয়ের গ্রেভি: ৭০ গ্রাম সরষের তেল: ৪০ গ্রাম আদা বাটা: ২০ গ্রাম
রসুন বাটা: ২০ গ্রাম আদা-জিরে-কাঁচালঙ্কা বাটা: ১০ গ্রাম হলুদ: ৩ গ্রাম কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুঁড়ো: ২ গ্রাম
গোটা গরমমশলা: ২ গ্রাম দই: ১০ গ্রাম গরমমশলাগুঁড়ো: ১ গ্রাম ঘি: ৫ গ্রাম
প্রণালী
চিতল মাছের পেটি ভাল ভাবে ধুয়ে হলুদগুঁড়ো ও নুন মাখিয়ে রাখুন।
ননস্টিক কড়াইতে তেল গরম করুন।
ম্যারিনেট করে রাখা চিতল মাছের পেটি ভাল করে ভেজে নিন।
আঁচ থেকে নামিয়ে মাছ আলাদা করে রাখুন।
ওই একই তেলে গোটা গরমমশলা ও আদা-রসুন বাটা দিন।
এই সব মশলা একসঙ্গে কিছু ক্ষণ নেড়ে নিয়ে তাতে সামান্য জল মেশান।
আদা-কাঁচালঙ্কা-জিরে বাটা দিন।
কিছু ক্ষণ নেড়ে পেঁয়াজ ও দইয়ের গ্রেভি মেশান।
মাঝারি আঁচে কিছু ক্ষণ রান্না করে দই এবং মাছ দিয়ে কম আঁচে রান্না করুন।
পরিবেশন করুন গরম গরম চিতল মাছের পেটি রোস্ট।


কাতলার মুড়ো ভাজা
উপকরণ
কাতলা মাছের মাথা: ২টো গোটা জিরে, তেজপাতা, পেঁয়াজ বাটা: ২০০ গ্রাম
আদা-রসুন বাটা: ৩ চামচ চারমগজ বাটা: ৭৫ গ্রাম লঙ্কাগুঁড়ো: ২ চা-চামচ
গরমমশলাগুঁড়ো: ১ চা-চামচ তেল: ২ কাপ নুন: স্বাদ মতো হলুদ, জিরে বাটা: ২ চা-চামচ

প্রণালী
কড়াইয়ে তেল গরম করে নুন ও হলুদ মাখানো মাছ ভেজে তুলুন।
এ বার গরম তেলে গোটা জিরে ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ বাটা দিয়ে নেড়ে আদা-রসুন বাটা দিন।
বাকি মশলা ও মুড়ো দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন।

দই পমফ্রেট
উপকরণ
পমফ্রেট মাছ: ৪টে (মাঝারি) কালোজিরে: ১ চা-চামচ সরষের তেল: পরিমাণ মতো সরষে: ২ চা-চামচ
শুকনোলঙ্কা: ২টো কাঁচালঙ্কা: ২টো নারকেল কোরা: অল্প টক দই: পরিমাণ মতো নুন-চিনি: স্বাদ মতো
হলুদগুঁড়ো: অল্প পোস্ত: ২ চা-চামচ জল: আধ কাপ
প্রণালী
মাছ ধুয়ে দু’পিঠ চিরে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখুন।
কড়াইয়ে তেল গরম হলে মাছ সাঁতলে নিন।
সরষে, পোস্ত, শুকনোলঙ্কা, নারকেল কোরা বেটে নিন।
এই মিশ্রণ আধ কাপ জলে গুলে রাখুন।
টক দই, নুন ও চিনি দিয়ে ফেটিয়ে রাখুন।
কড়াইতে তেল গরম হলে কালোজিরে ফোড়ন দিন।
সুগন্ধ বেরোলে গোলা মশলা ঢেলে দিন।
নুন-হলুদ দিয়ে ফুটে উঠলে মাছ দিন।

কাঁচালঙ্কা চিরে দিন।
তেল বেরিয়ে এলে ফেটানো টক দই দিয়ে, নেড়ে নামিয়ে নিন।

মচ্ছি তরকারি (ওড়িশা)
উপকরণ
পার্শে মাছ: ৫০০ গ্রাম তেল: ভাজার জন্য গোটা ধনে: ১ চা-চামচ গোটা জিরে: ১ চা-চামচ পোস্ত: ১ চা-চামচ
পেঁয়াজ: ২টো টোম্যাটো ১টা রসুন: ৪ কোয়া ধনেপাতা: প্রয়োজন মতো হলুদ: ১/২ চা-চামচ নুন: স্বাদ মতো কাঁচালঙ্কা: ২-৩টে
প্রণালী
ধনে, জিরে, পোস্ত, পেঁয়াজ ১টা, রসুন ১/২ কাপ জন দিয়ে বেটে রাখুন।
আর একটা পেঁয়াজ কুচি করে রাখুন।
মাছে নুন ও হলুদ মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
কড়াইতে তেল গরম করে মাছ ভেজে তুলে নিন।
ওই তেলে পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিন।

পেঁয়াজ ভাজা হলে বাটা মশলা দিয়ে ভাল করে কষুন।
মশলা ভাজা হলে নুন ও হলুদ দিয়ে ২ কাপ জল দিন।
ঝোল ফুটে উঠলে মাছ, টোম্যাটোকুচি, কাঁচালঙ্কা দিয়ে ফোটান।
মাছ সিদ্ধ হয়ে গেলে ধনেপাতাকুচি ছড়িয়ে নামিয়ে দিন।
• এটা পার্শে ছাড়া রুই, কাতলা, ইলিশ, দিয়ে রান্না করা যায়।

উপকরণ


মাছের ডিমের টক
উপকরণ
রুই মাছের ডিম: ৩০০ গ্রামপাকা তেঁতুল: অল্প বেসন: ১ টেবল-চামচ নুন: স্বাদমতো
হলুদ: ১ টেবল-চামচ চিনি: ২ কাপসরষের তেল: পরিমাণ মতো কাঁচালঙ্কা: ২টো
প্রণালী
মাছের ডিম চটকে, তাতে সামান্য নুন, হলুদ, কুচানো কাঁচালঙ্কা মিশিয়ে নিন।
সামান্য বেসন দিয়ে ভাল করে মেখে নিন।

এখান থেকে ছোট ছোট গোল বড়ার আকারে গড়ে নিন।
কড়াইয়ে তেল গরম করে বড়া ভেজে তুলে রাখুন।
পাকা তেঁতুল জলে খানিক ক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন।
তার পর তেঁতুলের ক্বাথ বের করে ছেঁকে নিয়ে কড়াইয়ে দিন।
সামান্য নুন, হলুদ ও চিনি দিয়ে ভাল করে নাড়ুন।
চিনি গলে ক্বাথ ঘন হয়ে এলে মাছের ডিমের বড়াগুলো দিন।
আরও পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে নিন।

গ্রিলড তেলাপিয়া
উপকরণ
তেলাপিয়া মাছ: ১০০ গ্রাম (ফিলে বা গোটা মাছ) রসুন: ৫ গ্রাম বেসিল: ৫০ গ্রাম
চিজ: ২০ গ্রাম বাদাম: ১০ গ্রাম অলিভ অয়েল: পরিমাণ মতো নুন: স্বাদমতো

প্রণালী
তেলাপিয়া মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখুন।
রসুন, বেসিল, চিজ, বাদাম মিক্সিতে এক সঙ্গে পেস্ট করে নুন, তেল মেশান।
এই মিশ্রণে তেলাপিয়া মাছ মাখিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন।
তার পর ৩০ মিনিট গ্রিল করুন।
মাঝে আভেন থেকে বের করে অয়েল ব্রাস করে উল্টে দিন।

সাজানোর সময় সামান্য চিজ দিতে পারেন।
সৌজন্য: সানন্দা
 
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদল • আপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ