পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা কল্যাণশেখরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বল্লাল সেনের পালিতা কন্যা সাধনার। বাপের বাড়িতে সাধনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে ছিল কুলদেবী শ্যামারূপার সেবা করা। বিয়ের পরে তাই তিনি বায়না ধরেন শ্যামারূপা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। বল্লাল সেন তাতে অনুমতি দিলেন। আর সঙ্গে দিলেন একটি কালো রঙের ঘোড়া।
পথে ক্লান্ত নবদম্পতি একটু বিশ্রামের আশায় দেবীকে একটি গুহার মধ্যে থেকে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। বিশ্রামের পর যাত্রা শুরু করতে গিয়ে হল বিপদ। অনেক চেষ্টা করেও দেবীমূর্তি নড়ানো গেল না। সাধনা ঠিক করলেন নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবেন। সহধর্মিণীর কথা শুনে কল্যাণশেখরও আত্মাহুতি দেবেন বলে ঠিক করলেন।
পঞ্চকোটরাজ বংশের বর্তমান প্রজন্মের সোমেশ্বরলাল সিংহ দেওয়ের কথায়, সেই সময়েই দেবী তাঁদের দেখা দেন। কেউ আবার বলেন যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তখন স্বপ্নে দেবী তাঁদের দেখা দেন। দেবী নির্দেশ দেন, ‘‘আমি এখানেই (মোচলপুর) থাকব। নাম হবে কল্যাণেশ্বরী। আর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়ে তুই আমার চর্তুভুজা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করিস। ওখানে আমার নাম হবে রাজরাজেশ্বরী।’’
অষ্টধাতু দিয়ে কোন শিল্পী মূর্তি নির্মাণ করবেন তাও দেবী জানিয়ে দেন সাধনাকে। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমি ওখানে তোর পুজো নিতে যাব। মহাষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোর সময় আমার পদচিহ্ন দেখতে পাবি।’’ তার পর দেবীকে রেখে তাঁরা দু’জনেই পঞ্চকোটে ফিরে আসেন।
শ্বশুরবাড়িতে ফিরে দেবী নির্দেশিত শিল্পীকে দিয়েই মায়ের চর্তুভুজা মূর্তি নির্মাণ করান কল্যাণশেখর। তার পর থেকে পুজোর সময় সন্ধিপুজোয় মায়ের পায়ের ছাপ পড়ত সোনার থালায় সিঁদুরের উপর। সোমেশ্বর বাবু বলেন, “তার থেকেই প্রবাদ ‘শিখরে পা’। তাই এখানে দেবীর আরেক নাম শিখরবাসিনী।” |