কলকাতাতেই আছে...
জানি না এটা কেউ মানবে কি না— ৬ মাসের অনুপস্থিতিতেই কলকাতার সাহচর্য পেতে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি, কবে পুজোর ছুটিতে বাড়ি আসতে পারব!

গত দু’বছর ধরে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষায় ভর্তি-পরীক্ষার প্রস্তুতি কালে দিল্লিতে থাকা নিয়ে যে কত স্বপ্ন বুনেছি! এ বছর সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার পরেও ভাবিনি মনের ভিতর পরবর্তী কালে কী প্রতিক্রিয়া হবে! দিল্লিতে এসে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করার পর, আস্তে আস্তে কিছু একটার অভাব বোধ করতে লাগলাম— কলকাতা, শেষ ছাব্বিশটি বছর যেখানে কাটিয়েছি— আমার বাড়ি, আমার বন্ধু, আমার খেলার জায়গা, কোনও ভাবেই দিল্লির নতুন পরিবেশ ও বন্ধুদের সঙ্গে মানানসই নয়। অনেকে বলেন, কলকাতার মানুষ নাকি আজকাল কারও বিপদে বা দুর্ঘটনা দেখলে এগিয়ে আসে না। হয়তো ঠিক। কিন্তু কলকাতার একটা বৈশিষ্ট্য, এখানে বাসে-ট্রামে-মেট্রোয় যেতে যেতে যে কারও সঙ্গে কথা বলা বা কোনও অচেনা মানুষকেও গল্পের মাধ্যমে আপন করে নেওয়া যায়, যা দিল্লিতে অকল্পনীয়!

তাই, প্রতি দিনের পড়াশোনায় ডুবে থাকার মধ্যে একটাই আশার আলো— পুজোর ছুটি। বাঙালিরা এই একটা ব্যাপারে খুব আবেগপ্রবণ। দুর্গাপুজো যেন আমাদের কাছে পৃথিবীর যে কোনও পরিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা আলোক রেখা। আমার ক্ষেত্রে রেখাটা আরও একটু গাঢ়— বাড়িতেই পুজো হয় যে! তবে এই ছুটির জন্য আমায় কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ছুটির দরখাস্তের আগে আমাকে সমস্ত ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ জমা দিতে হয়েছে, তবেই মহালয়ার আগের রাতের উড়ানের টিকিট কাটতে পেরেছি।

আমার কাছে কলকাতা, বাঙালি, দুর্গাপুজো— এই তিনটি শব্দ পর পরই আসে। এরা যেন একে অপরের পরিপূরক। বাঙালিরা দুর্গাপুজোর জন্য কত কিছু যে করতে পারে, তা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই দেখেছি। শুধু আমি নই, আরও অনেক বাঙালি ছাত্রেরই একই অবস্থা।

রইল হাতে শুধু আর দু’টি সপ্তাহ। তার পর আমি আবার ফিরছি কলকাতায়, পুজোর আনন্দে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে! হয়তো বছরের অন্য সময়ে কলকাতার জন্য এত হাহাকার করি না। কিন্তু শুধু দুর্গাপুজোর কারণেই সেই অনুভূতি অন্য মাত্রায় পৌঁছয়। বিশ্বায়নের এই যুগে দুর্গাপুজোও হয়তো বিশ্বায়িত হয়েছে, কিন্তু কলকাতা যে আছে কলকাতাতেই!


এই সংখ্যায় পাঠকের কলমের অন্য দু’টি লেখা
পুজোর ছুটি তোমার সঙ্গে তিলোত্তমার মেয়ের বিয়ে
 
 

 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.