বাজার ধরছে সস্তার চিনা পুতুল
থ দেখা, কলা বেচার প্রবাদ বাঙালি জীবনে নতুন কিছু নয়। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে বাংলা বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে রথযাত্রার দিনটি সর্বোত্তম। পঞ্জিকার রক্তচক্ষু কোনও ‘নাস্তি’ দিয়ে রথযাত্রাকে বাঁধতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই এমন দিনে ব্যবসা বাণিজ্য জমজমাট হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই রথযাত্রাকে ঘিরে মেলা, উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সব জায়গার মানুষ। তাতে পুণ্য ও অর্থ দুই-ই অর্জন করা হয়।
ভরা বর্ষার মরসুমে রথের মেলায় এই বিপুল জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ বা ইতিহাসবেত্তারা প্রায় একই কথা বলেছেন। নবদ্বীর পুরাতত্ত্ব পরিষদের শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “রথযাত্রাই আমাদের একমাত্র প্রাচীনতম উৎসব যেখানে বিগ্রহ মন্দিরের ঘোরাটোপ, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আচরণবিধির বেড়া ভেঙে রথে নেমে এসেছিলেন। জগন্নাথ প্রকৃত অর্থে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে গণদেবতা হয়ে উঠেছিলেন। এখন একটা সবর্জনীন উৎসবকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক ভাবেই সর্বত্র মেলা জমে উঠেছে। তা সে পুরী, মাহেশ হোক বা অধুনা হালফিলের মায়াপুর।”
অন্য দিকে, কৃষি অর্থনীতিকের মত, এই সময় ধান বোনা হয়ে যায়। পাট কাটা শুরু হওয়ার প্রাক মুহূর্তে এই রথযাত্রায় গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষও যোগ দিতে পারেন। আর রথযাত্রা এমন এক অনুষ্ঠান, যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য কার্যত কোনও ব্যয় নেই। আর সেই কারণেই এই বিপুল জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। এই মেলাই ছিল ভরা বর্ষায় গ্রাম বাংলার অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ। পরে দিন বদলেছে, প্রয়োজন বদলেছে কিন্তু ঐতিহ্য
রয়ে গিয়েছে।
পুতুল থেকে পাঁপড়, পাট থেকে পালা (যাত্রা) সব কিছুই কেনাবেচা, বায়না হয় রথযাত্রায়। পেশাদার-অপেশাদার যাত্রা দলের মতুন পালার মহড়া বা বায়না যেমন এ দিনই শুরু হয়। তেমনই ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এ দিন হালখাতাও করেন। রথের মেলা ঘিরে নতুম মরসুম শুরুর কথা বলতে গিয়ে নবদ্বীপের অন্যতম পাট ব্যবসায়ী রাজকুমার সাহা বলেন, “নবদ্বীপ একটা সময় পাটের ব্যবসার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখনও পুরনো প্রথা মেনে ব্যবসার মতুন মরসুম শুরু হয় রথযাত্রার দিনে।”
সময় এগিয়ে চলে। পড়ে থাকে ইতিহাস। তা হলে রথের দিন নবদ্বীপের গঙ্গার ধারে শ্রীরাসঅঙ্গন পাড়ায় বিভিন্ন পাটের আড়ত বা গদিতে জাঁখজমক করেই হয় হালখাতা বা ‘কাঁঠাযাত্রা’। রাজকুমারবাবু বলেন, “নতুন মরসুমে এ দিন যে পাট কেনা হয় তার থেকে ‘পাঁচপোরা’ আলাদা করে রেখে দেওয়া হয়। বলা হয় ‘শুভক্ষণের পাট’। সারা বছর ঘরে ওই পাটটুকু রাখা হয়।” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “রথের সময় কোনও আলাদা মরসুম হয় না। মেলা দেখতে ভিড় করেন মানুষ। তাতেই কেনাবেচা হয়।”
রথের মেলায় জমিয়ে ব্যবসা করেন পুতুল ব্যবসায়ীরা। ঘূর্ণির মাটির পুতুল বা কাচের পুতুল থেকে হালফিলের চিনের পুতুলের বাজার জমজমাট। সাত বছর ধরে চিনে পুতুলের ব্যবসা করছেন সুকুমার রায়। তিনি বলেন, “সাধারণ ভাবে শীত কালের মেলায় এই পুতুল কেনাবেচা হয়। কিন্তু রথের সময়ও বিক্রি খুব ভাল।” মালদা, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, বহরমপুর-সর্বত্রই গিয়েছে এই পুতুল। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছুটা সঙ্কটে এই শিল্প। মাটির পুতুলের দাম শুনে চমকে ওঠেন ওনেকেই। তাই বাধ্য হয়েই সস্তার চিনে পুতুল কিনে বাড়ি ফেরেন। তবু এই মেলাতেই দিন ফেরার অপেক্ষা করেন শিল্পীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.