খবর এক মুঠো
বাজার ধরছে সস্তার চিনা পুতুল। বিস্তারিত...

মাসির বাড়ি নিশ্চিহ্ন, গ্রামে ‘অতিথি’ জগন্নাথ। বিস্তারিত...

সন্ধ্যায় রথের মেলার পাশেই নমাজ, এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাক্ষী লালগোলা ও ভগবানগোলা। বিস্তারিত...

হবিবপুর: প্রতি বছরের মতো এ বছরও হবিবপুরে ইস্কনের রথ নিয়ে প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রথের দিন রাধামাধব মন্দির থেকে ৪০ ফুট উচ্চতার জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে তিন কিলোমিটার দূরে স্বাস্থোন্নতি ময়দানে মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁরা থাকবে ৯ দিন। তার পর আবার রথে চেপে ফেরত্ আসবে বাড়িতে। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত ১৭ বছর ধরে চলছে এই রথ উত্সব। মাসির বাড়িতে থাকার সময়ে স্বাস্থোন্নতি ময়দানে মেলা বসে। বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এই মেলায়। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, মনোরঞ্জনের বিভিন্ন উপকরণ ছাড়াও সেখানে আছে খাবারের নানা স্টল। রাধামাধব মন্দিরের অধ্যক্ষ বৃহত্ কীর্তন দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “মাসির বাড়ি থাকার সময় প্রতি দিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে খিচুড়ি, তরকারি, নানা রকমের ভাজা, পায়েস-সহ ৫৬ রকমের পদ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। ভক্তরা নাম কীর্তন সহযোগে যোগ দেন।”

নবদ্বীপ ১: বঙ্কিমের রাধারানি পথ হারিয়েছিলেন রথের মেলায়। তেমনই রথের ভিড়ে পর্যটক দিশা হারাতে পারেন নদিয়ায়। একশো, দেড়শো এমনকী তিনশো বছর পার করা বিভিন্ন রথ যখন কোনও আষাঢ় সন্ধ্যায় পথে নামে তখন অতীত ইতিহাস যেন কিছু ক্ষণের জন্য বর্তমান হয়ে যায়। কোনও রথ রাজবাড়ির, কোনও রথ বৈষ্ণব মঠ মন্দিরের, কোনওটা আবার নিতান্তই পারিবারিক। এমনকী মণিপুর বা ওড়িশার বাসিন্দারাও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রথের রশি টেনে চলেছেন নদিয়ার বিভিন্ন প্রাচীন জনপদে। সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি এমনকী প্রাকৃতিক পরিবর্তনও রুদ্ধ করতে পারেনি রথের গতি। নবদ্বীপ তথা নদিয়ার অন্যতম প্রাচীন এই রথযাত্রা প্রসঙ্গে গবেষক প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “১৭৪০-৫০ খ্রিস্টাব্দে মণিপুরের মানুষ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। মণিপুরের পরম বৈষ্ণব মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের হাত ধরেই ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নবদ্বীপে মণিপুরীদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। মণিপুরের প্রথা মেনেই রথযাত্রা পালিত হয়।” মণিপুরের রাজবাড়ির রথ প্রথা প্রকরণে উল্লেখযোগ্য স্বতন্ত্রের দাবি রাখে। একমাত্র মণিপুরের রথেই জগন্নাথদেব একলা আরোহী। রথ থেকে উল্টোরথ প্রতি দিন রাত্রে জগন্নাথদেবের সামনে গাওয়া হয় কবি জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র। মণিপুরের রথে জগন্নাথদেব একা কেন? প্রবীরবাবু বলেন, “দ্বারকা থেকে বৃন্দাবনে কৃষ্ণ একা এসেছিলেন। সেখানে তিনি রাধারানি-সহ অন্যান্য গোপিনীদের কৃপা করেন। আমাদের রথে সেই দর্শনটিই অনুসরণ করা হয়। তাই প্রতি দিন রাতে জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র পাঠ করা হয়।” মণিপুর রথের আরও একটি বৈশিষ্ট্য, এই রথ যাত্রাপথে বিভিন্ন ভক্তের বাড়িতে থামে এবং সেই বাড়ির তরফে জগন্নাথকে আরতি করা হয় এবং ভোগ দেওয়া হয়।

নবদ্বীপ ২: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু হারিয়েছে ‘সীতানাথ বৈষ্ণব থোর’ জরাজীর্ণ মন্দির। ভাঙাচোরা বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি মন্দির যার প্রতিষ্ঠা হয় ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। ‘থোর’ কথার অর্থ বিশ্রামাগার। ১৭৫৭ সালে হরহর দাস প্রতিষ্ঠা করেন রাধারমণ জীউর মন্দির। তার কিছু পরেই তাঁর শিষ্য গোপীনাথ পাণ্ডা প্রতিষ্ঠা করেন জগন্নাথ মূর্তি এবং শুরু হয় রথযাত্রা। সেই থেকে শুরু। মন্দিরের বর্তমান সেবাইত বৃন্দাবন পাণ্ডা জানান, “পুরীর মন্দিরের প্রথা মেনে এখানে রথের উত্সব শুরু হয়। স্নানযাত্রার দিন থেকে তার পর দিন জগন্নাথের জ্বর হয়। পাঁচ দিন পর বিশেষ পাঁচন খেয়ে সারে সেই জ্বর। ষষ্ঠ দিনে শুরু হয় অঙ্গরাগ। সেই সময়ই আসে অমাবস্যা। সেই দিন হয় বিগ্রহের নেত্র উত্সব।” রথের দিন বিশেষ পুজো, অভিষেক, ভোগের পর প্রাচীন রথে পথে নামলেন সপার্ষদ জগন্নাথ। মাসীর বাড়ি নেই বলে দিনের দিন ফিরে আসেন মন্দিরে নিঃসন্তান জগন্নাথ। বৃন্দাবন পাণ্ডা বলেন, “এই এক জায়গাতেই পুরীর মন্দিরের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। পরে এই রথ আর চলবে কি না জানি না।” খসে পড়া নাটমন্দির, নড়বড়ে রথ আর ভক্তদের উপেক্ষা-এই নিয়েই অস্তিত্বের সঙ্কটে সীতানাথ বৈষ্ণব থোরের প্রভু জগন্নাথ।

আঁটপুর: ফুল, আলো আর পুতুল দিয়ে সেজেছিল আঁটপুরের ঘোষবাড়ির নাটমন্দির। ফি বছর দু’বার সাজে। এক বার দুর্গাপুজোয়, আর এক বার রথে। শাক্ত ও বৈষ্ণব দুই মতেই বিশ্বাসী ঘোষ পরিবারে সাত পুরুষ ধরে আরাধ্যা প্রভু জগন্নাথ। বাড়িরই নিমগাছের কাঠ দিয়ে তৈরি জগন্নাথদেবের বিগ্রহ। পুরনো রথটি রোদে-জলে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে তৈরি হয়েছে রথ। ১৭ হাত উঁচু, ন’টি চূড়া বিশিষ্ট এই রথ অনেকটাই দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে তৈরি। ঘোষবাড়ির প্রবীণ সদস্য ৮৫ বছরের সমর ঘোষ বললেন, “আমাদের পরিবারে জগন্নাথদেবের পুজো প্রথম করেন ঠাকুরদার ঠাকুরদা কাশীনাথ ঘোষ। তাঁর মায়ের সঙ্গে পুরী গিয়ে জগন্নাথদেবের মূর্তি এনে পুজো করার বায়না করেন। সেই শুরু। পরবর্তী সময় ১১১১ বঙ্গাব্দে আমাদের বাড়িতে জগন্নাথদেবের স্থায়ী পুজো শুরু হয়। রথযাত্রাও শুরু সেই বছর থেকে। ৩০৯ বছর ধরে ঘোষবাড়ির রথ টানা হয়ে আসছে। এখন তো বাড়ির নাম বদলে এলাকায় রথবাড়ি হয়ে গিয়েছে।” রথযাত্রার দিন থেকে শতাব্দী প্রাচীন রথবাড়ির সামনে মেলা বসে। রথ, উল্টো রথ শেষ হয়ে গেলেও এক মাস ধরে মেলা চলতে থাকে। সমরবাবু বলেন, “পুরীর নিয়ম মেনেই এখানে জগন্নাথদেবের পুজো হয়। তবে এখানে মাসির বাড়ি বলে কিছু নেই। তাই আমাদের বাড়ি থেকে রথ বেরিয়ে শ্যামনগর অকল্যান্ড চটকল পর্যন্ত যায়। আবার সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এর পর নাট মন্দিরে থাকেন জগন্নাথদেব।’’ স্মৃতির ঝুলি হাতড়ে বলে চলেন, “শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মতানৈক্য নিয়ে কোন্দল বাধলে ১১৬২ বঙ্গাব্দে আমাদের বাড়িতে শাক্ত মতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই থেকে একই নাট মন্দিরে দেবী দুর্গা ও জগন্নাথদেবের পুজো হয়ে আসছে।”

শান্তিপুর: নদিয়ার প্রাচীন শহর শান্তিপুর। তিনশো বছর অতিক্রম করে সেখানে ‘রথের সরান’ বেয়ে গড়িয়ে চলেছে বড় গোস্বামী বাড়ির রথ। বড় গোস্বামী পরিবারের সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “এই রথের বৈশিষ্ট্য হল রথে জগন্নাথদেবের সঙ্গে আর এক আরোহী হলেন রামচন্দ্র। এই রঘুনাথ মূর্তিটি আড়াইশো বছরের প্রাচীন। এই মূর্তি আমাদের পরিবারে আসার আগে থেকেই রথযাত্রা চলছে।” তিনি আরও জানান, রথযাত্রার সকালে দ্বিতীয়া তিথি শুরু হতেই রথ বাড়ি থেকে আগমেশ্বরীতলা পর্যন্ত যায়। সন্ধ্যায় রথযাত্রা হয় না। কিন্তু রথে রামচন্দ্র কেন? সত্যনারায়ণবাবু বলেন, “আড়াইশো বছর আগে শান্তিপুরের তত্কালীন বাসিন্দা রামমোহন চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক রঘুনাথ বিগ্রহটি আমাদের পরিবারে তাঁরা দিয়ে দেন। সেই সময় রথের সাত দিন আগে বিগ্রহ চট্টোপাধ্যায় পরিবারে নিয়ে যাওয়া হত রথে চড়ে। সেই প্রথা আজও হয়ে চলেছে।”

মাহেশ-গুপ্তিপাড়া-চন্দননগর-ধনেখালি: মাহেশের রথযাত্রা এ বার ৬১৭ বছরে পড়ল। পনেরো দিন আগে দুধ আর গঙ্গাজলে স্নান করে জ্বর এসেছিল জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার। ওই ক’দিন মন্দিরে কবিরাজের সেবায় আর লেপ কম্বলের আশ্রয়েই কাটিয়েছেন তাঁরা। এর পর সুদৃশ্য রথে চেপে সখী পৌর্নমসীর বাড়িতে বেড়াতে যান তাঁরা। কোথাও এই গন্তব্যকে বলা হয় গুণ্ডিচাবাড়ি। এই যাত্রার সাক্ষী হতে মাহেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় ফি-বছর। গুপ্তিপাড়াতেও রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে উৎসাহের অন্ত ছিল না। অন্য দিকে, চন্দননগরের রথের জৌলুসও ছিল অন্য রকম। গঞ্জের বাজার থেকে জিটি রোড হয়ে তালডাঙা পর্যন্ত রথ যায়। রথযাত্রা উপলক্ষে প্রতিবারেই জমজমাট হয়ে ওঠে ধনেখালির দশঘড়া। এখানকার বিশ্বাস পরিবারের প্রাচীন রথটান নিয়ে মেতে ওঠেন বহু মানুষ। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

উদয়নারায়ণপুর: এখানকার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের রথযাত্রা উপলক্ষে প্রতি বছর বিশাল মেলা বসে স্থানীয় স্কুল মাঠে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৮০ বছর আগে ২৭ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া ও ১২টি চাকা যুক্ত রথযাত্রার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উদয়নারায়ণপুরের শিবপুরের গিরীশ ভট্টাচার্য। পরে সেই রথ এসে পড়ে উদয়নারায়ণপুরের জমিদার সারদাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। সেই শুরু। তবে এখন সময় বদলছে। পরিবেশ বদলেছে। জমিদারি গিয়েছে কবেই। তবু রথের রশিতে টান পড়া বন্ধ হয়নি চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। রথের গায়ে নানা কারুকাজ। আছে দেবদেবীর ছবি। যুদ্ধ যাত্রা, হাতি-ঘোড়া, অপ্সরার ছবিও জায়গা করে নিয়েছে। পুরীর রথযাত্রার নিয়ম মানা হয় এখানে। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বধূ গীতাদেবী বলেন, “আমাদের রথযাত্রায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দেয়।”

দুর্গাপুর: রথ দেখতে আর রথের রশি টানতে ভিড় উপচে পড়েছিল শিল্পাঞ্চলে। কচিকাঁচা থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই পুজো, আরতির সঙ্গে সঙ্গে সমান ভিড় জমালেন রথের মেলায়। ঝিপঝিপে বৃষ্টিকে তুড়িতে উড়িয়ে পাঁপড় আর জিলিপিতে জমে গেল রথযাত্রা। বছরের পর বছর ধরে দুর্গাপুর শহরের সবচেয়ে জাঁকজমক রথযাত্রার আয়োজন করে আসছে ইস্পাত নগরীর রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডের জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ। মেলা বসেছিল রাজীব গাঁধী স্মারক ময়দানেও। প্রতি বারের মতো এ বারও জগন্নাথ মন্দির থেকে রথে করে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে যাওয়া হয় মেলার মাঠে। তাঁরা আবার মন্দিরে ফিরবেন উল্টোরথের দিন। শহরের সিটিসেন্টারে এ বারই প্রথম রথযাত্রার আয়োজন করেছিল ইসকন কর্তৃপক্ষ।

মানকর: দক্ষিণ রাইপুর গোস্বামী পাড়ার আকর্ষণ শতাব্দী প্রাচীন একটি পিতলের রথ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এলাকার মানুষ যোগ দেন এই রথযাত্রা। সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, প্রায় দেড়শো বছর আগে মানকরে লক্ষ্মী জনার্দন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন গর্ন্ধব্য কর। এক শতাব্দী আগে এই রথযাত্রার পত্তন করেছিলেন মাধবচন্দ্র কর। বাংলা ১৩১৮ সালে পিতলের প্রায় সাড়ে ৯ ফুট উচ্চতার রথটি নির্মাণ করেন স্থানীয় শিল্পী কেদারনাথ দে। সেই রথেই আজও ঘোরানো হয় গৃহদেবতা লক্ষ্মী জনার্দনকে। রাতে তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে।

কাঁকসা: বনকাটি গ্রামে প্রায় দু’শো বছরের পুরনো আট চাকার উপর পঞ্চরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি কুড়ি ফুট উঁচু একটি রথকে ঘিরে উন্মাদনা দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাংলা ১২৩৯ সালে মুখোপাধ্যায় পরিবারের এক সদস্য গ্রামে এই রথ প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়ির পাশে ছিল গৃহদেবতা গোপাল জিউ-এর মন্দির। সেই মন্দিরের আদলে পিতলের রথ তৈরি হয়। রথের গায়ে নিপুণ হাতে শিল্পীরা খোদাই করেন পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতের ঘটনাবলী।

আসানসোল: শিল্পাঞ্চলের একাধিক উৎকল সমাজ ধুমধামের সঙ্গে রথযাত্রার আয়োজন করেছিল। প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো কুলটির উৎকল সমাজের রথযাত্রা উৎসব এ বার কিছুটা ম্লান হলেও ভক্তিতে ত্রুটি ছিল না। জাঁকজমকে পালিত হয় বার্নপুরের উৎকল সমাজের রথযাত্রা। নতুন করে সাজানো হয় মন্দির চত্বর। কুলটির কেন্দুয়া বাজার এলাকাতেও প্রায় শতাধিক বছরের পুরনো রথযাত্রা ঘিরে ছোটখাটো মেলা বসে। চিত্তরঞ্জনের উৎকল সমাজ তাদের স্থায়ী মন্দিরে পুজো আরতিতে পালন করে দিনটি। এলাকার ৬ এর পল্লিতেও রথযাত্রা উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। বরাকরের সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের সীতারাম বাবার আশ্রমেও রথযাত্রা উপলক্ষে বেশ ভিড় হয়। কুলটির মানিকেশ্বরে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো রথ এলাকায় সাড়া ফেলে। বড় বড় রথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেরিয়েছে ছোট-বড় নানা রঙের রথও।

অন্ডাল: উখড়া জমিদারবাড়ির লালসিংহ হাণ্ডে বাড়ির রথে বসেছিলেন তাঁদের কুলদেবতা গোপীনাথজি। ১৭২ বছর আগে এই পরিবার দু’টি রথ বের করত। ২৫ বছর আগে ছোট রথের কয়েকটি চাকা ভক্তদের চাপে ভেঙে যাওয়ায় পরের বছর থেকে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন কেবল ২৫ ফুটের বড় রথটি চলে। দু’টিই পিতলের। তবে রথ আর দড়ি দিয়ে নয়, টানে ট্রাক্টর। ১২ বছর ধরে এমন হয়ে চলেছে। রানিগঞ্জের সিহারশোল রাজবাড়িতেও প্রতি বারের মতো ধুমধাম করে পালিত হয় রথযাত্রা। জেলার নানা প্রান্ত থেকে রথের রশি টানতে ভিড় করেন ভক্তরা। ১৮৩৬ সালে এই রথযাত্রা শুরু করেন তৎকালীন জমিদার তথা সিহারসোল কোলিয়ারির মালিক গোবিন্দ প্রসাদ। পরে মেয়ের ইচ্ছায় শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের অনুকরণে পিতলের রথ বানানো হয়। রথে চাপেন কুলদেবতা দামোদর চন্দ্র শিলা। রথ টানে দু’টি লরি। বসে মেলাও। কুলটির বেলরুইয়ের জমিদার বাড়ি রায় পরিবারের রথও ঐতিহ্যবাহী। রথে চড়ানো হয় জনার্দনকে।