মন্ট্রিয়ল |
ইন্ডিয়ান বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো |
বঙ্গদেশের আকাশে যখন শরৎকালের মেঘগুলো সাদা-নীলে লুকোচুরি খেলতে আরম্ভ করে, শহরের বাইরে পথের ধারে এ দিক ও দিক একটু চোখ রাখলেই উঁকি দেয় কাশফুলের সারি, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই পুজো পুজো গন্ধটা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা থেকে বারো হাজার কিলোমিটার দূরে আমাদের শহর মন্ট্রিয়লেও। ইউরোপীয় স্থাপত্যে প্রভাবিত, ফরাসি সভ্যতার ছোঁয়ায় উজ্জীবিত মন্ট্রিয়লে আজ বহু বাঙালির বাস। আর কে না জানে বাঙালির সেরা পরিচয় আড্ডা এবং দুর্গাপুজোর মান রাখা, যা আসমুদ্রহিমাচলে স্থান-কাল-পাত্রপাত্রী ব্যতিরেকে প্রতিটি বঙ্গসন্তানের পবিত্র কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়! সেই ভাবনা থেকেই আমাদের এই পুজোর গল্পটার জন্ম ১৯৭৫ সালে। |
|
পুজোর শুরু |
৩৭ বছরের ঐতিহ্যের ধারা বহন করে শহর মন্ট্রিয়লের বুকের উপর অবস্থিত ভারত ভবনে ইন্ডিয়ান বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ মন্ট্রিয়লের উদ্যোগে এ বছরও অনুষ্ঠিত হল দেবী বন্দনা। এ বার বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত নতুন প্রজন্মের দল, এমনকী বাইরে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরাও ভরপুর উৎসাহে পুজোর ভার তুলে নিয়েছে নিজেদের কাঁধে আর সেটাই এই পুজোর সবচাইতে বড় শক্তি এবং সাফল্যও। এ প্রসঙ্গে পুজো কমিটির বর্তমান কর্ণধার শ্রী রাজা ভট্টাচার্যের অবদান অনস্বীকার্য।
|
পুজোর বৈশিষ্ট্য |
সারা বছর রুটিরুজির দুনিয়ায় ঘাড় গুঁজে অবিরাম দৌড়ে যাওয়ার মাঝে পুজোর দিন ক’টা যেন একঝলক খুশির রোদ্দুর। তিন বছর আগে সুদূর কুমোরটুলি থেকে জলপথে আসা ফাইবার গ্লাস নির্মিত অপূর্ব এই দেবীপ্রতিমা আমাদের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিমার রূপদান করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী শ্যামল পাল। পুজোর দিন সকালে মিতা দাসের নিজের হাতে গাঁথা মালায় সেজে অনন্যা হয়ে ওঠেন ‘মা’। পৌরোহিত্যে থাকেন অলক ভট্টাচার্য। নিয়মনিষ্ঠা-আচার মেনে করা এই পুজোতে সবাই মিলেমিশে কাজ করেন এক পরিবারের মতো।
তার সঙ্গে চলে অফুরন্ত আড্ডা, দারুণ খাওয়া দাওয়া, দেশ থেকে নিয়ে আসা শুধুমাত্র পুজোর জন্যই জমিয়ে রাখা পোশাকের ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনাচক্র, ছোটখাটো দুষ্টুমি, তর্কবিতর্ক আর সুযোগ পেলেই ফিরে দেখা ফেলে আসা জীবনের টুকরো টুকরো দুর্মূল্য কিছু মুহূর্তকে। এক দিকে অধরা স্মৃতিদের ফের এক বার ছুঁয়ে দেখবার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য কোনওখানে গড়ে ওঠে নতুন বন্ধুত্বের অঙ্গীকার আর সেই আলোয় দীপ্তমান হয়ে ওঠে মায়ের মুখ। এ ভাবেই বাড়ি থেকে কয়েকশো যোজন দূরে থেকেও একাগ্র ভাবে জারি থাকে শিকড়কে না ভোলবার আপ্রাণ, ঐকান্তিক ইচ্ছে এবং প্রচেষ্টাটা।
|
ভোগ বিশেষত্ব |
দায়িত্বে থাকা এক একটি পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিনকার ভোগ মহানন্দে নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দেশে। ভোগের মধ্যে প্রধানত থাকে পোলাও, খিচুড়ি, বিভিন্ন প্রকার তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজা, লুচি, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। |
পুজোর আকর্ষণ |
প্রতিদিন সন্ধ্যায় ‘কালচারাল কমিটি’র পরিচালনায় ইন্ডিয়ান বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ মন্ট্রিয়লের তরফে পরিবেশিত হয় নানা সাংস্কৃতিক বিচিত্রানুষ্ঠান। নিজেদের অফুরন্ত আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হয় এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুজোয় উপস্থিত সমস্ত দর্শক ও শ্রোতাদের সঙ্গে। এই অনুষ্ঠানে বড়দের সঙ্গে সমান ভাবে অংশগ্রহণ করে ছোটরাও। একই মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত পেশাদার শিল্পীদের পাশাপাশি খুদে প্রতিভারাও জায়গা করে নেয় অকল্পনীয় দক্ষতায়।
|
এ বারের পুজো |
নির্ঘণ্ট |
শুক্রবার |
১৯ অক্টোবর |
সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা ৭:৩০ |
চণ্ডীপাঠ, মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী পুজো এবং সন্ধ্যারতি। |
শনিবার |
২০ অক্টোবর |
সকাল ৯ থেকে দুপুর ১২:০০ |
চণ্ডীপাঠ এবং মহাষ্টমী পুজো। |
দুপুর ১২ থেকে ১২:৪৫ |
পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ বিতরণ। |
দুপুর ১ থেকে বিকেল ৪:৪৫ |
সন্ধিপুজো,মহানবমী, হোম এবং সন্ধ্যারতি। |
সন্ধে ৭ থেকে ৮ |
মহাদশমী, দেবীবরণ এবং সিঁদুরখেলা। |
শনিবার |
২৭ অক্টোবর |
সন্ধে ৬ থেকে ৮:০০ |
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। |
|
উদ্যোক্তা |
ইন্ডিয়ান বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ মন্ট্রিয়ল
পি.ও বক্স ১৭১১, স্টেশন এইচ
মন্ট্রিয়ল, কিউবেক,
কানাডা
ই.মেল: info@IBAMontreal.org |
তথ্য ও ছবি: ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য, কানাডা |
|
|
|
|