১৪ আশ্বিন ১৪১৮ শনিবার ১ অক্টোবর ২০১১


মুর্শিদাবাদ
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো
আঠারো শতকে এই রাজ পরিবার প্রতিষ্ঠা করেন অযোধ্যানাথ রায়। তাঁর পৌত্র জগদ্বন্ধু রায় ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান। তাঁর আমল থেকে কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির শ্রীবৃদ্ধির শুরু।

প্রায় দেড় দশক ধরে পুজোর ও রাজবাড়ির প্রাচীন জৌলুস ফেরানোর ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছেন রাজবাড়ির বর্তমান বংশধর প্রশান্ত রায় ও তাঁর সহধর্মিনী সুপ্রিয়াদেবী। সুপ্রিয়াদেবী অবশ্য ‘রানিমা’ নামেই বেশি পরিচিত। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতে অতীতের গন্ধ আজ অনেকখানিই ফিরে এসেছে কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়ির পুজোয়।
পুজোর শুরু
রাজবাড়ির এই দুর্গাপুজো প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
রথের দিন কাঠামো পুজো আবশ্যিক। একচালার সপরিবার সাবেক দেবীমূর্তি।

রাজবাড়ির মন্দিরে শুক্লা প্রতিপদ থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত ৩ জন পুরোহিত চণ্ডীপাঠ করেন। ৩ জন পুরোহিত দুর্গানাম জপ করেন। আর প্রধান পুরোহিত বিল্ববৃক্ষের শাখার পুজোপাঠ করেন।

ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পূর্ণ হয়। সপ্তমীতে ঘট ভর্তি করে মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজ পুরোহিত গোপাল রায় বলেন,‘‘সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারীপুজো ও সধবা পুজো হয়।”

তন্ত্র মতের এই পুজোয় আগে বলিদান প্রথা ছিল। পুরোহিত বলেন, ‘‘প্রায় ৩৭ বছর আগে রাজা কমলারঞ্জন রায়ের আমলে ঘাতকের অভাবে বলিদান প্রথা বাতিল করা হয়। সেই থেকে বলির অনুকল্প হিসাবে দেবীকে রুই মাছের ঝোল ও কাঁচা সন্দেশ নিবেদন করা হয়।”

তুলট কাগজে হাতে লেখা ৪৫ পাতার নিজস্ব পুঁথি থেকে মন্ত্র পড়ে পুজো হয়। নবমীতে পঙক্তি ভোজন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। দশমীতে মহিলাদের সিঁদুর খেলা ও অপরাজিতা পুজো হয়। দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর রাজবাড়ির সদস্যরা নাটমন্দিরে সমবেত হন। সেখানে তাঁদের আর্শীবাদ করেন রাজ পুরোহিত।

ভোগ বিশেষত্ব
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী— তিন দিনই থাকে অন্নভোগের আয়োজন। সাদা ভাতের সঙ্গে থাকে ফ্রায়েড রাইসও। ডাল-ভাতের সঙ্গে থাকে আলু, পটল, বেগুন, কুমড়ো ও বড়া মিলিয়ে পাঁচ রকমের ভাজা, আলু-কপি, অথবা আলু-পটলের দোর্মা, পাঁচ তরকারি, রুই মাছের ঝোল, শাক, চাটনি, মিষ্টি ও পায়েস।

নবমীর দিন ভোগের মেনুর সঙ্গে যুক্ত হয় মোচার ঘণ্ট, লাউ-চিংড়ি ও ইলিশ মাছের ঝোল, ভাপা ও ভাজা।

সন্ধিপুজোয় থাকে খিচুড়ি, আলু, বেগুন, পটল ভাজা ও মাছ ভাজা।

তথ্য: অনল আবেদিন
ছবি: গৌতম প্রামাণিক


ডোমকলের পালবাড়ির পুজো
জমিদার বাড়ির পুজো বলে কথা। ১০৮ ঢাকে কাঠি পড়লেই এলাকার পাঁচটা গাঁয়ের মানুষ বুঝে যেত পাল বাবুদের বাড়িতে মায়ের আবির্ভাব ঘটেছে। গ্রামবাসীদের কথায় জমিদারি না থাকলেও পাল পরিবারের কর্তারা এখনও আছেন গ্রামে। নেই কেবল ১০৮ ঢাকি আর তার মন কাড়া বোল।
পুজোর শুরু
অবিভক্ত ভারতের ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের অধ্যাপক ছিলেন পরিবারের কর্তা শরৎচন্দ্র পাল। ডোমকলের বাজিতপুর গ্রামে তিনিই ১০৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পারিবারিক পুজোর।

পরিবারের ছোট ছেলে গোপালকৃষ্ণ পাল বলেন, “এ বার আমাদের পুজো ১০৮ বছরে পা রাখল। এ বছরটাই ১০৮ ঢাকির কথা বার বার মনে পড়ছে। ওরা মিছিল করে নাচতে নাচতে আসত ক’টা দিন মহানন্দে কাটিয়ে ঘরে ফিরত। ওদের মধ্যে এত ভাল ঢাকি ছিল যে তাদের ঢাকের শব্দ শুনলেই মানুষ বলে দিত অমুক ঢাকি এসেছে।”

পুজোর বৈশিষ্ট্য
১০৮ জন ঢাকির সম্মিলন এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অধ্যাপক শরৎবাবু ছিলেন সংস্কারমনা। তিনি নারী এবং দলিত শ্রেণিকে গুরুত্ব দিতেন। তার লক্ষ্য ছিল অসংগঠিত ঢাকিদের সংগঠিত করা। পুজোর ক’টা দিনে আনন্দটা যেন তারাও গায়ে মাখতে পারে সে দিকে লক্ষ রেখে ১০৮ ঢাকির ব্যবস্থা।

এই পুজোতে দেবী দুর্গার সঙ্গে দেখা মেলে রাম-লক্ষ্মণ-বিভীষণ-হনুমান ও জাম্বুবানের। প্রতিষ্ঠা বর্ষে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একাদশীতে বিসর্জন হয়েছিল এই পুজোর। আর তার পর থেকে সেটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর একাদশীতেই বিসর্জন হয় প্রতিমার।

ভোগ বিশেষত্ব

পুজোতে অন্নভোগ হয় না। লুচি, তরকারি, মণ্ডা, নাড়ু এ সবই প্রসাদ।

তথ্য: সুস্মিত হালদার
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য


নতুনবাজার সেনবাড়ির দুর্গাপুজো

অবিভক্ত বাংলার সাবজজ্ রাধাকৃষ্ণ সেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রথম এফ এ। তাঁর বাল্যবিধবা কন্যা বিন্দুবাসিনী মাতৃ আরাধনার আর্জি করলেন। কন্যার আবদার মেনে নিলেন তিনি।

১১৫ বছর আগে সেনবাড়ির এই মন্দিরে দেবী চণ্ডীর বদলে পূজিত হতেন দেবী জগদ্ধাত্রী। রাধাকৃষ্ণ সেনের বর্তমান প্রজন্ম সুবীর সেন বলেন, “সেই থেকে সেনবাড়ির জগদ্ধাত্রী রূপান্তরিত হলেন দেবীদুর্গায়। আসলে যিনি জগদ্ধাত্রী তিনিই তো দেবীদুর্গা।”

পুজোর শুরু
নতুনবাজার এলাকার ৩ নম্বর গিরিজা চক্রবর্তী লেনের সেনবাড়ির দেবীদুর্গার আরাধনা শুরু হয় ১৮৯৬ সালে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
সেনবাড়ির দেবীদুর্গা কিন্তু তাঁর চতুর্থ হাত দিয়ে অসুর বধ করেন।

বাড়ির মন্দিরের বেদীতেই রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। ভাদ্র মাসে ঠাকুর তৈরির কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকে। অসুর হয় সবুজ রঙের। আসলে মহিষাসুরের বদলে প্রতীকস্বরূপ দেবীর পায়ের কাছে মহিষের ছোট্ট একটি মাথা থাকে।

 

একচালার সাবেকি প্রতিমার পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। তবে ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে গঙ্গায় ঘট ভরতে যাওয়ার সময় বাড়ির কোনও সধবাকে কাঁখে ঘটি নিয়ে বাড়ির মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পুরোহিত ওই মহিলার সামনে দিয়ে ঘট ভরতে যান গঙ্গায়।

সাত রকমের গোটা ফল, বেলপাতা ও শোলার কদমফুল দিয়ে তৈরি করা হয় পুজোর ‘রচনা’। ষষ্ঠীর দিন মন্দিরের সামনে পোঁতা হয় বাঁশ। ওই বাঁশের ডগায় দড়ি দিয়ে টাঙানো হয় রচনা।

সন্ধিপুজোর শুরু ও শেষের সময় গুলি ছোঁড়ার রেওয়াজ ছিল। বরাবরের এই রেওয়াজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় কুড়ি বছর আগে।

ভোগ বিশেষত্ব
ভোগেরও বিশেষত্ব রয়েছে সেনবাড়ির পুজোয়। ভোগের মেনুতে ৫৫টি লুচির সঙ্গে থাকবে পাঁচ রকমের তরকারি, শাক, আলু ও পটল ভাজা।

নবমীর ভোগে কাঁচকলা ভাজা, কাঁচকলার টক ও বাড়িতে তৈরি নারকেল নাড়ু ‘মাস্ট’।

এ ছাড়া প্রতিদিন ছানা, দই ও মিছরি তো থাকেই। দেওয়া হয় আতপ চালের নৈবেদ্য । তবে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজোয় আতপ চালের ১৭টি নৈবেদ্য দেওয়া হলেও সন্ধিপুজোয় আতপ চালের ১৯টি নৈবেদ্যের প্রয়োজন।

তথ্য: অনল আবেদিন
ছবি: গৌতম প্রামাণিক
 
হাওয়াবদল
উত্তর ২৪ পরগনা
• বনগাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
উত্তর ২৪ পরগনা: বসিরহাট
• বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শ্বশুরালয়ের পুজো
• ব্রহ্মানন্দ মহারাজের বাড়ির পুজো
কলকাতা
• কল্যাণপুর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি
• ভবানীপুর মুখোপাধ্যায়
পরিবারের পুজো
• বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
হুগলি: আরামবাগ
• ‘জলকর’ রায় পরিবারের পুজো
• খামারবেড় গ্রামের পুজো
হুগলি
ধনেখালির তেধারার দে-বাড়ির পুজো
শ্রীরামপুরের চাতরার ভট্টাচার্যবাড়ির পুজো
মেদিনীপুর
পরমানন্দপুরের ঘোষ পরিবারের পুজো
• কিশোরনগর গড়ের দুর্গাপুজো
বর্ধমান
• বোরহাটের দেবেন্দ্রভবন
• ইদিলপুর ঘোষবাড়ির পুজো
• নতুনগঞ্জের দাসবাড়ির পুজো
পুরুলিয়া
• কাশীপুর রাজবাড়ির পুজো
• হদলনারায়ণপুর গ্রামের
মণ্ডল পরিবারের পুজো
• সিমলাপাল রাজবাড়ির পুজো
মুর্শিদাবাদ
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো
ডোমকলর পালবাড়ির পুজো
নতুনবাজার সেনবাড়ির দুর্গাপুজো
উত্তরবঙ্গ

বসাকবাড়ির পুজো
• বাচামারির সেনবাড়ির পুজো
দে বাড়ির পুজো

আশ্রমে মাতৃবন্দনা
• পুরুলিয়ার বিজয়কৃষ্ণ আশ্রমের পুজো
• আমতার খড়িয়প আশ্রমের ‘জীবন্ত দুর্গা’ পুজো