৩০ ভাদ্র ১৪১৯ শনিবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• আলেপ্পোর প্রাচীন সভ্যতা ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ
ইতালীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ পাওলো ম্যাথি তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণায় জানিয়েছেন, পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় সিরিয়ার সভ্যতার বিবর্তন অনেকটাই প্রাচীন। আলেপ্পো সেই সিরিয়ার প্রধান এক শহর। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে মানুষ বসবাস করেছে এই শহরে। অবস্থানগত ভাবে আলেপ্পো শহরটি বাণিজ্য পথ ‘সিল্ক রুট’-এর শেষে হওয়ায় এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বেশ বর্ণময়। হাইতিতি, আসিরিয়ান, আকাদিয়ান, গ্রিক, রোমান, উম্মায়েদ, অটোমন— বিভিন্ন রাজাদের শাসন কালে এই শহরে গড়ে ওঠে অসংখ্য প্রাসাদ ও মসজিদ। ‘সিটাডেল’, দ্বাদশ শতকের ‘গ্রেট মস্ক’, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে তৈরি ঘরবাড়ি, মাদ্রাসা, জন-শৌচালয়— সে যুগের নাগরিক জীবনের ছবি তুলে ধরে। সিটাডেলকে মাঝে রেখে দেওয়াল পরিবৃত যে শহর গড়ে উঠেছিল, তার ঘরবাড়িতে গ্রেকো-রোমান নির্মাণশৈলীর নিদর্শন পাওয়া যায়। দেওয়ালের বাইরেও বহু দূর বিস্তৃত ছিল লোকালয় ও অগুনতি দেবস্থান। তবে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ভাঙা পড়েছে অনেক কিছুই। সড়ক পথ চওড়া করার জন্য পুরনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হয়েছে বহুতল। আর এ সব কিছুর সঙ্গে সমান তালে চলছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। ২০১১-র মার্চে শুরু হওয়া এই গৃহযুদ্ধের জেরে প্রাণহানি হয়েছে— ৩২ হাজারেরও বেশি— সাধারণ মানুষ-সহ সেনা জওয়ানদেরও। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলিও। ১৯৮৬ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহরের তকমায় ভূষিত আলেপ্পো, তাই চিন্তা বাড়িয়েছে ‘ইউনেস্কো’র। সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল, ইরিনা বোকোভা সকল সিরিয়াবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন দেশের এই সম্পদ রক্ষার্থে যেন তাঁরা এগিয়ে আসেন।

• স্বীকৃতির অপেক্ষায় বেগানের ‘মন্দির কমপ্লেক্স’
১৯৯৬ সালে মনোনীত হলেও, মায়ানমারের বেগান এখনও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর আখ্যা পায়নি। মায়ানমারের প্রথম রাজা আনার্থা ছিলেন থেরাভাডা বৌদ্ধধর্মের একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁর রাজত্ব কালে দশ হাজারেরও বেশি মন্দির ও প্যাগোডা নির্মাণ করা হয় ইরাবতী নদীর ধার ঘেঁষে। সময়ের সঙ্গে লড়াই করে এই ‘মন্দির কমপ্লেক্স’-এর এখনও কিছু প্যাগোডা অটুট আছে। তবে ১৯৭৫ সালের ভূমিকম্পে সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়েছে অনেক মন্দির-সহ সমগ্র অঞ্চলের ভিত। ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল, ইরিনা বোকোভা অগস্ট মাসে স-পারিষদ ঘুরে দেখেছেন বেগানের বেশ কিছু প্যাগোডা ও খননকার্যে উদ্ধার হওয়া রাজমহল-সহ সোনার কাজ করা কাঠের মূর্তি, গৌতম বুদ্ধের চিত্রিত জীবনি (ম্যুরাল)। ২০১৩ সালে সংস্থার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অধিবেশনে মায়ানমার সরকার আরও এক বার প্রস্তাব রাখবে এই অঞ্চলকে তালিকাভুক্ত করার। প্রায় ৪২ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সব মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে। হাজার দশেকের মধ্যে এখন যদিও অবশিষ্ট আছে দু’ হাজারের কিছু বেশি। সরকারি মতে, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলে দেশে পর্যটন বাড়বে এবং সংরক্ষণ করা যাবে ইতিহাসের এই নিদর্শনগুলি।

• ‘হোয়াইট সিটি’র শুভ্রতা
ইজরায়েলের তেল আভিভ শহরের সভ্যতা তিন হাজার বা তার থেকে কিছু বেশিই পুরনো। শহরের ঐতিহাসিক অঞ্চল ‘হোয়াইট সিটি’ ২০০৩ সালে তকমা পেয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর। এই তালিকায় আগেই ছিল সে দেশের মাসাদা ও আক্কা শহর। তিরিশের দশকে জার্মানিতে এক বিশেষ স্থাপত্যকলা ‘বওহস’-এর প্রবর্তন দেখেছিল সারা বিশ্ব, যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। তবে ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে এই বওহস স্থাপত্যরীতি মেনে তেল আভিভ শহরের এক বিশেষ অঞ্চলে তৈরি হয় বহু বাড়ি। ইহুদা হালেভি স্ট্রিট, অ্যালেনবি স্ট্রিট, ইয়ারকন নদী ও ভূমধ্য সাগর— এরই মাঝে এখনও জেগে আছে সেই হোয়াইট সিটি অঞ্চল। সুবিশাল জানালা, প্রসারিত বারান্দার এই বাড়িগুলি ভূমধ্য সাগরীয় আবহাওয়ার জন্য ছিল একেবারে ঠিকঠাক। ভেজা গরম আর স্যাঁতসেঁতে শীতে হাওয়া খেলার এই ব্যবস্থা তাই নাগরিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল খুব সহজেই। গরম কমাতে বাড়িগুলোর রং করা হয়েছিল সাদা— সেখান থেকেই অঞ্চলটির এমন নামকরণ। আশির দশক পর্যন্ত ৪ হাজার বাড়ির মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রায় অর্ধেক। আপাতত পুরসভার নির্দেশে সেই কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১ হাজার বাড়ি ‘ঐতিহাসিক নিদর্শন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে দেড়শো বাড়িতে হাত দেওয়া যাবে কেবলমাত্র মূলের আদলে পুনর্নির্মাণের জন্য। বেশ কিছু প্রশাসনিক ভবনও বওহস স্থাপত্যকলার নিদর্শন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মান অডিটোরিয়াম, হেলেনা রুবিনস্টেইন প্যাভিলিয়ন, জাইওনিস্টস অফ আমেরিকা হাউস। হোয়াইট সিটির ঐতিহ্যের সঙ্গে স্থপতিবিদ প্যাট্রিক গেডস-এর পরিকল্পনায় নির্মিত ‘গার্ডেন সিটি’-র শিরোপাও পেয়েছে তেল আভিভ।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• উদ্ধার হল ‘তেরা নোভা’র ধ্বংসাবশেষ
শতাব্দী প্রাচীন ‘তেরা নোভা’ জাহাজের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মিলল গ্রিনল্যান্ডে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর আধিকারিক ও ভূপর্যটক রবার্ট ফ্যালকন স্কটের ঐতিহাসিক দক্ষিণ মেরু অভিযানের স্মৃতিবিজড়িত এই জাহাজ। দক্ষিণ মেরু অভিযানের স্বপ্ন নিয়ে স্কটের তত্ত্বাবধানে তেরা নোভা সমুদ্রে পাড়ি দেয় ১৯১০ সালে। ১৯১২ সালের ১৭ জানুয়ারি দক্ষিণ মেরু পৌঁছে স্কটের দল আবিষ্কার করে, রোয়াল্ড আমুন্ডসেনের নেতৃত্বাধীন নরওয়ের একটি দল তাদের ৩৩ দিন আগেই এই অভিযান সম্পূর্ণ করেছে। শেষমেশ যাত্রা শেষে ফেরার পথে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় স্কট-সহ বাকি অভিযাত্রীদের। এই ঘটনার প্রায় আট মাস পর তেরা নোভা সমেত যাত্রীদের মৃতদেহ উদ্ধার করে মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী। এর পর ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রসদ সরবরাহের জন্য ফের সমুদ্রে পাড়ি দেয় তেরা নোভা। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে ১৯৪৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ধাক্কা লেগে সমুদ্রের অতলে তলিয়ে যায় সে। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় সত্তর বছর। সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূল থেকে তেরা নোভার ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে আমেরিকার এক গবেষণা সংস্থা। সমুদ্রের তলদেশে এক অজানা বস্তুর সন্ধান পেয়ে বিজ্ঞানীরা স্রিম্প নামে বিশেষ ক্যামেরা জলের তলায় পাঠিয়ে অনুসন্ধান চালান। আর সেই ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ‘তেরা নোভা’-র অস্তিত্ব।

• ‘আধুনিক’ মানুষের প্রাচীনতম খুলি
‘আধুনিক মানুষ’ বা ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’-এর এখনও পর্যন্ত পাওয়া সবথেকে পুরনো মাথার খুলি সম্প্রতি খুঁজে পেলেন বৈজ্ঞানিকরা। লাওসের উত্তরে পা হাং পর্বত মালার তাম পা লিং গুহায় পাওয়া এই খুলিটি ৪৬ হাজার থেকে ৬৩ হাজার বছরের পুরনো বলে মনে করছেন তাঁরা। খুলিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া আধুনিক মানুষের প্রাচীনতম জীবাষ্মের থেকেও প্রায় ২০ হাজার বছরের পুরনো। তার গঠন এবং বৈশিষ্ট্য সবই আধুনিক মানুষের মতো। এই আবিষ্কার নৃতত্ত্ববিদদের সম্পূর্ণ নতুন এক তথ্যের সন্ধান দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বিবর্তনের পথ ধরে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাড়ি দেওয়া শুরু করেছিল প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে। কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কোনও অকাট্য প্রমাণ এর আগে বিজ্ঞানীদের হাতে আসেনি। বস্তুত এই খুলিটি সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া প্রাচীনতম আধুনিক মানুষের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সর্বোত্কৃষ্ট প্রত্নসামগ্রী।

• মিঙ শাসনকালের বাণিজ্যতরী
প্রায় ৫০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া মিঙ শাসনকালের একটি বাণিজ্যতরীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল, বাণিজ্যতরীটি থেকে প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য জিনিসপত্র তুলে আনার। এ বার সেই উদ্যোগে জোয়ার এল বলা যেতে পারে। ২০০৭ সালের মে মাসে স্থানীয় কিছু মত্স্যজীবী চিনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে গুয়াংডং প্রদেশে সমুদ্রের তলদেশে একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। উপকূল থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭ মিটার নীচে, ২৫ মিটার লম্বা ও ৭ মিটার চওড়া সেই ধ্বংসাবশেষ থেকেই এই জাহাজের অস্তিত্ব জানা যায়। প্রায় তিন বছর ধরে জাহাজটি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়। অভিযানটি প্রথমে এ বছরের জুন মাসে শুরু হলেও টাইফুন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে যায়। বিপর্যয় কেটে যাওয়ার পর ফের শুরু হয় উদ্ধারকাজ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা জাহাজটিতে চিনামাটির জিনিস, তামার মুদ্রা, পোর্সেলিন ও প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য জিনিসপত্র ভর্তি রয়েছে। ৩০ হাজারেরও বেশি দ্রব্য এই অভিযান থেকে উদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার দ্রব্য নান’ আও-১ মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে। এই সেপ্টেম্বরের শেষে উদ্ধারকাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রত্নতাত্ত্বিকদের।

• হাজার বছরের পুরনো বুদ্ধ মূর্তি উদ্ধার কম্বোডিয়ায়
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উদ্ধারে এগিয়ে এল কয়েকটি শিশু। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। কেমন করে? কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেন থেকে ৫০ মাইল দূরে একটি নতুন কাটা পুকুরে স্নান করছিল কয়েকজন স্থানীয় কচিকাঁচা। তার মধ্যে এক জন হঠাত্ই জলের নীচে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। আর পরে সেখানেই আবিষ্কৃত হয় প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো ৬টি বুদ্ধ মূর্তি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নবম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে এই মূর্তিগুলি তৈরি করা হয়েছিল। মূর্তিগুলির ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মূল্য অপরিসীম। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে কম্বোডিয়ার অনেক শিল্প নিদর্শনই পাচার হয়ে গিয়েছে দেশের বাইরে। ২০০৪ সালে ইউনেস্কো কম্বোডিয়ার বিখ্যাত আঙ্কর ভাট বৌদ্ধ মন্দিরকে বিপন্মুক্ত ঐতিহ্যের তালিকায় যোগ করার পর মন্দির চত্বর থেকেই শিল্প নিদর্শন চুরির প্রবণতা আরও বেড়েছে। খোলা বাজারে এই সব দুষ্প্রাপ্য শিল্পদ্রব্য বিক্রি করা হয় মাত্র ১ থেকে ১৫ মার্কিন ডলারে। সাধারণ মানুষকে এই সমস্ত দ্রব্যগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝাতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে ‘হেরিটেজ ওয়াচ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কম্বোডিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে অনেকগুলি মিউজিয়াম বানিয়েছে এই সংস্থা। তারই একটিতে এই নতুন আবিষ্কৃত মূর্তিগুলি স্থান পাবে এবং সেখানেই তাদের নিয়ে আরও গবেষণা করা হবে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• মীন-চরিত্র বুঝতে মাছেদের জন্য ‘ভিডিও গেম’
এই প্রজন্মের শিশুদের ভিডিও গেমের প্রতি অমোঘ আকর্ষণের কথা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু তাই বলে ‘মাছেদেরও ভিডিও গেমে আসক্তি আছে’— কথাটা শুনে ঠিক বিশ্বাস করতে মন চায় না! তবে সেই আসক্তি যে বিজ্ঞান গবেষণায় এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মাছেদের জন্য সম্প্রতি বিশেষ প্রযুক্তির ভিডিও গেম তৈরি করলেন প্রিন্সটোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। শিকারি ব্লুগিল প্রজাতির মাছেদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধরা পড়বে এই ভিডিও গেমে, তাঁদের এমনই দাবি । বিশেষ ভাবে তৈরি এই গেমটিতে রয়েছে একটি অস্বচ্ছ পর্দা, যার উপর দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে একটি লাল বিন্দু। গবেষণাগারে ব্লুগিলদের জন্য তৈরি জলাধারে এই গেমটি চালু করে বিজ্ঞানীরা মাছেদের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। দেখা গিয়েছে, লাল বিন্দুটিকে আক্রমণ করার পরিবর্তে মাছেরা সার বেঁধে ধাবমান বিন্দুটির গতিপথ অনুসরণ করছে। এ যেন অনেকটা খেলারই মতো। তাই এ বার খেলা শিখতে মাছেদের আগ্রহ কতটা তা বিশদ ভাবে জানতে গেমের গ্রাফিক্সে কিছুটা পরিবর্তন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এমন ভাবে খেলাটি সাজানো হয়েছে যাতে বিন্দুটির গতিপথ বুঝতে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয় ব্লুগিলদের। আর এতেই নাকি বোঝা যাবে মাছেদের কৌতূহলের মাত্রার পরিমাণ। মীন-চরিত্র আরও ভাল ভাবে জানতে এ বার ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যও নিতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।

• ‘অপেরা গায়ক’ গিবন
পেশাদার সোপ্রানো গায়িকাদের মতোই গলা চড়িয়ে গান গাইতে পারে তারা। আবার ক্ষেত্র বিশেষে তারাই তীক্ষ্ণতার পরিবর্তন ঘটিয়ে সুরের অদল বদল করতে পারে। বাঁদর জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী গিবনদের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্যই লক্ষ করছেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। বিশেষ প্রজাতির এই গিবনরা ‘হাইলোবেটস লার’ নামে পরিচিত। মূলত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিম চিন, সুমাত্রা প্রভৃতি এলাকার বৃষ্টি অরণ্যে এদের দেখা মেলে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গিবনদের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পিছনে রয়েছে একটি গ্যাস। তার নাম হিলিয়াম। আর সেই গ্যাসই গিবনদের স্বরের পরিবর্তন ঘটায়। পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীরা হিলিয়াম সমৃদ্ধ আবহাওয়ায় গিবনদের রেখে তাদের স্বর রেকর্ড করেন। দেখা যায় স্বরের তীক্ষ্ণতা পরিবর্তিত হয়ে এক উচ্চ কম্পাঙ্কের চড়া সুরের সৃষ্টি হয়। প্রধানত এই সুরের সাহায্যেই গিবনরা প্রায় দু’মাইল দূর থেকেও তাদের নিজ প্রজাতির সঙ্গে কথোপকথন চালায়। ঘন জঙ্গলের মধ্যে ‘বন্ধু’দের কাছে বিপদ সঙ্কেত পাঠাতে ও প্রয়োজনে উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজতেও এই সুরের সাহায্য নেয় ‘গায়ক’ গিবনরা।

• পরাগহীন ‘ফুল’
পরাগরেণু ছাড়াই ফুল! অবাক লাগলেও এমনটাই সম্ভব করলেন লন্ডনের বিজ্ঞানীরা। এই ফুলগুলি মূলত ‘জেরেনিয়াম’ বর্গভুক্ত গাছের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ‘জেরেনিয়াম’ এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ যার ৪২২ রকমের প্রজাতি আছে। এই প্রজাতির গাছগুলি থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি এমন ফুল দীর্ঘ দিন তাজা থাকবে এবং সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধ করবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের। রংবেরঙের জেরেনিয়াম ফুল ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বহু দিন থেকেই। অত্যাধুনিক জিনগত প্রযুক্তির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা এই ফুলগুলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। দু’টি বিশেষ ধরনের জিন ‘ট্রান্সজেনিক’ পদ্ধতিতে এই ফুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে একটি জিনের কাজ হল ফুলের পরাগগ্রন্থিকে নষ্ট করা, যাতে নতুন করে পরাগ তৈরি না হয়। দ্বিতীয় জিনের কাজ হল বয়স প্রতিরোধকারী হরমোন তৈরি করা, যাতে দীর্ঘ দিন ফুলগুলি সতেজ থাকবে। উষ্ণায়নের এই যুগে বহু মানুষ সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হন। বিজ্ঞানীদের আশা বিশেষ উপায়ে তৈরি এই ফুলগুলি যে কোনও রকমের অ্যালার্জি ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে।

• নতুন ‘পেঁচা’
নিশাচর— দিনের বেলা তারা ঘুমায়, আর রাতে শোনা যায় তাদের ডাক। তারা মা লক্ষ্মীর বাহন— পেঁচা। বৈজ্ঞানিকদের মতে, মূলত দু’টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত বিলুপ্ত প্রজাতির এই পাখি। কুমেরু অঞ্চল, গ্রিনল্যান্ড ও কিছু বিশেষ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র তাদের দেখা পাওয়া যায়। সম্প্রতি দু’টি ভিন্ন ও নতুন গোত্রের পেঁচার সন্ধান পাওয়া গেছে ফিলিপিন্সে। গান শুনে তাদের রকম ফের নির্ধারণ করেছে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিকেরা। ফিলিপিন্সের দুই দ্বীপরাজ্য ক্যামিগুইন ও সেবু-র নামানুসারে তাদের নামকরণ করা হয়েছে— ক্যামিগুইন হক্ আউল ও সেবু হক্ আউল। ফিলিপিন্সে বনাঞ্চল যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে আগামী চল্লিশ বছরের মধ্যে ‘সবুজ’ সম্পূর্ণ ভাবে উধাও হয়ে যাবে এখান থেকে, এমনটাই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ হেক্টর বনাঞ্চল অবক্ষয়ের পাশাপাশি অবলুপ্তির পথে এখানকার বন্যপ্রাণীও। তাই নতুন পেঁচার (বিশেষত সেবু হক্ আউল) সন্ধান পেয়ে স্বভাবতই খুব খুশি বৈজ্ঞানিক মহল। পেঁচারা যে গান গায় তা তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য। এবং গান তারা গায় প্রকৃতিগত কারণে— সঙ্গী খুঁজতে বা নিজের দলকে সতর্ক করতে। আর সে কারণেই প্রতিটি প্রজাতির ডাক বা গান হয় আলাদা আলাদা। সেই সূত্র ধরেই বৈজ্ঞানিকদের সিদ্ধান্ত, আবিষ্কৃত দুই প্রজাতি একেবারেই ‘নতুন’।

পার্বণ
• গুজরাতের ‘তারনেতার মেলা’
একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গুজরাতে জমে ওঠে তারনেতার মেলা। মহাদেব ত্রিনেত্রেশ্বরের আরাধনাকে কেন্দ্র করে অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে তিনদিন ব্যাপি এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। রাজকোট থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে সৌরাষ্ট্রের তারনেতারে ত্রিনেত্রেশ্বর মন্দির চত্বরের আঞ্চলিক এই মেলার খ্যাতি প্রায় সারা দেশ জুড়ে। স্থানীয় মানুষজনের বিশ্বাস, এখানেই মহাভারতের অর্জুন এবং দ্রৌপদীর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। আর সেই লোককথার ভিত্তিতে এখনও এখানে আয়োজিত হয় ‘গণবিবাহ’। স্থানীয় আদিবাসী ‘বর’ খুঁজে নেন তাঁর পছন্দের ‘কনে’কে। মেলায় হাজির থাকেন কয়েকশো অবিবাহিত যুবক। তাঁদের পরনে থাকে আঞ্চলিক পোশাক, সঙ্গে সুতো ও কাচ বসানো নকশাদার ছাতা। মেলার হাজার হাজার মানুষের ভিড়েও সকলের থেকে আলাদা করা যায় এঁদের। বিবাহপ্রার্থী এই যুবকদের বাহারি ছাতা ‘মেলা’র চেহারাটাকেই বদলে দেয়। তারনেতার মেলায় আঞ্চলিক লোকসঙ্গীত ও লোকনৃত্যের আসর বসে। অজানা আঞ্চলিক বাদ্যযন্ত্রের দেখাও মেলে এখানে। আঞ্চলিক ‘রাস গরবা’র তালে তালে ‘হুডো নাচ’-এ মেতে ওঠেন মেলায় উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষ। ঢোল, তাসা এবং ‘জোডিয়া পভা’ নামের বাঁশির তালে-সুরে মহিলাদের সমবেত নাচ ‘রাসদা’ এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। মেলায় প্রায় শ’তিনেক ছোট বড় দোকান বসে। তাদের ছাউনির পসরায় থাকে আঞ্চলিক পোশাক, গয়না ও খাবার। হিন্দু ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই তারনেতার মেলা রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির অতি পরিচিত মুখ।

মুর্শিদাবাদ— নবাব নগরীতে নবাবি আমলের এক বর্ণময় উৎসব ‘বেড়া’। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। এ বছর ‘বেড়া’ উৎসব অনুষ্ঠিত হল গত পরশু, ১৩ সেপ্টেম্বর। ‘বেড়া’ শব্দটির অর্থ বাংলা ভাষায় প্রচলিত বেড়া নয়। এই ‘বেড়া’ একটি ফারসি শব্দ, যার অর্থ দলবদ্ধ জলযান নিয়ে কোনও মহৎ উদ্দেশ্যে অভিযান করা। প্রথমে সুবেদার ও পরবর্তী কালে বাংলা-বিহার-ওড়িশার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর রাজত্ব কালে ১৭০৪-এ প্রথম এই উৎসবের সূচনা হয়। দু’রকমের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এই উৎসব প্রচলনের পিছনে। এখানকার নবাবদের কাছ থেকে বিপুল ধনরত্ন, অর্থ সমেত খাজনা যেত জলপথে উত্তর ভারতে মোগল সম্রাটদের কাছে। সেই ধনরাশি অনেক সময়ে প্রাকৃতিক কারণে বা জলদস্যুদের আক্রমণে জলপথেই খোয়া যেত। সে কারণে খাজনা পাঠানোর পূর্ব মুহূর্তে জলদেবতা খাজা খিজিরের কাছে মানত করা হত এই বেড়া উৎসবের মাধ্যমে। আর একটি ব্যাখ্যা হল, প্রায় ফি বছর প্রবল বর্ষা ও ভাগীরথীর প্লাবনে মুর্শিদাবাদ ও সংলগ্ন অঞ্চলে অসংখ্য মানুষ ও পশু মারা যেত, ফসল ও সম্পত্তি নষ্ট হত। তাই বর্ষার শেষে ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ধনসম্পদ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কামনায় জলদেবতার (খাজা খিজির-এর) কাছে প্রার্থনা জানানোর এই রেওয়াজ ধর্মীয় আচারের মাধ্যমে। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এতে অংশগ্রহণ করেন। ইমামবড়া থেকে সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা শুরু হয় হাতি, কুমিরের মুখ বসানো বজরা (বাঁশ, বাখারি, কাগজ দিয়ে তৈরি), আলোকসজ্জা, ব্যান্ড, তাসা নিয়ে। ইমামবড়ার পাশ থেকে ভাগীরথীর পাড় বরাবর বিরাট মেলাও বসে উৎসব উপলক্ষে। ভাগীরথীর তীরে ৪০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া এক বিরাট কলার ভেলায় তোলা হয় এই সব প্রতীকী বজরা এবং অসংখ্য প্রদীপ ও আতসবাজি-সহ বিভিন্ন কাঠামো। তার পর ঘাট থেকে ওই বিরাট কলার ভেলার বাঁধন কেটে দেওয়া হয়। তোপখানা ঘাট থেকে ‘বেড়া’ যে মুহূর্তে বাঁধনছিন্ন হয়ে ভাসে, ভাগীরথীর দু’পাড়ে শুরু হয় আতসবাজির প্রদর্শনী। দু’পাড়ে হাজার হাজার মানুষ। হাজারদুয়ারির চোখ ধাঁধানো শোভার প্রেক্ষাপটে ভেসে যায় ভেলা। অসংখ্য প্রদীপ জ্বলে তাতে।

• হিমাচলের কোলে ‘ফুলাইচ’ উত্সব
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি হিমাচল প্রদেশের কিন্নাউর জেলায় এক বর্ণময় উত্সব উত্তর ভারতের শান্ত পার্বত্য পরিবেশকে হঠাত্ যেন জাগিয়ে-মাতিয়ে তোলে। জনপ্রিয় সেই উত্সবটির নাম ফুলাইচ। সিমলা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে কিন্নাউর জেলা। মূলত মৃত আত্মীয়স্বজনের স্মরণে মিলিত হয়ে নানা খেলা, আঞ্চলিক নাচ ও গানে ডুবে যায় স্থানীয় মানুষজন।
শুধু স্থানীয় মানুষই না, দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটকও আসেন এই বর্ণময় উত্সবের টানে। হিমাচল প্রদেশ তার নিজস্ব নিস্বর্গের কারণে এমনিতেই বিখ্যাত, তবে পর্যটন শিল্পের মুকুটে এই ‘ফুলাইচ’ উত্সব জুড়েছে এক বর্ণময় পালক। উত্সবের অন্যতম অঙ্গ ‘লাডরা’ ফুল। তাই আঞ্চলিক গান, তাসা, বাঁশি, শিঙা-সহযোগে পাহাড়ি পথে ‘লাডরা’ ফুল সংগ্রহ দিয়েই সূচনা হয় উত্সবের। ফুল দিয়ে সাজানো হয় উত্সব প্রাঙ্গণ। আত্মীয় পরিজনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। মৃত পরিজনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রাচীন রীতি মেনে এখানে দেওয়া হয় পশু বলি।

পর্যটন কেন্দ্র
• প্রকৃতি-বিনোদনের মিশেলে নয়া পর্যটন রাজ্যে
পরিকল্পনা বিস্তারিত...
খরস্রোতা তিস্তার বাঁক ছুঁয়েছে ঘন সবুজ জঙ্গল। নদী-বাঁধের কিনারে এসে তাকালে স্পষ্ট হয়ে উঠছে দূরের হিমালয়। শহর শিলিগুড়ি থেকে যৎসামান্য দূরত্বে এমন নিসর্গ এমনিতে বিরল নয়। কিন্তু পর্যটনের প্রসারে স্রেফ প্রকৃতির এই ‘সম্পদ’ই যথেষ্ট নয়। তাই তিস্তা ব্যারাজের তীরে ২০৭ একর তেকোনা এলাকা নিয়ে গড়ে উঠছে নতুন পর্যটনকেন্দ্র গজলডোবা। ঠিক যেমন প্রকৃতির সঙ্গে হাত ধরাধরি করে আধুনিক বিনোদনের সম্ভারে সেজে উঠেছে সিঙ্গাপুর-হংকং-তাইল্যান্ড কিংবা এ দেশের কেরল, সেই পথে এ বার হাঁটছে ডুয়ার্সের গজলডোবা। যার এক দিকে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল। অন্য দু’দিকে তিস্তা ব্যারাজ ও তিস্তা খাল। ঠিক হয়েছে, জঙ্গলের গা ঘেঁষেই থাকবে বিনোদনের প্রাচুর্য। যেমন, সুদৃশ্য গল্ফকোর্স, আয়ুর্বেদিক স্পা, বাগিচা, হ্রদ-রিসর্ট, বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে শুরু করে সুউচ্চ মিনার-রেস্তোরাঁ, দেশজ সংস্কৃতির কেন্দ্র ও ছোটদের আমোদের পার্ক। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল এবং মূল পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৭৫ একর এলাকা জুড়ে তৈরি হবে ‘বাফার জোন’ এবং গল্ফ কোর্স। থাকছে পর্যটকদের জন্য ‘তিন তারা’ থেকে ‘পাঁচ তারা’ হোটেলের আয়োজন। শিশু-বৃদ্ধদের জন্যও থাকছে বিশেষ সুবিধা। জানা গিয়েছে, প্রস্তাবিত পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে ১৮ একরের একটি জলাশয় থাকছে। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হবে লেক রিসর্ট ও টাওয়ার রেস্তোরাঁ। শীতকালে গজলডোবায় অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। তাই বার্ড ওয়াচ টাওয়ার রাখা হবে। সেখান থেকে পাহাড়ও দেখা যাবে। পরিবেশ নির্মল রাখতে পর্যটনকেন্দ্রের অন্দরে শুধু ব্যাটারিচালিত গাড়ি চলবে।

• কর্নাটকে পর্যটনের আকর্ষণ ‘গল্ফ’
রাজ্য পর্যটনের ব্যবসা বাড়াতে এ বার গল্ফ-ট্যুরিজমকে তুলে ধরছে কর্নাটক। ভাল থাকার জায়গা, চোখ জুড়োনো নিসর্গের সঙ্গে সঙ্গে গল্ফ খেলার মাঠের প্রত্যাশী— এমন ভ্রমণার্থীদের টানতে এই অভিনব সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে পর্যটন দফতর। তবে এ ক্ষেত্রে টাকা খরচের অঙ্কটা অনেকটাই বেশি। কর্নাটক সরকারের পর্যটনমন্ত্রী আনন্দ সিংহ জানিয়েছেন, ১৮টি গল্ফ কোর্স ঘিরে বিলাসবহুল হোটেল তৈরি হচ্ছে রাজ্যে। চিকমাঙ্গালুরুর পাহাড়ের মাথায় গল্ফ মাঠ ঘিরেও তৈরি হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র। শুধু গল্ফ-ট্যুরিজম নয়, পর্যটক টানতে আরও তিনটি বিষয়ের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেগুলি হল— • জঙ্গল-পর্যটন। • উপকূলবর্তী এলাকায় পর্যটন। • আয়ুর্বেদ, ইউনানির মতো প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। জঙ্গল পর্যটনের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গলে বানানো হয়েছে ১৬টি রিসর্ট। পাশাপাশি, উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করতে নেওয়া হয়েছে নানা রকম উদ্যোগ। যারা প্রাচীন চিকিত্সা পদ্ধতির সুবিধা হাতছাড়া করতে চান না তাদের জন্যও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিদেশিদের কাছে এই চিকিৎসার আকর্ষণ বাড়তে থাকায় এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে পর্যটন দফতর সূত্রে খবর।

• পর্যটকদের জন্য চমক জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড়ে
জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড়ে রাত্রি বাসের জন্য তাঁবু তৈরি করছে পশ্চিমবঙ্গ বন দফতর। পুজোয় পর্যটক টানতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা জে ভি ভাস্কর জানান, জয়ন্তীতে রাত কাটাতে পযর্টকদের জন্য চারটি তাঁবু টাঙানো হবে। বন উন্নয়ন নিগম জয়ন্তী রেঞ্জের অফিসের পাশেই বৈদ্যুতিক বেড়ার মধ্যে থাকবে তাঁবুগুলি। তাঁবুগুলির নীচে কংক্রিটের বাঁধানো মেঝে থাকবে। প্রতিটি তাঁবুর সঙ্গে আলাদা শৌচাগার থাকবে। এক একটি তাঁবুতে দু’জন করে পর্যটক থাকতে পারবেন। রাত প্রতি আনুমানিক এক হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হতে পারে। অন্য দিকে, বক্সা পাহাড়ের উপর বন দফরের ডরমেটরির সামনেও এই ধরনের দু’টি তাঁবু তৈরি করা হবে। তা ছাড়া সাউথ রায়ডাক বাংলো ও বারোবিশার শিলবাংলোর কাছে এই ধরনের তাঁবু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাঁবুগুলির জন্য পযর্টকরা বন উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটে থেকে বুকিং করতে পারবেন।

পরিষেবা
• ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক উড়ান শুরু স্পাইসজেটের
আগামী অক্টোবর মাসের শেষে ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক উড়ান শুরু করবে স্পাইসজেট। সংস্থার সিইও নিল মিলস সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে দুবাই, কাঠমান্ডু এবং কলোম্বোতে স্পাইসজেটের বিমান পরিষেবা রয়েছে। এর সঙ্গে আরও ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্য— কাবুল, রিয়াধ, চিন, হংকং, ব্যাঙ্কক এবং মালেতে (মালদ্বিপের রাজধানী) পরিষেবা শুরু করবে স্পাইস। এ ছাড়াও উত্তর ও মধ্য ভারতে তাদের পরিষেবা বাড়াতে চণ্ডীগড়, অমৃতসর, দেরাদুন, ইনদওর এবং শ্রীনগরে উড়ান চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থার। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৬ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন যা মোট যাত্রী সংখ্যার প্রায় ১৮.৫ শতাংশ এবং গড় টিকিট মূল্য ৪ হাজার টাকা। নিল মিলস আরও জানিয়েছেন, বিমানের ৫০ শতাংশ খরচ হয় জ্বালানী কিনতে। সরকার এই জ্বালানীর উপর ২৪ শতাংশ করের পাশপাশি পরিষেবা করও নিয়ে থাকে। কাজেই খরচ আরও বেড়ে যায়। তাঁর অনুযোগ, রেলের ক্ষেত্রে এই পরিষেবা কর নেওয়া হয় না। যদিও এ সব সত্ত্বেও আরও নতুন ৮টি বিমান কিনছে সংস্থা, যাতে আরও উন্নততর পরিষেবা দেওয়া যায়।

• তত্কাল টিকিট বুকিং, রেলের নতুন পদক্ষেপ
টিকিটের কালোবাজারি এবং দালালদের দৌরাত্ম রুখতে তত্কালে টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু রদবদল আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রথমত, তত্কালে বুকিংয়ের সময় ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ২৪ ঘণ্টা করা হয়েছে। অনলাইন বুকিংয়ের ক্ষেত্রে একটি ভারতীয় মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে বুকিং প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। যেখানে একটি কোড ওই সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে। যদিও এই ব্যবস্থায় বিদেশি পর্যটকেরা কিছুটা অসুবিধায় পড়েছেন বলে অভিযোগ। দ্বিতীয়ত, রেলের টিকিট সংরক্ষণ কাউন্টার ১০ জুলাই থেকে সকাল ৮টার পরিবর্তে সকাল ১০টায় খুলছে। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, সারা রাত ধরে বেশ কিছু দালাল কাউন্টারের সামনেই ঘুমোয়, যাতে সকালে তারাই প্রথমে টিকিট কাটতে পারেন। এর ফলে অসুবিধায় পড়েন যাত্রীরা। তবে অনেক যাত্রীর অভিমত এতে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি হবে। কেননা আরও বেশি ক্ষণ ধরে তাঁদের টিকিটের লাইনে অপেক্ষা করতে হবে। আর অনলাইনে টিকিট বুক সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ‘কনজেশন’।

• কোচিতে শীঘ্রই মেট্রোর কাজ শুরু
সংসদে অনুমোদন পাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে কোচি মেট্রো রেল প্রকল্প শুরু করার জন্য সবুজ সংকেত দিল কেন্দ্র। এই প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দিল্লি মেট্রো রেলকে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কেরলের এই মেট্রো রেল আলওয়ে থেকে পেট্টা পর্যন্ত ২৩টি স্টেশনে ভাগ করে প্রায় ২৫.৬ কিলোমিটার পথে চলবে। এই প্রকল্প রূপায়ণে খরচ হবে প্রায় ৫,১৮১ কোটি টাকা। যার মধ্যে কেন্দ্র বহন করবে ১,০০২ কোটি টাকা এবং কেরল রাজ্য সরকার ১,৭৭২ কোটি টাকা। জাপানের সরকারি সংস্থা জেআইসিএ-র কাছ থেকে ঋণ বাবদ নেওয়া হবে ২,১৭০ কোটি টাকা। এই মেট্রো প্রকল্পটির নাম হবে কোচি মেট্রো রেল লিমিটেড (কেএমআরএল)। এর প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে (কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে) প্রায় ৪ বছর। ইতিমধ্যে কোচগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় ৩১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করেছে কেরল সরকার। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার পর প্রাথমিক ভাবে ইঞ্জিনের সঙ্গে ৩টি কোচ জুড়ে চালানো হবে। পরে তা বাড়িয়ে ৬টি করা হবে। ৮ থেকে ১০ মিনিট অন্তর ট্রেন পাওয়া যাবে। পরে যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী তা কমিয়ে ৩ মিনিট করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়...
 
ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ