৮-১০ বছর আগে মন্দারমণিতে ছিল মাত্র একটি হোটেল। তাও ঝাউ, কেয়া ও মন্দার গাছের পিছনে, সমুদ্রতট থেকে একটু ভিতরে। আমরা পাঁচ বন্ধু দাদনপাত্রবাড় থেকে ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হোটেলে পৌঁছই। বিস্তীর্ণ সমুদ্রতটে তখন নির্ভয়ে খেলা করত লাল কাঁকড়া। সেই নির্জন সমুদ্রকে কখনওই ভয়ঙ্কর মনে হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি দেখে অবাক হয়েছি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ঝাউ, পিয়াল, কেয়া ও মন্দার গাছ কেটে সমুদ্রতটে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল ও রিসর্ট।
একটি সংস্থা তো সমুদ্রের ‘টাইডাল এরিয়া’য় গড়ে তুলেছে বিশাল একটি মন্দির। সমুদ্রের হাই টাইড লাইন থেকে লো টাইড লাইনের মধ্যে যেখানে নির্মাণ দূরস্থান, জনবসতিই কাম্য নয় সেখানে গড়ে উঠেছে শুধু হোটেল বা রিসর্ট নয়, ওয়াটার পার্ক, টয়ট্রেন ও বিশাল কমপ্লেক্স। আর সমুদ্রতটে কাটা তেলে চলা বেশ কিছু মোটরচালিত ভ্যান যাত্রী নিয়ে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও দূষণ ছড়াচ্ছে।
সুনামির সময় দেখা গেছে, সমুদ্রের তীরে মানুষের তৈরি বাড়িঘর, হোটেল ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু শাল পিয়াল ও ঝাউয়ের কোনও ক্ষতি হয়নি। আসলে ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল তট উজিয়ে যতটা পৌঁছয় সেই পর্যন্ত যদি ঝাউগাছে ঘেরা থাকে, তা হলে সমুদ্র কোনও ধ্বংসলীলা চালায় না। কিন্তু টাইডাল এরিয়াতে কোনও অবৈধ নির্মাণ করলেই সমুদ্র ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই যে ভাবে বেআইনি হোটেল ও রিসর্টের কবলে মন্দারমণির সমুদ্রতট বেদখল হয়ে যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে দিঘার মতোই মন্দারমণিতে সমুদ্রের গ্রাসে আরও মানুষের মৃত্যু হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২০০৯-এ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মন্দারমণিতে ৭২টি হোটেল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। একটি হোটেলও ভাঙা হয়নি, বরং ছোটবড় অসংখ্য হোটেল মন্দারমণির সমুদ্রতট ঘেঁষেই গজিয়ে উঠছে। সমুদ্রের গ্রাস থেকে হোটেলগুলিকে বাঁচাতে দিঘার মতোই বোল্ডার ফেলা শুরু হয়ে গিয়েছে, যা ১০-১২ বছর আগে মন্দারমণিতে ভাবাই যেত না। রবীন রায়। শ্যামনগর, উত্তর চব্বিশ পরগনা
শিরীষ গাছের গণমৃত্যু
শ্যামল বঙ্গপ্রকৃতির এক অতিপরিচিত বৃক্ষ শিরীষ। সমভূমি থেকে পার্বত্য অঞ্চল সর্বত্র এই ঝাঁকড়া ছায়াপ্রদায়ী বৃক্ষের উপস্থিতি। গত এক-দেড় বছর ধরে অত্যন্ত বেদনা ও আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ করছি, শিরীষ বৃক্ষগুলি শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে এ রকম অনেক শিরীষের কঙ্কাল চোখে পড়ে। জগাছা প্রেস কোয়ার্টার্সের একদা দৃষ্টিনন্দন শিরীষবন বর্তমানে বীভৎস কঙ্কাল-উদ্যানে পরিণত। আমতা শাখার বাঁকড়া নয়াবাজ প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইন বরাবর সার দিয়ে দণ্ডায়মান বৃহদাকার শিরীষের জীর্ণ কঙ্কাল, পিজি হাসপাতালের উল্টো দিকে বিবেকানন্দ উদ্যানে সারিবদ্ধ শুষ্ক মৃত বৃক্ষগুলি মানব জাতিকে উপহাস করার জন্যই যেন দাঁড়িয়ে আছে। গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
শিরীষ অন্যান্য গাছের তুলনায় বেশি আলোকসংবেদী। হয়তো এদের দূষণ-সহ্যক্ষমতা অন্যান্যদের তুলনায় কম। হয়তো বাতাসে বিশেষ কোনও পদার্থের উপস্থিতি বা কোনও উপাদানের অতিরিক্ত উপস্থিতি এরা সহ্য করতে পারছে না। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিদদের কাছে অনুরোধ, এই উদ্ভিদ-মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সচেষ্ট হন। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, ব্যাপারটি গুরুত্ব সহযোগে বিবেচনা করা হোক। সুশীলকুমার বর্মন। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর,
গোয়েন্কা কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড বি এ, কলকাতা-১২
ভারতীয় হাতি মানুষের কাছে থাকে, কাজে লাগে
হাতিদের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সংবাদ ও প্রতিবেদনগুলিকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) রেল বা সড়কপথে হাতিদের আনাগোনা এবং দুর্ঘটনা কিংবা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটা।
খ) হাতিদের, বিশেষত হস্তিশাবকদের নানা রকম দুর্ঘটনায় পড়া।
গ) হাতিদের লোকালয় কিংবা শস্য খেতে চলে আসা।
ঘ) বহু ক্ষেত্রে হস্তিশাবকদের যূথ কর্তৃক বর্জন করা, ইত্যাদি।
ভারতীয় হাতি মানুষের সঙ্গে থাকে এবং মানুষের কাজে লাগে। এমনকী যুদ্ধক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। সে রকম কিন্তু আফ্রিকান হাতিদের সম্পর্কে জানা যায় না। বস্তুত আফ্রিকান হাতিদের সঙ্গে মানুষের সদ্ভাব কখনওই গড়ে ওঠেনি। কিন্তু খুবই চিন্তার ও দুঃখের বিষয় যে, আধুনিক ভারতীয়, বিশেষত গ্রামের আধুনিক মানুষের সঙ্গে হাতির একটি না-বোঝার বা শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। বন্য হাতির দলকে এখন গ্রামের মানুষ অনিষ্টকারী হিসেবে দেখছেন। আমার মনে হয় যে, অসম, তরাই ও ডুয়ার্স জঙ্গল থেকে ছোটনাগপুর বা বিন্ধ্যপর্বতের জঙ্গল সমাকীর্ণ এলাকায় সুদূর প্রাচীন কালে হাতির দলের একটি বার্ষিক পরিযানক্রম ছিল, যেটি তারা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করত।
পরবর্তী কালে ক্রমশ লোকালয়ের এবং আধুনিক যুগে সড়ক ও রেলপথের বৃদ্ধিপ্রাপ্তির ফলে এই পরিযান পথ ক্রমশই খণ্ডিত হতে থাকে। কিন্তু জৈবিক প্রবৃত্তি হাতিদের বাধ্য করে পরিযানের পথে চলতে এবং সেখানে নানা রকম বাধা। হস্তিযূথের আয়তন ক্রমশই ক্ষীণ হওয়ায় এই পরিযান কখনওই সহজ ও সিস্টেমেটিক হতে পারে না। যার ফলে, এই সমস্যাগুলির উদ্ভব হচ্ছে। সম্ভবত এই সব সমস্যার হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ারও কোনও উপায় নেই।
আফ্রিকার হাতিদের ক্ষেত্রে সন্দেহাতীত ভাবে জানা গেছে যে, হস্তিযূথের নেতৃত্বে থাকে কোনও বর্ষীয়সী স্ত্রী-হাতি। ভারতীয় হাতিদের ক্ষেত্রেও অনেকে একই কথা বলেছেন। যদিও বিষয়টি খুব একটা পরিষ্কার নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। আর একটি বিষয় লক্ষণীয়। স্ত্রী-হাতিরা শাবকসহ অথবা গর্ভিণী অবস্থায় লোকালয়ে চলে আসে। এর কারণ খুঁজতেও আমাদের বেশি দূর যাওয়ার দরকার হয় না। প্রায় সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণী বর্তমানে মানুষের উপস্থিতি ও সান্নিধ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছে। তাদের কেউ কেউ হয়তো মানুষের কাছে চলে আসে সাহায্য বা সহায়তা পাওয়ার জন্য (সুন্দরবনে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে গর্ভবতী বাঘিনী প্রসবের আগে লোকালয়ে চলে আসছে। এর কারণও সম্ভবত জঙ্গলে সহজলভ্য খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব এবং লোকালয়ে মানুষের কাছে কোনও রকম সাহায্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা)। গবেষকরা এই দিকগুলির দিকে নজর দিলে বোধ হয় আমরা অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারতাম। সুবীরকুমার সেন। কলকাতা-৭৪
—নিজস্ব চিত্র
ছবিতে বন্যপ্রাণ
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ইতিমধ্যেই পস্তাচ্ছি আমরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল
হাতেনাতে পেয়েও টনক নড়ে
ক’জনের?
ব্যাতিক্রম অবশ্য আছে। আর সেই ব্যাতিক্রমী
মানুষদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করি আমরা। তাঁদের দলবদ্ধ অথবা
ব্যক্তিগত
উদ্যোগকে স্বাগত
জানিয়ে পাঠক সমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনার শরিক হতে চাইলে আমাদের জানান নীচের ঠিকানায় সংবাদের হাওয়াবদল
হাওয়াবদল আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১ ই-মেল করুনhaoabadal@abp.inঅথবাhaoabadal@gmail.com
Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.