সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• ঐতিহ্যের চকোলেট
১৯১১ সাল। প্রথম বার ক্যান্ডি তৈরি করলেন ওয়াশিংটনের টাকোমার জনৈক ফ্র্যাঙ্ক সি মার্স। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু ‘মার্স ইনকর্পোরেটেড’-এর। ১৯২০ সালে বাবা ফ্রাঙ্কের সঙ্গে যোগ দিলেন ফরেস্ট ই মার্স, সিনিয়র। ক্যান্ডির সঙ্গে তাঁরা তৈরি করতে শুরু করলেন অন্যান্য নানা ধরনের কনফেকশনারি ও চকোলেট-জাত খাবার, নাম দেওয়া হল ‘মিল্কি ওয়ে’। ব্যবসা ও নিজেদের তৈরি এই সব খাদ্যপণ্য বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে প্রথমেই রাজশাসিত ব্রিটেনে গেলেন ফরেস্ট। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ‘মার্স ইনকর্পোরেটেড’কে।
শুরুর প্রায় একশো বছর পর, এ মাসের প্রথম সপ্তাহান্তে সান দিয়েগোর মেরিটাইম মিউজিয়ামে এক অভিনব অনুষ্ঠান হল এই সংস্থার উদ্যোগে— চকোলেট অন দ্য বে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মার্সের একটি শাখা ‘মার্স চকোলেট নর্থ আমেরিকা’ বাজারে আনবে ‘আমেরিকান হেরিটেজ চকোলেট’ নামের এক নতুন পণ্য। এটি ছিল তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। নব্য স্বাদের চকোলেটটির শুধু নামেই ‘হেরিটেজ’ নয়, তৈরি করার পদ্ধতিতেও রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। বহু প্রাচীন অর্থাত্ ১৭৬০ সালের এক বিশেষ পদ্ধতিতে এই চকোলেট তৈরি। ১৮ শতকের সমাজ জীবনে চকোলেটের প্রয়োজনীয়তা ও প্রভাব কতটা ছিল তার পুনর্মূল্যায়ন করতেই তৈরি করা হয়েছে এই নবীন প্রজন্মের চকোলেট। স্টিক, ব্লক, বাইটস ও ড্রিঙ্ক— চারটি রকমফেরে ঐতিহ্যের এই চকোলেট পাওয়া যাবে বাজারে।
আমেরিকায় চকোলেটের উদ্ভব, ব্যবহার ও অন্যান্য নানা তথ্য জানতে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করে মার্স ইনকর্পোরেটেডের ১১৫ জনেরও বেশি সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ দল। ফল স্বরূপ, ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘চকোলেট— হিস্ট্রি, কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ’ নামের একটি বই। সেখানে পঁয়তাল্লিশ জন লেখকের তালিকায় ছিলেন বিভিন্ন পেশার মানুষ— শেফ, খাদ্য-বিশেষজ্ঞ, গবেষক, এমনকী ঐতিহাসিকও।

• আগ্নেয়গিরির মোহিনী রূপ
শেষ বার তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখা গিয়েছিল ১৭০৭-৮ সালে। তার পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। তবু আজও সে জীবন্ত। মাউন্ট ফুজি— জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত, আগ্নেয়গিরিও বটে। রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমে, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী হনশু দ্বীপে অবস্থিত ৩৭৭৬ মিটার উঁচু মাউন্ট ফুজি। তিনটি ছোট শহর ও পাঁচটি হ্রদ পরিবেষ্টিত ফুজির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। লেকের উপর এই পর্বতের প্রতিবিম্ব, জাপানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বছরের বেশ কিছু মাস ফুজি থাকে বরফাবৃত। সে ছবিও বিশ্ব দরবারে জাপানের মুখ। এই পর্বত ফুজি-হাকোন-ইজু জাতীয় উদ্যানের অংশবিশেষ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে রাজধানী শহর থেকেও দেখা যায় প্রকৃতির এই ‘জ্বলন্ত’ প্রতিচ্ছবি।
টোকিও জাপানের রাজধানী হয় ১৬০০ সালে, তখন তার নাম ছিল এডো। এডো যাওয়ার পথের নাম ছিল তোকাইডো। সেই পথ থেকেই দেখা যেত ফুজি। তত্কালীন জাপানি চিত্রশিল্পী হোকুশাই তাঁর আঁকা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ভিউজ অফ মাউন্ট ফুজি’ ছবির মাধ্যমে পর্বতের সৌন্দর্যকেই তুলে ধরেন। জাপানি সাহিত্য ও কবিতায় বহু চর্চিত প্রকৃতির এই রূপ। ফুজি, তাতে ও হাকু— জাপানে এই তিন পর্বতকে ধর্মীয় স্থান হিসেবে মানা হয়। লোকমতে, ৬৬৩ সালে এক ভিক্ষু প্রথম বার এই পর্বত জয় করেন। ধর্মীয় কারণে মেয়েদের ফুজিতে ওঠা নিষিদ্ধ ছিল অনেক বছর। শোনা যায়, সামুরাই যোদ্ধাদের গোপন অস্ত্রশিক্ষার ডেরা ছিল ফুজির পাদদেশে, বর্তমানের গোতেম্বা শহরের কাছে। ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানে যোগ হয়েছে পর্যটন ও বিজ্ঞান। দেশ-বিদেশ থেকে পর্বতারোহীরা জাপানে আসেন এই আগ্নেয়গিরির টানে। এর চূড়ায় প্রায় ৭২ বছরের একটি মানুষচালিত আবহাওয়া দফতর ছিল। ২০০৪ সালে তা সম্পূর্ণ ভাবে সয়ংক্রিয় করা হয়।
এ হেন মাউন্ট ফুজি, বিশ্ব ঐতিহ্যের ‘প্রাকৃতিক’ তালিকায় থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তাকে ‘সাংস্কৃতিক’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ মাসের প্রথম দিন এমনই এক নোটিশ জারি করেছে জাপানের সংস্কৃতি দফতর। সুপারিশ মানা হবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী জুন মাসে কাম্বোডিয়ায় ইউনেস্কোর এক অধিবেশনের পর।

• তিলোত্তমার প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক অধ্যায়
এ দেশে ট্রামের প্রবর্তক ছিলেন ভাইসরয় লর্ড কার্জন। যাতায়াতের সুবিধার্থেই মূলত এই যানের উদ্ভাবনা। প্রথম দিকে ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলত বিভিন্ন শহরে। এখনকার মুম্বই, দিল্লি, পটনা, কানপুর ও নাসিকে এই জনপরিবহণ ব্যবস্থা ছিল তখন। তবে এখন এশিয়ার মধ্যে একমাত্র কলকাতাতেই বৈদ্যুতিক ট্রাম চলে। ১৮৯৫ সালে বর্তমানের চেন্নাইয়ে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলাচল শুরু হয়। এর পর শুরু হয় কলকাতায়, ১৯০০ সালে।
কলকাতায় ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলাচল শুরু করে ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ন ঘাট স্ট্রিট অবধি। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়ায়, বছর শেষ না হতেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৮০ সালে ইংরেজরা লন্ডনে একটি কোম্পানির নাম নথিভুক্ত করে— ‘ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড’। প্রথম দিকে ইংল্যান্ড থেকে ট্রামের বগি আনা হলেও, ১৯৫২ সাল থেকে ভারতেই তা তৈরি করা হত।
১৯১৭ সাল অবধি শহর কলকাতায় পুলিশের ব্যবহারের জন্য কোনও রকম গাড়ি বা বাস ছিল না। তাই এ শহরে প্রথম দিকে ট্রাম ব্যবহার করা হত পুলিশের সুবিধার্থে। ১৯২০ অবধি বৈদ্যুতিক ট্রামই ছিল জনসাধারণের জন্য একমাত্র পরিবহণ ব্যবস্থা। এর পর শহরে বাস চলাচল শুরু হলেও ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ট্রামের ব্যবহার ছিল অপরিহার্য। শহরের বিভিন্ন জায়গার মধ্যে প্রায় তিনশো ট্রাম চলত তখন। প্রতি দিন বগি সাফসুতরো করা হত। নিয়মিত পরীক্ষা করা হত ওভারহেড তার ও ট্রাম লাইন। শহরজুড়ে ৭টি ট্রাম ডিপো, ৯টি টার্মিনাল ও ১টি ওয়ার্কশপ এখনও আছে। খিদিরপুর ডিপোটি এর মধ্যে সব থেকে পুরনো আর কালীঘাট সব থেকে ছোট। টালিগঞ্জ থেকে রাজাবাজার ছিল সব থেকে লম্বা রুট।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও শেষরক্ষা হল না!
১৯৫৫ থেকে মোটরগাড়ি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীজুড়েই ট্রামের গুরুত্ব কমতে থাকে। সে প্রভাব পড়ে কলকাতাতেও। শহরের অনেক ব্যস্ত রাস্তায় এখন শুধু মাত্র ট্রাম লাইন দেখা যায়। ‘স্লো মুভিং ভেহিকল’ আখ্যা পেয়ে পুরনো সে ট্রাম এখন লাইনচ্যুত। তবে ইদানীং বেশ কিছু সুসজ্জিত ট্রাম চালিয়ে ট্রামের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রেড রোডের উপর দিয়ে যখন অত্যাধুনিক হাই স্পিড শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলি যায়, তখন তারই পাশের সবুজে গা এলিয়ে নিজের গতিতে চলতে দেখা যায় তাকে— এখনও। অলস দুপুরে, বৃষ্টিঝরা বিকেলে তার সেই টুংটাং আওয়াজ প্রায় সব বাঙালিকেই করে তোলে একটু নস্টালজিক।

• বতসোয়ানার উপজাতীয় প্রাচীন বিশ্বাস
আফ্রিকা। শব্দটা শুনলেই আমাদের মনে রহস্যময়, বন্য ও আদিম এক অনুভূতি কাজ করে। নানা উপজাতির বসবাস গোটা এই মহাদেশ জুড়ে। তেমনই সান নামের এক উপজাতির দেখা পাওয়া যায় বতসোয়ানায়। তাঁদের বিশ্বাস— বতসোয়ানা ও নামিবিয়ার সীমান্তে কালাহারি মরুভূমিতে প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সোডিলো হিলস পৃথিবীর প্রাচীনতম স্থান। সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত থেকেই রয়েছে এই পাহাড়গুলি। মূলত সব থেকে বড় চারটি পাহাড়কে সমাজের চার রকমের প্রতীক হিসেবে দেখেন তাঁরা— পুরুষ, নারী, শিশু এবং পুরুষের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। বৃহত্তম পাহাড়টি পুরুষের প্রতীক। কথিত আছে, এই পাহাড়ের সব থেকে উঁচু অংশে একটি বড় পাথর রয়েছে। পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর সেখানে বসে প্রথম আত্মা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। সান উপজাতির মানুষরা মনে করেন আজও সেখানে সেই আত্মার হাঁটুর স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম পাহাড়টিকে দেখা হয় নারী হিসেবে। সান উপজাতির মানুষদের বিশ্বাস এখানে মৃত আত্মা এবং ভগবান বসবাস করেন। এখান থেকেই তাঁরা পরিচালনা করেন সৃষ্টির কাজ। হাম্বুকুশু উপজাতির মানুষদের বিশ্বাস— ভগবান ‘নিয়াম্বে’ তাঁর অনুচরবর্গ ও বিভিন্ন পশুপাখিদের নিয়ে এই পাহাড়ে নেমে এসেছিলেন। এখনও তাঁদের পায়ের ছাপ রয়েছে এই পাহাড়ে। মূলত হাম্বুকুশু শব্দ ‘সোরিলে’ থেকে এই পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে ‘সোডিলো’। এই পাহাড়েরই উত্তর-পশ্চিম দিকে ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উপরে রয়েছে একটি জলে ভরা পরিত্যক্ত খনি। এই জল এঁদের কাছে খুবই পবিত্র। এঁরা মনে করেন এই জল দিয়ে মুখ ধুলে সৌভাগ্য ফিরে আসে। সব থেকে ছোট পাহাড়টি শিশুর প্রতীক। চতুর্থ পাহাড়টি পুরুষের প্রথম স্ত্রীর প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়।
এ তো গেল বিভিন্ন উপজাতির মানুষদের প্রাচীন বিশ্বাসের কথা। এ বার আসা যাক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে। এখানে পাহাড়ের গায়ে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি ছবি আঁকা রয়েছে। বেশির ভাগই এঁকেছেন সান উপজাতির মানুষরা। বাকিটা এঁকেছেন বান্টু উপজাতির লোকেরা— যাদের চিত্রশৈলী পৃথক ভাবে চেনা যায়। ছবিগুলির বয়স সঠিক ভাবে জানা না গেলেও প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন এখানকার অনেক ছবিই ২০ হাজার থেকে ২৪ হাজার বছরের পুরনো। ছবিগুলির মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি হল ‘হোয়েল’, ‘টু রাইনোস’, ‘লায়ন’ এবং ‘ফাদার’। অতি প্রাচীন শিল্পকলা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মিশেলে এই স্থান ২০০১ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• মমি মিথের ‘পুনর্জন্ম’
মিশরীয়দের মমি তৈরির ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত আছে বহু ‘মিথ’। সম্প্রতি সে সব ‘রহস্য’-এর সমাধান করলেন একদল বিজ্ঞানী। আর সেই সমাধানের সূত্রেই ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের বিরুদ্ধ মত পোষণ করলেন তাঁরা। প্রাচীন এই ঐতিহাসিকের মতে কোনও একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে মমিকরণ হত না, বিভিন্ন স্তরে ও পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হত এই প্রক্রিয়া। তাঁর মতে— সমাজের উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে পেটের মাঝ বরাবর কেটে ভিতরের প্রত্যঙ্গ বের করে আনা হত। নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে সিডার তেল বা তারপিন দিয়ে নষ্ট করা হত ভিতরের প্রত্যঙ্গগুলি। এই প্রত্যঙ্গগুলির পাশাপাশি বের করে আনা হত মৃতের মস্তিষ্কও। তবে হৃদপিণ্ড সরানো হত না বলেই জানিয়েছিলেন তিনি। এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে সম্প্রতি দেড়শোটি মমি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে সাতটি মমির সিটি স্ক্যান ও ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে তাঁরা দেখেন নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত— উভয় ক্ষেত্রেই পেট কেটে ভিতরের প্রত্যঙ্গগুলি বের করে আনা হত। তবে কিছু উচ্চবিত্তের ক্ষেত্রে মলদ্বার দিয়ে বের করে আনা হত পেটের ভিতরের প্রত্যঙ্গগুলি। পাশাপাশি মমিকরণের ক্ষেত্রে সিডার তেলের বিশেষ ব্যবহারের প্রমাণ পাননি বিজ্ঞানীরা। এমনকী তাঁরা জানিয়েছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানচ্যুত করা হয়েছে হৃদপিণ্ডকে। অন্য দিকে দেখা গিয়েছে মস্তিষ্ক রয়েছে নিজস্থানেই। এই খোঁজ মমি সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিশা দেখাবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।

• দৈত্যাকার সুমেরীয় উটের জীবাশ্ম উদ্ধার
ঘন সবুজ সুমেরীয় অরণ্য। তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে একটি বিশালাকৃতির উট। আজ থেকে ‘মাত্র’ ৩৫ লক্ষ বছর আগের ঘটনা। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রাক্ মুহূর্তে আজকের তুষারাবৃত সুমেরু ছিল এক গভীর অরণ্য। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক জীবাশ্ম গবেষণা অন্তত সেই দাবিই করছে। কানাডার উত্তরে এলেসমেয়ার দ্বীপের স্ট্র্যাথকনা হিমবাহে ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে আবিষ্কৃত হয়েছে বেশ কিছু প্রাগৈতিহাসিক উটের জীবাশ্ম। এর আগে বিভিন্ন উদ্ভিদের জীবাশ্ম আবিষ্কার হলেও কোনও স্তন্যপায়ীর জীবাশ্ম আবিষ্কার এই প্রথম। সম্প্রতি আবিষ্কৃত জীবাশ্মটি একটি টিবিয়ার (পায়ের হাড়) অংশবিশেষ। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় সাড়ে চার কোটি বছর আগে এই ধরনের স্তন্যপায়ীর অস্তিত্ব উত্তর আমেরিকায় মিললেও মেরু অঞ্চলে এদের খোঁজ এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দেবে। অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে জীবনধারণের জন্য এদের শারীরিক গঠনের সঙ্গে আজকের উটের বিশেষ মিল পাওয়া যায় না। তবে এখনকার উটের বিশেষ গঠন, যেমন লম্বা পা, গলা এবং কুঁজ তাদের পূর্বপুরুষদের থেকেই এসেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

• গ্রিসে নিয়ান্ডারথালের জীবাশ্ম উদ্ধার
গ্রিসের এক গুহায় খোঁজ মিলল নিয়ান্ডারথালের বেশ কিছু জীবাশ্ম। গ্রিসের কালামাকিয়া বন্দর এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালানোর সময়ে উদ্ধার হয় এই জীবাশ্মগুলি। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে প্রায় ১৪টি জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তেরো বছর আগে বিজ্ঞানীরা মানি উপদ্বীপের পশ্চিমপ্রান্তে চুনাপাথরের খাড়াই পাহাড়ের মধ্যে প্রায় ৬৫ ফুট গভীর এই গুহার সন্ধান পান। জীবাশ্মগুলি মধ্য প্যালিওলিথিক যুগের এবং ৩৯ হাজার থেকে ১ লক্ষ বছরের পুরনো বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। গুহায় মিলেছে পাথরের তৈরি ধারালো হাতিয়ার, শামুকের খোল ও পাথরের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। জীবাশ্মগুলির মধ্যে দাঁত, খুলির কিছু অংশ, মেরুদণ্ড ও পায়ের হাড়ের অংশবিশেষ পাওয়া গিয়েছে। পায়ের হাড়গুলিতে কামড়ের প্রমাণও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে দাঁতের অংশ নিশ্চিত ভাবেই নিয়ান্ডারথালের, তবে বাকি জীবাশ্মগুলি আধুনিক মানুষের কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই আবিষ্কারের ফলে এ অঞ্চলে প্রাচীন মানুষের বড়সড় বসতির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

• বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দরের খোঁজ
লোহিত সাগরের তীরে এক ব্যস্ত বন্দর ওয়াদি-এল-জার্ফ। সেখানে নোঙর ফেলেছে পালতোলা বেশ কিছু বাণিজ্য তরী। খ্রিস্টজন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগেকার প্রাচীন মিশরের এই বন্দরটি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন কিছু প্যাপিরাস-লিপি। সুয়েজ খাল থেকে প্রায় ১৮০ মাইল দক্ষিণের এই বন্দরটি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত বন্দরগুলির মধ্যে প্রাচীনতম বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁদের মতে ২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের ফারাও খুফুর আমলে তৈরি এই বন্দরটির মাধ্যমে রফতানি হত তামা-সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। মূলত সিনাই উপসাগর দিয়ে চলত বাণিজ্য। আবিষ্কৃত হয়েছে দড়ি কাটার জন্য ব্যবহৃত পাথরের যন্ত্র, কিছু কাঠের টুকরো, বন্দরের শ্রমিকদের প্রাচীন কিছু বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও তিরিশটি গুহা। গুহামুখগুলি ফারাওয়ের মুখ খোদাই করা পাথর দিয়ে বন্ধ করা ছিল। প্রসঙ্গত ফারাও খুফুর আমলেই তৈরি হয়েছিল গিজার বিখ্যাত পিরামিড যা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতমও বটে। আবিষ্কৃত প্যাপিরাসগুলি এখনও পর্যন্ত পাওয়া প্যাপিরাস-লিপির মধ্যে প্রাচীনতম। এগুলি থেকে তত্কালীন জনজীবন সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপাতত ফ্রান্স ও মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সেগুলি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• এক ঘণ্টার প্রতিবাদ— ‘আর্থ আওয়ার’
প্রতি বছরই মার্চ মাসের শেষে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘আর্থ আওয়ার’— রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ন’টা, এই ১ ঘণ্টা গোটা পৃথিবীকে ডুবিয়ে দেওয়া হয় অন্ধকারে। পরিবেশ রক্ষা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে অভিনব এক প্রতিবাদী আন্দোলনের নামই ‘আর্থ আওয়ার’, যার আয়োজক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ)। তবে এ বছর ইউনেস্কো হাত মিলিয়েছিল ডব্লিউডব্লিউএফের সঙ্গে। ‘আর্থ আওয়ার’-এর সমর্থনে এগিয়ে এসেছে উডল্যান্ড, ফিফা, ইউইএফএ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-সহ একাধিক সংস্থা। গোটা বিশ্বজুড়ে এই কর্মসূচিতে সাড়া দেন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের কয়েক কোটি মানুষ। চিত্রতারকা হোক বা খেলোয়াড় বা রাজনীতির কারবারি— এই কর্মসূচির শরিক অনেকেই। কেট পেরি থেকে ডেভিড বেকহ্যাম, শাকিরা থেকে বারাক ওবামা বা সচিন তেন্ডুলকর— আন্দোলনে সামিল সবাই। এ বছরের ‘আর্থ আওয়ার’ কর্মসূচির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন অভিনেত্রী জেসিকা অ্যালবা। ২০০৭ সালে এমন অভূতপূর্ব আন্দোলন প্রথম শুরু হয় সিডনিতে। প্রায় বাইশ লক্ষ পরিবার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য নিভিয়ে দিয়েছিলেন বৈদ্যুতিক আলো। ২০০৮ সালে এক ঘণ্টার জন্য নিভিয়ে দেওয়া হয় সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন ব্রিজ, নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়্যার, রোমের কলোসিয়াম ও সিডনি অপেরা হাউসের বৈদ্যুতিক আলো। কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। এর পর ধারাবাহিক ভাবে প্রতি বছরই ‘আর্থ আওয়ার’-এ অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১০ সাল থেকে এই ‘আন্দোলন’ বৃহত্ আকার নেয়। এ বছরের ২৩ মার্চ ১৫৩টি দেশের প্রায় সাত হাজার শহরে এই কর্মসূচি পালিত হয়। ২০১৪ সালের ‘আর্থ আওয়ার’ আয়োজিত হবে ২৯ মার্চ।

• বিলুপ্তির পথে, তাই চিন্তা এ বার চিতা নিয়ে
বিলুপ্তপ্রায়ের খাতায় এ বার নাম উঠছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণীর। ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে ধেয়ে যাওয়া সেই প্রাণী আর কেউ নয়, চিতাবাঘ বা অ্যাসিনোনিক্স জুবাটাস। মূলত আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। সমীক্ষা অনুযায়ী বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে চিতার সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি। আফ্রিকার ২৫টি দেশে বর্তমানে চিতার সংখ্যা বারো হাজার চারশোর আশেপাশে। নামিবিয়ায় এই সংখ্যা একটু বেশি, প্রায় আড়াই হাজার। ইরানে সংখ্যাটা সবচেয়ে কম, ৫০ থেকে ৬০। ‘প্যান্থেরা’ নামের একটি অসরকারি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বর্তমানে চিতার সংখ্যা প্রায় ৭৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের মধ্যে চিতা ঢুকে পড়বে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রজাতিকে বিলুপ্তপ্রায় তালিকাভুক্ত করেছে। তবে চিতার এই বিলুপ্তির কারণ চোরাশিকার নয়। বরং বিজ্ঞানীদের ধারণা সিংহ ও হায়না জাতীয় প্রাণীর তুলনায় শারীরিক ক্ষমতায় দৌর্বল্যতাই এই সংখ্যা কমার জন্য দায়ী। বিবর্তনের ইতিহাসে ডারউইনের ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’-এ এখনও পিছিয়ে রয়েছে ফেলিডি পরিবারভুক্ত এই স্তন্যপায়ী। সারা বিশ্বে কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজননের মাধ্যমে চিতাবাঘের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত ভারতে ১৯৪০ সাল থেকেই চিতাবাঘের বিলুপ্তি ঘটেছে।

• ম্যানগ্রোভে দিশা দেখাচ্ছে গুজরাত
সম্প্রতি ভারত সরকারের বন দফতর দেশজুড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। তাতে আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা গিয়েছে, দেশে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মোট আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সারা দেশের মধ্যে গুজরাত শীর্ষে। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই জাতীয় অরণ্যের মোট আয়তন বেড়েছে ২৩.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। ম্যানগ্রোভ সৃষ্টিতে গুজরাতের অবদান সারা দেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় বন দফতর। বিশ্বের তিন শতাংশ ম্যানগ্রোভ রয়েছে ভারতে। যার মোট আয়তন ৪ হাজার ৬৬২ বর্গ কিলোমিটার— দেশের মোট ভৌগোলিক আয়তনের ০.১৪ শতাংশ। এই আয়তনের প্রায় অর্দ্ধেকই পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ‘অধিকার’ করে আছে। দেশে ম্যানগ্রোভের ঘন অরণ্য ১ হাজার ৪০৩ বর্গ কিলোমিটার, মাঝারি অরণ্য ১৬৫৮.১২ বর্গ কিলোমিটার। উপকূলীয় জলে জৈব ও অজৈব খাদ্যের যোগান বাড়িয়ে বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখে ম্যানগ্রোভ। শুধু তাই নয়, এই অরণ্য ঝিনুক, কাঁকড়া ও মাছের ‘আঁতুড় ঘর’ হিসাবেও কাজ করে। এ কারণেই ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে বিশ্বের ‘উচ্চ উত্পাদনশীল জলাভূমি’ বলা হয়।

• হাঙরের দাঁত দিয়ে নির্মিত অস্ত্র
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোসুয়া ড্রু ও ‘ফিল্ড মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র গবেষকরা ফিল্ড মিউজিয়ামে রাখা কয়েকটি অস্ত্রের পরীক্ষা করছিলেন। তাঁদের গবেষণালব্ধ বিষয়ের মধ্যে মুগুর, ছুরি, তলোয়ার, বল্লম ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ১২০ রকমের অস্ত্র ছিল। অস্ত্রগুলো বানানো হয়েছিল আটটি প্রজাতির হাঙরের হাড় ও দাঁত দিয়ে। এর মধ্যে দু’টি প্রজাতির উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের গিলবার্ট দ্বীপের বাসিন্দাদের সংস্কৃতির সঙ্গে হাঙরদের একটা যোগসূত্র ছিল। ইতিহাস বলছে, হাঙর শিকার করে তার হাড় ও দাঁত দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করা দ্বীপবাসীদের ধর্মীয় রীতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষণায় জানা গিয়েছে, গিলবার্ট অঞ্চলে দুই বিলুপ্ত প্রজাতির হাঙরের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু পুঁথিগত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে দাবি গবেষকদের। ফলে এই দুই প্রজাতি সম্পর্কে জীববিজ্ঞানীরা অবগত ছিলেন না। জোসুয়া ড্রু জানিয়েছেন, অন্যান্য অঞ্চলে এই হাঙরদের দেখা মিললেও, অতিরিক্ত শিকারের ফলে গিলবার্টে এরা বিলুপ্ত। তবে আশা ছাড়ছেন না তিনি, অনুসন্ধান চালালে পাওয়া যেতে পারে এই দুই প্রজাতিকেও, জানিয়েছেন ড্রু।

পার্বণ
• নাগাল্যান্ডের মোয়াত্সু উত্সব
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য নাগাল্যান্ড। বিদেশি রাষ্ট্র মায়ানমার এবং দেশীয় রাজ্য অসম ও অরুণাচল প্রদেশ ঘেরা এ রাজ্যে একাধিক পার্বত্য উপজাতি ও আদিবাসী মানুষের বাস। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও সৌন্দর্যের সঙ্গে পাহাড়ি সংস্কৃতির মিশেলে এখানকার সমাজ ব্যবস্থা এখনও ‘আদি, অকৃত্রিম এবং অপরিবর্তিত’। নাগাল্যান্ডের অধিবাসীরা বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা উত্সবের আয়োজন করে। তেমনই একটি উত্সবের নাম মোয়াত্সু— প্রাচীন পার্বত্য নবান্ন উত্সব। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই উত্সব পালিত হয়। তিন দিন ব্যাপী এই উত্সবে ফসল তোলার সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসী নারীপুরুষরা একত্রিত হয়ে উপজাতীয় ঐতিহ্যশালী নাচগানে মেতে ওঠে। উত্সবের রীতি মেনে ওই তিন দিন সন্ধেবেলা আগুন জ্বালানো হয়। এর পর সেই আগুন ঘিরে লোকগীতি ও নাচে অংশ নেন বাহারি পোশাকে সজ্জিত কয়েকশো উপজাতি মানুষ— এটি সাংপাংতু নামে পরিচিত। মাংস ও দেশি মদ সহযোগে মহা ধূমধামের সঙ্গে আয়োজিত হয় সাংপাংতু। পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি কামনা এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধির আশায় প্রতি বছর পালিত হয় মোয়াত্সু উত্সব।

• গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো গঙ্গাসপ্তমীতে
ভারতের অসংখ্য লৌকিক এবং অলৌকিক কাহিনি জুড়েই গঙ্গার পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণিত হয়েছে। পুরাণ মতে হিন্দু দেবদেবীর সংখ্যা ৩৩ কোটি। সব দেবদেবীর নাম জানা না থাকলেও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান মিলিয়ে বারো মাসে তেরো পার্বন লেগেই থাকে এ দেশে। এমনই এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান গঙ্গাসপ্তমী। হিন্দু শাস্ত্র মতে— জন্মলগ্নে গঙ্গার প্রবল স্রোত গোটা পৃথিবীকেই ভাসিয়ে দেয়। ত্রিদেবের সৃষ্টি মানব সভ্যতা গঙ্গার স্রোতে ভেসে যাতে ধ্বংস না হয়ে যায় তাই দেবাদিদেব মহাদেব তাঁর জটায় বাঁধলেন খরস্রোতা উত্তাল গঙ্গাকে। ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচল মানব সংসার, বাঁচল গোটা পৃথিবী। তার পর মহাদেবের জটা থেকে নিয়ন্ত্রিত গঙ্গাকে কৈলাস থেকে পৃথিবীর বুকে নামিয়ে এনেছিলেন ভগীরথ— গঙ্গার পবিত্র স্পর্শে শাপমোচন ঘটিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করে মানব জাতি। গঙ্গার এই দ্বিতীয় জন্মলগ্ন পালিত হয় প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাস নাগাদ গঙ্গাসপ্তমী বা গঙ্গাজয়ন্তীর মাধ্যমে। কৈলাস থেকে পৃথিবীতে যে হেতু গঙ্গাকে নিয়ে এসেছিলেন ভগীরথ তাই গঙ্গার আর এক নাম ভাগীরথী। হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত আর একটি কাহিনি অনুযায়ী, বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষে ঋষি জাহ্নুর কান থেকে গঙ্গার সৃষ্টি হয়, তাই গঙ্গার অপর নাম জাহ্নবী। এই গঙ্গা সপ্তমীতে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ অঞ্জলি-আরতির মাধ্যমে পুজো করেন গঙ্গার। তবে গঙ্গা পুজোর জন্য আলাদা কোনও ফলমূলের দরকার হয় না। পবিত্র গঙ্গার জলেই গঙ্গা পুজো করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। হরিদ্বার এবং বারাণসীতে গঙ্গা-আরতি করতে ও দেখতে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।

• বৈরথের বাণগঙ্গা মেলা
দুর্গ, মরুভূমি এবং সর্বোপরি ইতিহাসের কারণে রাজস্থান সব সময়েই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। তবে এ সবের বাইরে আরও এক রাজস্থান পর্যটকপ্রিয় মানুষের কাছে অতি পছন্দের। এবং সেটা এ রাজ্যের বিভিন্ন উত্সব ও মেলার কারণে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাণগঙ্গা মেলা। প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমায় রাজস্থানের বৈরথে বাণগঙ্গা নদীর কাছে বসে এ মেলা। লোককথা অনুযায়ী পঞ্চপাণ্ডবের অর্জুন না কি বাণ দিয়ে পিতামহ ভীষ্মের তৃষ্ণা নিবারণ করতে এই জলধারার সৃষ্টি করেন। মেলায় বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে প্রচুর জন সমাগম হয়। প্রায় প্রত্যেক পূর্ণার্থীই বাণগঙ্গায় স্নান করেন। এখানে একটি রাধাকৃষ্ণের মন্দিরও আছে। রাধাকৃষ্ণের আরাধনার উদ্দেশে পূর্ণার্থীদের সমাগমে পুরো এলাকা মেতে ওঠে। মেলার টানে পূর্ণার্থীদের পাশাপাশি এখানে হাজির থাকেন কয়েকশো বিক্রেতা, হাজার হাজার দর্শনার্থী এবং পর্যটক। মেলায় স্থানীয় কুটির ও হস্তশিল্পের সুন্দর সুন্দর নানা সামগ্রী মেলে— ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিস থেকে গ্রামীণ সুদৃশ্য অলঙ্কার সবই পাওয়া যায় এখানে। মেলার বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যায় স্থানীয় নানা মুখরোচক খাবারদাবারও। মনোরঞ্জনের জন্য থাকে নাগোরদোলা, পুতুল নাচের আসর, স্থানীয় শিল্পীদের গানের জলসা ইত্যাদি। রাজস্থানের জয়পুর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরের বৈরথে বাণগঙ্গা মেলায় যাওয়ার জন্য নিয়মিত বাস পরিষেবা মেলে। তবে সরাসরি বৈরথ অবধি নয়, তার দু’তিন কিলোমিটার আগের মেইড-এ নামতে হয় বাস থেকে। তার পর হেঁটে বাণগঙ্গার মেলা।

• পর্যটক বরণে ‘সামার ফেস্টিভ্যাল’
প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে শুরু হয় তিন দিনের ‘সামার ফেস্টিভ্যাল’। অপরূপ পাহাড়ি সৌন্দর্যের টানে এমনিতেই প্রায় সারা বছর অসংখ্য পর্যটকের আনাগোনা এই মাউন্ট আবুতে। তবে গ্রীষ্মবরণের অজুহাতে এই তিন দিনের উত্সব আসলে পর্যটক বরণেরই উত্সব। যে কারণে এই তিনদিন বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা মাউন্ট আবুতে বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাজস্থান সরকারের পর্যটন দফতরের সঙ্গে মাউন্ট আবুর স্থানীয় প্রশাসন এই উত্সবের আয়োজক। আয়োজকদের আন্তরিক উদ্যোগ ও পর্যটকদের প্রাণের ছোঁয়ার সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্ভার মিলেমিশে ভীষণ রঙিন হয়ে ওঠে মাউন্ট আবু এই সময়ে। রাজস্থান পর্যটন সংস্থার হোটেল শিখর-এর সামনে থেকে নাক্কি চক পর্যন্ত এক বিশাল শোভাযাত্রার মাধ্যমে উত্সবের সূচনা হয়— লোকসংস্কৃতির নানা সম্ভার ও অনুষ্ঠান সহযোগে। উত্সবের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় স্কেটিং রেস, স্ক্যাটার শো, সিআরপিএফ ব্যান্ড শো, বোট রেস, হর্স রেস, টাগ অব ওয়ার, পানিহারি মটকা রেস, দ্বীপদান ইত্যাদি। এ সবের সঙ্গে তিন দিনই আতসবাজির প্রদর্শনীতে আলোকিত হয়ে ওঠে গোটা শহর। এ বছরের সামার ফেস্টিভ্যাল শুরু হবে ২৩ মে, চলবে ২৫ তারিখ পর্যন্ত।

পর্যটন কেন্দ্র
• টিউলিপের টানে পর্যটকের ঢল কাশ্মীরে
ফেব্রুয়ারি মাসে জম্মু-কাশ্মীরে কার্ফু ও সাধারণ ধর্মঘটের জেরে কিছুটা কমে গিয়েছিল পর্যটকদের যাওয়া-আসা। কিন্তু তার পরেই ফের পর্যটকরা পা রেখেছিলেন উপত্যকায়। আর সে কথা মাথায় রেখেই এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ ফুলের বাগানের দরজা পর্যটকদের জন্য আগেই খুলে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ৮০ ধরনের টিউলিপ আছে কাশ্মীরের এই বাগানে। রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৫ হাজার পর্যটক এসেছিলেন টিউলিপ বাগানে। আরও পর্যটকের আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আধিকারিকরা। রাজ্যের ফুলচাষ দফতর জানিয়েছে, এ বার ২৪টি নতুন ধরনের টিউলিপ লাগানো হয়েছে। নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানি করা নতুন ধরনের এই টিউলিপগুলি প্রথম কাশ্মীরে লাগানো হল। ১৫ হেক্টরের এই বাগানটির আগে নাম ছিল সিরাজ বাগ। এখন অবশ্য পোশাকি নাম ইন্দিরা গাঁধী স্মৃতি টিউলিপ উদ্যান। প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ। ২০০৮ সালে তিনিই বাগানটির উদ্বোধন করেছিলেন। সরকারি অফিসারদের মতে, কেবল টিউলিপ বাগানের দৌলতেই কাশ্মীরে পর্যটনের মরসুম কিছু দিন এগিয়ে এসেছে। আর সেই আকর্ষণ কাটাতে না পেরে কাশ্মীরে বেশি দিন থেকেও যাচ্ছেন পর্যটকরা। তাই টিউলিপকে বাদ দিয়ে পর্যটনের কথা ভাবতে রাজি নয় জম্মু-কাশ্মীর সরকার।

• মোদীর সিংহ যাচ্ছে শিবরাজের রাজ্যে, পর্যটকও
নরেন্দ্র মোদীর সিংহবিক্রমে এ বার ভাগ বসাচ্ছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। গির অরণ্যের সিংহকুলকে এত দিন গুজরাতের গর্ব হিসেবে প্রচার করে এসেছেন মোদী। রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে যে বিজ্ঞাপন করানো হয়েছে, সেখানে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে সিংহের কথা। ভারতে এশীয় সিংহের একমাত্র বাসস্থান গির। এশীয় সিংহের সংরক্ষণে কেন্দ্র সাহায্য করছে না বলে সম্প্রতি দিল্লি এসে অভিযোগও করেছিলেন মোদী। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, সিংহদের দ্বিতীয় বাসস্থান থাকাটা একান্ত জরুরি। তাই কিছু সিংহ পড়শি রাজ্য মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর অভয়ারণ্যে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ঠিক কত সিংহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দায়িত্বও দিয়েছে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি সি কে প্রসাদের বেঞ্চ। গুজরাতের গিরে এখন প্রায় চারশো সিংহের বাস। কিন্তু নানা কারণে জঙ্গল থেকে হামেশাই লোকালয়ে চলে আসে তারা। গুজরাতে সিংহদের অস্তিত্ব বিপন্ন, এই অভিযোগে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, গির অরণ্যে সিংহদের থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। সেখানে সিংহের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সেই অনুপাতে জায়গা নেই। এমনকী, কোনও বড় ধরনের মড়ক হলে পুরো প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে। শুনানির সময়ে বিকল্প হিসেবে উঠে আসে মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর অভয়ারণ্যের নাম। পর্যটকদের গন্তব্য এ বার তা হলে গিরের পাশাপাশি হতে পারে কুনো পালপুরও।

• জঙ্গলমহলে ফের পর্যটনের উদ্যোগ
চলতি বছরেই জঙ্গলমহলে পর্যটন-পরিকাঠামো তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। প্রথম পর্যায়ে মাওবাদী হামলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া পর্যটন আবাসগুলো নতুন করে গড়ছে রাজ্য। এই সব আবাস চালাতে ‘হোম ক্রুজ’ নামে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করছে পর্যটন দফতর। মহাকরণের পদস্থ এক অফিসার জানিয়েছেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদেরই এগুলো দেখভাল এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘হোম ক্রুজ’।” বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে হবে ৩০টি আবাস। পর্যটন সচিব বিক্রম সেন জানিয়েছেন, “এ বছরের অক্টোবরে কাজ শেষ হওয়ার কথা।” পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ড সীমানায় দলমা গিরিশৃঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে হচ্ছে আরও একটা ‘পর্যটন সার্কিট’। কলকাতা থেকে মোটামুটি ৩২৮ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া, সেখান থেকে অযোধ্যা পাহাড় আরও প্রায় ৬০ কিলোমিটার। দুর্গাপুর এবং বাঁকুড়া থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ১৭০ কিলোমিটার এবং ১৬০ কিলোমিটার। কাজেই সপ্তাহান্তে ছোট সফর করে ওখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব। পাশাপাশি অযোধ্যা পাহাড়েও তৈরি হবে ৩০টি আবাস। এই সফরে নিকটবর্তী ময়ূরপাহাড়, সীতাপাহাড়, রামঝর্না, পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেখার সুযোগ মিলবে। প্রকৃতিবান্ধব একটি অংশে কিছু বাড়ির ফাঁকা জমির উপরে হবে বিলাসবহুল কুটির। পর্যটন-কর্তাদের সঙ্গে কথা চলছে ঝাড়গ্রাম রাজপরিবারেরও। কলকাতা থেকে সড়কপথে ২১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ঝাড়গ্রামে যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টারও কম। রাজা নরসিংহ মল্লদেব বাহাদুরের উদ্যোগে গথিক ও মুসলিম স্থাপত্যের মিশ্রণে এখানকার রাজপ্রাসাদ তৈরি হয়। পর্যটন সচিব জানিয়েছেন, “প্রাসাদটিতে পর্যটক টানতে রাজপরিবারের সঙ্গে শীঘ্রই রাজ্য সরকারের একটা সমঝোতাপত্র হওয়ার কথা। আশা করা যাচ্ছে, আগামী পুজোয় ওটা বেড়ানোর একটা ভাল জায়গা হয়ে উঠবে।’’

• এ বার দুবাইয়ে তাজমহলের রেপ্লিকা
আগরাতে প্রায় ৩৫০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল তাজমহল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মুমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে ২০ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক দিয়ে বানিয়েছিলেন এই সৌধ। ইউনেস্কো এই স্মৃতিসৌধকে ‘হেরিটেজ’ তকমাও দিয়েছে। সেই স্থাপত্য-কীর্তি নতুন করে বানানো হচ্ছে এ বার দুবাইতে। তবে কোনও স্মৃতিসৌধ হিসেবে নয়, একটি বিলাসবহুল ‘পাঁচ তারা হোটেল’ তৈরি হচ্ছে সেখানে সম্পূর্ণ তাজমহলের আদলে। আসল তাজমহলের তুলনায় এটি হবে প্রায় ৪ গুণ বড়, নাম ‘তাজ আরবিয়া’। এই হোটেলে থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত পরিষেবাযুক্ত ৩০০টি ঘর। হোটেলটি ঘেরা থাকবে মুঘল গার্ডেনের আদলে তৈরি সুন্দর বাগান দিয়ে। স্থাপত্যটির অন্যতম নির্মাণ সংস্থা লিঙ্ক গ্লোবাল গ্রুপের চেয়ারম্যান অরুণ মেহরা জানিয়েছেন, “এটি হবে ‘ওয়ার্লডস গ্র্যান্ডেস্ট ওয়েডিং ডেস্টিনেশন’। বিয়ের অনুষ্ঠান বিলাসবহুল ভাবে করার জন্য অনেকে বালি-সহ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় যান। কিন্তু এর পর থেকে তাঁরা তাজ আরবিয়াতেই আসবেন।” হোটেলটি তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে বলে জানা গিয়েছে।

পরিষেবা
• লখনউ-দেরাদুন জুড়ল এয়ার ইন্ডিয়া
লখনউ থেকে দেরাদুন যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার নতুন উড়ান চালু হয়েছে। এ মাসের ২ তারিখের আগে এই দুই শহরে যেতে দিল্লি হয়ে সংযোগকারী বিমান ধরতে হত। ফলে এই উড়ান চালু হওয়ায় যাত্রীদের সময় ও টাকা উভয়েরই সাশ্রয় হবে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার এই ৪ দিন দেরাদুন ও লখনউ থেকে যথাক্রমে দুপুর ১২টা ৫০ ও ২টো ৫ মিনিটে এই উড়ান ছাড়বে। ৪৫ মিনিট লাগবে গন্তব্যে পৌঁছতে। সংস্থার এক শীর্ষকর্তা সুজিত কুমার আশা প্রকাশ করেছেন, এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক— উভয় ক্ষেত্রের যাত্রীই লাভবান হবেন। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা এয়ার ইন্ডিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “এই উড়ান রাজ্যের পর্যটন শিল্পের প্রসারে বিশেষ সহযোগী হবে।”

• গোয়ায় মহিলাদের জন্য বিশেষ বাস
গত এপ্রিলের ৩০ তারিখ থেকে মহিলাদের জন্য বিশেষ বাস পরিষেবা চালু হল গোয়ায়। রাজ্য সরকারের কদম্ব ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-এর (www.goakadamba.com) সৌজন্যে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে— পানাজি, ভাস্কো, মারগাও, পন্ডা এবং মাপুসা-তে এই বাসগুলি চলবে। পরবহণমন্ত্রী রামকৃষ্ণ ধাবালিকর জানিয়েছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে মহিলাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা নির্ভয়ে এবং সুরক্ষিত ভাবে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন তার দিকেও নজর রাখা হবে।” কেএলটিসি-র তরফে জানানো হয়েছে, এর জন্য ইতিমধ্যে ৯৯টি নতুন বাসও কেনা হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আগামী জুন মাস থেকে সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য আরও নতুন বাস চালু করার কথা ভাবছে সরকার।

• সরকারি উদ্যোগে শব পৌঁছবে নিখরচায়
সরকারি হাসপাতালে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে নিখরচায় তাঁর দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এমনই এক অভিনব পরিষেবা দেওয়ার কথা ভাবছে ছত্তীসগঢ় সরকার। শীঘ্রই তারা এই পরিষেবা চালু করবে বলেও জানিয়েছে পরিবহণ মন্ত্রক। যে কোনও সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই পরিষেবার আওতায় পড়বে। মূলত, এই পরিষেবা দিতে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলি এত বেশি টাকা দাবি করে যে গরিব মানুষের পক্ষে তা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক সময়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মৃতদেহ শেষকৃত্যের জন্য বাড়িতে পৌঁছতে বেশ দেরি হয়ে যায়। এ ধরনের অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই পরিষেবা চালু করতে খুব শীঘ্রই বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করবে সরকার।

• কমলো রেলের অগ্রিম টিকিট বুকিং-এর সময়সীমা
মে মাসের ১ তারিখ থেকে অগ্রিম টিকিট বুকিং-এর সময়সীমা ১২০ দিন থেকে কমিয়ে ৬০ দিন করল ভারতীয় রেল। যদিও গত মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত হওয়া বুকিংগুলি ১২০ দিনের সময়সীমা অনুযায়ী বলবত্ হবে। এক শীর্ষ রেল আধিকারিক জানিয়েছেন, মূলত দালালদের ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে রেল। কারণ এত দিনের সময়সীমা থাকায় বহু দিন আগে থেকেই তারা প্রচুর টিকিট অগ্রিম বুকিং করে রাখত। ফলে যাত্রীরা অসুবিধার সম্মুখীন হতেন। নতুন ব্যবস্থায় যাত্রীরা উপকৃত হবেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, যাত্রীরা সাধারণত ২ মাস আগেই তাঁদের টিকিট বুকিং করে থাকেন। ফলে বেশি সংখ্যক যাত্রী সুবিধা পাবেন। যদিও টিকিট বাতিল করার পদ্ধতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। তত্কালে টিকিট বুকিং-এর ক্ষেত্রে দালালদের ঠেকাতে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রেল। শুধুমাত্র পরিচয়পত্র দেখিয়েই যাত্রীরা টিকিট কাটতে পারবেন সে ক্ষেত্রে। এবং সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনও এজেন্ট বা সংস্থা ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারবে না।

খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ