১৪ আশ্বিন ১৪১৮ শনিবার ১ অক্টোবর ২০১১


হুগলি: আরামবাগ

ময়াল গ্রামের ‘জলকর’ রায় পরিবারের পুজো
পুজোর শুরু

সদগোপ প্রধান ময়াল গ্রামের রায় পরিবারের পূর্বপুরুষরা, দ্বারকেশ্বর নদ থেকে শুরু করে তমলুক পর্যন্ত বিভিন্ন নদনদী থেকে জলকর আদায়ের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এবং এই জলকরের আয় থেকেই পুজোর সূচনা হয়েছিল বলে জানান গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহনলাল রায়। সেই আমলের এই নবাবী আদেশনামার জন্যই নাম হয় ‘জলকর রায়’।

জ্ঞাতিভাইয়ের এই শরিকি পুজোর খরচের প্রায় ৫০ হাজার টাকা আসে দেবত্র জমিজমা এবং দু’টি পুকুরের মাছ চাষ থেকে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
এই দুর্গা প্রতিমার হাত দু’টি, মহিষাসুর নেই। ডাকের সাজে সজ্জিত। চালচিত্রের উপর বিভিন্ন দেবদেবীর চিত্র আঁকা। রীতি হল প্রতিমার মূর্তির মুখের আদল একই রকম হবে। পুরুষানুক্রমে কুমোররা মূর্তি গড়েন এখানে।

‘জলকর’ রায়বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয় জিতাষ্টমীর পরের দিন। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন পুজোটি এই নিয়মেই হয়ে আসছে বরাবর। পুজোর আড়ম্বর শুরু হয় প্রতিপদ থেকেই। এ দিন পরিবারের কুলপুরোহিত অষ্টধাতুর ভুবনেশ্বরী মাতার মূর্তি মূলমন্দির থেকে এনে দুর্গাদালানে স্থাপন করেন। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের মূর্তি অবশ্য মাটির।

পারিবারিক এই পুজোয় কুমড়ো বলির সঙ্গে ছাগ বলি প্রথা আছে। সম্প্রতি ছাগ বলির নির্মম প্রথাটি বন্ধের জন্য স্থানীয় কিছু মানুষজন চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পুজোর ক’টা দিন নাড়ু, মুড়কি, ফল, মিঠাই বিতরণ পুজোটিকে মহোৎসবে পরিণত করে। তিনশো বছরের এই পুজোর একটিমাত্র রীতি পালন করা যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ জলকর রায় পরিবারের। প্রথা ছিল প্রতিমা বিসর্জনের পর শঙ্খচিল দর্শন করে ঠাকুরদালানে ফিরতে হবে। কিন্তু গ্রামে এখন শঙ্খচিল বিলুপ্ত। অগত্যা ‘শঙ্খচিলের স্মরণ’ নিয়ে নদী ঘাট থেকে ফিরে আসতে হয়।

বিসর্জনের পর রায়পরিবারের প্রত্যেককে বিল্বপত্রে লাল কালি দিয়ে দুর্গা নাম লিখতে হয়। তার পর শান্তিজল নেওয়ার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে উৎসব শেষ হয়।

তথ্য: পীযূষ নন্দী
ছবি: মোহন দাস


খামারবেড় গ্রামের পুজো
দেবীপক্ষ থেকে রামায়ণ গান দিয়ে দুর্গাপুজোর শুরু। আরামবাগের খামারবেড় গ্রামের ১৩ ঘর ভট্টাচার্য পরিবারের এই পুজো ১৩-১৪টি গ্রামের আকর্ষণ। দশমী পর্যন্ত দেবীর আটচালায় রামায়ণ গান চলে। ব্যতিক্রম হলেই ক্ষমা নেই। শরিকদের কারও কিংবা গায়কের মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে। পূজায় মন্ত্র উচ্চারণ বা পূজা সংক্রান্ত আচার-আচরণে ত্রুটি থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে ‘সাড়া’। তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ না কেউ অসুস্থ হবেন। নিষ্ঠা এবং ভক্তির অভাবে মুখ দিয়ে রক্ত ওঠা, অসুস্থ হয়ে যাওয়ার হাজার রোমহর্ষক কাহিনি ছড়িয়ে আছে খামারবেড়ের এই পুজোকে কেন্দ্র করে।
পুজোর শুরু

এলাকায় ‘জাগ্রত’ বলে বিশেষ খ্যাত এই দুর্গাপুজোর বয়স ৫০০ বছর বলে দাবি করেছেন ভট্টাচার্য পরিবারের বয়স্করা। শ্রদ্ধা-ভক্তি এবং আতঙ্কের মিশেলে পারিবারিক প্রাচীন পুজোটি ক্রমশই সর্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য

সন্ধিপুজোর সময় বহু দূর দূরান্ত গ্রাম জয়রামপুর, বলরামপুর, বলুণ্ডি, কাষ্ঠদহি ইত্যাদি থেকে পুজো দেখতে আসেন মানুষ। অষ্টমী এবং নবমীর দিন পুজোপ্রাঙ্গণে কয়েক হাজার ভক্তের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত এবং অসুস্থ মানুষের লাইন পরে যায় মায়ের পুজোর প্রসাদী ফুল সংগ্রের জন্য। সন্ধিপুজোয় দুর্গা, কালি হিসাবে পূজিত হন বলেই দুর্গার চার হাত, জানালেন ভট্টাচার্যরা। দুর্গার চারহাতে থাকে ত্রিশূল, চক্র, খড়্গ এবং সাপ।

ভোগ বিশেষত্ব

মহাষ্টমীর দিন মায়ের প্রসাদ হিসেবে ‘ভাত ভোগ’ হয়। রামায়ণ গায়ক প্রতিবছর একাদশী তিথিতে ‘রামরাজা’ গান শেষ করে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করবেন ‘আসর ছেড়ে, মাগো যদি আমি অন্য আসরে গান গাই, মোর মাথা খাও তোমায় শিবের দোহাই’। এর পর দোহাই দিতে হয় মূর্তি শিল্পী এবং ঢাকিকেও। পূজারি ভট্টাচার্যরা নিজেরাই অন্যের অপরাধের আশঙ্কায় ১৩ ঘর ভট্টাচার্যর আবালবৃদ্ধবনিতা সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলা প্রতিপদ থেকে ১০ দিন নাকখত দেবেন দেবীর আটচালায়।

সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী তিন দিনই পাঁঠা বলি হয়। পাঁঠা যোগাড়ে, কলা পাতা, বেল পাতা যোগাড়ে পর্যন্ত বংশানুক্রমে চলে এই পুজোয়। অন্য কোথাও উপার্জনের বেশি সম্ভাবনা থাকলেও দেবীর কোপে পড়ার আতঙ্কে রামায়ণ গায়ক থেকে শুরু করে বেলপাতা যোগাড়ে পুজোর দিনগুলো খামারবেড়ের জন্য ফাঁকা রাখেন। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন হয় গ্রামের পুকুরে ‘দুর্গার ঘাট’-এ। পুকুরের এই ঘাট সারাবছর সংরক্ষিত রাখা হয়। ঘাট সরানো নিষেধ। বিসর্জন পর্ব শুরু হয় কলা বৌ-এর বিসর্জন দিয়ে। বিসর্জন পর্ব শেষ হলে মহিলাদের কান্নাকাটি করার রীতি আছে।

তথ্য: তথ্য: পীযূষ নন্দী
ছবি: মোহন দাস
 
হাওয়াবদল
উত্তর ২৪ পরগনা
• বনগাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
উত্তর ২৪ পরগনা: বসিরহাট
• বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শ্বশুরালয়ের পুজো
• ব্রহ্মানন্দ মহারাজের বাড়ির পুজো
কলকাতা
• কল্যাণপুর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি
• ভবানীপুর মুখোপাধ্যায়
পরিবারের পুজো
• বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
হুগলি: আরামবাগ
‘জলকর’ রায় পরিবারের পুজো
খামারবেড় গ্রামের পুজো
হুগলি
ধনেখালির তেধারার দে-বাড়ির পুজো
শ্রীরামপুরের চাতরার ভট্টাচার্যবাড়ির পুজো
মেদিনীপুর
পরমানন্দপুরের ঘোষ পরিবারের পুজো
• কিশোরনগর গড়ের দুর্গাপুজো
বর্ধমান
• বোরহাটের দেবেন্দ্রভবন
• ইদিলপুর ঘোষবাড়ির পুজো
• নতুনগঞ্জের দাসবাড়ির পুজো
পুরুলিয়া
কাশীপুর রাজবাড়ির পুজো
হদলনারায়ণপুর গ্রামের
মণ্ডল পরিবারের পুজো

সিমলাপাল রাজবাড়ির পুজো
মুর্শিদাবাদ
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো
ডোমকলর পালবাড়ির পুজো
নতুনবাজার সেনবাড়ির দুর্গাপুজো
উত্তরবঙ্গ

বসাকবাড়ির পুজো
• বাচামারির সেনবাড়ির পুজো
দে বাড়ির পুজো

আশ্রমে মাতৃবন্দনা
• পুরুলিয়ার বিজয়কৃষ্ণ আশ্রমের পুজো
• আমতার খড়িয়প আশ্রমের ‘জীবন্ত দুর্গা’ পুজো