১৪ আশ্বিন ১৪১৮ শনিবার ১ অক্টোবর ২০১১


পুরুলিয়া
কাশীপুর রাজবাড়ির পুজো

পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা কল্যাণশেখরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বল্লাল সেনের পালিতা কন্যা সাধনার। বাপের বাড়িতে সাধনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে ছিল কুলদেবী শ্যামারূপার সেবা করা। বিয়ের পরে তাই তিনি বায়না ধরেন শ্যামারূপা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। বল্লাল সেন তাতে অনুমতি দিলেন। আর সঙ্গে দিলেন একটি কালো রঙের ঘোড়া।

পথে ক্লান্ত নবদম্পতি একটু বিশ্রামের আশায় দেবীকে একটি গুহার মধ্যে থেকে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। বিশ্রামের পর যাত্রা শুরু করতে গিয়ে হল বিপদ। অনেক চেষ্টা করেও দেবীমূর্তি নড়ানো গেল না। সাধনা ঠিক করলেন নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবেন। সহধর্মিণীর কথা শুনে কল্যাণশেখরও আত্মাহুতি দেবেন বলে ঠিক করলেন।

পঞ্চকোটরাজ বংশের বর্তমান প্রজন্মের সোমেশ্বরলাল সিংহ দেওয়ের কথায়, সেই সময়েই দেবী তাঁদের দেখা দেন। কেউ আবার বলেন যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তখন স্বপ্নে দেবী তাঁদের দেখা দেন। দেবী নির্দেশ দেন, ‘‘আমি এখানেই (মোচলপুর) থাকব। নাম হবে কল্যাণেশ্বরী। আর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়ে তুই আমার চর্তুভুজা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করিস। ওখানে আমার নাম হবে রাজরাজেশ্বরী।’’

অষ্টধাতু দিয়ে কোন শিল্পী মূর্তি নির্মাণ করবেন তাও দেবী জানিয়ে দেন সাধনাকে। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমি ওখানে তোর পুজো নিতে যাব। মহাষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোর সময় আমার পদচিহ্ন দেখতে পাবি।’’ তার পর দেবীকে রেখে তাঁরা দু’জনেই পঞ্চকোটে ফিরে আসেন।

শ্বশুরবাড়িতে ফিরে দেবী নির্দেশিত শিল্পীকে দিয়েই মায়ের চর্তুভুজা মূর্তি নির্মাণ করান কল্যাণশেখর। তার পর থেকে পুজোর সময় সন্ধিপুজোয় মায়ের পায়ের ছাপ পড়ত সোনার থালায় সিঁদুরের উপর। সোমেশ্বর বাবু বলেন, “তার থেকেই প্রবাদ ‘শিখরে পা’। তাই এখানে দেবীর আরেক নাম শিখরবাসিনী।”

পুজোর শুরু
বাংলায় যখন সেন বংশের রাজত্বকাল, পুজোর শুরু সেই সময় কালে। হিন্দুধর্মের উপাসক এই রাজবংশে তার আগেও পুজো হত। কিন্তু তা অনেকটা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পঞ্চকোটের রাজা কল্যাণশেখরের মাধ্যমেই পুজোর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
প্রথা মেনে কাশীপুরের দেবীবাড়িতে আজও পুজো হয়। এখানে পুজো শুরু হয় জিতাষ্টমীর পরের দিন থেকে। টানা ১৪ দিন ধরে চলে পুজো।

ভোগ বিশেষত্ব

১৪ দিন ধরেই চলে অন্নভোগের আয়োজন।

তথ্য: প্রশান্ত পাল
ছবি: সুজিত মাহাতো


হদলনারায়ণপুর গ্রামের মণ্ডল পরিবারের পুজো
পুজোর শুরু
১৭১২ খ্রীস্টাব্দে বর্ধমানের নীলপুর গ্রাম থেকে এসে হদলনারায়ণপুরে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা গোপাল সিংহ’র পৃষ্ঠপোষকতায় জমিদারির পত্তন করেন মুচিরাম ঘোষ। পারুল পরগনার হদলনারায়ণপুর-সহ কয়েকটি গ্রামের ফৌজদার নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। পরে মল্লরাজারা প্রচুর নিষ্কর জমি দিয়ে মুচিরামকে ‘মণ্ডল’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তৈরি হয় গোল দরজা, সাত মহলা অট্টালিকা।

অপূর্ব স্থাপত্যের রাস মন্দির, রথ, অভিজাত দুর্গা মণ্ডপ। পুজোর সূচনাও ওই সময়ে। শুধু দুর্গাপুজোই নয়। রাস, রথ ও কালীপুজো পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছে মণ্ডল দেবত্র এস্টেট।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
এস্টেটের অন্যতম পরিচালক ধীরাজ মণ্ডল জানান, পুরনো প্রথা মেনে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। পুজোর তিন দিন নিরামিষ খাওয়া হয়। দশমীতে মাছ বলির পর আমিষ গ্রহণ।

এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য
, গ্রামের পাশে দামোদরের শাখা নদী বোদাই থেকে পাল্কিতে আসে নবপত্রিকা। বিসর্জনের পরে সিঁদুর খেলায় মাতেন মেয়েরা।

ভোগ বিশেষত্ব
পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য দেবীদাস মণ্ডল জানান, সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল পুজোর চার দিন পরিবারের সকল সদস্যের একাসনে পাত পেড়ে খাওয়া। সেই খাদ্য তালিকায় থাকে ভাতের সঙ্গে মুগের ডাল, আলু ভাজা, শুক্তো, আলু-পটল-পোস্ত, ফুলকপির তরকারি, এঁচোড়, কুমড়োর ছক্কা থেকে পোলাও, ডালপুরী। এ ছাড়াও আনারসের চাটনি, নানা মিষ্টি ও আইসক্রিম।

তথ্য: স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: শুভ্র মিত্র


সিমলাপাল রাজবাড়ির পুজো
পুজোর শুরু
প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো পুজো। কে শুরু করেছিলেন, তা জানা যায়নি। তবে শেষ রাজা ছিলেন শ্যামসুন্দর সিংহ চৌধুরি। পুজো তাঁর সময়ের অনেক আগে থেকেই চলছে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
আগে পুজোয় শতাধিক ছাগশিশু বলি হত। ১৯৯৫ সাল থেকে পশু বলি পুরোপুরি বন্ধ। রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধরেরা পশু বলির ঘোর বিরোধী।

তবে পশু বলি ছাড়া পুজোর অন্যান্য নিয়ম নিষ্ঠা এখনও মেনে চলা হয়। অষ্টমীর সন্ধিপুজোর আখ বলির ধরণ একটু ভিন্ন। দেবীর থানে ত্রিভুজের আকারে আখগুলি দাঁড় করানো হয়। এর পর বলি দেওয়া হয়।


ভোগ বিশেষত্ব
বিজয়া দশমীর দিন খিচুড়ি ভোগ এলাকার সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষজনকে খাওয়ানো হয়।

তথ্য: দেবব্রত দাস
ছবি: উমাকান্ত ধর

 
হাওয়াবদল
উত্তর ২৪ পরগনা
• বনগাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
উত্তর ২৪ পরগনা: বসিরহাট
• বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শ্বশুরালয়ের পুজো
• ব্রহ্মানন্দ মহারাজের বাড়ির পুজো
কলকাতা
• কল্যাণপুর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি
• ভবানীপুর মুখোপাধ্যায়
পরিবারের পুজো
• বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
হুগলি: আরামবাগ
• ‘জলকর’ রায় পরিবারের পুজো
• খামারবেড় গ্রামের পুজো
হুগলি
ধনেখালির তেধারার দে-বাড়ির পুজো
শ্রীরামপুরের চাতরার ভট্টাচার্যবাড়ির পুজো
মেদিনীপুর
পরমানন্দপুরের ঘোষ পরিবারের পুজো
• কিশোরনগর গড়ের দুর্গাপুজো
বর্ধমান
• বোরহাটের দেবেন্দ্রভবন
• ইদিলপুর ঘোষবাড়ির পুজো
• নতুনগঞ্জের দাসবাড়ির পুজো
পুরুলিয়া
কাশীপুর রাজবাড়ির পুজো
হদলনারায়ণপুর গ্রামের
মণ্ডল পরিবারের পুজো

সিমলাপাল রাজবাড়ির পুজো
মুর্শিদাবাদ
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো
ডোমকলর পালবাড়ির পুজো
নতুনবাজার সেনবাড়ির দুর্গাপুজো
উত্তরবঙ্গ

বসাকবাড়ির পুজো
• বাচামারির সেনবাড়ির পুজো
দে বাড়ির পুজো

আশ্রমে মাতৃবন্দনা
• পুরুলিয়ার বিজয়কৃষ্ণ আশ্রমের পুজো
• আমতার খড়িয়প আশ্রমের ‘জীবন্ত দুর্গা’ পুজো